Site icon Tawheed Media

ক্বাযা স্বলাত আদায় করতে বিলম্ব করা এবং নিষিদ্ধ ওয়াক্ত শেষ হওয়ার অপেক্ষা করা বা উমরী ক্বাযা আদায় করা

জাল হাদীছের কবলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর স্বলাত এর অংশবিশেষ
শায়খ মুযাফফর বিন মুহসিন

ক্বাযা স্বলাত আদায় করতে দেরী করা এবং নিষিদ্ধ সময়ে ক্বাযা স্বলাত আদায় করা যাবে না মর্মে যে ধারণা সমাজে চালু আছে তা সহিহ হাদীছের বিরোধী। বরং যখনই স্মরণ হবে কিংবা ঘুম থেকে জাগ্রত হবে তখনই ধারাবাহিকভাবে ক্বাযা স্বলাত আদায় করে নিবে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, مَنْ نَسِىَ صَلاَةً أَوْ نَامَ عَنْهَا فَكَفَّارَتُهَا أَنْ يُصَلِّيَهَا إِذَا ذَكَرَهَا ‘কেউ ভুলে গেলে কিংবা ঘুমিয়ে গেলে তার কাফফারা হল, ঘুম ভাঙলে অথবা স্মরণ হলে সাথে সাথে ক্বাযা স্বলাত আদায় করা’।[1]

عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ إِذَا أَدْرَكَ أَحَدُكُمْ سَجْدَةً مِنْ صَلاَةِ الْعَصْرِ قَبْلَ أَنْ تَغْرُبَ الشَّمْسُ فَلْيُتِمَّ صَلاَتَهُ وَإِذَا أَدْرَكَ سَجْدَةً مِنْ صَلاَةِ الصُّبْحِ قَبْلَ أَنْ تَطْلُعَ الشَّمْسُ فَلْيُتِمَّ صَلاَتَهُ.

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, তোমাদের কেউ যদি সূর্য ডুবার পূর্বে আছর স্বলাত এক রাক‘আত পড়তে পারে তাহলে সে যেন তার স্বলাত পূর্ণ করে নেয়। অনুরূপ কেউ যদি সূর্যউঠার পূর্বে ফজর স্বলাতের এক রাক‘আত পড়তে পারে তাহলে সে যেন তার স্বলাত পূর্ণ করে নেয়।[2]

অতএব স্পষ্ট হল যে, ক্বাযা স্বলাতের জন্য কোন নিষিদ্ধ ওয়াক্ত নেই।[3] আর মূল ওয়াক্তে যেভাবে স্বলাত আদায় করা হয় ঠিক ঐ নিয়মেই স্বলাত আদায় করবে। যেমন খন্দকের যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ছাহাবীদেরকে নিয়ে মাগরিবের পর যোহর, আছর, মাগরিব ও এশা এই চার ওয়াক্ত স্বলাত এক আযান ও চারটি পৃথক ইক্বামতে পরপর জামা‘আতের সাথে আদায় করেন। উক্ত স্বলাতগুলো স্ব স্ব ওয়াক্তে যেভাবে আদায় করতেন ঐ নিয়মেই আদায় করেন।[4]

[1]. সহিহ বুখারী হা/৫৯৭, ১/৮৪ পৃঃ, (ইফাবা হা/৫৬৯ ও ৫৭১, ২/৩৫-৩৬ পৃঃ), ‘স্বলাতের ওয়াক্ত সমূহ’ অধ্যায়, ‘যে ব্যক্তি স্বলাত ভুল করে’ অনুচ্ছেদ-৩৭; সহিহ মুসলিম হা/১৫৯২, ১৫৯৮, ১৬০০, ১/২৩৮, ‘মসজিদ সমূহ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৫৬; মিশকাত হা/৬০৩, ৬৮৪, ৬৮৭, ‘দেরীতে আযান’ অনুচ্ছেদ; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৬৩৬, ২/২১০ পৃঃ।
[2]. বুখারী হা/৫৫৬, (ইফাবা হা/৫২৯, ২/১৮ পৃঃ); মিশকাত হা/৬০২; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৫৪, ২/১৭৮ পৃঃ, ‘তাড়াতাড়ি স্বলাত আদায়’ অনুচ্ছেদ।
[3]. আলবানী, মিশকাত হা/৬০২-এর টীকা দ্রঃ ১ম খন্ড, পৃঃ ১৯১।
[4]. সহিহ বুখারী হা/৫৯৬ ও ৫৯৮, ১/৮৪ পৃঃ, (ইফাবা হা/৫৬৯ ও ৫৭১, ২/৩৫-৩৬ পৃঃ), ‘স্বলাতের সময়’ অধ্যায়, ‘ওয়াক্ত পার হয়ে যাওয়ার পর রাসূল (ﷺ) জামা‘আতের সাথে স্বলাত আদায় করেছেন’ অনুচ্ছেদ-৩৬; সহিহ মুসলিম হা/১৪৬২, ১/২২৭, ‘মসজিদ সমূহ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৩৭; নাসাঈ হা/৬৬১ ও ৬৬২।

(২) ক্বাযা স্বলাত জামা‘আত সহকারে না পড়া :

ক্বাযা স্বলাত জাম‘আত করে না পড়ার প্রথাই সমাজে চালু আছে। অথচ একাধিক ব্যক্তির স্বলাত ক্বাযা হলে সেই স্বলাত জামা‘আত সহকারে আদায় করাই সুন্নাত। কারণ রাসূল (ﷺ) ক্বাযা স্বলাত ছাহাবীদের নিয়ে জামা‘আত সহকারে আদায় করেছেন।[1]

[1]. সহিহ বুখারী হা/৫৯৬ ও ৫৯৮, ১/৮৪ পৃঃ, (ইফাবা হা/৫৬৯ ও ৫৭১, ২/৩৫-৩৬ পৃঃ), ‘স্বলাতের সময়’ অধ্যায়, ‘ওয়াক্ত পার হয়ে যাওয়ার পর রাসূল (ﷺ) জামা‘আতের সাথে স্বলাত আদায় করেছেন’ অনুচ্ছেদ-৩৬; নাসাঈ হা/৬৬১ ও ৬৬২।

(৩) ‘উমরী ক্বাযা’ আদায় করা :

যারা পূর্বে স্বলাত আদায় করত না তারা স্বলাত শুরু করার পর অতীতের বকেয়া স্বলাত সমূহ ফরয স্বলাতের পর আদায় করে থাকে। অথচ উক্ত আমলের পক্ষে কোন দলীল নেই। মূলতঃ এটি একটি বিদ‘আতী প্রথা’।[1] রাসূল (ﷺ) ও ছাহাবায়ে কেরামের স্বর্ণযুগে উক্ত প্রথার অস্তিত্ব ছিল না। সুতরাং পূর্বের ছুটে যাওয়া স্বলাতের জন্য আল্লাহর কাছে বেশী বেশী ক্ষমা প্রার্থনা করবে। আল্লাহ চাইলে পূর্বের পাপ সমূহ ক্ষমা করে দিতে পারেন এবং তা নেকীতে পরিণত করতে পারেন (ফুরক্বান ৭০-৭১; যুমার ৫৩)। তাছাড়া ইসলাম তার পূর্বেকার সবকিছুকে ধসিয়ে দেয়।[2] সম্ভবতঃ একাধিক স্বলাত ক্বাযা হওয়ার কারণেই মহিলাদের মাসিক অবস্থার স্বলাত পূরণ করার নির্দেশ দেয়া হয়নি; বরং ছিয়াম ক্বাযা করার কথা বলা হয়েছে।[3] উল্লেখ্য যে, রামাযানের শেষ জুম‘আয় পূর্বের ক্বাযা হওয়া স্বলাত আদায় করার যে ফযীলত বর্ণনা করা হয়, তা মিথ্যা ও বাতিল ।

[1]. আলোচনা দ্রষ্টব্য : আলবানী-মিশকাত হা/৬০৩, টীকা-২।
[2]. মুসলিম হা/৩৩৬, ১/৭৬ পৃঃ, (ইফাবা হা/২২১), ‘ঈমান’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৫৬; মিশকাত হা/২৮, ‘ঈমান’ অধ্যায়।
[3]. সহিহ মুসলিম হা/৭৮৯, ১/১৫৩ পৃঃ, (ইফাবা হা/৬৫৪), ‘ঋতু’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১৫; মিশকাত হা/২০৩২, ‘ছিয়াম’ অধ্যায়, ‘ক্বাযা ছিয়াম’ অনুচ্ছেদ।

Exit mobile version