Site icon Tawheed Media

মনের মধ্যে অধিক দুশ্চিন্তা, হতাশা এবং বিষন্নতা আসলে এর থেকে বাঁচার উপায়

দুশ্চিন্তা হতাশা মূলত শয়তানের পক্ষ থেকে আসে।শয়তান চির অভিশপ্ত। সে মানুষকে সরাসরি পথভ্রষ্ট করতে ব্যার্থ হয়ে এই কুমন্ত্রণা দেয়ার গোপন পন্থা অবলম্বন করে।সে আদম সন্তানকে সর্বদা কুমন্ত্রণা দিয়ে পাপাচারে লিপ্ত করে।সে মানুষকে দ্বীন ইসলাম থেকে বিচ্যূত করার যাবতীয় কলা-কৌশল ব্যবহার করে। সে গুনাহের কাজ লোভনীয় করে পেশ করে এবং মানুষের শিরায় শিরায় মিশে থাকে। মহান আল্লাহ বলেন: শয়তান বলল, আপনি আমাকে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত অবকাশ দিন। আল্লাহ বললেন, ‘তুমি অবকাশ প্রাপ্তদের অন্তর্ভূক্ত/তোমাকে সময় দেওয়া হল’ (সূরা আল-আ‘রাফ, ৭/১৪-১৫) এজন্য আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে শয়তানের ফেতনা থেকে বিরত থাকার কথা বলেছেন (সূরা আল-আ‘রাফ ২৭; সূরা আল-ফাত্বির: ৬; সূরা আন-নিসা: ১১৯)

আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘নিশ্চয় শয়তান মানুষের রক্তনালীতে চলাচল করে (অর্থাৎ রক্ত যেমন মানুষের দেহে চলাচল করে, কোনো সময়ের জন্য বন্ধ হয় না ঠিক তেমনিভাবে শয়তান মানুষকে ধোঁকা দেওয়ার জন্য সর্বদায় অপচেষ্টা চালিয়ে যায় এবং তার পিছে লেগে থাকে’ (সহীহ মুসলিম, হা/২১৭৪; মিশকাত, হা/৬৮) মহান আল্লাহ বলেন, আর যদি শয়তানের প্ররোচনা তোমাকে প্ররোচিত করে, তাহলে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করো।”[সূরা আরাফ: ২০০] আল্লাহ তাআলা আরো বলেন: তার অনিষ্ট থেকে (আশ্রয় প্রার্থনা করছি), যে কুমন্ত্রণা দেয় ও আত্নগোপন করে, যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে।”[সূরা নাস: ৪ ও ৫] মহান আল্লাহ মুমিনদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘তোমরা নিরাশ হয়ো না এবং দুঃখ কর না। যদি তোমরা মুমিন হও, তবে তোমরাই জয়ী হবে’[সূরা আলে ‘ইমরান: ১৩৯]
.
একজন প্রকৃত মুমিনদের কোন দুশ্চিন্তা বা হতাশার কারণ নেই। বেশি দুশ্চিন্তা ভর করলে ইবাদতের মনোনিবেশ করুন এবং নবী-রাসূল, সাহাবী ও পূর্ব ইমামদের জীবনী অধ্যয়ন করুন সাহস পাবেন ইনশাআল্লাহ। এছাড়া চিন্তা থেকে পরিত্রাণের জন্য নিম্নের পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করতে পারেন।

ডিপ্রেশান বা হতাশা ও বিষন্নতা থেকে বাঁচার উপায়
_______________________________________
(১) কুরআন ও সুন্নাহর ইলম অর্জন করা।
(২) পাঁচ ওয়াক্ত সালাত অর্থ বুঝে মনোযোগ ও যত্ন সহকারে পড়া।
(৩) নিয়মিত কুরআন ও তাফসীর পড়া।
(৪) অধিক পরিমাণে আল্লাহর যিকির করা।
(৫) দুরুদ পড়া।
(৬) তাওবা ইস্তিগফার।
(৭) নেককার লোকদের সংস্পর্শে থাকা।
(৮) পাপ কাজ বর্জন করা। অধিকাংশ হতাশা ও বিষন্নতার উৎস পাপ ও সীমা লংঘন।
(৯) বেহুদা কথা ও কাজ পরিহার করা।
(১০) পরিবারের লোকদের সাথে সময় কাটানো।
(১১) ফেইসবুক, টুইটার, ইউটিউব ব্যবহার নিয়ন্ত্রনে রাখা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অত্যধিক ব্যবহার অনেক মানসিক সমস্যার সৃষ্টি করে।
(১২) গান-বাজনা, নাটক-সিনেমা, গল্প-উপন্যাস থেকে দূরে থাকা।
(১৩) এছাড়া দুঃখ কষ্ট থেকে বাচার জন্য সুন্নতী দুয়া পড়া। বিশেষ করে এই চারটি দোয়া বেশী বেশী পড়ুন এবং এই দুআগুলোর পড়ার অভ্যাস করা।

