Site icon Tawheed Media

নাস্তিক মুরতাদদের সাথে বাহাস মুনাজারা, বিতর্ক ইত্যাদি করা কি ইসলাম সমর্থন করে এবং বাহাস-মুনাযারার ক্ষেত্রে আহলুস সুন্নাহর মানহাজ কি

শরীয়তের দৃষ্টিতে স্বাভাবিক ভাবে বাহাস, বিতর্ক অথবা ঝগড়া করা মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়।ইসলামি শরীয়তের প্রধান দুটি উৎস পবিত্র কুরআন ও রাসূল ﷺ এর সহীহ হাদীস মুমিনের ইসলামী জ্ঞান চর্চা, জ্ঞান অন্বেষণ ও গবেষণায় উৎসাহ প্রদান করে এবং বিতর্ক ও ঝগড়া করতে নিষেধ করে। ইসলামের প্রাথমিক যুগের দিকে তাকালে আমরা দেখি যে, সাহাবী-তাবেঈগণের যুগে কখনোই তাঁরা পরস্পরে নিজেদের মধ্যে শারঈ বিষয়ে নিজের মতকেই সঠিক সাব্যস্ত করার জন্য বিতর্কে লিপ্ত হননি।তাই বলে বাহাস,বিতর্ক করা যাবেনা বিষয়টি এমন নয় বরং কখনো কখনো বাতিল পন্থি নাস্তিক মুরতাদ, আক্বীদাগত বিদআতিদের সাথে বিতর্ক করার প্রয়োজন হলে যারা শরীয়তের বিধিনিষেধ সম্পর্কে অধিক জ্ঞানী,তাক্বওয়াবান এবং যাদের উপস্থিত জ্ঞান ভালো তারা শরী‘আত সম্মত পন্থায় ও আন্তরিকতার সাথে সংশোধনের উদ্দেশ্যে একে অপরের ভুল ধরিয়ে দেওয়া এবং নিজেকে সংশোধন করার উদ্দেশ্য বিতর্ক করা জায়েজ রয়েছে। তবে নাস্তিক মুরতাদদের সাথে যখন ইসলামের বিধিনিষেধ নিয়ে তর্ক-বির্তক করা হবে তখন এই বিতর্ক সাধারণ মানুষদের থেকে আড়ালে করা উত্তম।
.
ইসলামে প্রয়োজনে বাহাস-মুনাযারা করা জায়েজ এই মর্মে দলিল হল মহান আল্লাহ বলেন: ❝তুমি মানুষকে তোমার রবের পথে আহবান করো হিকমাত ও সদুপদেশ দ্বারা এবং তাদের সাথে উত্তম পন্থায় বিতর্ক করো।❞ (সূরাহ নাহল:১৬/১২৫) এই আয়াতটি হলো শারী‘আহ সমর্থিত মুনাযারা। আল্লাহ মুনাযারার পথ শতভাগ রুদ্ধ করে দেননি। সুতরাং যদি আমাদের দলিল প্রতিষ্ঠিত করার এবং লোকদেরকে উত্তম দিকে পথপ্রদর্শন করার উপায় থাকে,তাহলে আমরা তার অনুসরণ করব। যার সাথে মুনাযারা করা হচ্ছে, সে হয়তো উপকৃত হবে না, কিন্তু অন্যরা উপকৃত হতে পারে ইনশাআল্লাহ। শরীয়তের বৃষ্টি কমতে হয় বাহাস-মুনাযারা বা বিতর্কের ক্ষেত্রে যে সকল শর্ত ও নির্দেশিকা অনুসরণ করতে হবে, তার মধ্যে নিম্নলিখিত শর্তগুলি খেয়াল রাখতে হবে যেমন:

