Site icon Tawheed Media

আমরা ভাল-মন্দ করবো বলেই কি আল্লাহ তাকদীরে লিখে রেখেছেন

আমরা ভাল-মন্দ করবো বলেই কি আল্লাহ তাগদীরে লিখে রেখেছেন? নাকি আল্লাহ স্বীয় জ্ঞানে স্বাধীনভাবে তাকদ্বীর নির্ধারণ করেছেন। এই মাসয়ালার সঠিক আক্বীদা।
▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬▬
ভূমিকা: আমরা ভাল-মন্দ করবো বলেই আল্লাহ লিখে রেখেছেন এই বাক্যের আরেকটি অর্থ হল আমরা দুনিয়াবী জীবনে কি করবো না করবো সেটা আল্লাহর কাছ থেকে চেয়ে নিয়েছি অর্থাৎ আমাদের চাওয়া অনুসারে আল্লাহ তাগদ্বীরে লিখেছেন (নাউজুবিল্লাহ) যা তাওহীদে রুবুবিয়্যাহর সাথে সাংঘর্ষিক সুতরাং এই আক্বীদা সঠিক নয়, বরং এটি পথভ্রষ্ট মুতাজিলাদের কুফরি আক্বীদা। তাক্বদীর সম্পর্কে সঠিক বুঝ ও ধারণা না থাকার কারণে অনেক মুসলিম নামধারী মানুষও পথভ্রষ্ট হয়েছে, সৃষ্টি হয়েছে ইসলামে বিভিন্ন দল ও উপদলের। অনেক লোক তাক্বদীর অস্বীকারকারীদের রসব্যঞ্জক আলোচনায় প্রতারিত হয়ে বিপথগামী হয়েছে। তাদের কথা ও যুক্তি খুবই চমৎকার ও শ্রুতিমধুর; যার ফলশ্রুতিতেই মানুষ দিনে দিনে তাদের পিছনে ছুটছে। তাক্বদীর নামক পথটি খুবই সংকীর্ণ,পিচ্ছিল ও কর্দমাক্ত। অনেকেই এ পথে হাঁটতে গিয়ে হোঁচট খেয়েছে। হ্যাঁ, তাক্বদীর খুবই পিচ্ছিল একটি পথ! পিচ্ছিল বলে হাঁটা যাবে না বিষয়টা এমন নয়; বরং খুব সতর্কতার সাথে হাঁটতে হবে।প্রশ্নে উল্লেখিত মাসয়ালা সম্পর্কে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের বিশুদ্ধ আক্বীদা হলো, আমরা করবো বলেই আল্লাহ লিখে রাখেননি বরং মহান আল্লাহ স্বীয় জ্ঞানে স্বাধীনভাবে তাকদ্বীর নির্ধারণ করেছেন,তাকদ্বীর তাওহীদে রুবুবিয়্যার অন্তর্ভুক্ত। মহান রব কোন কিছু কাউকে জিজ্ঞেস করে করেন না।যেমন,আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَ اِذَاۤ اَرَادَ اللّٰہُ بِقَوۡمٍ سُوۡٓءًا فَلَا مَرَدَّ لَہٗ ۚ وَ مَا لَہُمۡ مِّنۡ دُوۡنِہٖ مِنۡ وَّالٍ ‘কোন সম্প্রদায়ের সম্পর্কে যদি আল্লাহ অশুভ কিছু ইচ্ছা করেন তবে তা রদ করার কেউ নেই এবং তিনি ছাড়া তাদের কোন অভিভাবক নেই’ (সূরা রা’দ: ১১)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,‘অতএব আল্লাহ যাকে হেদায়াত করতে চান, ইসলামের জন্য তার অন্তঃকরণ খুলে দেন, আর যাকে পথভ্রষ্ট করার ইচ্ছা করেন, তার অন্তঃকরণ খুব সংকুচিত করে দেন’ (সূরা আল-আন‘আম : ১২৫)। তাকদীর সম্পর্কে ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রহ.) কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জবাব দেন, ‘তাকদীর আল্লাহর সৃষ্টির গোপন রহস্য।’ মুসলিম হিসেবে আমাদের ইমান হবে আল্লাহ যা ইচ্ছা নির্ধারণ করেছেন, আর যা কিছু সংঘটিত হচ্ছে তার সবই আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত। এ বিষয়ে ইমান রাখা ফরজ। আরও বিশ্বাস থাকবে, তিনি পূতপবিত্র, মহান, ও প্রতাপশালী। এ রাজত্ব তাঁরই হাতে রয়েছে, তিনি যেভাবে ইচ্ছা পরিচালনা করেন। তাকে জিজ্ঞাসা করার কেউ নেই, বরং তাঁর বান্দারাই জিজ্ঞাসিত হবে।
.