(১).দুঃখ ও দুশ্চিন্তার সময় পড়ার দুয়াঃ
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَالْبُخْلِ وَالْجُبْنِ، وَضَلَعِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ
উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা ইন্নি আ’ঊযু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হা’যান, ওয়াল আ’জযি ওয়াল কাসাল, ওয়াল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া দালাই’দ দ্বাইনি ওয়া গালাবাতির রিজা-ল।
অর্থঃ হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে।
সহীহ বুখারীঃ ২৮৯৩। সেখানে এসেছে রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এই দুয়াটি বেশি বেশি করতেন। আরও দেখুন বুখারী, (ফাতহুল বারীসহ) ১১/১৭৩।
.
(২).ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, কোন ব্যক্তির উপর যখন কোন বিপদাপদ বা দুশ্চিন্তা ভর করে তখব সে যদি নিন্মলিখিত দোয়টি পাঠ করে,তাহলে মহান আল্লাহ তার দুশ্চিন্তা দূর করে তার অন্তরকে খুশিতে ভরে দিবেন

اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ عَبْدُكَ وَابْنُ عَبْدِكَ وَابْنُ أَمَتِكَ نَاصِيَتِيْ بِيَدِكَ مَاضٍ فِيَّ حُكْمُكَ عَدْلٌ فِيَّ قَضَائُكَ أَسْأَلُكَ بِكُلِّ اسْمٍ هُوَ لَكَ سَمَّيْتَ بِهِ نَفْسَكَ أَوْ أَنْزَلْتَهُ فِيْ كِتَابِكَ أَوْ عَلَّمْتَهُ أَحَدًا مِنْ خَلْقِكَ أَوِ اسْتَأْثَرْتَ بِهِ فِيْ عِلْمِ الْغَيْبِ عِنْدَكَ أَنْ تَجْعَلَ الْقُرْآنَ رَبِيْعَ قَلْبِيْ وَجِلَاءَ حُزْنِيْ وَذَهَابَ هَمِّيْ وَغَمِّي

উচ্চারণ : আল্ল-হুম্মা ইন্নী ‘আবদুকা ওয়াবনু ‘আবদিকা ওয়াবনু আমাতিকা নাছিয়াতী বিয়াদিকা মাযিন ফীয়্যা হুকমুকা ‘আদলুন ফিয়্যা ক্বাযাউকা আসআলুকা বিকুল্লি ইসমিন হুয়া লাকা সাম্মায়তা বিহি নাফসাকা আও আংযালতাহু ফী কিতাবিকা আও ‘আল্লামতাহু আহাদান মিন খলক্বিকা আও ইসতা’ছারতা বিহি ফী ‘ইলমিল গায়বি ‘ইংদাকা আং তাজ‘আল কুরআন রবী‘আ ক্বলবী ওয়া জিলাআ হুযনী ওয়া যাহাবা হাম্মী ওয়া গম্মী।অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার বান্দা। আপনার বান্দা ও বান্দীর ছেলে। আমার ভাগ্য আপনার হাতে। আমি আপনার নির্দেশের উপর অটল। আপনার ফয়সালা গ্রহণে নিরপেক্ষ। আপনি নিজের জন্য যে সকল নাম নির্ধারণ করেছ, অথবা আপনার কিতাবে অবতীর্ণ করেছেন, অথবা আপনার সৃষ্টির কাউকে শিক্ষা দিয়েছেন, অথবা যার দ্বারা আপনি গায়েবের জ্ঞানকে নিজের করে নিয়েছেন, সে সকল নামের ওছীলায় প্রার্থনা করছি। আপনি কুরআনকে করুন আমার অন্তরের জন্য বসন্তকালীন বৃষ্টির ন্যায়, দুশ্চিন্তা দুরকারী, বিষণ্ণ তা দুরকারী। [মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৩১৮; সহীহ ইবনে হিব্বান, হা/৯৭২; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/১৯৯]

(৩).আবূ বাকরাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, বিপদগ্রস্ত লোকের দু‘আ হল,

اَللّٰهُمَّ رَحْمَتَكَ أَرْجُوْ فَلَا تَكِلْنِيْ إِلَى نَفْسِيْ طَرْفَةَ عَيْنٍ وَأَصْلِحْ لِيْ شَأْنِيْ كُلَّهُ

উচ্চারণ : আল্ল-হুম্মা রহমাতাকা আরজূ ফালা তাকিলনী ইলা নাফসী ত্বরফাতা ‘আইনিন ওয়া আছলিছ লী শা’নী কুল্লাহু।অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার রহমতের প্রত্যাশী, আপনি আমাকে আমার নাফসের হাতে সমর্পণ করবেন না এক মুহূর্তের জন্য। আর আপনি আমার সব ব্যাপার সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করে দিন। আর আপনি ব্যতীত কোন সত্যিকারের ইলাহ নেই’[মুছান্নাফে ইবনু আবী শায়বা, হা/২৯১৫৪;সহীহ ইবনে হিব্বান, হা/৯৭০, সনদ হাসান]

(৪).আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ

اَللّٰهُمَّ إِنِّىْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ وَالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ وَالْبُخْلِ وَالْجُبْنِ وَضَلَعِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ

উচ্চারণ : আল্ল-হুম্মা ইন্নী আঊযুবিকা মিনাল হাম্মি, ওয়াল হাযানি ওয়াল ‘আজযি ওয়াল কাসালি, ওয়াল বুখলি ওয়াল জুবনি ওয়া যলাইদ দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজালি। অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে পরিত্রাণ চাচ্ছি চিন্তা, শোক, অক্ষমতা, অলসতা, কাপুরুষতা, ঋণের বোঝা এবং মানুষের জবরদস্তি হতে [সহীহ বুখারী হা/২৮৯৩, ৬৩৬৩ ও ৬৩৬৯, ২/৯৪২ পৃ.; মিশকাত হা/২৪৫৮]।(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
____________________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

Exit mobile version