Site icon Tawheed Media

কোন অবস্থায় একজন ব্যক্তি রামাদানের সিয়াম ভঙ্গ করতে পারে

প্রশ্ন: কোন অবস্থায় একজন ব্যক্তি রামাদানের সিয়াম ভঙ্গ করতে পারে? ডাইরিয়া হলে সিয়াম বঙ্গ করা যাবে কি?
▬▬▬▬▬▬▬◖◉◗▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: চার মাজহাব যেমন: ইমাম আবু হানীফা, মালেক, শাফেয়ী ও ইমাম আহমেদ (রাহিমাহুল্লাহ) সহ অধিকাংশ আলেমের মতে, একজন রোগীর জন্য রামাদান মাসে রোযা ভঙ্গকরা জায়েয নয় যদি না তার রোগ তীব্রহয়। রোগের তীব্রতার অর্থ হল: (১). রোযার কারণে যদি রোগ বেড়েযায়। (২). রোযার কারণে যদি আরোগ্য লাভে বিলম্ব হয়। (৩). রোযার কারণে যদি খুব বেশি কষ্ট হয় যদিওবা তার রোগ বেড়ে না যায় বা সুস্থতা দেরিতে না হয়। (৪). এর সাথে আলেমগণ আরও যোগ করেছেন এমন কোন ব্যক্তি সিয়াম পালনের কারণে যার অসুস্থ হয়ে পড়ার আশংকা আছে।
.
হাম্বালী মাযহাবের প্রখ্যাত ফাক্বীহ, শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে কুদামাহ আল-মাক্বদিসী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬২০ হি.] বলেছেন:“যে রোগ রোযা ভঙ্গকরা বৈধ করে তা হলো তীব্র রোগ যা রোযা পালনের কারণে বেড়ে যায় অথবা সে রোগ থেকে আরোগ্য লাভ বিলম্বিত হওয়ার আশংকা থাকে।”একবার ইমাম আহমাদকে জিজ্ঞেস করা হল, “একজন রোগী কখন রোযা ভঙ্গ করতে পারবে?”তিনি বললেন, “যদি সে রোযা পালন করতেনা পারে।” তাঁকে বলা হলো: “যেমন জ্বর?” তিনি বললেন,“জ্বরের চেয়ে কঠিনতর কোন রোগ আছে কি!…আর যে সুস্থ ব্যক্তি রোযা রাখলে তার রোগ বেড়ে যাওয়ার আশংকা হয় রোযা ভাঙ্গার ক্ষেত্রে তার হুকুম ঐ অসুস্থ ব্যক্তির ন্যায় রোযা রাখলে যার রোগ বেড়ে যাওয়ার আশংকা থাকে। কেননা সে রোগীর জন্য রোযা ভঙ্গ করা এ কারণে বৈধ করা হয়েছে যে রোযা রাখলে তার রোগ বেড়ে যেতে পারে, রোগ বিলম্বে সারতে পারে। অনুরূপভাবে নতুন কোন রোগ সৃষ্টি হওয়াও একই অর্থবোধক। (ইবনে কুদামাহ আল মুগনী,খন্ড: ৪ পৃষ্ঠা:৪০৩)
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন,অসুস্থ তার অবস্থা বিভিন্ন ধরণের হতে পারে। যেমন:

(১). যেসব ক্ষেত্রে উপবাসের দ্বারা ব্যক্তির সিয়াম প্রভাবিত হয় না, যেমন সামান্য ঠাণ্ডা, হালকা মাথাব্যথা, দাঁতে ব্যথা ইত্যাদি। এমতাবস্থায় তার জন্য রোজা ভঙ্গ করা জায়েয নয়।

(২). যেসব ক্ষেত্রে রোজা পালন করা তার জন্য কঠিন, কিন্তু এতে তার কোনো ক্ষতি হবে না। এমতাবস্থায় তার জন্য রোযা রাখা মাকরূহ এবং রোযা ভঙ্গ করা সুন্নত।

(৩). যেসব ক্ষেত্রে তার জন্য রোজা রাখা কঠিন এবং এতে তার ক্ষতি হবে, যেমন একজন ব্যক্তির ক্ষেত্রে যার কিডনি রোগ, ডায়াবেটিস ইত্যাদি আছে। এমতাবস্থায় তার জন্য রোজা রাখা হারাম। ইমাম উসাইমিন আশ-শারহ আল-মুমতি:খন্ড:৬ পৃষ্ঠা:৩৪১)
.
শাইখ ইবনে উসাইমীন অপর ফাতওয়ায় আরো বলেছেন:“রোযা পালনের কারণে যে রোগীর উপর শারীরিক কোন প্রভাবপড়ে না, যেমন- হালকা সর্দি, হালকা মাথাব্যথা, দাঁতে ব্যথা ইত্যাদির ক্ষেত্রে রোযা ভাঙ্গা জায়েয নয়। যদিও আলেমগণের কেউ কেউ নিম্নোক্ত আয়াতের দলীলের ভিত্তিতে বলেছেন যে তার জন্য রোযা ভাঙ্গা জায়েয। আর কেউ অসুস্থ থাকলে…[সূরা বাক্বারাহ, ২ : ১৮৫] তবে আমরা বলবো- এই হুকুমটি একটি ইল্লত (কারণ)এর সাথে সম্পৃক্ত।আর তা হলো রোযা ভঙ্গকরাটা রোগীর জন্য বেশি আরামদায়ক হওয়া। যদি রোযা রাখার কারণে রোগীর উপর শারীরিক কোন প্রভাব না পড়ে তবে তার জন্য রোযা ভঙ্গকরা জায়েয নয়। বরং তার উপর রোযা রাখা ওয়াজিব।” (আশ-শারহুল মুমতি,খন্ড:৬ পৃষ্ঠা: ৩৫২)
.
উপরোক্ত এই মূলনীতির আলোকে ডাইরিয়ায় আক্রান্ত রুগীর বিধান হল, ডায়রিয়া যদি মৃদু অর্থাৎ হালকা হয় এবং এটি যদি সিয়াম পালনকারী ব্যক্তির রোজাকে প্রভাবিত না করে বা ক্লান্তি বা অযথা কষ্ট না দেয়, তাহলে রোজাদারের জন্য সিয়াম বঙ্গ করা জায়েয হবে না এবং তাকে অবশ্যই রোজা পূর্ণ করতে হবে। কিন্তু ডায়রিয়া যদি তীব্র হয়,এবং এর জন্য রোজাদার এতটাই ক্লান্ত ও অসুস্থি বোধ করে, তাহলে তাকে রোজা ভাঙতে হবে। যে ব্যক্তি ডায়রিয়ায় ভুগছে তাকে তার শরীরের তরল এবং লবণের যা ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ করতে হবে এবং যদি সে তা না করে, তাহলে সে নিজেকে মারাত্মক ক্লান্তির ঝুঁকির মুখোমুখি করছে। ডায়রিয়া যদি এর চেয়েও খারাপ হয়, এই অর্থে যে তিনি যদি এই ডায়রিয়া বন্ধ করার জন্য ওষুধ না খান এবং তার শরীরের যে তরল ও লবন ক্ষয় হয়েছে তা পূরণ না করে, তার ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তবে এক্ষেত্রে তিনি রোজা অবশ্যই ভাংতে হবে কেননা এমন অবস্থায় রোজা রাখা তার জন্য হারাম। সুতরাং অসুস্থতার জন্য সিয়াম বঙ্গ করলে পরবর্তীতে এই সিয়ামটির কাযা আদায় করতে হবে। (ইসলামি সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-২২১২৩২) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
______________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

Exit mobile version