জগতের যাবতীয় বস্তু তথা মানুষ ও জিনসহ যত সৃষ্টি রয়েছে সবকিছুর উৎপত্তি ও বিনাশ, ভাল ও মন্দ, উপকার ও অপকার ইত্যাদি কখন কোথায় ঘটবে এবং এর পরিণাম কি হবে, মোটকথা সৃষ্টির পূর্বে ও পরে ক্বিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু ঘটবে সে বিষয় আল্লাহ স্বীয় জ্ঞানে একটি কিতাব লিখে রেখেছেন, যা কুরআনের ভাষায় লাওহে মাহফুয। সবকিছু আল্লাহর কিতাব ও তাক্বদীর অনুযায়ী সংঘটিত হয়ে থাকে। আল্লাহ যা নির্ধারণ করেছেন তা অবশ্যই ঘটবে, আল্লাহ যা চান তাই হয় এবং যা চান না তা হয় না। লাভ বা ক্ষতি কোন কিছুই আমরা নিজেদের জন্য করতে সক্ষম নই। সাহাবীগণ এভাবেই তাকদীর-এর পরিচয় তুলে ধরেছেন। মহান আল্লাহ বলেন: “তুমি কি জান না যে, নভোমণ্ডলে ও ভুমন্ডলে যা কিছু আছে আল্লাহ সবকিছু জানেন। নিশ্চয় এসব কিতাবে লিখিত আছে। নিশ্চয় এটা আল্লাহর কাছে সহজ।”(সূরা হজ্জ, আয়াত: ৭০)।আল্লাহ বলেন, وَكُلَّ شَيْءٍ أَحْصَيْنَاهُ فِيْ إِمَامٍ مُبِيْنٍ ‘আর প্রত্যেক বস্ত্ত আমরা স্পষ্ট কিতাবে লিপিবদ্ধ রাখি।’(সূরা ইয়াসীন ৩৬/১২)। তিনি আরো বলেন, قُلْ لَنْ يُصِيْبَنَا إِلاَّ مَا كَتَبَ اللهُ لَنَا هُوَ مَوْلَانَا- ‘তুমি বল, আল্লাহ আমাদের ভাগ্যে যা লিখে রেখেছেন, তা ব্যতীত কিছুই আমাদের নিকট পৌঁছবে না। তিনিই আমাদের অভিভাবক।’(সূরা তওবা: ৯/৫১)। রাসূল (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা সৃষ্টিকূল সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর আগে সৃষ্টিকূলের তাকদীর লিখে রেখেছেন। (সহীহ মুসলিম হা/২৬৫৩; মিশকাত হা/৭৯)
.
ত্বাউস বলেন, أَدْرَكْتُ نَاسًا مِنْ أَصْحَابِ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُوْلُوْنَ كُلُّ شَىْءٍ بِقَدَرٍ- ‘আমি বহু সাহাবীর সাক্ষাৎ পেয়েছিলাম, তাঁরা বলতেন, প্রত্যেক জিনিসই তাক্বদীর অনুসারে সংঘটিত হয়।'(মুসলিম হা/২৬৫৫; রিয়াযুস সালেহীন, পৃঃ ২৮২)। রাসূল (ﷺ) বলেছেন,
তোমাদের প্রত্যেকের ঠিকানা লেখা হয়ে গিয়েছে, হয় তা জাহান্নামে অথবা জান্নাতে। (একথা শুনে) এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! তবে কি আমরা তাকদীরের উপর ভরসা করব না? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, না, আমল করতে থাক। প্রত্যেককে তা-ই সহজ করে দেয়া হবে, যার জন্য তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। পরে এ আয়াত তেলাওয়াত করেন, ‘অতএব যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দান করে ও আল্লাহকে ভয় করে আমি তার জন্য সহজ পথে চলা সহজ করে দিব। আর যে ব্যক্তি কৃপণতা করে বেপরওয়া হয়। আর যা উত্তম তা অমান্য করে আমি তার জন্য কঠিন পথ সহজ করে দিব।'(সহীহ বুখারী হা/৪৯৪৭)। তিনি আরো বলেন, প্রত্যেক জিনিসই তাকদীর অনুসারে সংঘটিত হয়ে থাকে। এমনকি অক্ষমতা ও বুদ্ধিমত্তা।’(মুসলিম হা/২৬৫৫; মিশকাত হা/৮০)

🔸প্রশ্নে উল্লেখিত বিষয়টি পরিস্কার ভাবে বুঝতে তিনটি বাস্তব উদহারণ দিচ্ছি আশা করি বুঝতে সহজ হবে ইনশাআল্লাহ।
_______________________________________
(১). আপনারা হয়তবা একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনার কথা জানেন, আজ থেকে দুই-তিনদিন আগে ঢাকার রাস্তায় একজন মহিলাকে একটি প্রাইভেট কারের ড্রাইভার তার গাড়ির পিছনের একটি চাকায় করে প্রায় দুই কিলোমিটার টেনে হিস্রে নিয়ে গেছেন পরে ঐ নারী মৃত্যুবরণ করেন। এখন প্রশ্ন হল আমরা করবো বলে বা বান্দার চাওয়া অনুযায়ী যদি আল্লাহ তাকদীর লিখেন তাহলে এই মহিলার ক্ষেত্রে জবাব কি হবে? তিনি কি চেয়েছিলেন যে গাড়ির চাকায় আটকে টেনে হিস্রে দুই কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে মৃত্যুবরণ করতে? কোন পাগলও কি এভাবে মৃত্যুবরণ করতে চাইবে? যদি না চায় তাহলে এখান থেকেই তো প্রমাণ হয়ে যায় আমরা করবো বলে আল্লাহ লিখে রাখেননি বরং আল্লাহ নিজে স্বাধীনভাবে তাকদ্বীর নির্ধারণ করেছেন।
.
(২). আমাদের সমাজে নানা কারণে অনেক সময় মানুষ নিজ ইচ্ছায় আত্মহত্যা করতে চায় কিন্তু কখনো কখনো করতে পারেনা। কেউ না কেউ তার আত্মহত্যার পথে বাঁধা প্রদান করেন, তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন, ফলে সে আত্মহত্যা করতে পারেনা। এখন প্রশ্ন হল মানুষ করবে বলে যদি আল্লাহ তাকদীর লিখে রাখেন তাহলে এই ব্যক্তি আত্মহত্যা করতে চেয়েও কেন করতে পারলেন না? সেতো মৃত্যুবরণ করতে চেয়েছিল। তাহলে দুটি উদহারণে কি দাঁড়ালো একজন মহিলা গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে মৃত্যুরবরণ করতে চাননি অথচ তাক্বদীরের লিখন অনুযায়ী মৃত্যুবরণ করলেন। দ্বিতীয় ব্যক্তি নিজ ইচ্ছায় আত্মহত্যা করতে চেয়েও পারলেন না। অথচ উভয় কাজ আল্লাহর ফায়সালা অনুযায়ীই সংঘটিত হয়েছে। আল্লাহর রাজত্বে তাঁর ইচ্ছার বাইরে কিছুই সংঘটিত হয় না,সুতরাং বান্দার চাওয়া অনুযায়ী যদি আল্লাহ তাকদীর লিখতেন তাহলে উপরোক্ত দুই ব্যক্তির অবস্থা কি হবে! একজন তো না চেয়েও মর্মান্তিক মৃত্যুর শিকার হলেন অপরজন চেয়েও আত্মহত্যা করতে পারলেন না।

(৩). আরেকটি কর্ম সংক্রান্ত উদাহরণ দিচ্ছি। ধরুন, বর্তমানে বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা চলতেছে। এই খেলা দেখা শরীয়তের দৃষ্টিতে জায়েজ নয়, কেউ দেখলে গুনাহগার হবেন। এখন একজন লোক সে ইচ্ছা করলে টেলিভিশনে বা সরকারি এই খেলা দেখতে পারে, আবার চাইলে নাও দেখতে পারে। অর্থাৎ সে এই খেলা দেখতে বাধ্য নয় বরং স্বাধীন। অতঃপর যদি সে এই খেলা দেখে, তবে তা আল্লাহর জ্ঞানে পূর্ব থেকেই রক্ষিত রয়েছে। আবার যদি সে না দেখে, তবুও তা আল্লাহর জ্ঞানে আগে থেকেই রক্ষিত আছে। যদি বলা হয় এর ব্যাখ্যা কি? এর জবাব এতটুকুই দেওয়া যায় যে, অসীম জ্ঞানের অধিকারী মহান আল্লাহর সৃষ্টি রহস্য মানুষের স্বল্পজ্ঞান দিয়ে অনুধাবন করা সম্ভব নয়। মানুষের সৎ-অসৎ যাবতীয় কর্মের ক্ষেত্রেও অনুরূপ বক্তব্যই প্রযোজ্য। একজন পাপাচারী পাপকর্মের দিকে প্রবৃত্ত হয় এবং নিজ হাতে তা বাস্তবায়ন করে। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, নিজ ইচ্ছা ও ক্ষমতা প্রয়োগ করে সে পাপাচারে লিপ্ত হচ্ছে। কিন্তু একই সাথে আল্লাহর জ্ঞান বা পূর্বনির্ধারণ থেকে বাইরে যাওয়ার ক্ষমতা তার নেই। এটা আল্লাহ তা‘আলার অপরিসীম ক্ষমতা ও হিকমতের বহিঃপ্রকাশ। যেমন, একদিন সাহাবায়ে কেরাম রাসূল (ﷺ)-এর কাছে কেবল তাক্বদীরের উপর ভরসা করে সকল আমল ছেড়ে দেওয়ার আবেদন জানালে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, ‘তোমরা নেক আমল করে যাও। কেননা যাকে যেজন্য সৃষ্টি করা হয়েছে, তার পক্ষে সে কাজ সহজসাধ্য হবে। যারা সৌভাগ্যবানদের অন্তর্ভুক্ত তাদের জন্য সেরূপ আমল এবং যারা দুর্ভাগাদের অন্তর্ভুক্ত তাদের জন্য সেরূপ আমল সহজ করে দেওয়া হয়েছে।’(বুখারী হা/৪৯৪৯; মুসলিম হা/২৬৪৭; মিশকাত হা/৮৫)। এক্ষণে বান্দা যেহেতু নিজের তাক্বদীর জানে না, সেহেতু তাকে মন্দ কর্ম হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য আল্লাহর নিকট প্রার্থণা করতে হবে এবং সর্বদা আল্লাহর বিধান মেনে কাজ করে সুন্দর পরিণতি লাভের চেষ্টা করতে হবে। তার সাধ্যমত চেষ্টার পরেও যেটা ঘটবে, বুঝতে হবে সেটাই ছিল তার তাক্বদীরের লিখন। মূলতঃ আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করে বিবেক-বুদ্ধি দান করে ভালো আর মন্দ দু’টি পথ দেখিয়ে এক মহাপরীক্ষার মধ্যে ফেলেছেন। আর ভালো পথের জন্য জান্নাত আর মন্দ পথের জন্য জাহান্নাম নির্ধারণ করে রেখেছেন। ফলে বিবেক দিয়ে নিজ স্বাধীনতাকে ব্যবহার করে মানুষ এ পৃথিবীতে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত যা কিছু করবে, আল্লাহ তাঁর অগ্রীম জ্ঞানে সেগুলোর সব কিছু সম্পর্কে জানেন এবং সেগুলোই তিনি লিখে রেখেছেন।
.
জেনে রাখা ভাল যে, আল্লাহ তাকদীর লিখে রেখেছেন বলেই আমরা ভাল-মন্দ সবকিছু করতে বাধ্য আমাদের কোন ক্ষমতা নেই, যেহেতু সকল জিনিসই আল্লাহর হুকুমের অনুগত, সেহেতু কোনো জিনিসই মানুষের ইচ্ছায় পরিবর্তিত হতে পারে না এমন আক্বীদা পোষন করা যাবেনা কেননা এটি পথভ্রষ্ট জাবরিয়াদের আক্বীদা। জাবরিয়ারা বলে মানুষ আল্লাহর লিখা ভাগ্যের অধীন, তার কোন ক্ষমতা নেই। তাকে দিয়ে যা করানো হয়, তাই সে করে। পক্ষান্তরে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের মতে, বান্দার কর্মের স্বাধীনতা রয়েছে। সৎকর্ম করলে তাদেরকে প্রতিদান দেওয়া হবে। আর অসৎকর্ম করলে তাদেরকে শাস্তি দেওয়া হবে।মানুষকে আল্লাহর পক্ষ থেকে কর্মের এমন একটি শক্তি প্রদান করা হয়েছে, যা সৃষ্টি ক্ষমতা রাখে না। কিন্তু অর্জনের ক্ষমতা রাখে। মানুষের মধ্যে এই অর্জনের ক্ষমতা আছে বলেই ভালোর জন্য প্রতিদান এবং মন্দের জন্য তাকে শাস্তি দেওয়া হবে। আবার এ ক্ষমতাটি স্বয়ংসম্পূর্ণ না হওয়ায় মানুষকে নিজ ইচ্ছা ও কর্মের স্রষ্টা বলে অভিহিত করা যায় না। অনুরূপভাবে মানুষের মধ্যে এ শক্তি আছে বলে তাকে শক্তিহীন জড়-পদার্থের মতও গণ্য করা যায় না। শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলভী (রহঃ) বলেন, বান্দার ইখতিয়ার ও স্বাধীনতা তো আছে তবে এ ইখতিয়ার আল্লাহ তা‘আলার ইখতিয়ারের অধীন। অর্থাৎ কর্মের ইচ্ছা ও কর্মের শক্তি মানুষের মধ্যে আছে। কিন্তু এর সাথে আল্লাহর ইচ্ছার প্রতিফলন না ঘটলে কোন কিছুই বাস্তবায়িত হবে না।মানুষ ও মানুষের কর্ম সবই আল্লাহ তা‘আলা সৃষ্টি করেছেন। ইরশাদ হচ্ছে, وَاللهُ خَلَقَكُمْ وَمَا تَعْمَلُوْنَ ‘আল্লাহ্ই সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে ও তোমরা যা কর সেগুলোকেও’ (সূরা সফফাত ৩৭/৯৬)। অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে,اللهُ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ وَكِيلٌ ‘আল্লাহ সবকিছুর স্রষ্টা। আর তিনি সবকিছুর অভিভাবক এবং কর্ম সম্পাদনকারী’ (সূরা যুমার ৩৯/৬২)। মোটকথা আল্লাহ হ’লেন কর্মের স্রষ্টা এবং বান্দা হ’ল কর্মের বাস্তবায়নকারী। অদৃষ্টবাদী জাবারিয়ারা বান্দাকে ইচ্ছা ও কর্মশক্তিহীন বাধ্যগত জীব বলে মনে করে, যা সম্পূর্ণ ভুল।
.
