Site icon Tawheed Media

শারঈ মানদন্ডে মুনাজাত

শারঈ মানদন্ডে মুনাজাত

শারঈ মানদন্ডে মুনাজাত
জাল হাদীছের কবলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর স্বলাত- এর অংশবিশেষ
শায়খ মুযাফফর বিন মুহসিন

অধিকাংশ মসজিদে ফরয স্বলাতের সালাম ফিরানোর পর পরই দুই হাত তুলে প্রচলিত মুনাজাত করা হয়। অথচ এই প্রথার শারঈ কোন ভিত্তি নেই। এরপরও বিদ‘আতের পৃষ্ঠপোষক একশ্রেণীর আলেম কিছু বানোয়াট ও মিথ্যা বর্ণনা পেশ করে এর পক্ষে উকালতি করে থাকেন। তাদের দাপট দেখে মনে হয় এটাই শরী‘আত, শরী‘আতে আর কোন বিধান নেই;শিরক-বিদ‘আত, সূদ-ঘুষ, জুয়া-লটারী, হারাম-নোংরামী পরিত্যাগ না করলেও তথাকথিত মিথ্যা মুনাজাতই তাদেরকে যেন জান্নাতে নিয়ে যাবে। উক্ত কাল্পনিক প্রথাকে চালু রাখার জন্য একশ্রেণীর আলেম যে সমস্ত বর্ণনা পেশ করে থাকেন, তার কয়েকটি নিম্নে উল্লেখ করা হল- শারঈ মানদন্ডে মুনাজাত

(১) عَنِ الْأَسْوَدِ الْعَامِرِىِّ عَنْ أَبِيْهِ قَالَ صَلَّيْتُ مَعَ رَسُوْلِ اللهِ الْفَجْرَ فَلَمَّا سَلَّمَ اِنْحَرَفَ وَرَفَعَ يَدَيْهِ وَدَعَا.

(১) আসওয়াদ আল-আমেরী তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, আমি একদা রাসূল (ﷺ)-এর সাথে ফজরের স্বলাত আদায় করলাম। তিনি সালাম ফিরিয়ে ঘুরে বসলেন এবং তাঁর দু’হাত উঠালেন ও দু‘আ করলেন।[1]

তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি জাল। সনদগত ত্রুটি হল- বলা হয়ে থাকে আসওয়াদ আল-আমেরী। অথচ মূল নাম হল, জাবির ইবনু ইয়াযীদ ইবনুল আসওয়াদ আস-সাওয়াঈ।[2] উপনাম হিসাবে আল-আমেরী উল্লেখ করা হয়। সেটাও ভুল। মূলতঃ এই লক্বব হবে তার পূর্বের রাবীর নামের সাথে। অর্থাৎ ইয়া‘লা ইবনু আত্বা আল-আমেরী।[3]

দ্বিতীয়তঃ সবচেয়ে মারাত্মক যে বিভ্রান্তি তা হল, মূল হাদীছের সাথে অন্য কারো কথা যোগ করা । উক্ত হাদীছের শেষের অংশ (وَرَفَعَ يَدَيْه وَدعَا) ‘অতঃপর তিনি দু’হাত তুললেন এবং দু‘আ করলেন’ মূল কিতাবে নেই। হাদীছটি মিয়া নাযীর হুসাইন মুহাদ্দিছ দেহলভী (১৮০৫-১৯০২ খৃঃ) তাঁর ‘ফাতাওয়া নাযীরিয়াতে’ উল্লেখ করেছেন এভাবেই। অতঃপর আবদুর রহমান মুবারকপুরী (১৮৬৫-১৯৩৫ খৃঃ)ও তাঁর গ্রন্থ ‘তুহফাতুল আহওয়াযীতে’ হুবহু ঐভাবে উল্লেখ করেছেন এবং তাঁরা উভয়েই মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বার বরাত দিয়েছেন। কিন্তু মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাতে শেষের ঐ অংশটুকু নেই।[4]

শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেন, এতে মিথ্যা ও ত্রুটি উভয়টিই সংযুক্ত হয়েছে।[5] অতঃপর তিনি বলেন,

أَمَّا الْكِذْبُ فَقَوْلُهُ وَرَفَعَ يَدَيْهِ وَدَعَا فَإِنَّ هَذِهِ الزِّيَادَةِ لَاأَصْلَ لَهَا فِى الْمُصَنَّفِ لَا عِنْدَ غَيْرِهِ مِمَّنْ أَخَرَجَ الْحَدِيْثَ وَإِنَّمَا هِىَ مِمَّا أَمْلَاهُ عَلَيْهِ هَوَاهُ وَالْعِيَاذُ بِاللهِ تَعَالَى.

‘মিথ্যা হওয়ার কারণ হল, উক্ত বাড়তি অংশ। আর মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাতে এই অতিরিক্ত অংশের অস্তিত্ব নেই। অন্য কারো নিকটেও নেই, যারা এই হাদীছ বর্ণনা করেছেন। এটা মূলতঃ প্রবৃত্তির তাড়নায় কেউ সংযোগ করেছে। এর থেকে আমরা আল্লাহর কাছে পরিত্রাণ চাচ্ছি!’ [6]

এক্ষণে প্রশ্ন হল, এই অতিরিক্ত অংশটুকু তাঁরা কিভাবে স্ব স্ব গ্রন্থে উল্লেখ করলেন? বলা যায়, তারা মূল কিতাব না দেখেই উল্লেখ করেছেন। বিশেষ করে আল্লামা আব্দুর রহমান মুবারকপুরী (রহঃ) যে মূল গ্রন্থ না দেখেই উল্লেখ করেছেন, তা তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন। তিনি উক্ত বর্ণনা উল্লেখ করে বলেন, ‘এভাবেই কিছু ওলামায়ে কেরাম হাদীছটি সনদ ছাড়াই উল্লেখ করেছেন এবং মুছান্নাফ ইবনে শায়বার দিকে সম্বোন্ধিত করেছেন। আমি এর সনদ সম্পর্কে অবগত নই’।[7]

অনুরূপ মিয়া নাযীর হুসাইন দেহলভীও যে মূল কিতাব না দেখেই উদ্ধৃত করেছেন, তাতে কোন সন্দেহ নেই। কারণ ফাতাওয়া নাযীরিয়াতে এ সংক্রান্ত ৪টি প্রশ্নোত্তর উল্লেখ করা হয়েছে। চারটিতেই উক্ত হাদীছ একইভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।[8] অতএব এটা জানার পরও যদি এই বর্ণনাকে মুনাজাতের দলীল হিসাবে পেশ করা হয়, তাহলে রাসূল (ﷺ)-এর নামে মিথ্যারোপ করা হবে।

(২) عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ عَنِ النَّبِىِّ أَنَّهُ قَالَ مَا مِنْ عَبْدٍ بَسَطَ كَفَّيْهِ فِىْ دُبُرِ كُلِّ صَلَاةٍ ثُمَّ يَقُوْلُ اللهُمَّ إِلهِىْ وَإِلهَ إِبْرَاهِيْمَ وَإِسْحَاقَ وَيَعْقُوْبَ وَإلهَ جِبْرِيْلَ وَمِيْكَائِيْلَ وَإِسْرَافِيْلَ عَلَيْهِمُ السَّلَامُ أَسْأَلُكَ أَنْ تَسْتَجِيْبَ دَعْوَتِىْ فَإِنِّىْ مُضْطَرُّ وَتَعْصِمُنِىْ فِىْ دِيْنِىْ فَإِنَّ مُبْتَلى وَتَنَالُنِىْ بِرَحْمَتِكَ فَإنِّىْ مُذْنِبٌ وَتُنْفِىْ عَنِّىْ الْفَقْرَ فَإنِّىْ مُتَمَسِّكُنَّ إلّا كَانَ حَقًّا عَلى اللهِ عَزَّ وَجَلَّ أَنْ لَّايَرُدَّ يَدَيْهِ خَائِبِيْنَ.

