Site icon Tawheed Media

সামাজিক অবক্ষয়ে ক্যাসিনোর ভয়াবহতা

ভূমিকা:
প্রিয় পাঠক, মানুষ সামাজিক জীব। মহান আল্লাহ মানুষকে সামাজিক জীব হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। এই সামাজিক জীবন যাপনে মানুষ নানারকম সুবিধা-অসুবিধা ভোগ করে থাকে আর এই সুবিধা-অসুবিধার ক্ষেত্রেও এই সমাজেরই এক শ্রেণির মানুষের হাত থাকে। ভাল মানুষগুলো সমাজকে ভাল কিছু উপহার দেয়ার চেষ্টা করে। বিপরীতে মন্দ লোকগুলো সমাজে মন্দ বিস্তারের চেষ্টা করে।

আজকের এই পরিসরে আমি এই লিখনিতে তুলে ধরতে চাই বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পাপাচারের এক গোপন জগত ক্যাসিনো নিয়ে।

❑ ক্যাসিনো কি?

মূলত: ক্যাসিনো (Casino) শব্দটি ইংরেজি যার বাংলা অর্থ হয়: নাচ বা জুয়াঘর।

মুক্ত বিশ্বকোষ-উইকিপিডিয়ায় বলা হয়েছে:

“ক্যাসিনো হচ্ছে বিভিন্ন ধরণের জুয়া খেলার একটি নির্দিষ্ট স্থান যাকে বাংলায় জুয়ার আড্ডা বা আসর বলা যায়। কিন্তু সেটা হয় সুবিশাল পরিসরে। সাধারণত ক্যাসিনো এমনভাবে বানানো হয় যে এর সাথে কিংবা পাশাপাশি হোটেল, রেস্টুরেন্ট, শপিংমল, আনন্দভ্রমণ জাহাজ এবং অন্যান্য পর্যটন আকর্ষণ থাকে৷ কিছু কিছু ক্যাসিনোয় সরাসরি বিনোদন প্রদান যেমন স্ট্যান্ড আপ কমেডি, কনসার্ট, খেলাধুলা ইত্যাদির ব্যবস্থা থাকে।”

❑ সামাজিক অবক্ষয়ে ক্যাসিনো:

এটি আধুনিক যুগের এলিটদের বিলাসিতার একটি মাধ্যম। ক্যাসিনোর মাধ্যমে এক শ্রেণির মানুষ বিশেষকরে আয়োজক এবং ব্যবস্থাপকরা গাণিতিক হারে লাভবান হচ্ছে। পক্ষান্তরে অধিকাংশ গ্রাহক সব হারিয়ে পথে নেমে যাচ্ছে, এতেকরে সমাজের মানুষের মাঝে সামাজিক বৈষম্যতা সৃষ্টি হচ্ছে এবং এক পর্যায়ে পুঁজি হারা লোকগুলো নানান রকম অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িয়ে সমাজের শান্তিময় পরিবেশকে বিনষ্ট করছে।

❑ ইসলামের আলোকে ক্যাসিনো:

◈ ইসলামের দৃষ্টিতে ক্যাসিনা বা জুয়া খেলা হারাম:

ইসলাম শান্তির ধর্ম। অতএব মানব জীবনের প্রতিটি স্তরেই ইসলাম শান্তির দিক নির্দেশনা দিয়েছে। তাই সমাজ অবক্ষয়ের এই ক্যান্সারকে ইসলাম হারাম ঘোষণা করেছে।

মহাগ্রন্থ আল কুরআনের সূরা মায়েদায় এরশাদ হয়েছে:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنصَابُ وَالْأَزْلَامُ رِجْسٌ مِّنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
إِنَّمَا يُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَن يُوقِعَ بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَاءَ فِي الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ وَيَصُدَّكُمْ عَن ذِكْرِ اللَّـهِ وَعَنِ الصَّلَاةِ ۖ فَهَلْ أَنتُم مُّنتَهُونَ
“হে মুমিনগণ, যে মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক শরসমূহ এসব শয়তানের অপবিত্র কার্য বৈ তো নয় । অতএব, এগুলো থেকে বেঁচে থাক-যাতে করে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও।
শয়তান তো চায়, মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মাঝে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করতে এবং আল্লাহর স্মরণ ও নামায থেকে তোমাদেরকে বিরত রাখতে। অতএব তোমরা এখনো কি নিবৃত্ত হবে?” (সূরা মায়েদা: ৯০ ও ৯১)

