Site icon Tawheed Media

সন্তান হচ্ছে না। আল্লাহর উপর ভরসা করে তাকদীরের প্রতি সন্তুষ্ট থাকুন

পরিপূর্ণ ভাবে দ্বীন না বুঝার কারনে বর্তমান সমাজে সন্তানহীনা নারীদের ব্যাপারে মানুষ বিভিন্ন ধরনের আজে বাজে মন্তব্য করে এবং নানা রকমের কটু কথা বলে। অনেকের চোখে তারা হতভাগা, অলক্ষুণে, অভিশপ্ত আরো কত কী! এমনকি সন্তান না হওয়ার কারনে অনেক সুখী দম্পতির মধ্যে অভিমান থেকে শুরু করে বিচ্ছেদ পর্যন্ত ঘটে। যারা এই ধরনের কথা বলেন, সুখী সংসার ভাঙ্গনে সহযোগিতা করেন তাদের জেনে রাখা উচিত যে,
.
উম্মুল মুমিনিন আম্মাজান আয়িশা (রাদি.) সন্তানহীনা ছিলেন। অথচ আসমানের নীচে জমিনের উপরে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আয়িশা (রাদি.) থেকে বেশি প্রিয় আর কেউ ছিল না, আর কিছু ছিল না। আনাস (বিন মালিক) (রাঃ) বলেন, রাসূল (ﷺ) জিজ্ঞেস করা হল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! কোন ব্যক্তি আপনার নিকট অধিক প্রিয়? তিনি বলেন, আয়িশাহ। আবার বলা হল, পুরুষদের মধ্যে? তিনি বলেন, তার পিতা অর্থাৎ (আবু বকর রাঃ)। (সুনানে তিরমিযী ৩৮৯০; সুনানে ইবনে মাজাহ ১০১)
.
আম্মাজান আয়িশাহ যে সবচেয়ে প্রিয় ছিলেন শুধু তাই নয় রাসূল (ﷺ)-এর স্ত্রীগনের মধ্যে একমাত্র আম্মাজান আয়িশাহ (রাঃ) ছিলেন সর্বাধিক জ্ঞানী, বুদ্ধিমতী ও হাদীসজ্ঞ মহিলা। জ্যেষ্ঠ সাহাবীগণ বিভিন্ন ফাৎওয়ায় তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তন করতেন ও তাঁর সিদ্ধান্তকে অগ্রাধিকার দিতেন (যাদুল মা‘আদ ১/১০৩)। আবু মূসা আশ‘আরী (রাঃ) বলেন, আমরা কোন বিষয়ে আটকে গেলে আয়েশা (রাঃ)-এর নিকটে গিয়ে তার সমাধান নিতাম (সুনানে তিরমিযী হা/৩৮৮৩)।
.
আম্মাজান আয়িশাহ (রাঃ) ছিলেন সেই নারী তিনি ছাড়া আর কোন স্ত্রীর সাথে এক কম্বলের নিচে থাকাকালে রাসূল ﷺ এর কাছে ওয়াহী আসেনি। (সহীহ বুখারী ২৫৮১; সহীহ মুসলিম ২৪৪১; নাসায়ী ৩৯৫০) আম্মাজান আয়িশাহ (রাঃ) ছিলেন সেই নারী যাকে জিবরীল (আঃ) সালাম দিয়েছেন (সহীহ বুখারী ৩৭৬৮; মিশকাত ৬১৮৭)
.
এ তো গেল সন্তান না হওয়ার বর্ননা আবার যে সকল নারীদের সন্তান হয়েছিল কিন্তু কোন কারনে মারা গেলেও সেই নারীকে নিয়ে সমাজে বিভিন্ন বাজে কথা বলা হয়, কানাঘুষা হয়। অথচ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একাধিক ছেলে সন্তান শিশু অবস্থায় মারা গেছেন। কাসিম মাত্র ১৭ মাস বয়সে মারা যান। কাসিমকে গর্ভে ধারণ করেছেন পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ চার নারীর একজন উম্মুল মুমিনিন খাদিজা (রা.)। এমনকি মা খাদিজার গর্ভে আরেকজন ছেলে জন্ম নেন আবদুল্লাহ নামে। তিনিও শিশু অবস্থায় মারা যান। আলী (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, মারইয়াম বিনতু ইমরান ছিলেন সকল নারীর মাঝে শ্রেষ্ঠ। আর খাদীজাহ্ বিনতু খুওয়াইলিদ (রাঃ) হলেন (বর্তমান উম্মতের) সমগ্র নারী সমাজের মধ্যে শ্রেষ্ঠ, (সহীহ বুখারী ৩৪৩২; মিশকাত ৬১৮৪)
.
পরিশেষে, প্রকৃত কথা হল: সন্তান দেওয়ার এবং নেওয়ার মালিক একমাত্র মহান আল্লাহ। এটাতে মানুষের কোনো হাত নেই। আল্লাহ না চাইলে কারও সন্তান হবে না আর আল্লাহ চাইলে শত প্রটেকশান আর সতর্কতার পরও গর্ভে সন্তান এসে যায়। কারন মহান আল্লাহ বলেছেন, আল্লাহ যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান দান করেন, যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন অথবা যাকে ইচ্ছা পুত্র ও কন্যা যমজ সন্তান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করেন। নিশ্চয়ই তিনি সর্বজ্ঞ ও সর্বশক্তিমান (সূরা শূরা ৪২/৪৯-৫০)
.
সুতরাং সন্তান না হলে স্বামী-স্ত্রী একে অন্যকে দোষারোপ না করে নেক সন্তান লাভের জন্য একমাত্র করণীয় হ’ল একনিষ্ঠ চিত্তে আল্লাহর নিকটে প্রার্থনা করা। রাসূল (ﷺ) বলেন, তুমি কিছু চাইলে আল্লাহর নিকটেই চাইবে। কোন সাহায্যের প্রয়োজন হলে তাঁর নিকটেই চাইবে। জেনে রেখ! যদি সমস্ত মাখলূক একত্র হয়ে তোমার কোন উপকার বা ক্ষতি করতে চায়, তবুও আল্লাহ তোমার ভাগ্যে যতটুকু লিখে রেখেছেন সেটা ছাড়া তারা তোমার কোন উপকার করতে পারবে না’। (সুনানে তিরমিযী হা/২৫১৬; মিশকাত হা/৫৩০২) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
__________________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

Exit mobile version