(২) আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী করীম (ﷺ) বলেছেন, ‘কোন বান্দা যখন প্রত্যেক স্বলাতের পর স্বীয় দু’হাত প্রসারিত করে বলে, হে আমার আল্লাহ! ইবরাহীম, ইসহাক্ব, ইয়াকূবের আল্লাহ এবং জিবরীল, মীকাঈল ও ইসরাফীলের আল্লাহ! আমি আপনার নিকট কামনা করছি যে, আপনি আমার দু‘আ কবুল করুন। কারণ আমি বিপদগ্রস্ত। আমাকে আমার দ্বীনের উপর অটল রাখুন। কারণ আমি দুর্দশা কবলিত। আমার প্রতি রহম করুন, আমি পাপী। আমার দরিদ্র্যতা দূর করুন, নিশ্চয়ই আমি ধৈর্যধারণকারী। তখন তার দু’হাত নিরাশ করে ফিরিয়ে না দেওয়া আল্লাহর জন্য বিশেষ কর্তব্য হয়ে যায়’। [9]

তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি জাল। উক্ত বর্ণনাটি মুহাম্মাদ তাহের পাট্টানী তার জাল হাদীছের গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন।[10] কারণ এটি বিভিন্ন দোষে দুষ্ট। (ক) এর সনদে দুইজন রাবীর নাম ভুল রয়েছে। আবদুল আযীয ইবনু আবদুর রহমান আল-ক্বারশী। অথচ রিজালশাস্ত্রে এ নামের কোন ব্যক্তিকে পাওয়া যায় না। মূল নাম হবে আব্দুল আযীয ইবনু আব্দুর রহমান আল-বালেসী।[11]

(খ) আবু ইয়াকূব ইসহাক্ব ইবনু খালিদ ইবনু ইয়াযীদ আল-বালেসী নামক রাবীও দুর্বল।[12] (গ) আব্দুল আযীয নামক বর্ণনাকারীও ত্রুটিপূর্ণ।[13] (ঘ) খুছাইফ নামক ব্যক্তিও নানা অভিযোগে অভিযুক্ত।[14] উল্লেখ্য যে, উক্ত মর্মে আরো অনেক জাল ও যঈফ হাদীছ রয়েছে। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য ‘শারঈ মানদন্ডে মুনাজাত’ বইটি দেখুন।

