Site icon Tawheed Media

কাফফারাস্বরূপ পঠিত দো‘আটি কোন কোন ক্ষেত্রে পড়া যায়

প্রশ্ন: বৈঠক শেষে কাফফারাস্বরূপ পঠিত যে দো‘আটির পরিচিতি রয়েছে, সে দো‘আটি কোন কোন ক্ষেত্রে পড়া যায়? জনৈক আহালুল হাদীস শাইখ বলেছেন; দো‘আটি চারটি স্থানে পড়া যায়। শাইখের উক্ত বক্তব্য কতটুকু সঠিক বিস্তারিত জানতে চাই।
▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: যে দু’আটি সম্পর্কে প্রশ্ন করেছেন পরিপূর্ণ দু’আটি হলো: سُبْحَانَكَ اَللّٰهُمَّ وَبِحَمْدِكَ أَشْهَدُ أَنْ لاَّ إِلهَ إِلاَّ أَنْتَ أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوْبُ إِلَيْكَ“অনুবাদ:সুবহা-নাকাল্লা-হুম্মা অবিহামদিকা, আশহাদু আল্লা ইলা-হা ইল্লা আন্তা, আস্তাগফিরুকা অআতূবু ইলাইক। অর্থ: পবিত্রতা সহ আপনার প্রশংসা বর্ণনা করছি। আপনি ছাড়া প্রকৃত কোন ইলাহ নেই। আপনার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তওবা করছি।
.
যদি ভুল না করি আহলে হাদীসের সম্মানিত একজন শাইখ ড: মুজাফফর বিন মহসিন হাফিজাহুল্লাহ তার কোন একটি ভিডিওতে উপরোক্ত দু’আটি সম্পর্কে বলেছেন দু’আটি চারটি স্থানে পড়া যায়। যেমন: (১).
কুরআন তিলাওয়াত শেষে ভুলত্রুটির কাফফারাস্বরূপ দু’আ হিসেবে। (২). অযুর শেষে দু’আ হিসেবে। (৩). যেকোন দ্বীনি বৈঠক শেষে (কাফফারাস্বরূপ) এবং (৪). সালাত শেষে জিকির হিসাবে। এই চারটি স্থানে দু’আটি পড়া যায় এবং অনেক আলেম মুস্তাহাব বলেছেন। সুতরাং শাইখ ড: মুজাফফর বিন মহসিন (হাফিজাহুল্লাহ)-এর বক্তব্য সঠিক এবং বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
.
১). কুরআন তিলাওয়াত শেষে ভুলত্রুটির কাফফারাস্বরূপ:
.
দুঃখজনক হলেও সত্যি বর্তমান সমাজে কুরআন তেলাওয়াত শেষে অধিকাংশ লোক ‘সাদাক্বাল্লাহুল আযীম’ পড়ে থাকে। অথচ শরীয়তে এর কোন দলিল নেই তাই যুগ শ্রেষ্ঠ বহু আলেম এটিকে বিদআত বলেছেন। (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ৪/১৪৯ পৃঃ, ফাতওয়া নং ৩৩০৩; ফাতাওয়া ইমাম উসায়মীন ৩৯/১-৬ পৃ.)। বরং কুরআন তেলাওয়াত বা যেকোন দ্বীনি বৈঠক শেষে নিম্নলিখিত দোয়া পাঠ করা যায়।আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন মাজলিসে (বৈঠকে) বসতেন তখন কিছু বাক্য উচ্চারণ করতেন। একদিন আমি ঐ সব কালাম সম্পর্কে তাঁকে জিজ্ঞেস করলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, (মাজলিসে) যদি কল্যাণকামী আলোচনা হয় তবে তা তার জন্য কিয়ামাত পর্যন্ত ‘মুহর’ হিসেবে গণ্য হবে। আর যদি (মাজলিসে) অকল্যাণকর আলোচনা হয় তবে তা তার জন্য কাফফারার মধ্যে গণ্য হবে। কালামটি হলো, سُبْحَانَ وَبِحَمْدِكَ لَا إِلٰهَ إِلاَّ أَنْتَ أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوْبُ إِلَيْكَ উচ্চারণ : সুব্হা-নাকা ওয়া বিহাম্দিকা লা ইলা-হা ইল্লা আংতা আস্তাগ্ফিরুকা ওয়া আতূবু ইলায়কা। অর্থ : ‘পবিত্রতা সহ আপনার প্রশংসা বর্ণনা করছি। আপনি ছাড়া প্রকৃত কোন ইলাহ নেই। আপনার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তওবা করছি।।’ (ইমাম নাসাঈ, আল-কুবরা হা/১০১৪০; আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাহ হা/৩০৮, সনদ সহীহ, সিলসিলা সহীহাহ হা/৩১৬৪; দ্রঃ নাসাঈ; বৈরুত: দারুল মা‘আরিফাহ ১৯৯৭, হা/১৩৪৪)
