Site icon Tawheed Media

প্রশংসনীয় বিতর্কের উনিশটি শর্ত

আমরা যখন কোন বিষয়ে বিতর্ক করতে যাব, তখন আমাদের বিতর্কে যাওয়ার পূর্বে কি কি শর্তাবলী মেনে চলা উচিত, তা অবশ্যই জানা থাকতে হবে। প্রশংসনীয় বিতর্কের শর্তাবলী নিম্নরূপ:

এক. বিতর্ক হবে একমাত্র আল্লাহর জন্য। বিতর্ক দ্বারা বরকত লাভ ও ফায়েদা হাসিলের জন্য এখলাস হল পূর্বশর্ত। কারণ, তর্কের উদ্দেশ্য হল, সত্য উদঘাটন করা এবং হককে জানা। এ কারণে এ বিষয়ে বিতর্কে যাওয়ার পূর্বে আল্লাহর ভয় অন্তরে বিদ্যমান থাকতে হবে এবং সদিচ্ছা ও সুন্দর নিয়ত থাকতে হবে। তাহলেই বিতর্ক দ্বারা অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌছা যাবে।

দুই. বিতর্ক হতে হবে উত্তম পদ্ধতিতে

তিন. বিতর্ক করতে হবে ইলমের দ্বারা। অর্থাৎ, যে বিষয়ে বিতর্ক করবে, সে বিষয়ে অবশ্যই তার জ্ঞান থাকতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, সাবধান! তোমরা তো সেসব লোক, বিতর্ক করলে এমন বিষয়ে, যার জ্ঞান তোমাদের রয়েছে। তবে কেন তোমরা বিতর্ক করছ সে বিষয়ে যার জ্ঞান তোমাদের নেই? আর আল্লাহ জানেন এবং তোমরা জান না [সূরা আলে-ইমরান: ৬৬]

চার. আল্লাহ তাআলার নামের মাধ্যমে বিতর্ক শুরু করবে। সুতরাং, উভয় পক্ষ আল্লাহর নাম ও বিছমিল্লাহ দ্বারা বিতর্ক শুরু করবে। যদি মুখে উচ্চারণ করতে না পারে, তবে তাকে অবশ্যেই অন্তরে আল্লাহর নাম স্মরণ করতে হবে।

পাঁচ. মজলিশের আদব ও প্রতিপক্ষের সম্মান রক্ষা করতে হবে এবং তার সামনে সুন্দর ও বিনম্র-ভাবে বসবে।

ছয়. প্রবৃত্তির পূজা করা হতে বের হতে হবে। তর্কের মাঝে যদি কোন মানুষ বুঝতে পারে, সে ভুলের উপর আছে এবং তার প্রতিপক্ষ হকের উপর, তখন তার উচিত হল, সে তার ভুল থেকে ফিরে আসবে এবং প্রতি পক্ষের কথা মেনে তার নিকট আত্মসমর্পণ করবে। যে ব্যক্তি সালফে সালেহীনদের জীবনী পাঠ করবে, তার জন্য ভুল থেকে ফিরে আসা অনেকটা সহজ হবে।

ইবনে আব্দুল বার রহ. বলেন, এটাই হল ইনসাফ! যায়েদ রা. হলেন ইবনে আব্বাসের শিক্ষক। তারপরও তিনি তার উপর কোন চাপ সৃষ্টি করেননি। আমরা কেন তাদের অনুকরণ করব না। আল্লাহ আমাদের সাহায্য করুন।

 

সাত. ধৈর্য ও সহনশীলতা থাকতে হবে। কারণ, ধৈর্য ও সহনশীলতা ছাড়া বিতর্ক তিক্ততা ও খারাপ পরিণতির দিকে নিয়ে যাবে।

আট. বিতর্কের সময় ধীরস্থিরিতা থাকতে হবে। শুধু তাড়াহুড়া করলে চলবে না। কারণ, শুধু আমি আমার কথা বলতে থাকলাম আমার প্রতিপক্ষকে কথা বলার সুযোগ দিলাম না তাহলে শুধু কথা বলাই হবে। প্রতিপক্ষের নিকট কি আছে তা শোনা বা জানা হবে না।

নয়. সত্য কথা বলার উপর অটল অবিচল থাকতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আর যে বিষয় তোমার জানা নাই তার অনুসরণ করো না। নিশ্চয় কান, চোখ ও অন্তকরণ- এদের প্রতিটির ব্যাপারে সে জিজ্ঞাসিত হবে[সুরা ইসরা: ৩৬]

দশ. প্রতিপক্ষের সাথে বিনম্র আচরণ করতে হবে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ, আমরা যখন কোন বিষয়ে তর্ক করি আমাদের উদ্দেশ্য হল, ফলাফল বের ও সত্য উদঘাটন করা। আমাদের উদ্দেশ্য সময় নষ্ট করা বা প্রতিপক্ষের উপর বিজয় লাভ করা নয়।

সুতরাং, প্রতিপক্ষকে নাজেহাল করা,
মানুষের সামনে তাকে নির্বাক ও হেয় প্রতিপন্ন করা,
তাকে কথা বলার সুযোগ না দেয়া বা তার সাথে এমন কথা বলা,
যা তার অন্তরে আঘাত আনে ও ব্যক্তিগত বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার শামিল হয়
এবং মানুষের সামনে তাকে ঠাট্টা বিদ্রূপ ও হাসির পাত্র বানিয়ে ফেলে, তা কোন ক্রমেই উচিত নয়।

 

এগার. প্রতিপক্ষ ফিরে আসার জন্য পথকে উম্মূক্ত রাখবে। সে যদি হেরে যায় তাহলে তাকে হেয় করবে না। তার সাথে কোন প্রকার দুর্ব্যবহার করবে না। তার কথা ভালোভাবে শুনবে। কারণ, তার কথা ভালোভাবে শুনা দ্বারা তুমি অর্ধেক ফলাফলে পৌঁছে যাবে।

বার. ইনসাফ করা। যদি তোমার প্রতিপক্ষ কোন সত্য কথা বলে, তা স্বীকার করে নেয়া এবং তার মান-মর্যাদার স্বীকৃতি দেয়া।

তের. মার্জিত ও সম্মান সূচক বাক্য ব্যবহার করে কথা বলবে। চিৎকার করবে না ও অমার্জিত কথা বলবে না। কোন এক ব্যক্তি মজলিশে চিৎকার করলে পরিচালনাকারী বলেন, হে আব্দুস সামাদ সত্য তো সঠিক কথার মধ্যে কঠিন আওয়াজে নয়। সুতরাং চিৎকার দ্বারা কোন ফায়সালা হয় না।

চৌদ্দ. ঝগড়া পরিহার করা। অনেক লোক আলেমদের ইলম থেকে বঞ্চিত হয়েছে, তাদের সাথে বিবাদ করার কারণে। ইবনে আব্বাস রা. এর কোন এক ছাত্র বলছিল, আমি যদি ইবনে আব্বাসের সাথে বন্ধুত্ব করতাম, তাহলে তার থেকে আরো অনেক ইলম শিখতে পারতাম।(তারিখে দামেশক ২৯৭/২৯)

ইবনে জুরাইয রহ. বলেন, আমি যত কিছু আতা থেকে শিখেছি তা তার সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ দ্বারাই শিখছি।(মিফতাহুস সা’আদাত ১৬৯/১)

পনের. বিতর্কের জন্য শর্ত হল, তা আলেমদের সম্মুখে হবে যাহেলদের সম্মুখে নয়।

ষোল. মতামতের পার্থক্য বন্ধুত্ব নষ্ট করতে পারবে না। ইমাম আহমদ রহ. একবার আলী ইবনুল মাদিনীর সাথে বিতর্ক করতে গিয়ে মজলিশে তারা একে অপরের সাথে উচ্চ বাচ্য করেন। কিন্তু আলী ইবনুল মাদীনি যখন মজলিশ থেকে উঠে চলে যেতে লাগল, তখন ইমাম আহমদ উঠে তার ঘোড়ার লাগাম টেনে ধরে তাকে বিদায় দেন।

সতের. যে সব কথা মানুষের চিন্তা চেতনা ও বিশ্বাসের পরিপন্থী ঐ ধরনের কথা হতে বিরত থাকা উচিত।

আঠার. সব ধরনের হিলা ও ষড়যন্ত্র পরিহার করবে। আর একজন বিচারক নির্ধারণ করবে যে উভয় পক্ষের কথা নোট করবে, যাতে কেউ কোন কথা বলে অস্বীকার করতে না পারে।

উনিশ. কতক লোক আছে যাদের সাথে বিতর্ক সম্পূর্ণ বর্জন করতে হবে।

Exit mobile version