[1]. শায়খুল কুল ফিল কুল সাইয়িদ নাযীর হুসাইন মুহাদ্দিছ দেহলভী (১৮০৫-১৯০২), ফাতাওয়া নাযীরিয়াহ (দিল্লী: ইদারাহ নূরুল ঈমান, ৩য় প্রকাশ: ১৪০৯/১৯৮৮), ১/৫৬৫ পৃঃ; আব্দুর রহমান মুবারকপুরী, তুহফাতুল আহওয়াযী (বৈরুত: দারুল কুতুব আল-ইলমিয়াহ, ১৪১০/১৯৯০), ২/১৭১ পৃঃ, হা/২৯৯ এর ব্যাখ্যা দ্রঃ, ‘স্বলাত’ অধ্যায়, ‘সালামের পর কী বলা হয়’ অনুচ্ছেদ।
[2]. তাহযীবুত তাহযীব ২/৪২ পৃঃ, রাবী- ৯৩০।
[3]. তাহযীবুত তাহযীব, ১১/৩৫১ পৃঃ, রাবী- ৮১৬৬।
[4]. দেখুনঃ হাফেয আব্দুল্লাহ ইবনু আবী শায়বাহ, আল-মুছান্নাফ (বৈরুত ছাপা: দারুল ফিকর, প্রথম প্রকাশঃ ১৪০৯ হিঃ/১৯৮৯ খৃঃ), ১ম খন্ড, পৃঃ ৩৩৭।
[5]. َوفِيْهِ كِذْبٌ وَخَطَأٌ -সিলসিলা যঈফাহ ১২/৪৫৩ পৃঃ।
[6]. সিলসিলা যঈফাহ ১২/৪৫৩ পৃঃ।
[7]. তুহফাতুল আহওয়াযী শরহে তিরমিযী, ২/১৭১ পৃঃ, ২৯৯ নং হাদীছের শেষ আলোচনা দ্রঃ-كَذَا ذَكَرَ بَعْضُ الْأَعْلَامِ هَذَا الْحَدِيْثَ بِغَيْرِ سَنَدِ الْمُصَنَّفِ وَلَمْ أَقِفْ عَلَى سَنَدِهِ।
[8]. দেখুনঃ ফাতাওয়া নাযীরিয়াহ, ১/৫৬০-৫৭০ পৃঃ।
[9]. হাফেয আবুবকর ইবনুস সুন্নী (মৃঃ ৩৬৪হিঃ), আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাহ হা/১৩৫, পৃঃ ৪৯; মু‘জামু ইবনুল আরাবী, ১১৭৩।
[10]. মুহাম্মাদ তাহের পাট্টানী, তাযকিরাতুল মাওযু‘আত (বৈরুত ছাপা : ১৯৯৫), পৃঃ ৫৮।
[11]. আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনু আহমাদ আয-যাহাবী, মীযানুল ই‘তিদাল ফী নাক্বদির রিজাল (বৈরুত : দারুল মা‘রেফাহ, ১৯৬৩খৃঃ/১৩৮২হিঃ), ২/৬৩১ পৃঃ, রাবী নং-৫১১২।
[12]. رَوَى غَيْرَ حَدِيْثٍ مُنْكَرٍ يَدُلُّ عَلَى ضُعْفِهِ -মীযানুল ই‘তিদাল ১ম খন্ড, পৃঃ ১৯০।
[13]. قَدْ حَدَّثَ عَبْدُ الْعَزِيْزِ عَنْهُ عَنْ أَنَسٍ بِحَدِيْثٍ مُنْكَرٍ -আহমাদ ইবনু আলী ইবনু হাজার আল-আসক্বালানী, তাহযীবুত তাহযীব (বৈরুত : দারুল কুতুব আল-ইলমিয়াহ, ১৪১৫/১৯৯৪), ৩/১৩০পৃঃ, রাবী নং ১৭৯৫ -এর আলোচনা।
[14]. তাহযীবুত তাহযীব, ৩/১৩০।

শারঈ মানদন্ডে মুনাজাত :

‘মুনাজাত’ (مُنَاجَاةٌ) আরবী শব্দ। সেই থেকে نَاجَى يُنَاجِىْ مُنَاجَاةً ব্যবহার হয়। এর অর্থ পরস্পর চুপি চুপি কথা বলা।[1] শরী‘আতের পরিভাষায় মুনাজাত হল, স্বলাতের মধ্যে আল্লাহ তা‘আলার সাথে মুছল্লীর চুপি চুপি কথা বলা। সহিহ বুখারী ও মুসলিম সহ অন্যান্য হাদীছ গ্রন্থে উক্ত অর্থেই মুনাজাত শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,

إِنَّ أَحَدَكُمْ إِذاَ قَامَ فِىْ صَلاَتِهِ فَإِنَّهُ يُنَاجِىْ رَبَّهُ.

