Site icon Tawheed Media

কে কার তাক্বলীদ করে

তাক্বলীদ নিয়ে অনেক আলোচনা হয়। তবে ইদানীং কয়েকটা লেখা পড়লাম যেগুলোর মুখ্য বিষয় ছিল কে কার তাক্বলীদ করে। আলোচনায় ফুটে উঠেছে হানাফী ভাইয়েরা ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) এবং তার দুই শাগরেদের তাক্বলীদ করেন। অন্যদিকে আহলেহাদীছ ভাইয়েরা বর্তমান যুগের কিছু আলেমের তাক্বলীদ করেন যেমন আলবানী, ইবনে বায (রহঃ) । আমি এই প্রসংগে আমার কিছু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে চাই।

দারুল উলুম দেওবান্দে পড়ার সুবাদে আমি দেখেছি সম্মানিত উস্তাদগণ ক্লাসে কয়েকটি নাম খুব উচ্চারণ করতেন, শায়খুল হিন্দ মাহমুদুল হাসান, মুহাদ্দিছ আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী, মাওলানা ক্বাসেম নানুতুবী, মুফতী রশীদ আহমাদ গাঙ্গুহী (রহঃ আজমাঈন)। যে মাসালাই হোক না কেন উস্তাদগণ সেই মাসালায় এই মহান ব্যক্তিবর্গের নাম অবশ্যই উল্লেখ করবেন। বর্তমানে কওমী মাদরাসার ছাত্ররা হাদীছের যে বিভিন্ন ব্যাখ্যা গ্রন্থ পড়েন তাও এনাদের লিখিত। সাথে আরো যোগ হতে পারে ইউসুফ বিন্নৌরী, শাব্বির আহমাদ উসমানী (রহঃ) সহ বর্তমান যুগের কিছু ওলামায়ে কেরাম। দেওবান্দে পড়া অবস্থায় আমার এক বাংলাদশেী হানাফী বন্ধু ইসহাক্বকে বলেছিলাম আপনারা ইমাম আবু হানীফা রহঃ ও তার দুই শাগরেদ দিয়ে শুরু করেন তারপর লম্বা একটা যুগ লাফ দিয়ে পার হয়ে উপরে উল্লেখিত এই যুগের আলেমগণের নাম নেয়া শুরু করেন। মাঝখানের এই এক হাযার বছরে কত আলেম গেছে তাদের নাম কেন গ্রহণ করেন না? যতই অন্য মাযহাবের হোক যেমন ইমাম নাবাবী, আসক্বালানী, বায়হাক্বী, ইবনে তাইমিয়া…….. । উল্লেখ্য যে দারুল উলুম দেওবান্দে আমার দুই জন উস্তাদ ছিলেন যারা অন্যদের থেকে ব্যতিক্রম ছিলেন। তারা উপরে উল্লেখিত বর্তমান যুগের হানাফী মাযহাবের আলেমগণের নাম কালে ভদ্রে নিতেন। বরং ইবনে তাইমিয়া, আসক্বালানী, নাবাবী এনাদের নাম নিতেন। শুধু তাই নয়, হাবিবুর রহমান আজমী হাফিঃ তো মাঝে মাঝে ইবন হাযম ও ইমাম শাওকানী রহঃ- এর নামও নিতেন। যা ছিল অন্য শিক্ষকগণের থেকে ব্যতিক্রম।

এবার আসি মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথায়, এখানে খুব কম মাসালায় ইবনে উসাইমীন ও ইবনে বায (রহঃ)-এর নাম নেয়া হয়। যখন প্রয়োজন হয় শুধু তখন তাদের নাম নেয়া হয়। বাকী সবার আগে ছাহাবায়ে কেরাম তারপর চার ইমাম তারপর ইবনে তাইমিয়া, ও তার শাগরেদ ইবনুল কাইয়্যুম, আসক্বালানী, নাবাবী (রহঃ আজমাঈন) সহ যুগ শ্রেষ্ঠ ইমাম গণের নাম উচ্চারণ করা হয়। তবে হ্যাঁ হাদীছের তাহক্বীক্বের ক্ষেত্রে আলবানী রহঃ-এর নাম এবং মাসালার ক্ষেত্রে ইবনু তাইমিয়া ও ইবনুল কাইয়্যুম (রহঃ)-এর নাম খুব কম সময়ই বাদ যায়।

এখানে আরেকটা পার্থক্য উল্লেখ করি দেওবান্দে সকল উস্তাদগণ সব সময় হানাফী মাযহাবের ফৎওয়াকে প্রাধান্য দিতেন। পরীক্ষায় প্রশ্নও এই ভাবে আসত যে, ‘হাদীছটি যদি হানাফী মাযহাবের বিরোধী হয় তাহলে এর জবাব দাও’। সকলের মূল উদ্দেশ্য সব সময় থাকত হানাফী মাযহাবকে ডিফেন্ড করা। অন্যদিকে মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্দিষ্ট কোন মাযহাবকে ডিফেন্ড করার প্রবণতা নাই বললেই চলে। এমনকি ছাত্ররাও অালোচ্য মাসালায় স্বাধীন মন্তব্য পেশ করার অধিকার রাখে। এবং শিক্ষকের মন্তব্যের সাথে ওপেনলি মুনাকাশা বা তর্ক বা বিতর্ক করার অধিকার রাখে। যা দারুল উলুম দেওবান্দে স্বপ্নের মত।

আমি যা লিখেছি মহান আল্লাহকে সাক্ষী রেখে ইনসাফের সাথে যা দেখেছি এবং দেখছি তাই লিখলাম। বিবেচনা পাঠকের হাতে।

লেখকঃ আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রাযযাক।
ছাত্রঃ মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, মদিনা, সৌদিআরব।।

Exit mobile version