◈ ক্যাসিনোর জন্য আহ্বান করা একটি কাফফারা যোগ্য অপরাধ:

সহীহ বুখারী এবং মুসলিমের হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আবু হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
قالَ لِصاحِبِهِ: تَعالَ أُقامِرْكَ، فَلْيَتَصَدَّقْ
“যে ব্যক্তি তার সাথীকে এই বলে ডাকবে যে আস, আমি তোমার সাথে জুয়া খেলি-সে যেন (কাফফারা সরূপ) সদকা করে।” (বুখারী: ৪৮৬০ মুসলিম: ১৬৪৭)

◈ ক্যাসিনো খেলা শুকরের রক্তে হাত রক্তাক্ত করার অন্তর্ভুক্ত:

সুলাইমান বিন বুরাইদা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন:
مَنْ لَعِبَ بِالنَّرْدَشِيرِ فَكَأَنَّمَا صَبَغَ يَدَهُ فِي لَحْمِ خِنْزِيرٍ وَدَمِهِ
“যে ব্যক্তি লুডু দিয়ে খেলা-ধুলা করল সে যেন স্বীয় হাতকে শুকরের রক্তে রক্তাক্ত করল।” (মুসলিম: ২২৬০ আবু দাউদ: ৪৯৩৯ ইবনে মাজাহ: ৩৭৬৩)

উল্লেখ্য যে আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন: “দাবা এবং লুডু খেলা জুয়ার অন্তর্ভুক্ত (ইবনে আবি শাইবা)

❑ সাহাবীগণের দৃষ্টিতে ক্যাসিনোঃ

● ক. আবদুল্লাহ ইবনে ওমার (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) যদি কাউকে জুয়া খেলতে দেখতেন তাহলে তাকে প্রহার করতেন এবং জুয়ার সরঞ্জাম ভেঙ্গে চুরমার করে দিতেন। (সহীহুল আদাবিল মুফরাদ-৯৬০)
● খ. ওসমান (রাযিয়াল্লাহু আনহুর) শাসনামলে তিনি মিম্বরে আরোহণ করে ঘোষণা করলে যে হে মানব মণ্ডলী কারো ঘরে যদি জুয়ার সরঞ্জাম থাকে সেযেন তা বাহিরে বের করে ভেঙ্গে ফেলে। (বাইহাকী ১০খণ্ড, ২১৫ পৃষ্ঠা)
● গ. আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) ঘর থেকে বের হয়ে কাওকে জুয়া খেলতে দেখলে তাকে সকাল থেকে নিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত বন্দি করে রাখতেন।(আদাবুল মুফরাদ-১২৬৮)

❑ বাঁচার উপায়:

◉ আল্লাহভীরুতা:

মানুষের মাঝে যখন আল্লাহ ভীরুতা আসবে তখন সে সর্বপ্রকার অন্যায় এবং অপরাধ থেকে নিজেকে বিরত রাখবে।

◉ সময়কে কাজে লাগানো:

অবসর সময়কে কোন না কোন কাজে লাগানোর চেষ্টা করতে হবে। কেন না অবসর সময়ে শয়তান মানুষকে বিপথগামী করা চেষ্টা করে। তাই এসময়টাকে কোন না কোন ইবাদতের মাধ্যমে অতিবাহিত করতে হবে।

◉ দায়িত্বশীলদের সজাগ দৃষ্টি: যারা সমাজের অভিভাবক তারা স্বীয় দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করা।

❑ উপসংহার:

প্রিয় পাঠক! এই পৃথিবী আমাদের ক্ষণস্থায়ী ঠিকানা। তাই আমাদের উচিত আমাদের চিরস্থায়ী ঠিকানা তথা পরকালকে অগ্রাধিকার দেয়া এবং পাপের পরিণতি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে নিজেকে সর্বপ্রকার পাপ থেকে বিরত রাখার জন্য চেষ্টা করা।
আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আমীন।
▬▬▬◄❖►▬▬▬
লেখক: আবদুল্লাহিল হাদী মু.ইউসুফ
সম্পাদক: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল

Exit mobile version