Site icon Tawheed Media

একটি মাছির কারণে জান্নাত অথবা জাহান্নামে যেতে হলে অন্য কিছুর কারণে কেন নয়

ত্বারেক বিন শিহাব (رضى الله عنه) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:
এক ব্যক্তি একটি মাছির কারণে জান্নাতে যাবে আর এক ব্যক্তি মাছির কারণে জাহান্নামে যাবে। সাহাবীহণ বললেন তা কি ভাবে? উত্তরে রাসূল (ﷺ) বললেন : এক কওমের একটি ভাষ্কর্য বা মূর্তি ছিল। ওটার পাশ দিয়ে যেই যেত সেই উক্ত ভাষ্কর্যে কোন কিছু উতসর্গ না করে যেতে পারতো না। সেখান দিয়ে একবার দু’জন লোক যাচ্ছিল। তাদের একজনকে মূর্তিওয়ালারা বলল কিছু দান করে যাও। সে বলল, আমার কাছে দান করার মত কোন কিছুই নেই। তারা বলল একটি মাছি হলেও তোমাকে উৎসর্গ করতে হবে। সুতরাং সে একটি মাছি উৎসর্গ করল। তারা তার পথ ছেড়ে দিল। এভাবে সে যাহান্নামে প্রবেশের ফয়সালা নিশ্চিৎ করল। এবার অপর জনকেও বলল: কিছু দান করে যাও । সে জবাবে বলল, আমি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো উদ্দেশ্যে কোন কিছুই দান করব না। ফলে তারা তরবারী দিয়ে তার গর্দান উড়িয়ে দিল। কিন্তু সে জান্নাতের ফয়সালা লাভ করল। -[ইমাম আহমাদ, আয-যুহুদ ১/১৫; বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান হা/৭৩৪৩, ইবনু আবী শায়বাহ হা/৩৩০৩৮]
.
 ব্যাখ্যাঃ
 উক্ত হাদীছে মূল আরবী শব্দ হল ﺻﻨﻢ (ছনাম) যার অর্থ মূর্তি বা ভাষ্কর্য। তবে আল্লাহ ছাড়া অন্য যারই পূজা-অর্চনা করা হয় তাকেই ছনাম বলা হয়। যেমন কবর, মাযার, থান, মৃত নবী ওলী, দেশের বীর-শহীদ ও ভাষা শহীদ। অনুরূপ প্রয়াত কোন রাষ্ট্র নায়ক, কবি, সাহিত্যিক কিংবা তাদের সমাধী, বটমূল বা অন্য কোন বৃক্ষমূল, পাথর,মাটি বা সিমেন্টের নির্মিত স্মৃতি সৌধ, মীনার, স্তম্ভ ইত্যাদি সবই উক্ত ছনাম বা মূর্তির অর্ন্তভুক্ত। এগুলোর যে কোনটিতে কোন কিছু উতসর্গ করলেই শিরক হবে।
 শিরক যত ক্ষুদ্র বা সামন্যই হোক তথাপী শিরক করলেই জাহান্নাম অবধারিত। যেমনটা মহান আল্লাহ বলেছেন,
ﻣَﻦ ﻳُﺸْﺮِﻙْ ﺑِﺎﻟﻠّﻪِ ﻓَﻘَﺪْ ﺣَﺮَّﻡَ ﺍﻟﻠّﻪُ ﻋَﻠَﻴﻪِ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔَ ﻭَﻣَﺄْﻭَﺍﻩُ ﺍﻟﻨَّﺎﺭُ ﻭَﻣَﺎ ﻟِﻠﻈَّﺎﻟِﻤِﻴﻦَ ﻣِﻦْ ﺃَﻧﺼَﺎﺭ
-যে ব্যক্তি আমার সাথে শরীক করবে তার জন্য আল্লাহ নিশ্চয় জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন আর জাহান্নামই হল তার আবাস স্থল। [সূরা মায়েদাঃ৭২]
.
