Site icon Tawheed Media

গর্ভধারণ করার কারণে নারীদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফাঁটা দাগ দেখা যায় এবং অনেক স্বামী সেটা অপছন্দ করেন এবং এক্ষেত্রে স্ত্রীদের করনীয়

ভূমিকা: সন্তান গর্ভধারণ করার কারণে নারীদের শরীরে বিভিন্ন স্থানে ফাঁটা স্পট দেখা একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। কেননা ক্রমবর্ধমান পেটের বৃদ্ধির জন্য জায়গা তৈরি করতে জরায়ু বড় হতে থাকে এবং এতে পেটের চারপাশের ত্বক প্রসারিত হয়। ত্বকের এরকম প্রসারণ এর ফলে ত্বকে ফাটল সৃষ্টি হলে সেখানে এক ধরনের সাদা দাগ তৈরি হয়ে যায় এবং ত্বকের কোলাজেন এ ফাটলকে পূর্ণ করতে পারে না।যার ফলে লম্বা দাগের সৃষ্টি হয়ে যায়। কিছু হরমোন থাকে যেটা টান পড়লেও যেন ফেটে না যায় তার জন্য কাজ করে। শরীরে সেসব হরমোনের উৎপাদন কম থাকলেও এই দাগ গুলো হয়ে থাকে।তাই এ ধরনের তুচ্ছ বিষয় নিয়ে স্ত্রীকে অপছন্দ করা বা স্ত্রীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা জায়েয নয়। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘আর তোমরা তাদের (স্ত্রীদের) সাথে সৎভাবে জীবন-যাপন কর, তোমরা যদি তাদেরকে (স্ত্রীদেরকে) ঘৃণা কর, তাহলে এমনও হতে পারে যে, আল্লাহ যার মধ্যে প্রভূত কল্যাণ রেখেছেন, তোমরা তাকে ঘৃণা করছ’ (সূরা আন-নিসা : ১৯)। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, وَإِنَّ لِزَوْجِكَ عَلَيْكَ حَقًّا ‘তোমার উপর তোমার স্ত্রীর অধিকার রয়েছে’ (সহীহ বুখারী, হা/১৯৭৪, ১৯৭৫, ১৯৭৭, ৫১৯৯, ৬১৩৪; সহীহ মুসলিম, হা/১১৫৯)। ইমাম ইবনু কাছীর (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘স্ত্রীর সঙ্গে উৎকৃষ্ট পন্থায় বার্তালাপ করা এবং উত্তম আচরণ প্রদর্শন করা স্বামীর উপর অপরিহার্য। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘পুরুষদের যেমন নারীদের উপর অধিকার রয়েছে, ঠিক তেমনি নারীদের রয়েছে পুরুষদের উপর ন্যায়-সঙ্গত অধিকার’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ২২৮)।
.
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, خَيْرُكُمْ خَيْرُكُمْ لِأَهْلِهِ وَأَنَا خَيْرُكُمْ لِأَهْلِيْ وَإِذَا مَاتَ صَاحِبُكُمْ فَدَعُوْهُ ‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম যে নিজের পরিবারের কাছে উত্তম। আর আমি তোমাদের চেয়ে আমার পরিবারের কাছে অধিক উত্তম। আর তোমাদের কোন সঙ্গী মৃত্যুবরণ করলে তার সমালোচনা পরিত্যাগ কর’ (তিরমিযী, হা/৩৮৯৫; ইবনু মাজাহ, হা/১৯৭৭)।
সুতরাং একটি আদর্শ দম্পতির কর্তব্য হল, একে অপরের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করা এবং অনুগত হওয়া। পৃথিবীর মধ্যে সর্বাধিক ভালোবাসা ও মধুর সম্পর্ক হল স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক। যেমন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, لَمْ نَرَ لِلْمُتَحَابَّيْنِ مِثْلَ النِّكَاحِ ‘দু’জনের পারস্পরিক ভালোবাসা স্থাপনের জন্য বিবাহের বিকল্প নেই’ (ইবনু মাজাহ, হা/১৮৪৭; আবূ ই‘আলা, হা/২৭৪৭; মুসনাদু বাযযার, হা/৪৮৩৬; সনদ সহীহ, সিলসিলা সহীহাহ, হা/৬২৪)।

◾এখন সন্তান গর্ভধারণের ফলে সৃষ্ট দাগ নির্মূল করা কি সম্ভব? যদি হয় তাহলে কীভাবে দূর করবেন?
.
গর্ভধারণের ফলে সৃষ্ট এই দাগ নির্মূল করা অবশ্যই সম্ভব। ত্বকের যেকোনো দাগই বড্ড বেশি বিরক্তিকর ও অস্বস্তিকর। স্ট্রেচ মার্ক সেদিক দিয়ে আরও একধাপ এগিয়ে। কখনো কখনো এ দাগগুলো মনে তীব্র অসন্তোষের সৃষ্টি করে। তবে এই নিয়ে অত ভাবনার কিছু নেই। কারণ স্ট্রেচ মার্কের সমস্যায় অনেকেই ভুগে থাকেন। আধুনিক চিকিৎসার কল্যাণে এই দাগ খুব সহজেই দূর করা সম্ভব। ডার্মারোলার বা মাইক্রোনিডলিং বলে এক ধরনের পদ্ধতি আছে। এতে প্রথমে লোকাল অ্যানাস্থেটিক ক্রিম লাগিয়ে কিছুটা ত্বক অবশ করে রোলারটিকে চামড়ায় বোলানো বা ঘষা হয়। এতে মরা চামড়া দূর হয় ও নতুন কোষ জন্মগ্রহণ করে, রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায় এবং স্ট্রেচ মার্ক গঠন প্রতিহত করে। এর ফলে চার থেকে ছয় মাসের মধ্যে কিছু কোলাজেন নতুন করে তৈরি হয়। এতে স্ট্রেচ মার্ক পুরোপুরি চলে না গেলেও উন্নতি ঘটে। এমনকি সর্বাধুনিক ফ্র্যাকশনাল কার্বন ডাই অক্সাইড লেজার পদ্ধতিতেও খুব ভালো কাজ হয়। এতে লেসার রশ্মি ডারমিস বা অন্তঃস্তরে ঢোকে ও নতুন কোলাজেন তৈরিতে সাহায্য করে। প্রেগন্যান্সির পরের স্ট্রেচ মার্কেরও অনেকটাই উন্নতি হয়। অনেক সময় স্ট্রেচ মার্ক দূর করতে সার্জারিও করা হয় কারণ পূর্ববর্তী অস্ত্রোপচারের পরে শরীরে খুব চওড়া দাগ তৈরি হয় এবং ভেতরের চর্বিস্তর ফুলে বের হয়ে আসে। সেক্ষেত্রে পুনরায় সার্জারি করে দাগটি সরু করে দেয়া যায়।

◾পাশাপদশি ঘরোয়াভাবে প্রতিকারের কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন। যেমন:

▪️ক্যাস্টর অয়েল: ত্বক ও চুলের জন্য ক্যাস্টর অয়েল জাদুকরী ভূমিকা রাখে। শরীরের ফাটা স্থানে ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহারে ফলে ধীরে ধীরে দাগ দূর হয়ে যায়। এজন্য নিয়মিত ক্যাস্টর অয়েল ফাটা স্থানে ১০ থেকে ১৫ মিনিট ম্যাসেজ করে ব্যবহার করুন। এরপর পাতলা সুতি কাপড় দিয়ে ফাটা স্থান ঢেকে রাখুন এবং হিটিং প্যাড ব্যবহার করে ঢেকে রাখা স্থানে সেঁক দিন। একমাসের মধ্যেই পরিবর্তন চোখে পড়বে।

▪️ডিমের সাদা অংশ: ডিমের সাদা অংশ ত্বকের জন্য খুবই উপকারী উপাদান। প্রোটিন এবং অ্যামিনো অ্যাসিডে ভরপুর ডিমের সাদা অংশ ত্বকের জন্য সুপারফুড। ত্বকের ফাটা দাগে নিয়মিত ডিমের সাদা অংশ ব্যবহার করলে ত্বক দ্রুত টাইট হতে থাকে। ফলে ধীরে ধীরে ত্বকের ফাটা দাগ দূর হয়ে যায়।

▪️বিভিন্ন ফলের রস: লেবুর রস, আলুর রস, অ্যালোভেরা জেল, এপ্রিকটস, ব্ল্যাক টি এবং অরগ্যান অয়েল ব্যবহার করতে পারেন শরীরের ফাটা স্থানে। যে উপাদানটিই ব্যবহার করুন না কেন, নিয়মিত করতে হবে। ধৈর্য্য ধরে ত্বকের যত্ন নিলে ধীরে ধীরে দাগ কমতে শুরু করবে।

▪️শারীরিক ব্যায়াম: হাঁটাহাঁটি বা নড়াচড়া নড়াচড়া করলে শরীরে রক্ত চলাচল ঠিকমতো হয়। ফলে পেটে দাগ হওয়া থেকে রক্ষা পেতে পারেন। ডাক্তারের পরামর্শে কিছু হলকা ব্যায়াম বা সাঁতার কাটতে পারেন।

▪️ঠান্ডা গরম পানির মিশ্রণ গোসল: ঠাণ্ডা এবং গরম পানি দিয়ে গোসল প্রথমে হলকা গরম পানি দিয়ে এবং পরে ঠাণ্ডা পানির গোসল নিলে রক্ত চলাচল ভালো হয়। গর্ভধারণের শুরু থেকেই এটি করলে দাগ পড়ার সম্ভাবনা কম থাকে।

▪️খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন: পাশাপাশি খাদ্যাভাসেও পরিবর্তন আনতে হবে। ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ খাবার যেমন: বেরি, কাঁচা বাঁধাকপি, ভিটামিন সি জাতীয় ফল, কিউই ফল, বাঙ্গি, মটর, মরিচ, ব্রকলি, আনারস, পালং শাক, টমেটো, শালগম ইত্যাদি খেতে হবে। এতে শরীরের ফ্রি র‍্যাডিকেলস দূর হবে।

তেলের মালিশ: একজন জার্মান ফার্মাসিস্ট তানিয়া ফ্রানৎস জানিয়েছেন, প্রতিদিন দুই বেলা সুগন্ধি বা রাসায়নিক পদার্থ ছাড়া তৈরি বাদাম তেল মালিশ করলে দাগ পড়ার সম্ভবনা কম থাকে। বাদাম তেল ত্বক মসৃণ করে। (কালের কন্ঠ ৩০ আগস্ট, ২০২২ ১৩:৪১) পরিশেষে,প্রয়োজনে একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
_____________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

Exit mobile version