(১). এসব বিষয়ে বিতর্ক ও আলোচনা হতে হবে কুরআন সুন্নার দলিল এবং প্রসিদ্ধ ইমামদের মতামতের উপর ভিত্তি করে, নিছক ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষা বা ব্যক্তিগত মতামতের উপর ভিত্তি করে নয়। তাই শরীয়ত দলিল প্রমাণ ব্যতীত ধর্মীয় বিষয়ে যেকোন মতামত প্রকাশ করা জায়েয নয়।
.
(২). বাহাস-মুনাযারা বা বিতর্ক আলোচনায় যে কোনো ধরনের অশ্লীলতা বা ধর্মান্ধতা অথবা ব্যক্তি আক্রমণ এড়িয়ে ইখলাস বা একনিষ্ঠতার সাথে নমনীয়তা প্রদর্শন করতে হবে। কেননা নম্রতা-ভদ্রতা ও কোমলতা আদর্শ মানুষের গুণ। দ্বীনের দাঈর মধ্যে অবশ্যই এ গুণ থাকা বাঞ্ছনীয়।আর এ গুণের অধিকারী দাঈগণ দাওয়াতী কাজে সহজে মানুষের মাঝে প্রভাব ফেলতে পারে।
.
(৩). যেকোনো বিষয়ের গুরুত্ব নিয়ে কোনো ধরনের বাড়াবাড়ি করা উচিত নয়।তবে বাহাস-মুনাযারায় শরীয়তের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে আলোচনা করতে হবে।(বিস্তারিত জানতে দেখতে পারেন ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং ১২২৯৬৪)
.
ইমাম আস-সাবূনী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৪৪৯ হি.] বিদ‘আতীদের ব্যাপারে সালাফদের মানহাজ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, “আর তারা আহলুল বিদ‘আহ যারা দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছু আবিষ্কার করে তাদের ঘৃণা করতেন। তারা তাদের ভালোবাসতেন না,তাদের সাথে সম্পর্কও রাখতেন না। তারা তাদের কথা শুনতেন না, তাদের সাথে বসতেনও না। তারা তাদের সাথে দ্বীনের ব্যাপারে তর্ক করতেন না, বিতর্কও করতেন না।”(শারহু ‘আক্বীদাতিস সালাফ ওয়া আসহাবিল হাদীস, পৃষ্ঠা: ৩০১)
.
পথভ্রষ্টদের সাথে তর্ক-বির্তক করার ক্ষেত্রে
সৌদি ফতোয়া বোর্ডের বর্তমান গ্র্যান্ড মুফতী প্রথিতযশা মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফাক্বীহ ও উসূলবিদ আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ আলুশ শাইখ (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৬২ হি./১৯৪৩ খ্রি.] বলেছেন,
.
আপনি দেখবেন যে কিছু লোক বিতর্কের দিকে আহ্বান করে।তারা বলে যে (সকল পথভ্রষ্টদের) সাথে বিতর্ক করে আমাদের আকীদাহ/বিশ্বাস রক্ষা করা উচিত। যাহোক, নাস্তিকদের সাথে বিতর্ক করা তখনই সঙ্গত যদি তা গোপনভাবে করা হয়। এটা জনসম্মুখে করা ঠিক নয়।টেলিভিশন বা অনলাইন চ্যানেলে বা উন্মুক্ত ওয়েবসাইট বা ইন্টারনেটে বিতর্ক ভালো এবং বিপথগামীদের পথ দেখানো ওয়াজিব তবে এটি গোপনীয়ভাবে করা উচিত। কারণ? কারণ নাস্তিকরা (ও পথভ্রষ্টরা যেসব অস্পষ্ট বিষয় উপস্থাপন করে তা সাধারণ মানুষকে প্রভাবিত করতে পারে। একজন সাধারণ মানুষ এসে অস্পষ্ট বিষয় শুনতে পারে,যা তার মনে সন্দেহ সৃষ্টি করবে, তাই বিতর্ক করে তাদের এসব ভ্রান্ত মতবাদ ছড়ানোর কারণ হয়ে দাড়ায়। কিছু লোক আছে যারা যথেষ্ট জ্ঞানি নন, তারা (কুরআন সুন্নাহর) ইলম এবং প্রমাণ দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার চেয়ে শয়তান দ্বারা প্রচারিত সন্দেহ দ্বারা বেশি প্রভাবিত হতে পারে, তা না হলে যারা পথভ্রষ্ট তারা পথভ্রষ্ট হতো না,এই কারণেই যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে তাদের অধিকাংশই সঠিক বুঝের অভাবে। বরং আল্লাহর একত্ববাদ সম্পর্কিত বিষয়গুলো স্পষ্ট করার অধিক গুরুত্তপূর্ণ এবং অধিকতর সফল পন্থা হলো খতিবের জন্য তার জুমার খুতবায়, এবং দায়িগণ তাদের দাওয়াত,এবং আলেমগণ তাদের ফতোয়ায়,কারণ আল্লাহ সকল অপূর্ণতা থেকে মুক্ত রব“আল্লাহর সাথে অন্য কোনো ইলাহ আছে কি?তারা যাকে সঠিক করে আল্লাহ তা থেকে বহু উর্ধ্বে। (সূরা নমল ২৭: ৬৩ শাইখের একটি বিডিও থেকে অনূদিত) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
______________________
✍️জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

Exit mobile version