.
২). অযুর শেষে দু’আ হিসেবে:
.
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন: আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহি আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “—আর যে ব্যক্তি ওযুর পর (নিম্নের যিকর) বলে, তার জন্য তা এক শুভ্ৰ পত্রে লিপিবদ্ধ করা হয়। অতঃপর তা সীল করে দেওয়া হয়, যা কিয়ামত দিবস পর্যন্ত নষ্ট করা হয় না। سُبْحَانَكَ اَللّٰهُمَّ وَبِحَمْدِكَ أَشْهَدُ أَنْ لاَّ إِلهَ إِلاَّ أَنْتَ أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوْبُ إِلَيْكَ “সুবহানাকাল্লা-হুম্মা অবিহামদিকা, আশহাদু আল লা ইলা-হা ইল্লা আন্ত, আস্তাগফিরুকা অ আতূবু ইলাইক।” অর্থাৎ তোমার সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা করছি হে আল্লাহ! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তুমিই একমাত্র সত্য উপাস্য। আমি তোমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি তোমার দিকে প্রত্যাবর্তন (তওবা) করছি। (ইমাম নাসাঈ, আলৎকুবরা হা/ ৯৯০৯, মুস্তাদরাক হাকেম হা/২০৭২, ত্বাবারনীর আওসাত্ব হা/ ১৪৫৫, সহীহ তারগীব ২২৫, হাদিস সম্ভার হা/৫৬৬)
.
৩). যেকোন দ্বীনি বৈঠক শেষে(কাফফারাস্বরূপ):
.
আবু বার্যাহ (রাঃ) বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন সভা থেকে উঠে চলে যাবার ইচ্ছা করতেন, তখন শেষের বেলায় এই দো‘আ পড়তেন ‘‘সুবহা-নাকাল্লা-হুম্মা অবিহামদিকা, আশহাদু আল্লা ইলা-হা ইল্লা আন্তা, আস্তাগফিরুকা অআতূবু ইলাইক।’’ অর্থাৎ তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করি হে আল্লাহ! তোমার প্রশংসার সাথে। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তুমি ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই। আমি তোমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তোমার দিকে তওবা (প্রত্যাবর্তন) করছি।একটি লোক নিবেদন করল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আপনি যে দো‘আ পড়লেন অতীতে তো তা পড়তেন না।’ তিনি বললেন, ‘‘এই দো‘আটি মজলিসে (সংঘটিত ভুল-ত্রুটি)র কাফ্‌ফারাস্বরূপ।’’ (আবু দাঊদ, আবু আব্দুল্লাহ হাকেম আয়েশা রাযি্য়াল্লাহ আনহা হতে তাঁর ‘মুস্তাদরাক’ নামক গ্রন্থে এই হাদীসটি বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণনা করেছেন। আবু দাউদ হা/ ৪৮৫৯, সুনানে দারেমী হা/২৬৫৮, রিয়াদুস সলেহিন হা/৮৩৭)
.
(৪). সালাত শেষে জিকির হিসাবে:
.
আম্মাজান আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন কোন মজলিসে বসতেন অথবা সালাত আদায় করতেন তখন কিছু বাক্য উচ্চারন করতেন। আয়েশা (রাঃ) তাঁকে উক্ত বাক্যসমূহ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি বললেন, কেউ যদি ভাল বাক্য বলে তা হলে সেগুলো কিয়ামত পর্যন্ত তাঁর মোহরস্বরূপ হবে। আর সে যদি অন্য ধরনের বাক্য বলে তা হলে সেগুলো তাঁর জন্য কাফ্‌ফারা স্বরূপ হবে। (বিস্তারিত দেখুন, সুনানে আন-নাসায়ী হা/১৩৪৪, মুসনাদে আহমেদ হা/২৪৪৮১ সিলসিলা সহীহা হা/৩১৬৪)।(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
______________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

Exit mobile version