 এমন কিছু পাপ আছে যা বড় বা গুরুতর বলে মানুষের মনে নাও হতে পারে। অথচ সে জন্য জাহান্নাম অবধারিত। যেমন একটি মাছির জন্য জাহান্নাম। তাই সব ধরণের পাপ থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করা উচিত। কোন পাপকেই তুচ্ছ বলে অবহেলা করতে নেই।
.
 উক্ত প্রথম লোকটি তাদের অনিষ্ট থেকে বাঁচার জন্য মাছিটি দান করেছিল। তবুও তাকে জাহান্নামে যেতে হবে। বুঝাগেল শিরকের ব্যপারে কোন কৌশল বা বাহানা গ্রহণ যোগ্য নয়।
.
 লোকটি একজন মুলিম ব্যক্তি ছিল; কাফের নয়। তা না হলে মাছির কারনে জাহান্নামে যাবে কেন? কাফের হলে তো এমনিতেই জাহান্নামে যাওয়ার কথা। বুঝাগেল, কোন মুসলিম যতই নামাযী হাজী গাজী মুজাহিদ, দানশীল, আলেম হোক তার টুপি দাড়ি জুব্বা বাহ্যিক বেশ-ভূষা যতই সুন্দর হোক সব নিঃষ্ফল হয়ে যাবে; যদি সে শিরক করে বসে।
.
 মাছি উৎসর্গে তাদের কোনই ফায়েদা ছিল না। তথাপী মাছি দিতে বাধ্য করেছিল মূলত: মাযারে বা বেদীতে মাছি, ফুল টাকা ইত্যাদি দানের নীতির প্রতি তার সমর্থন আদায়। তাই কবরে,মাযারে বা সৌধে কে কি দিল সেটা বড় কথা নয়। বরং সেখানে কোন কিছু দেওয়ার নীতিকে সমর্থন করাই হল সব চেয়ে পাপ বা শিরক।
.
 মূর্তি , ছবি, ভাষ্কর্য্য ইত্যাদিতে মাছি উতসর্গ করলে যদি শিরক হয় এবং জাহান্নামে যেতে হয় তাহলে সে সব স্থানে ফুল, চাল, ডাল, মুরগি, গরু, উঁট,আগরবাতী , মোমবাতী, নারিকেল ইত্যাদি দান করলে আরো বড় শিরক হবে না কি? এবং জাহান্নামে যাওয়া অধিকতর নিশ্চিত হবে না কি?
.
 ২য় লোকটির কাছে মাছি দাবী করা হয়েছিল। তার নিয়োত কি তা জানতে চাওয়া হয়নি। বুঝা গেল সামাজিকতা রক্ষা করতে গিয়ে অন্তরে ঘৃণা রেখে শুধু বাহ্যিক ভাবেও শিরকী অনুষ্ঠাণে যোগ
দেওয়া যাবেনা।
.
 লোকটি জীবন দিল তবুও ঈমান দিল না। শহীদ হল তবুও শিরক করল না। এটিই তাওহীদ। এটিই খাঁটি মুমিনের আদর্শ। তাই প্রতিটি মুমিনের উচিত তাওহীদের উপর এভাবেই অটল থাকা, স্থীর থাকা, ক্ষমতার মোহ, দুনিয়ার লালসা বা তথাকথিত সামাজিকতার প্রভাবে তো নয়ই এমনকি এই মূল্যবান জীবনটি যদি হারাতে হয় কিংবা সারা জীবনের সঞ্চিত সমূদয় সম্পদও যদি বিলীন হয়ে যায় তথাপি শিরকের জগদ্দলে ঈমানী সম্পদ বিলীন করা যাবে না।
.
 হযরত মুয়ায বিন জাবাল (رضى الله عنه) বলেন: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাকে বলেছেন : তুমি শিরক করোনা, যদিও তোমাকে হত্যা করা হয় কিংবা আগুণে পুড়িয়ে ভষ্ম করে দেয়া হয়। -[তিরমিযী]

Exit mobile version