প্রশ্নঃ ব্যবহারকৃত স্বর্ণালংকারে কি যাকাত দিতে হবে, যদি তা নিসাব পরিমাণ হয়?
*উত্তর* ঃ যাকাত দিতে হবে।
সহীহ। বইঃ সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), অধ্যায়ঃ ৩/ যাকাত (كتاب الزكاة), হাদিস নম্বরঃ ১৫৬৫
[1] হাকিম (১/৩৮৯) ইমাম হাকিম বলেন : এ হাদীসটি বুখারী ও মুসলিমের শর্তে সহীহ, তবে তারা এটি বর্ণনা করেননি। ইমাম যাহাবী তার সাথে একমত পোষণ করেছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
হাসান। বইঃ সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), অধ্যায়ঃ ৩/ যাকাত (كتاب الزكاة), হাদিস নম্বরঃ ১৫৬৩
তিরমিযী (অধ্যায় : যাকাত, অনুঃ গহনার যাকাত, হাঃ ৬৩৭, ইমাম তিরমিযী বলেন, এ হাদীসটি অনুরূপ বর্ণনা করেছেন মুসান্না ইবনু সাব্বাহ ‘আমর ইবনু শু‘আইব হতে, মুসান্না ইবনু সাববাহ এবং ইবনু লাহী‘আহ দু’জনেই হাদীসে দুর্বল), নাসায়ী (অধ্যায় : যাকাত, অনুঃ গহনার যাকাত, হাঃ ২৪৭৮), আহমাদ (হাঃ ৬৬৬৭) শায়খ আহমাদ শাকির বলেন : এর সানাদ সহীহ। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
=========================
*স্বর্ণ বা ক্যাশ টাকার যাকাত*
*যে শস্য শুধুমাত্র বৃষ্টির পানি অথবা শুধুমাত্র কৃত্রিম সেচের মাধ্যমে উৎপন্ন হয় না। বরং কিছু অংশ বৃষ্টির পানিতে এবং কিছু অংশ কৃত্রিম সেচের মাধ্যমে উৎপন্ন হয়, সে শস্যের যাকাত বের করার নিয়ম হল , যদি বৃষ্টির পানির পরিমাণ বেশী হয় তাহলে العشر অর্থাৎ দশ ভাগের এক ভাগ যাকাত দিতে হবে। আর কৃত্রিম সেচের পরিমাণ বেশী হলে نصف العشر অর্থাৎ বিশ ভাগের এক ভাগ যাকাত দিতে হবে। আর যাদি অর্ধাংশ বৃষ্টির পানিতে এবং অর্ধাংশ কৃত্রিম সেচের মাধ্যমে উৎপন্ন হয় তাহলে ثلاثة أرباع العشر অর্থাৎ দশ ভাগের তিন-চতুর্থাংশ যাকাত দিতে হবে। অর্থাৎ কারো ২০ মণ ধান উৎপন্ন হওয়ার জন্য বৃষ্টির পানির পরিমাণ বেশী হলে তার দশ ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ দুই মণ যাকাত দিতে হবে। আর কৃত্রিম সেচের পরিমাণ বেশী হলে বিশ ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ এক মণ যাকাত দিতে হবে। আর অর্ধাংশ বৃষ্টির পানি ও অর্ধাংশ নিজের সেচের মাধ্যমে উৎপন্ন হলে তার দশ ভাগের তিন-চতুর্থাংশ অর্থাৎ এক মণ বিশ কেজি যাকাত দিতে হবে। ইবনু কুদামা (রহঃ) বলেন, এ ব্যাপারে ওলামায়ে কেরামের মধ্যে কোন মতভেদ আছে বলে আমার জানা নেই।*[1]
[1]. ইবনু কুদামা, শারহুল কাবীর ২/৫৬৩ পৃঃ; মুহাম্মাদ বিন ছালেহ আল-উছায়মীন, শারহুল মুমতে‘ ৬/৭৮ পৃঃ; ফাতাওয়া লাজনাহ দায়েমাহ ৯/১৭৬ পৃঃ; ফিকহুস সুন্নাহ ১/৩৫৪ পৃঃ; নায়লুল আওতার ৪/২০১ পৃঃ; ইউসুফ কারযাবী, ফিকহুয যাকাত ১/৩৩৩ পৃঃ।
