Site icon Tawheed Media

কোন ধরনের আলেমদের নিকট থেকে ইলম বা ফাতওয়া নেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ বা নেওয়া উচিত নয়

ইলম আল্লাহ প্রদত্ত এক অফুরন্ত নেয়ামত। যা জ্ঞানী ও মূর্খদের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,‘বলুন! যারা জানে এবং যারা জানে না তার কি সমান?’ (যুমার ৩৯/৯)। তিনি অন্যত্র বলেন,‘বলুন! অন্ধ ও চক্ষুষ্মান কি সমান হ’তে পারে? আলো ও অন্ধকার কি এক হ’তে পারে?’ (রা‘দ ১৩/১৬)।ইলম নিতে হয় আলেমদের থেকে। কিন্তু অনেকে আলেম বা আলেমদের কাছ থেকে দ্বীন শিখেছেন এমন শায়খদেরকে চেনেন না। এই সুযোগে মিডিয়া ব্যবহার করে একশ্রেণীর অজ্ঞ লোকেরা লোকদের মাঝে “বড় আলেম” সেজে বসে আছে।সুতরাং কুরআন সুন্নাহর দৃষ্টিকোণ থেকে নিম্নলিখিত আক্বীদা মানহাজের ব্যক্তিদের থেকে ইলম বা ফাতাওয়া গ্রহনে বিরত থাকুন। যেমন:

▪️(১) যে ব্যক্তির আক্বীদা মানহাজ বিশুদ্ধ নয়, বরং শিরক-বিদআত মিশ্রিত। যেমন: মাজারে প্রার্থনাকারী, তাবীয ব্যাবহারের পক্ষে ওকালতি কারী, পীর-মুরিদী প্রথায় বিশ্বাসী, ঈদে মিলাদুন্নবী পালনকারী, মৃত ব্যক্তির জন্য ৪ দিন, ৪০ দিন, পালনকারী ইত্যাদি ব্যক্তিদের থেকে ইলম নেয়া যাবেনা। (সূরা নিসা: ৪৮, মায়েদা: ৭২, সহীহ মুসলিম: ১৭৭৮ মিশকাত: ১৪)।

▪️(২) আল্লাহ ও রাসূল (ﷺ) এবং গায়েব সম্পর্কে ভ্রান্ত আক্বীদা যাদের মধ্যে রয়েছে।যেমন: আল্লাহ নিরাকার, সর্বত্র বিরাজমান, রাসূল (ﷺ) নূরের নবী, মাটি থেকে সৃষ্টি নন, সৃষ্টি স্রষ্টার অংশ, অলীরা গায়েব জানেন, কেয়ামত অমুক সালে হবে, ইমাম মাহাদী অমুক সালে প্রকাশি হবে ইত্যাদি। এরূপ বিশ্বাস যাদের মধ্যে রয়েছে তাদের কাছ থেকে ইলম নেয়া যাবেনা। (সূরা নমল: ৬৫, সূরা ত্বহা: ৫, সূরা কাহাফ: ১১০)।

▪️(৩) যে ব্যক্তি শরীয়তের মূল যেমন:আক্বীদা মানহাজ হালাল, হারাম, ফরয, ওযাজিব, সুন্নাত, নফল, মুবাহ, এবং কাউকে কাফের, মুশরিক ফাতওয়া দেয়া সম্পর্কে সালাফদের মানহাজ অনুযায়ী সঠিক জ্ঞান রাখেনা। এমন ব্যাক্তির নিকট থেকে ইলম নেয়া নিরাপদ নয়।(ইবনে মাজাহ: ২২৪, আবুদাঊদ: হা/৩৬৫৭, বায়হাকী: ৫৭৫১, মিশকাত হা/২৫৫)।

▪️(৪) যে আলেমের মধ্যে কুরআন, সহীহ হাদীস, ফিকহ, উসূলে ফিকহ, নাসিখ এবং মানসূখ ইত্যাদি সম্পর্কে বিশুদ্ধ জ্ঞান নেই, ফলে ইজমা বিরোধী অথবা মানসুখ দলীল বা জাল জয়ীফ হাদীস অনুযায়ী কোন হুকুম দেন। এধরনের ব্যক্তিদের কাছ থেকে ইলম নেয়া নিরাপদ নয়। (আবুদাঊদ হা/৩৬৫৭, মিশকাত: হা/২৪২)। শায়খ ইবনে উসাইমীন [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, যঈফ হাদিসকে দলীল হিসাবে গ্রহণ করা যাবে না এবং তাকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নামের সঙ্গে সম্পৃক্তও করা যাবে না (উসাইমীন, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ দারব, টেপ নং ২৭৬)।

▪️(৫) সেই নির্বোধ লোক, যে প্রকাশ্যে মূর্খতাপূর্ণ আচরণ করে; যদিও সে লোকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হাদীস বর্ণনাকারী বা জাননে ওয়ালা হয়। এমন ব্যক্তিদের কাছ থেকে ইলম নেয়া নিরাপদ নয়। (সুরা ত্বাহা: ১২৪, সূরা আহযাব: ৫৮, আবূদাঊদ: হা/৪৮৮০; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৯৮৪, ইমাম যাহাবী (রাহিমাহুল্লাহ), সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা; খণ্ড: ৭; পৃষ্ঠা: ১৬২)।

▪️(৬) সেই বিদ‘আতী, যে তার প্রবৃত্তির দিকে মানুষকে আহ্বান করে। এবং বিদআতে হাসানাহ (উত্তম সৃষ্ট বস্তু) ও বিদআতে সায়্যিআহ (মন্দ সৃষ্ট বস্তু) নামে দুই প্রকার বিদআত আছে বলে বিশ্বাস করে এবং সেটা প্রচার করে।এমন ব্যক্তিদের কাছ থেকে ইলম নেয়া নিরাপদ নয়।কেননা শরীয়তে হাসানাহ, সায়্যিআহ নামে কোন ভাল-খারাপ বিদআত নেই।বরং সকল বিদআতই ভ্রষ্টতা আর প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণতি জাহান্নাম।’(মুসলিম, মিশকাত হা/১৪১ নাসাঈ হা/১৫৭৮)।

▪️(৭) যে ব্যক্তির অন্তরে ইখলাস নেই। যে মানুষের সাথে কথাবার্তায় মিথ্যা বলে, যদিও আমরা তাকে হাদীসের ক্ষেত্রে মিথ্যাবাদী বলে অভিযুক্ত করি না।এমন ব্যক্তির কাছ থেকেও ইলম নেয়া নিরাপদ নয়। (সূরা বাইয়্যিনাহ-৫, সূরা যুমার-১১,সহীহ বুখারী-৩৩)। ইমাম ইবনু কাছীর (রাহিমাহুল্লাহ) (৭০১-৭৭৪ হি.) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা কোন আমল গ্রহণ করেন না, যতক্ষণ না এ দু’টি রুকন তাতে বিদ্যমান থাকে। যথা: (১) শরী‘আতের পদ্ধতি অনুযায়ী হওয়া এবং (২) শিরক মুক্ত অর্থাৎ ইখলাসের সাথে হওয়া’। (তাফসীরুল কুরআনিল ‘আযীম, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৪০৩)।

▪️(৮) সেই সৎকর্মপরায়ণ ইবাদতগুজার মহৎ বান্দা, যে কুরআনের আয়াত ও বিশুদ্ধ হাদীস স্মরণে রাখতে পারে না। ফলে কিয়াস করে ভুল ফাতওয়া দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ায়। এমন ব্যক্তিদের কাছ থেকে ইলম নেয়া নিরাপদ নয়। (বায়হাকী: ৫৭৫১, মিশকাত হা/২৫৫; সহীহুল জামে‘ হা/১৭২৭ ইমাম যাহাবী (রাহিমাহুল্লাহ), সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা; খণ্ড: ৭; পৃষ্ঠা: ১৬২)।

▪️(৯) যে হাদীস সহীহ-জয়ীফ যেমন: সনদ, রিজাল প্রভৃতি সম্পর্কে উসূল জানেনা এবং দলীল থেকে বিধি-বিধান বের করার যোগ্যতা রাখেনা, ফলে ইলম বিহীন বিনা দলিলে ফতোয়া দেয়।এমন ব্যক্তিদের কাছ থেকে ইলম নেয়া নিরাপদ নয়।মুগীরাহ ইবনু শু‘বা [রাযিয়াল্লাহু আনহু] বলেন, নবী (ﷺ)বলেছেন, ‘আমার পক্ষ হতে যে লোক কোন হাদীস বর্ণনা করে অথচ সে জানে যে, তা মিথ্যা, তাহলে সে মিথ্যুকদের একজন।’ (তিরমিযী: হা/২৬৬২; মুসলিম মুক্বাদামাহ্, ইবনু মাজাহ: হা/৪১, আবুদাঊদ হা/৩৬৫৭, প্রভৃতি; মিশকাত হা/২৪২)।

▪️(১০) যে ইজতিহাদের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় শারঈ জ্ঞান জানেনা। যেমন: ঘটনার সাথে বিধি-বিধান সম্বলিত আয়াত ও হাদীস সমূহ জানেনা এবং যে সব দলীলের মাধ্যমে হুকুম ভিন্ন হয়ে যায়, তা জানেনা। যেমন: خاص করা,শর্তযুক্ত করা প্রভৃতি। যার ফলে এদের দাবি বিরোধী কোন হুকুম দিয়ে বসেন। এমন ব্যক্তি থেকে ফতোয়া নেয়া নিরাপদ নয়। (সূরা যারিয়াত-১০, তিরমিযী, হা/২৬৬২; মুসলিম মুক্বাদামাহ্, ইবনু মাজাহ: হা/৪১ আবুদাঊদ হা/৩৬৫৭ প্রভৃতি; মিশকাত হা/২৪২)।

▪️(১১) যে আক্বীদা মানহাজের প্রতি গুরুত্ব না দিয়ে শুধু আমল বা ফজিলতের আলোচনা করে এবং যে ইখতেলাফি মাসালায় কুরআন সুন্নাহর ইত্তেবা ও প্রসিদ্ধ সালাফদের মতামত প্রাধান্য না দিয়ে তাক্বলীদে শাখছী অর্থাৎ অন্ধ অনুসরণ করে নির্দিষ্ট ইমামের মতামত প্রাধান্য দেয়,এমন ব্যক্তি থেকে ইলম বা ফাতওয়া নেয়া নিরাপদ নয়। (সূরা ফুরকান: ২৩, সহীহ মুসলিম, হা/২৫৬৪; মিশকাত: হা/৫৩১৪, সহীহ বুখারী: হা/৫০৬৩; ছহীহ মুসলিম: হা/১৪০১)।

▪️(১২) এমন ব্যক্তি যার আক্বীদা মানহাজ মানুষের কাছে স্পষ্ট নয়, ফলে কোন মানহাজ অনুযায়ী কথা বলে বুঝা মুসকিল হয়ে যায়।আবার সবার মন জয় করে থাকার জন্য যে দলের কাছে যায় সেটির গুন গায় এবং মাসয়ালার ক্ষেত্রে এটাও ঠিক ওটাও ঠিক অর্থাৎ শৈথিল্য করে। এমন আলেমদের নিকট থেকে ইলম বা ফাতওয়া নেয়া ঝুঁকিপূর্ণ। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “স্রষ্টার অবাধ্যতা করে কোন সৃষ্টির আনুগত্য নেই।” (ত্বাবারানী ১৪৭৯৫, আহমাদ ২০৬৫৩, হাদিস সম্ভার হাদিস নং ১৮২৩) ইমাম মালিক (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, এটা দ্বীনের ইলম। সুতরাং তোমরা দেখ যে, কাদের নিকট থেকে দ্বীন গ্রহণ করছ। (ইবনু আব্দুল বার্র, আত-তামহীদ, ১ম খণ্ড, পৃ. ৪৫)।
.
প্রিয় পাঠক,উপরোক্ত ১২টি বৈশিষ্ট্য দেশের কোন কোন আলেমদের মধ্যে রয়েছে সেটা কুরআন-সুন্নাহ ও সালাফদের মানহাজ দ্বারা যাচাই-বাছাই করলে আপনারা নিজেরাই আমার চেয়ে ভাল জানবেন। তাই নির্দিষ্ট করে কারো নাম প্রকাশ করতে চাচ্ছিনা। প্রিয় তৌহিদী মুসলিম দ্বীনি ভাই বোন ,দুনিয়ার জীবন অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত কিন্তু খুবই বিপদজনক একটা সফর। এই সফরে অনেকে সঠিক ট্রেইনে চড়ে বসে, যার ফলে সে তার আসল ঠিকানা জান্নাতে পৌঁছাতে পারে। আবার অনেকে খেল-তামাশায় ব্যস্ত থেকে ট্রেইন ফেইল করে, কিংবা শয়তানের ধোঁকায় পড়ে ভুল ট্রেইনে চড়ে ঠিকানা হারিয়ে দুঃখের সাগরে ভাসে। সুতরাং আখিরাতের জীবনে জান্নাতুল ফেরদৌসের মেহমান হতে হলে দুনিয়াতেই দ্বীনের বিশুদ্ধ ঈমান, আমল ও ইলমের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে হবে। কেননা দ্বীনের ইলম একটি সম্পদ, যার মূল দুনিয়ার সাথে তুলনীয় নয়।আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন) ‘‘যদি আল্লাহর নিকট মাছির ডানার সমান দুনিয়ার (মূল্য বা ওজন) থাকত, তাহলে তিনি কোন কাফেরকে তার (দুনিয়ার) এক ঢোক পানিও পান করাতেন না।’’(তিরমিযী ২৩২০, ইবনু মাজাহ ৪১১০) মানুষ বাজার থেকে মাছ, আলু,পটল কিনার সময় যাচাই-বাছাই করে কিনে। কিন্তু দ্বীনের ইলম নেয়ার ক্ষেত্রে কোন যাচাই-বাছাই করেনা,যা অত্যন্ত দুঃখজনক। ইয়া আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে হেফাযত করো। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

Exit mobile version