Site icon Tawheed Media

চতুর্দিকে আগুন, দুর্যোগ ও লাশের মিছিল: আমাদের বোধোদয় হবে কবে?

প্রিয় দেশবাসী, সচেতন নাগরিক ও মুসলিম/অমুসলিম ভাই ও বন্ধুগণ:

আমাদের চোখের সামনে যা ঘটে চলেছে তা তো কারো অজানা নয়। কয় দিন পরপরই ঘটছে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। আগুনে পোড়া মানুষের দুর্গন্ধ চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ছে। স্বজন হারা মানুষের আর্ত চিৎকার ও করুণ কান্নায় পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে। কোটি কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হচ্ছে। রোড এক্সিডেন্ট ও নানা দুর্যোগে পড়ছে লাশের পর লাশ-যেন লাশের মিছিল। সব মিলিয়ে দেশে বিরাজ করছে এক ভীতিকর ও অনিরাপদ পরিস্থিতি। কিন্তু আসলে আমরা কি এগুলো থেকে শিক্ষা নিচ্ছি? সচেতন হচ্ছি কি? মনে হয় না। আমাদের বোধোদয় হবে কবে?

➤ তাকিয়ে দেখুন, সমাজে কিভাবে পাপচারের সয়লাব বয়ে চলেছে! কতটা জমাট অন্ধকার ঘিরে ধরেছেে এ সমাজ ব্যবস্থাকে?!
জুলুম, নির্যাতন, রক্তপাত, অন্যায়, অবিচার, অপকর্ম, দুর্নীতি, প্রকাশ্যে আল্লাহর নাফরমানী, আল্লাহ দ্রোহিতা, মদ, জুয়া, গান-বাজনা, পর্দা হীনতা, অশ্লীলতা, জিনা-ব্যভিচার, ভ্রূণ হত্যা, নবজাতককে ডাস্টবিনে নিক্ষেপ ইত্যাদি কী না হচ্ছে এ সমাজে?!!
➤ অন্য দিকে শিরক ও বিদআতের সয়লাব, আল্লাহর বিধানের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন, আমল-আখলাকের অধঃপতন, সরকারী দায়িত্বে অবহেলা, অন্যায়ভাবে ক্ষমতা দখল, অন্যায় ভাবে সম্পদ হরণ, ব্যাংক লুট, মিথ্যাচার, চুরি, ডাকাতি, ছিনতায়, ধোঁকা ও প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ উপার্জন, হারাম ব্যবসা ইত্যাদি ভয়ানক পাপাচারে সমাজের অবস্থা দিন দিন করুণ হয়ে চলেছে।

সেই সাথে মানুষের মধ্যে থেকে ক্রমেই বিদায় নিচ্ছে দয়া-মমতা, মনুষ্যত্ব বোধ,সততা, আামতদারী, সম্মান-শ্রদ্ধা বোধ ইত্যাদি।

এহেন দুর্যোগপূর্ণ ও দুর্ঘটনা কবলিত বিভীষিকাময় ও নিরাপত্তাহীন অবস্থা চলার পর এখনো কি আমাদের বোধোদয় হবে না? আমরা কি তওবা করে আল্লাহর পথে ফিরে আসবো না? না কি পাপাচারে ডুবে থেকে এক প্রলয়ঙ্করী চূড়ান্ত ধ্বংসযজ্ঞের অপেক্ষা করবো? যেভাবে আল্লাহর আযাবে ধ্বংস হয়েছিল কওমে নূহ, লূত, আদ, সামুদ সহ অসংখ্য জাতি ও গোষ্ঠি।

সুতরাং বিবেকবান প্রতিটি মানুষের কাছে আহ্বান জানাবো, আসুন, আর বিলম্ব নয়। আমরা এখনই আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করি এবং তাঁর পথে ফিরে আসি। আল্লাহর হক আদায় করি। মানুষকে তাদের প্রাপ্য প্রদান করি এবং অতীতের সব পাপের আবর্জনাকে তওবা ও ইস্তিগফারের মাধ্যমে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করে পরিশুদ্ধ মানুষ হওয়ার চেষ্টা করি।
কেননা আমাদের গুনাহের কারণে আল্লাহর আযাব এসে যখন সব কিছু লণ্ডভণ্ড করে দিবে তখন হয়ত তওবা এবং সংশোধনের সুযোগ হবে না।
▬▬▬▬▬▬▬
➤ পরিশেষে এ সকল অগ্নিকাণ্ড, এক্সিডেন্ট ও দুর্ঘটনায় মৃত্যু থেকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে দুআটি পড়তেন এবং তার উম্মতকে শিক্ষা দিয়েছেন সেটি বেশি পরিমানে পড়ার চেষ্টা করি:

আবুল ইয়াসার রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন:

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ التَّرَدِّي، وَالْهَدْمِ، وَالْغَرَقِ، وَالْحَرِيقِ،
وَأَعُوذُ بِكَ أَنْ يَتَخَبَّطَنِي الشَّيْطَانُ عِنْدَ الْمَوْتِ،
وَأَعُوذُ بِكَ أَنْ أَمُوتَ فِي سَبِيلِكَ مُدْبِرًا،
وَأَعُوذُ بِكَ أَنْ أَمُوتَ لَدِيغًا

উচ্চারণ:

আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাত তারাদ্দি ওয়াল হাদমি ওয়াল গারাক্বি ওয়াল হারিক্বি।
ওয়া আউজুবিকা আইঁ ইয়াতাখাব্বাত্বানিশ শায়ত্বানু ইংদাল মাওতি।
ওয়া আউজুবিকা আন আমুতা ফি সাবিলিকা মুদবিরা।
ওয়া আউজুবিকা আন আমুতা লাদিগা।

অর্থ:

হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই উঁচু স্থান থেকে পড়ে, কোনো কিছুর নিচে চাপা পড়ে, আগুনে পুড়ে এবং পানিতে ডুবে মৃত্যু থেকে।

আপনার কাছে আশ্রয় চাই, মৃত্যুকালে শয়তান যেন আমাকে বিপথগামী করতে না পারে।

আপনার কাছে আশ্রয় চাই, আপনার পথে জিহাদ করার সময় যেন পলায়নপর অবস্থায় মৃত্যুবরণ না করি।
এবং আপনার কাছে আশ্রয় চাই, যেন সাপ-বিচ্ছুর দংশনে যেন মৃত্যুবরণ না করি।
[সুনান নাসাঈ হা/৫৫৩১, মুস্তাদরাক হাকিম ১/৭১৩) সহিহ-শাইখ আলবানী]

➤ হে রাহমানুর রাহীম, তুমি অপরাধীদেরকে সঠিক পথ দেখাও, আমাদেরকে ক্ষমা করো এবং দেশকে হেফাজত করো সব ধরণের বিপর্যয় থেকে। আমীন।
———
লেখক: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।।

Exit mobile version