=========================
*৮টি খাতে যাকাত পাওয়ার যোগ্য কারা
[১] ফকীর
(২)মিসকীন
[৩] যাকাত আদায়ের কাজে নিযুক্ত কর্মচারীদের জন্য
[৪], যাদের অন্তর আকৃষ্ট করতে হয় তাদের জন্য (যাদের মধ্যে মুসলিম হওয়ার আগ্রহ দেখা যাচ্ছে)
[৫], দাসমুক্তিতে
[৬] ঋণ ভারাক্রান্তদের জন্য
[৭], আল্লাহ্র পথে জিহাদকারী
[৮] মুসাফিরদের জন্য।
রেফারেন্স ঃ( সুরা তওবা-৬০)
=============÷÷÷==========
*৮টি খাতে যাকাত পাওয়ার যোগ্য কারা
*অভাবী আত্মীয়কে যাকাত*
কোন নিকটাত্মীয় প্রকৃতপক্ষে যাকাতের হকদার হলে তাকে যাকাত দেওয়া যাবে। এমনকি এতে দ্বিগুণ ছওয়াব অর্জিত হবে।
*সালমান ইবনু আমের (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘মিসকীনকে ছাদাক্বাহ্ দিলে একটি ছাদাক্বাহ্ হয়। কিন্তু সে যদি রক্ত সম্পর্কীয় নিকটাত্মীয় হয়, তবে নেকী দ্বিগুণ হয়। (১) ছাদাক্বার নেকী (২) আত্মীয়তা রক্ষার নেকী’*।[1]
[1].মুসনাদে আহমাদ হা/১৬২৭৭; তিরমিযী হা/৬৫৮; মিশকাত হা/১৯৩৯; আলবানী, সনদ সহি
*অভাবী আত্মীয়কে যাকাত*
আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
(তিরমিজী৬২২,
ইবনুমাজাহ১৮০৪)
==========================
১. স্বর্ণ= সর্বনিম্ন ৮৫ গ্রাম
২. রৌপ্য= সর্বনিম্ন ৫৯৫ গ্রাম
৩. নগদ অর্থ। ৫৯৫ গ্রাম রৌপ্য অথবা ৮৫ গ্রাম স্বর্ণের যে দাম হয় সে পরিমান নগদ ক্যাশ থাকলে তাতে যাকাত দিতে হবে-চাই তা নিজের কাছে জমা থাকুক অথবা ব্যাংকে সংরক্ষিত থাকুক।
উল্লেখ্য যে, ৫৯৫ গ্রাম রৌপ্যের বর্তমান বাজার দর প্রায় ২,৬০০০/ টাকা। (কিন্তু সময়ের ব্যবধানের দামের ক্ষেত্রে কমবেশি হতে পারে)
সুতরাং এ পরিমান টাকা কারো কাছে এক বছর জমা থাকলে তাতে যাকাত দেয়া ফরজ। অবশ্য ইচ্ছে করলে ৮৫ গ্রাম স্বর্ণের দামও ধরা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে টাকার পরিমাণ আরও বেশি হবে।
৪. ব্যবাসায়িক পণ্য
৫. জমিন থেকে উৎপাদিত রবিশষ্য (যেগুলো শুকিয়ে সংরক্ষণযোগ্য) যেমন, ধান, গম, শরিসা, ভু্ট্টা ইত্যাদি অথবা ফলফলাদি (যেগুলো শুকিয়ে সংরক্ষণযোগ্য), যেমন খেজুর, কিশমিশ ইত্যাদি।
৬. গবাদী পশু (নির্দিষ্ট পরিমান সাপেক্ষে)
বসবাসের জন্য বসত ভিটা, ঘর-বাড়ি, ফসলের জায়গা-জমি, বাড়ির ব্যবহারিক আসবাবপত্র, ব্যবহারের জন্য গাড়ি, ভাড়ার জন্য বাস, ট্রাক, লঞ্চ ইত্যাদি পরিবহন, ভাড়ার জন্য তৈরিকৃত আবাসিক বিল্ডিং বা দোকান, নিজস্ব দোকান, দোকানের জায়গা ও ফার্নিচার (তবে দোকানের পণ্যের যাকাত দিতে হবে) ইত্যাদি। এগুলোতে যাকাত নেই।
আল্লাহু আলাম
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব