Site icon Tawheed Media

নিয়মিত লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নী কুনতু মিনায যালিমীন পাঠের ফযীলত

ভূমিকা: لَآ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ
অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তুমি পবিত্র। আমি সীমালংঘন কারীদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা আম্বিয়া,২১/৮৭)। পবিত্র কুরআনের উক্ত আয়াতটি দুঃআয় ইউনুস নামে পরিচিত। বিভিন্ন তাফসীরে এসেছে যে,নবী ইউনুস আলাইহিস সালামকে মুসেলের একটি জনপদ নায়নুয়ার অধিবাসীদের হেদায়াতের জন্যে প্রেরণ করা হয়েছিল। তিনি তাদেরকে ঈমান ও সৎকর্ম করার দাওয়াত দেন। কিন্তু তারা অবাধ্যতা প্ৰদৰ্শন করে। ইউনুস আলাইহিস সালাম তাদের প্রতি অসস্তুষ্ট হয়ে আযাবের ভয় দেখিয়ে জনপদ ত্যাগ করেন। কুরআনের বক্তব্য ও অন্যান্য বর্ণনা থেকে এতটুকু জানা যায় যে, আল্লাহ তাআলার পরিষ্কার নির্দেশ ছাড়াই ইউনুস আলাইহিস সালাম তার সম্প্রদায়কে ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছিলেন। তার এই কার্যক্রম আল্লাহ তাআলা অপছন্দ করেন। ফলে তিনি অসন্তোষের কারণ হন। এবং তাকে সমুদ্রে মাছের পেটে অবস্থান করতে হয়। অতঃপর তিনি মাছের পেট থেকে মহান আল্লাহর নিকট দোয়া করলে আল্লাহ তার দোয়া কবুল করেন। যেমন:
.
মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, আর যুন-নূনের (ইউনুসের) কথা স্মরণ করুন, যখন তিনি (স্বীয় সম্প্রদায়ের ওপর) ক্রদ্ধ হয়ে চলে গিয়েছিলেন আর মনে করেছিলেন, আমি তার ত্রুটি ধরব না (অথবা আমি তাকে বিপদে ফেলব না)। অতঃপর তিনি অন্ধকারের মাঝে (আমাকে) ডাক দিয়ে বলেছিলেন, আপনি ছাড়া কোন উপাস্য নেই, আপনি মহান! নিশ্চয় আমি যালেমদের দলভুক্ত। অতঃপর আমরা তার ডাকে সাড়া দিলাম এবং তাকে কষ্ট থেকে রক্ষা করলাম। মুমিনদেরকে আমরা এভাবেই রক্ষা করি।’ (সূরা আল-আম্বিয়া ২১/৮৭)।
.
উক্ত আয়াতের তাফসিরে ইমাম ইবনু কাসীর (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, আল্লাহ তাআলার বাণী, وَ کَذٰلِکَ نُــۨۡجِی الۡمُؤۡمِنِیۡن ‘মুমিনদেরকে আমরা এভাবেই রক্ষা করি’-এর অর্থ হচ্ছে, ‘যখন তারা দুঃখ-কষ্টের মধ্যে থাকে এবং আমার দিকে প্রত্যাবর্তন করাবস্থায় আমাকে ডাকে। বিশেষ করে বালা-মুসিবতের সময় যখন তারা এই দুআ দিয়ে ডাকে।’ অতঃপর তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিম্নোক্ত হাদীসটি উল্লেখ করেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহ তাআলার নবী যুন-নূন ইউনুস (আলাইহিস সালাম) মাছের পেটে থাকাকালে যে দুআ করেছিলেন, তা হলো- আপনি ব্যতীত কোন মাবুদ নেই, আপনি অতি পবিত্র। আমি নিশ্চয় যালিমদের দলভুক্ত।’ (সূরা আল-আম্বিয়া: ৮৭)। যে কোন মুসলিম লোক কোন বিষয়ে কখনো এ দুআ করলে অবশ্যই আল্লাহ্‌ তাআলা তার দুআ কবুল করেন।’ (সুনানে তিরমিযী ৩৫০৫, আহমাদ ১৪৬২, মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৮৬২, শু‘আবূল ঈমান ৬১১, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ১২৩, সহীহ আত্ তারগীব ১৬৪৪, সহীহ আল জামি ৩৩৮৩ মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস নং ২২৯২)
.
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ (রাহিমাহুল্লাহ) (মৃ. ৭২৮খ্রিঃ) বলেন, দোআ ইউনুস দ্বারা ইস্তিগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা করা যায়। কারণ, দোআ দুই প্রকার: প্রশংসা মূলক ও প্রার্থনা মূলক। আর দোআ ইউনুসের মধ্যে দু’টোই রয়েছে। (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ১০/২৪৪)। যেমন: আল্লাহ বলেন, অতঃপর সে (মাছের পেটে) ঘন অন্ধকারের মধ্যে আহ্বান করল, لَآ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ ‘(হে আল্লাহ!) তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তুমি পবিত্র। আমি সীমালংঘন কারীদের অন্তর্ভুক্ত।’ ‘অতঃপর আমরা তার আহবানে সাড়া দিলাম এবং তাকে দুশ্চিন্তা হতে মুক্ত করলাম। আর এভাবেই আমরা বিশ্বাসীদের মুক্তি দিয়ে থাকি।’ (সূরা আম্বিয়া: ২১/৮৭-৮৮)।
.
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘ইউনুস (আঃ) এই দোআ মাছের পেটে পড়েছিলেন। যে কোন মুসলিম ব্যক্তি যে কোন সমস্যায় দোআটি পড়লে আল্লাহ তা কবুল করেন।’ (তিরমিযী হা/৩৫০৫; মিশকাত হা/২২৯২)।

জনৈক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রশ্ন করেছিনে, হে আল্লাহর নাবী! এ দুআটি ইউনুস আলাইহিস সালাম-এর জন্য খাস বা নির্দিষ্ট ছিল? তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি কুরআন পড়োনি? যেখানে আল্লাহ বলেছেনঃ وَنَجَّيْنَاهُ مِنَ الْغَمِّ وَكَذٰلِكَ نُنْجِي الْمُؤْمِنِيْنَ‘‘আমি তাকে মুক্তি দিলাম এমনিভাবে আমি মুমিনদেরকে মুক্তি দিয়ে থাকি।’’ (সূরা আল আম্বিয়া ২১ : ৮৮)। অর্থাৎ:দুআটি আল্লাহর নবী ইউনুস আলাইহিস সালাম-এর জন্য খাস বা নির্দিষ্ট নয়। তা সমস্ত মুমিনের জন্য প্রযোজ্য। (মিশকাতুল মাসাবিহ ২২৯২ নং হাদীসের ব্যাখ্যা দষ্টব্য)
.
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরও বলেন, যে ব্যক্তি কোন কষ্ট বা মুসীবতে নিপতিত হবে, অতঃপর দোআ ইউনুস পাঠ করবে, আল্লাহ তার বিপদ দূর করে দিবেন।’ (মুস্তাদরাক হাকেম হা/১৮৬৪; সিলসিলা সহীহাহ হা/১৭৪৪)।
.
ইমাম ইবনুল ক্বাইয়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭৫১ হি.] বলেছেন, তাওহীদের মত অন্য কোনো জিনিস দুনিয়ার বিপদ-আপদগুলো দূর করতে পারে না। এজন্যই বিপদ আপদের দুআ তাওহীদের বাক্য দিয়েই করতে হয়। তাই যুন-নূন তথা ইউনুস (আলাইহিস সালাম)-এর দুআটি কোন দুঃখ-কষ্টে পতিত ব্যক্তি করলে আল্লাহ তাআলা তাওহীদের দ্বারাই সে ব্যক্তির দুঃখ-কষ্টকে দূর করে দেন। আর শিরক ব্যতীত অন্য কোন জিনিস মহা বালা-মুসিবতে ফেলতে পারে না এবং তাওহীদ ছাড়া অন্য কিছু তা থেকে মুক্তি দিতে পারে না। তাওহীদই তো সৃষ্টি জীবের আশ্রয়স্থল, তার দূর্গ এবং রক্ষাকবচ।(ইবনুল ক্বাইয়িম আল-জাওযিয়্যাহ, আল-ফাওয়াইদ, বৈরূত: দারুল কুতুবিল ‘ইলমিয়্যাহ, ২য় সংস্করণ ১৩৯৩ হি./১৯৭৩ খ্রি.), পৃ. ৫৩)

উল্লেখ্য যে, এক লক্ষ বার দুআ ইউনুস পাঠ করলে কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করা যায় মর্মে যে ধারণা প্রচলিত আছে, তা বানোয়াট ভিত্তিহীন কথা মাত্র। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
___________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

Exit mobile version