Site icon Tawheed Media

এই হাদীসটিতে অনেক শিক্ষা রয়েছে চিন্তাশীল অভিভাবকদের জন্য

রাসূল (ﷺ)বলেছেন, مَا مِنْ مَوْلُودٍ إِلاَّ يُولَدُ عَلَى الْفِطْرَةِ فَأَبَوَاهُ يُهَوِّدَانِهِ أَوْ يُنَصِّرَانِهِ أَوْ يُمَجِّسَانِهِ، ‘এমন কোন মানব শিশু নেই যে ফিতরাতের তথা ধর্ম বা ইসলামের উপর জন্মগ্রহণ করে না। তারপর তার মাতা-পিতা তাকে ইহুদী অথবা খৃষ্টান অথবা অগ্নিপূজারী করে তোলে’। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তিলাওয়াত করলেন,‘‘আল্লাহর ফিতরাত, যার উপর তিনি মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ তা‘আলার সৃষ্টি রহস্যে কোন পরিবর্তন নেই। এটাই সরল প্রতিষ্ঠিত দীন।’’ (সূরাহ আর রূম ৩০: ৩০ সহীহ বুখারী হা/১৩৫৮; মিশকাত হা/৯০)।

উক্ত হাদীসে ফিত্বরাতের অর্থ হলো আল্লাহ তাঁর সৃষ্টির মধ্যে স্রষ্টাকে চিনবার যে যোগ্যতা দিয়েছেন সেই অবস্থার নামই ফিত্বরাত।জন্মগতভাবে একটি মানব শিশু সম্পূর্ণ নিষ্পাপ, নিষ্কলুষ ও পরিচ্ছন্ন আত্মা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। কিন্তু জিন ও মানব শয়তানের আছর বা অন্য কোনো ভ্রষ্টতা দ্বারা প্রভাবিত হলে এর ব্যত্যয় ঘটে। আল্লামা ইবনু আছির তার নেহায়া গ্রন্থে বলেছেন, ‘আল্লাহর অমোঘ নিয়মানুসারে সে একটি আদর্শিক অবস্থার উপর এবং স্বভাবগতভাবেই সত্য দ্বীন গ্রহণে উপযোগী হয়ে জন্মগ্রহণ করে’। (ইবনুল আছির, কিতাবুন নেহায়া, ৩/১৫৭)। কিন্তু তার শারীরিক ও মানুষিক বিকাশ পরিবেশ ও অবস্থার উপর নির্ভরশীল। পিতা-মাতার আচার-আচরণ, পারিপার্শ্বিক ও সামাজিক অবস্থা এ ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। তার শারীরিক ও মানুষিক বিকাশে পারিবারিক দৃষ্টিভঙ্গি, সামাজিক কৃষ্টি-কালচার ও আচার-অনুষ্ঠান ব্যাপক প্রভাব ফেলে। সে ইয়াহূদী, খ্রিষ্টান, অগ্নি অথবা অন্য কোনো জড়পদার্থের পূজা করে।পিতা-মাতার বিশ্বাস, আদর্শ, সামাজিক পরিবেশ ও অবস্থার আলোকে তার মানসিকতা, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, আত্মবিশ্বাস, চেতনাবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে ওঠে।
.
এ হাদীসে সন্তানদের উপর মাতা-পিতার যে বিশাল প্রভাব রয়েছে তার প্রমাণ মেলে। পিতা-মাতা সন্তানকে যে ধর্মে চায় সে ধর্মে গড়ে তুলতে পারে। সাধারণত সবাই বাপ-দাদার ধর্মেই সন্তানদের বড় করে। হাদীসটিতে মুসলিমদের কি কোন শিক্ষা আছে? হ্যাঁ অবশ্যই আছে। হাদীস অনুসারে মাতা-পিতা তাদের সন্তানদের যেমন ইহুদী-খৃষ্টান বানাতে পারে তেমনি সক্রিয় অথবা নিষ্ক্রিয় মুসলিমও বানাতে পারে। যে মুসলিম মাতা-পিতা নিজেরা সক্রিয় বা অভ্যস্ত (প্রাক্টিসিং) মুসলিম তারা সন্তানদের অভ্যস্ত (প্রাক্টিসিং) মুসলিম হিসাবে গড়ে তোলার চেতনা লালন করতে পারে এবং সেজন্য অবিরত চেষ্টা করতে পারে। পক্ষান্তরে ইসলামী বিধি-বিধান পালনে যারা নিষ্ক্রিয় মুসলিম তারা তাদের সন্তানদের ইসলাম সম্পর্কে নিষ্ক্রিয় রাখতে একই ধরনের ভূমিকা রাখে। কারণ অধিকাংশ মুসলিম অবচেতন মনে নিজেদের বাপ-দাদা থেকে প্রাপ্ত ইসলাম মেনে চলে, তার সাথে কুরআন ও সুন্নাহর ইসলামের মিল থাকুক কিংবা না থাকুক। আদিকাল থেকে মানুষ এমনটাই করে চলেছে। তাদের এ স্বভাব সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘যখন তাদের বলা হয়, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তোমরা তার অনুসরণ কর, তখন তারা বলে, বরং আমরা তারই অনুসরণ করব যার উপরে আমরা আমাদের বাপ-দাদাদের পেয়েছি। যদিও তাদের বাপদাদারা কিছুই জ্ঞান রাখতো না এবং তারা সুপথপ্রাপ্ত ছিল না’ (সূরা বাক্বারাহ ২/১৭০)।
.
পরিশেষে, মুসলিম হিসাবে আমাদের ঈমান জন্মসূত্রে প্রাপ্ত। এটা যে চর্চার বিষয় তা যেন আমরা ভুলে গিয়েছি।উল্লিখিত আলোচনার আলোকে প্রত্যেক নবজাতককে পারিপার্শ্বিক, সামাজিক বিরূপ প্রভাব থেকে‍ মুক্ত করে ইসলামী আদর্শের আলোকে গড়ে ওঠার সুযোগ করে দিন। মুসলিম সমাজে গড়ে ওঠা কোনো শিশু যেন পিতা-মাতা বা সামাজিক অথবা বিজাতীয় প্রভাবে বিপথগামী না হয় সেই ব্যবস্থা আল্লাহ সকল শিশুর জন্য করুন। আমীন! (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
______________________
✍️জুয়ল মাহমুদ সালাফি

Exit mobile version