‘নিশ্চয়ই তোমাদের কেউ যখন তার স্বলাতে দাঁড়ায়, তখন সে তার রবের সাথে মুনাজাত করে’।[2] অন্য হাদীছে এসেছে, إِنَّ الْمُؤْمِنَ إِذاَ كَانَ فِىْ الصَّلَاةِ فَإِنَّهُ يُنَاجِىْ رَبَّهُ ‘নিশ্চয়ই মুমিন যখন স্বলাতের মধ্যে থাকে তখন সে তার রবের সাথে মুনাজাত করে’।[3] আরেক হাদীছে এসেছে, إِنَّ الْمُصَلِّىْ يُنَاجِىْ رَبَّهُ ‘নিশ্চয়ই মুছল্লী তার রবের সাথে মুনাজাত করে’।[4] অন্য হাদীছে রাসূল (ﷺ) বলেন,

إِذَا قَامَ أَحَدُكُمْ إِلَى الصَّلَاةِ فَلَا يَبْصُقْ أَمَامَهُ فَإِنَّمَا يُنَاجِىْ اللهَ مَادَامَ فِىْ مُصَلَّاهُ.

‘যখন তোমাদের কেউ স্বলাতে দাঁড়াবে, তখন সে যেন তার সামনে থুথু না ফেলে। কারণ সে যতক্ষণ মুছাল্লাতে স্বলাত রত থাকে, ততক্ষণ আল্লাহর সাথে মুনাজাত করে’।[5]

উল্লেখ্য, হাদীছে উল্লিখিত يُنَاجِى শব্দটি ফে‘ল বা ক্রিয়া। আর তার মাছদার বা ক্রিয়ামূল হল (مُنَاجَاةٌ) মুনাজাত।

মুছল্লী স্বলাতের মধ্যে সারাক্ষণই যে মুনাজাত করে এবং পুরো স্বলাতটাই যে তার জন্য মুনাজাত তা উপরিউক্ত হাদীছগুলো থেকে পরিষ্কার ফুটে উঠেছে। এটাও স্পষ্ট হয়েছে যে, মুছল্লী যখন স্বলাত শেষ করে, তখন তার মুনাজাতও শেষ হয়ে যায়। মুছল্লী স্বলাতের মাঝে আল্লাহর সাথে কিভাবে মুনাজাত করে তাও হাদীছে কুদসীতে বর্ণিত হয়েছে-

قَالَ اللهُ تَعَالىَ قَسَمْتُ الصَّلَاةَ بَيْنِيْ وَبَيْنَ عَبْدِيْ نِصْفَيْنِ وَلِعَبدِىْ مَا سَأَلَ فَإِذَا قَالَ الْعَبْدُ اَلْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ قَالَ اللهُ حَمِدَنِىْ عَبْدِىْ وَإِذَا قَالَ الرَّحْمَنِ الرَّحِيْمِ قَالَ اللهُ تَعَالى أََثْنَى عَلَىَّ عَبْدِىْ وَإِذَا قَالَ مَالِكِ يَوْمِ الدِّيْنِ قَالَ مَجَّدَنِىْ عَبْدِىْ وَإِذَا قَالَ إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِيْنُ قَالَ هَذَا بَيْنِيْ وَبَيْنَ عَبْدِيْ وَلِعَبْدِىْ مَا سَأَلَ فَإِذَا قَالَ اِهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيْمَ صِرَاطَ الَّذِيْنَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوْبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّيْنَ قَالَ هذَا لِعَبْدِىْ وَلِعَبْدِىْ مَا سَأَلَ.

