Site icon Tawheed Media

কুরবানির দিনে কুরবানির পশু জবাই হওয়ার আগ পর্যন্ত কিছু না খেয়ে থাকার কি কোনো নিয়ম আছে এবং থাকলে এটি কার জন্য প্রযোজ্য

বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা প্রমানিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঈদুল ফিতরের দিন কিছু না খেয়ে সালাতের জন্য বের হতেন না,আর কুরবানীর ঈদে সালাতের আগে কিছু খেতেন না। দলিল বুরায়দা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন,রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদুল ফিৎর-এর দিন কিছু না খেয়ে ঈদগাহের উদ্দেশ্যে বের হতেন না। আর ঈদুল আযহার দিন সালাত শেষ না করে কিছু খেতেন না’ (তিরমিযী, হা/৫৪২; মিশকাত, হা/১৪৪০ ইবনু খুযায়মাহ হা/ ১৪২৬, মুসতাদরাক লিল হাকিম হা/ ১০৮৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬১৫৯ সহীহ ইবনু হিব্বান ২৮১২, সহীহ আল জামি‘ ৪৮৪৫ বঙ্গানুবাদ মিশকাত, হা/১৩৫৬, ৩/২২৪ পৃ. সনদ সহীহ)।
.
অন্য বর্ণনায় এসেছে,রাসূল (ﷺ) ঈদুল ফিৎরের দিন কিছু না খেয়ে বের হ’তেন না। আর ঈদুল আযহার দিনে কুরবানী না করে কিছু খেতেন না (মুসনাদে আহমাদ হা/২১৯৬৪, সনদ হাসান)।
.
আরেক বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রথম কুরবানীর গোশত বা কলিজা দ্বারা খেতেন (বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা, হা/৩৬৮০-৩৬৮১ মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩০৩৪ সনদ সহীহ)।
.
উপরোক্ত হাদীসগুলো প্রমাণ করে যে, সুন্নাহ হল ঈদুল ফিতরে সালাতের পূর্বে খাওয়া আর কুরবানী ঈদে সালাতের পরে খাওয়া। ঈদুল আযহায় দেরী করে খাওয়ার হিকমাত হল, ঐদিনে কুরবানী শুরু করবে আর কুরবানীর গোশত দিয়ে ইফত্বার করবে। যায়ন ইবনু মুনীর বলেছেনঃ দু’ঈদের নির্দিষ্ট সদাক্বাহ রয়েছে ঈদুল ফিতরের সদাক্বাহ্ ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে আর ঈদুল আযহার সদাক্বাহ পশু যাবাহের পর।(মিশকাতুল মাসাবিহ হা/১৪৪০ ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য)
.
এখন প্রশ্ন হল কুরবানীর ঈদের দিন ঈদের সালাতের পূর্ব পর্যন্ত কিছু না খেয়ে অতঃপর কুরবানি গোস্ত থেকে ভক্ষণ করার এই সুন্নাহটি কি শুধু কোরবানি দাতার জন্য প্রযোজ্য নাকি আমভাবে সকল মুসলিম উম্মার জন্য প্রযোজ্য? এই প্রশ্নের বিশুদ্ধ জবাব হল হাদীসের ভাষা থেকে যা প্রমানিত হয় তা হলো: এটি শুধুমাত্র কোরবানী দাতার জন্য প্রযোজ্য অর্থাৎ যিনি তার এবং তার পরিবারের পক্ষ থেকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে পশু কুরবানী করবেন তার জন্যই প্রযোজ্য সবার ক্ষেত্রে নয়। সুতরাং যে বা যারা কুরবানী করবে না তারা ঈদের পূর্বে চাইলে খেতে পারে আবার নাও পারে।
.
হাম্বালী মাযহাবের প্রখ্যাত ফাক্বীহ, শাইখুল ইসলাম, ইমাম ‘আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন কুদামাহ আল-মাক্বদিসী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬২০ হি.] বলেন, ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, যার কুরবানী রয়েছে সে ফিরে আসার পর খাবে কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাবাহকৃত গোশত খেয়েছেন ফিরে আসার পর। আর যার কুরবানী নেই তার খাওয়াতে বাধা নেই।(মিশকাতুল মাসাবিহ হা /১৪৪০ ইসলাম ওয়েব ফাতওয়া নং-৫৮৩২৬) ভারতবর্ষের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস, সুনানুত তিরমিযীর বিখ্যাত ভাষ্যগ্রন্থ তুহফাতুল আহওয়াযী’র সম্মানিত মুসান্নিফ (লেখক), আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ ‘আব্দুর রহমান বিন আব্দুর রহীম মুবারকপুরী (রাহিমাহুল্লাহ) তুহফাতুল আহওয়াযী গ্রন্থে এবং ইমাম যাইলাঈ (রাহিমাহুল্লাহ) তাবঈনুল হাকায়েক গ্রন্থে একই মত দিয়েছেন। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
__________________
জুয়েল মাহমুদ সালাফি

Exit mobile version