Site icon Tawheed Media

মানবতার শিক্ষক

মূলঃ যুবাঈর আলী যাঈ
অনুবাদঃ আবু হিশাম মুহাম্মাদ ফুয়াদ

 

 নাবি কারিম ﷺ বলেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা আমাকে কষ্ট দানকারী ও কঠোরতা প্রয়োগকারী হিসেবে প্রেরন করেন নি বরং আমাকে কোমলতা প্রদর্শনকারী (উত্তম) শিক্ষক হিসেবে প্রেরন করেছেন।” [1]

সাইয়্যেদুনা মুয়াবিয়া (রা.) একদা হঠাৎ সালাতের মাঝে (না জানার কারণে) দুনিয়াবী কথা বলে ফেলেন! তারপর কি হল? মুয়াবিয়া (রা.) তাঁর পবিত্র জবানেই বর্ননা করছেন। তিনি বলেন, আমার পিতা মাতা রাসুল ﷺ ওপর কুরবান হোক। তাঁর মতো শিক্ষক আমি তাঁর পুর্বে ও পরে একটিও দেখিনি। আল্লাহর কসম ঐ ঘটনার পর তিনি আমাকে ধমকালেন না, মারলেন না এমন কি গাল-মন্দও করলেন না। শুধু বললেন, “এটা হল সালাত, যেখানে কোনো দুনিয়াবি কথা বলা জায়েজ নয়। বরং সালাত তো শুধু মাত্র তাসবিহ, তাকবির ও কিরাআতে কুরআনের-ই স্থান।”  [2]

একদা এক আরব বেদুঈন দাঁড়িয়ে মাসজিদে প্রস্রাব করেন। তাতে মুসল্লিগন ক্ষেপে গিয়ে তাকে মারতে উদ্ধত হলেন কিন্তু কোমল হৃদয়ের  রাসুল ﷺ তাদেরকে থামিয়ে বললেন, “একে ছেড়ে দাও। আর তার প্রস্রাব করা স্থানে এক বালতি পানি ঢেলে দাও। জেনে রাখো – তোমাদের কোমল আচরণ করার জন্য প্রেরণ করা হয়েছে, রূঢ় আচরণ করার জন্য নয়।” [3]

সাইয়্যেদুনা উমার বিন আবি সালামাহ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “আমি ছোট ছেলে অবস্থায় রাসুল ﷺ এর অধিনস্থ ছিলাম। (খাওয়ার সময়) আমার হাত পাত্রের ডানে-বামে ঘোরা ফেরা করত (অর্থাৎ আমি পাত্রের চারিদিক থেকে খেতাম)।” তা দেখে তিনি বললেন,           

       “হে বালক! (শোনো), আল্লাহর নাম নিয়ে খাও (অর্থাৎ বিসমিল্লাহ বলে খাও) ও ডান হাতে খাও এবং কাছে থেকে খাও।

       উমার বিন আবি সালামাহ (রা.) বলেন, এরপর থেকে আমি সবসময় এভাবেই খাবার খেতাম।” [4]

আল্লাহ তায়ালা বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ মু’মিনদের ওপর (বড়) অনুগ্রহ করেছেন, যখন তাদের মধ্য থেকেই একজন রাসুল প্রেরণ করেছেন যিনি তাদের সামনে আল্লাহর আয়াতসমূহ তিলওয়াত করেন এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন সাথে সাথে কিতাব ও হিকমাত (সুন্নাত) এর শিক্ষা দেন।  [5] এই অনুগ্রহের পিছনে রয়েছে ইবরাহীম (আ.) সেই দোয়া যেখানে তিনি বলেছিলেন, “হে আমাদের প্রভু! আপনি  তাদের মধ্য থেকে এমন একজন রাসুল পাঠিয়ে দিন যিনি তাদেরকে আপনার আয়তসমূহ পড়ে শোনাবেন এবং তাদের কিতাব ও হিকমাত শেখাবেন সাথে সাথে তাদেরকে পরিশুদ্ধ করবেন।”  [6]

ইবরাহীম (আ.) এর দো’আটি আল্লাহ অবিকল পূর্ণ করেছেন। পাঠিয়েছেন পৃথিবীর ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ কে। যেমনটি রাসুল ﷺ নিজেই বলছেন, আমি বাবা ইবরাহীম (আ.) এর দো’আর ফল, ভাই ঈসা (আ.) এর সুসংবাদ ও আমার মায়ের দেখা স্বপ্নের বাস্তব রূপ।  [7]

ঈসাঈ (খ্রিষ্টান) দের বিকৃত ইঞ্জিলেও মুহাম্মাদ ﷺ সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বানি করে লিখা হয়েছে, ঈসা (আ.) বলেন, কিন্তু সে অর্থাৎ সত্য আত্মা (মুহাম্মাদ) যখন আসবে তখন তোমাদেরকে সঠিক পথের-ই নির্দেশনা দেবে। কেননা সে নিজের পক্ষ থেকে কোনো বলবে না, সে (রবের পক্ষ) থেকে যা শুনবে তাই বলবে।  [8]

মহা পবিত্র সেই সত্ত্বা, যিনি খতমে নবুওয়্যাতের মুকুট পড়িয়ে পাঠিয়েছেন মানবজাতির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষককে, যাঁর জীবনের প্রতি মূহুর্ত মানবজাতির আঁধার পথের মশাল ও মুক্তির দিশা—

“সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম”

পাদটীকা

1। সহীহ মুসলিম হা/১৪৭৮; দারুস সালাম হা/৩৬৯০

2। সহীহ মুসলিম হা/৫৩৭; দারুস সালাম হা/১১৯৯

3। সহীহ বুখারি হা/২২০; সহীহ মুসলিম হা/২৮৪

4। সহীহ বুখারি হা/৫৩৭৬; সহীহ মুসলিম হা/২০২২

5। আলে ইমরান ০৩/১৬৪

6। বাক্বারাহ ০২/১২৯

7। মুসনাদে আহমাদ ৪/১২৭;হা/১৭১৫;হাদীছের মানঃ হাসান লি যাতিহী

8। ইউহান্না কি ইনযিল, পৃ ১০১, ১৩ নং বাণী

9। মূলঃ মাক্বালাত তাহক্বিকি ইসলাহি আউর ইলমি, যুবাইর আলি যাঈ, পৃঃ ৬৪৩-৬৪৪, kitabosunnat.com

স্বত্বাধিকারী © www.darhadith.com।

Exit mobile version