অতএব, সকল ঘটনা, সকল কর্ম, সকল অস্তিত্ব আল্লাহর ইচ্ছাই হয়। আল্লাহ যা চান সেটাই হয়, তিনি যা চান না, সেটা হয় না। আসমান জমীনে কোন কিছুই আল্লাহর ইচ্ছার বাইরে ঘটে না। হোক না সেটা আল্লাহর কর্মের সাথে সংশ্লিষ্ট অথবা মাখলুকের কর্মের সাথে সংশ্লিষ্ট। আল্লাহ তাআলা বলেন: “আপনার পালনকর্তা যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন এবং (যা ইচ্ছা) মনোনীত করেন।”(সূরা কাসাস, আয়াত: ৬৮)। তিনি আরো বলেন: “এবং আল্লাহ যা ইচ্ছা সেটাই করেন।”(সূরা ইব্রাহিম, আয়াত: ২৭)। তিনি আরো বলেন: “তিনিই মাতৃগর্ভে তোমাদেরকে আকৃতি দান করেন যেভাবে ইচ্ছা করেন সেভাবে।”(সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৬)। বান্দার কর্ম সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন: “আর আল্লাহ ইচ্ছা করলে অবশ্যই তাদেরকে তোমাদের উপর ক্ষমতা দিতে পারতেন। যাতে তারা নিশ্চিতরূপে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারত।”(সূরা নিসা, আয়াত: ৯০)। তিনি আরো বলেন: “তোমার রব যদি ইচ্ছা করত, তবে তারা তা করত না।”(সূরা আল-আনআম, আয়াত: ১১২)। এতক্ষণ আমরা তাক্বদীরের প্রতি ঈমান আনার যে বিবরণ দিলাম সেটা কর্মের ক্ষেত্রে বান্দার ইচ্ছাশক্তি থাকা ও ক্ষমতা থাকার সাথে সাংঘর্ষিক নয়। বান্দার ইচ্ছাশক্তি রয়েছে। বান্দা ইচ্ছা করলে কোন নেক কাজ করতে পারে এবং ইচ্ছা করলে তা বর্জন করতে পারে। ইচ্ছা করলে কোন গুনাহর কাজ করতে পারে এবং ইচ্ছা করলে তা বর্জন করতে পারে। শরীয়তের দলিল ও বাস্তব দলিল বান্দার এ ইচ্ছাশক্তি সাব্যস্ত করে। শারয়ী দলিল হচ্ছে- আল্লাহ তাআলা বলেন: “ঐ দিনটি সত্য। অতএব যার ইচ্ছা সে তার রবের নিকট আশ্রয় গ্রহণ করুক।”(সূরা নাবা, আয়াত: ৩৯)। তিনি আরো বলেন: “সুতরাং তোমরা তোমাদের ফসলক্ষেতে যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে গমন কর।”(সূরা বাকারা, আয়াত: ২২৩)। তিনি বান্দার সক্ষমতা সম্পর্কে বলেন: “অতএব, তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় কর।”(সূরা তাগাবুন, আয়াত: ১৬)। তিনি আরো বলেন: “আল্লাহ কোন ব্যক্তিকে তার সামর্থ্যের বাইরে দায়িত্ব দেন না। সে যা অর্জন করে তা তার-ই জন্য এবং সে যা কামাই করে তা তার-ই উপর বর্তাবে।”(সূরা বাকারা, আয়াত: ২৮৬)। উপরের এ আয়াতগুলো প্রমাণ করে যে, মানুষের ইচ্ছাশক্তি ও ক্ষমতা রয়েছে। এ দুটির মাধ্যমে সে যা ইচ্ছা তা করতে পারে এবং যা ইচ্ছা তা বর্জন করতে পারে। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
____________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

Exit mobile version