Site icon Tawheed Media

স্ত্রী কি তার শ্বশুর শাশুড়ির সেবা করতে বাধ্য

একজন নারীর বিবাহের পূর্বে তার অভিবাবক হলেন তার পিতা। আর বিবাহের পর স্বামীই তার স্ত্রীর মূল অভিভাবক। কারন মহান আল্লাহ তাআলা পুরুষকে স্ত্রীর উপর দায়িত্ববান ও কর্তৃত্ব শীল হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। ইসলামি শরিয়তে স্ত্রীর জন্য তার স্বামী ছাড়া অন্য কারও সেবা করাকে ফরয করা হয় নি। স্বামীর পিতা-মাতা, ভাই-বোন বা অন্য কাররই নয়।মহান আল্লাহ বলেন,”পুরুষেরা নারীদের উপর কর্তৃত্ব শীল (দায়িত্ববান) এ জন্য যে, আল্লাহ একের উপর অন্যের বৈশিষ্ট্য দান করেছেন এবং এ জন্য যে, তারা তাদের অর্থ ব্যয় করে। (সূরা নিসা: ৪/৩৪) অর্থাৎ ইসলাম পুরুষকে নারীর নেতা বানিয়েছে। নারীর উপর কর্তব্য হচ্ছে, আল্লাহ তাকে তার স্বামীর যা আনুগত্য করার নির্দেশ দিয়েছেন তার আনুগত্য করা। পাশাপাশি শশুর-শাশুড়ির সেবা করা যেমন স্বামীর প্রতি ইহসান ও ভালবাসার বর্হি:প্রকাশ এবং বিরাট সওয়াবের কাজ আর স্ত্রী হিসেবে স্বামীর প্রতি আনুগত্য হচ্ছে স্ত্রী তার স্বামীর পরিবারের প্রতি দয়াবান থাকবে এবং সাধ্য অনুযায়ী শ্বশুর শাশুড়ীর সেবা যত্ন করবে, স্বামীর সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ করবে। স্বামীর পক্ষ থেকে খরচ ও কষ্ট করার কারণে আল্লাহ স্বামীকে স্ত্রীর উপর শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করেছেন।
.
শায়খুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮] বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘পুণ্যময়ী নারীরা অনুগতা এবং পুরুষের অনুপস্থিতিতে লোক-চক্ষুর অন্তরালে (স্বামীর ধন ও নিজেদের ইজ্জত) রক্ষাকারিণী; আল্লাহর হিফাযতে (তাওফীকে) তারা তা হিফাযত করে’ (সূরা আন-নিসা: ৩৪)। সুতরাং পুরোপুরিভাবে স্বামীর আনুগত্য করা স্ত্রীর উপর অপরিহার্য। যেমন: সেবা-যত্নে, ভ্রমণে, শক্তিশালীকরণে এবং অন্যান্য বিষয়ে যা সহীহ সুন্নাহর আলোকে প্রমাণিত। বিবাহের পূর্বে যেমন পিতা-মাতার আনুগত্য করা ওয়াজিব ছিল, বিবাহের পর ঠিক তেমনি স্বামীর আনুগত্য করা অপরিহার্য। পিতা-মাতার কাছ থেকে সমস্ত আনুগত্য স্বামীর কাছে স্থানান্তরিত হয়েছে। পিতা-মাতার আর কোন আনুগত্য অবশিষ্ট নেই’। (মাজমূঊল ফাতাওয়া, খন্ড: ৩২ পৃষ্ঠা:২৬০-২৬১)।
.
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ আরো বলেছেন: একজন মহিলা যখন বিয়ে করে, তখন তার স্বামী তার তার পিতামাতার চেয়ে তার উপর অধিক কর্তৃত্ব থাকে এবং তার স্বামীর আনুগত্য করা তার জন্য বাধ্যতামূলক।স্বামীর অনুমতি ব্যতীত তার ঘর থেকে বের হওয়ার অধিকার নেই, স্ত্রীর পিতা-মাতা বা অন্য কেউ আদেশ দিলেও স্ত্রী স্বামীর অনুমতি ব্যতীত বাইরে বের হ’তে পারবে না। এই ব্যাপারে চার ইমামের ঐক্যমত রয়েছে। (মাজমূ‘উল ফাতাওয়া খন্ড: ৩২ পৃষ্ঠা: ৩৬১)।
.
সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) ‘আলিমগণ বলেছেন: “শরিয়াতে এমন কিছু নেই যা প্রমাণ করে যে স্ত্রী তার স্বামীর মাকে সাহায্য করতে বাধ্য। তবে যতটুকু সম্ভব ন্যায় সঙ্গত ভাবে স্ত্রীর স্বামীর পরিবারের সাথে ভালো আচরণ করবে। (ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ;
খন্ড: ১৯ পৃষ্ঠা: ২৬৪-২৬৫)
.
পরিশেষে উপরোক্ত আলোচনা থেকে একথা পরিস্কার যে, স্বামীর পিতা-মাতার খেদমত করা স্ত্রীর উপর আবশ্যক নয়।অর্থাৎ শশুর-শাশুড়ী তাকে যা করতে আদেশ করবে তাতে সে তাদের আনুগত্য করতে বাধ্য নয়, স্বামী তা গ্রহণ করুক বা না করুক, তবে স্ত্রীর জন্য তার শশুর শাশুড়ির সাথে যথাসাধ্য ভালো ব্যবহার করা জরুরি। এটি তার স্বামীর প্রতি তার আনুগত্যের বিরোধিতা করে না। (বিস্তারিত জানতে দেখুন ইসলামি সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-১৪০৬৮৭) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
__________________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

Exit mobile version