‘আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমি স্বলাতকে আমার মাঝে ও আমার বান্দার মাঝে দুই ভাগে ভাগ করেছি। আমার বান্দার জন্য সেই অংশ, যা সে চাইবে। বান্দা যখন বলে, ‘আল-হামদুলিল্লা-হি রাবিবল ‘আলামীন’ (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি জগৎ সমূহের প্রতিপালক)। তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমার প্রশংসা করল। বান্দা যখন বলে, ‘আর-রহমা-নির রহীম’ (যিনি করুণাময় পরম দয়ালু)। তখন আল্লাহ বলেন, বান্দা আমার গুণগান করল। বান্দা যখন বলে, ‘মা-লিকি ইয়াওমিদ্দীন’ (যিনি বিচার দিবসের মালিক) তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমাকে সম্মান প্রদর্শন করল। বান্দা যখন বলে, ইয়্যা-কানা‘বুদু ওয়া ইয়্যা-কানাসতাঈন (আমরা কেবল আপনারই ইবাদত করি এবং আপনার নিকটই সাহায্য প্রার্থনা করি)। তখন আল্লাহ বলেন, এটা আমার ও আমার বান্দার মাঝে আধাআধি ভাগ (অর্থাৎ ইবাদত আমার জন্য আর প্রার্থনা তার জন্য) এবং আমার বান্দার জন্য সেই অংশ রয়েছে যা সে চাইবে। যখন বান্দা বলে, ‘ইহদিনাছ ছিরাত্বাল মুস্তাক্বীম, ছিরা-ত্বল্লাযীনা আন‘আমতা ‘আলায়হিম, গাইরিল মাগযূবি ‘আলায়হিম ওয়ালায যা-ল্লীন (আপনি আমাদেরকে সরল পথ প্রদর্শন করুন। তাদের পথ যাদের উপর আপনি রহম করেছেন। তাদের পথ নয় যারা অভিশপ্ত এবং পথভ্রষ্ট)। তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা যা চেয়েছে, তা তার জন্য’।[6] (আমীন)।

অতএব, মুনাজাত বা আল্লাহর কাছে বিশেষভাবে প্রার্থনা করার সর্বশ্রেষ্ঠ স্থান হল স্বলাত (বাক্বারাহ ৪৫)। সালাম ফিরানোর পর মুনাজাতের স্থান নেই। উপরিউক্ত সহিহ হাদীছ দ্বারা তা-ই প্রমাণিত হয়। আরো বিস্তারিত দ্রঃ ‘শারঈ মানদন্ডে মুনাজাত’ শীর্ষক বই।

[1]. আল-মু‘জামুল ওয়াসীত্ব (ইস্তাম্বুল-তুরকী : আল-মাকতাবুল ইসলামী, দ্বিতীয় প্রকাশঃ ১৯৭২খৃঃ/১৩৯২হিঃ), পৃঃ ৯০৫; আল-মুনজিদ ফিল লুগাহ ওয়াল আ‘লাম (বৈরুত-লেবানন : আল-মাকতাবাতুশ শারক্বিইয়াহ, ৪১তম প্রকাশ : ২০০৫), পৃঃ ৭৯৩।
[2]. সহিহ বুখারী হা/৪০৫, ১ম খন্ড, ৫৮, (ইফাবা হা/৩৯৬, ১/২২৭ পৃঃ), ‘স্বলাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৩৩। এছাড়া দ্রঃ হা/৪১৭, ৫৩১, ৫৩২ ও ১২১৪, ১ম খন্ড, পৃঃ ৫৯, ৭৬ ও ১৬২।
[3]. সহিহ বুখারী হা/৪১৩, ১/৫৯ পৃঃ, (ইফাবা হা/৪০২, ১/২২৯ পৃঃ), ‘স্বলাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৩৬।
[4]. মিশকাত হা/৮৫৬, ১/২৭১ পৃঃ, সনদ সহিহ; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৭৯৬, ২/২৮৪ পৃঃ।
[5]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, সহিহ বুখারী হা/৪১৬, ১/৫৯ পৃঃ, (ইফাবা হা/৪০৫, ১/২৩০ পৃঃ); সহিহ মুসলিম হা/১২৩০; ১ম খন্ড, পৃঃ ২০৭, ‘মসজিদ ও স্বলাতের জায়গা সমূহ’ অধ্যায়; মিশকাত হা/৭১০, পৃঃ ৬৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৬৫৮, ২/২১৯ পৃঃ; ‘মসজিদ ও স্বলাতের স্থান সমূহ’ অনুচ্ছেদ।
[6]. সহিহ মুসলিম হা/৯০৪, ১/১৬৯-৭০ পৃঃ, (ইফাবা হা/৭৬২), ‘স্বলাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১১; মিশকাত হা/৮২৩, পৃঃ ৭৮-৭৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৭৬৬, মিশকাত ২/২৭২ পৃঃ ।

Exit mobile version