Site icon Tawheed Media

অমুসলিমদেরকে ইসলামের দিকে দাওয়াত প্রদানের ১০টি উপায়

প্রশ্ন: অমুসলিমকে ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাই।

উত্তর:
প্রথমে আমরা ইসলামের দিকে মানুষকে আহ্বান করার গুরুত্ব ও মর্যাদা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করার পর অমুসলিমদেরকে দাওয়াত দেয়ার পদ্ধতিগুলো নিয়ে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।

❒ মানুষকে ইসলামের দিকে দাওয়াত দেয়ার গুরুত্ব ও মর্যাদা:
মহান আল্লাহ বলেন:
ادْعُ إِلَى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُمْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَنْ ضَلَّ عَنْ سَبِيلِهِ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ
“হেকমত (জ্ঞান ও প্রজ্ঞা) ও উত্তম উপদেশের মাধ্যমে তোমার রবের পথে আহবান কর। আর সর্বোত্তম পন্থায় তাদের সাথে বিতর্ক কর। আপনার রব তো সবচেয়ে বেশি জানেন কে তার পথ থেকে বিচ্যুত এবং তিনিই ভাল জানেন কে হেদায়েত প্রাপ্ত। (সূরা নাহলঃ ১২৫)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
لَأَنْ يَهْدِيَ اللَّهُ بِكَ رَجُلًا وَاحِدًا خَيْرٌ لَكَ مِنْ أَنْ يَكُونَ لَكَ حُمْرُ النَّعَمِ
“তোমার মাধ্যমে যদি আল্লাহ একজন লোককেও হেদায়েত দেন তবে তা তোমার জন্য একটি লাল উট পাওয়া থেকেও উত্তম।” (বুখারী ১২/৩৭)
তিনি আরে বলেন:
مَنْ دَعَا إِلَى هُدًى كَانَ لَهُ مِنْ الْأَجْرِ مِثْلُ أُجُورِ مَنْ تَبِعَهُ لَا يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْئًا
“যে ব্যক্তি হেদায়েতের পথে আহবান করে সে ঐ পরিমাণ সওয়াবের অধিকারী হয় যে ব্যক্তি তদনুযায়ী আমল করে। কিন্তু এতে আহ্বানকারীর সওয়াব কমানো হয় না।”

❒ অমুসলিমকে দাওয়াত দেয়ার ১০টি পদ্ধতি:

🔸 ১. যার নিকট ইসলামের দাওয়াত দিতে চান নিজেকে তার সামনে আদর্শ মুসলিম হিসেবে ফুটিয়ে তোলা। একজন দাঈ সকল অবস্থায় তার আচার-ব্যবহার কথা-বার্তা, ইবাদত-বন্দেগি ইত্যাদি বিষয়ে আদর্শবান হবেন। কারণ আদর্শবান ব্যক্তিত্ব ও সুন্দর ব্যবহার মানুষকে ইসলামের দিকে আহ্বানের ক্ষেত্রে খুব বেশি অবদান রাখে।

🔸 ২. দাওয়াত দেয়ার ক্ষেত্রে জ্ঞান, প্রজ্ঞাপূর্ণ সুন্দর ও নম্র ভাষা ব্যবহার করা এবং বিতর্কের প্রয়োজন হলে দলীল-প্রমাণ ও যৌক্তিক পদ্ধতিতে বিতর্ক করা।
🔸 ৩. যাকে দাওয়াত দিবেন তার চিন্তা-ভাবনা, সংশয়, মতবাদ, দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদি সম্পর্কে যথাসম্ভব জানার চেষ্টা করা এবং সে আলোকে তার সাথে কথা বলা।
🔸 ৪. সবার আগে তার হৃদয়ে তাওহীদ-একত্ববাদ ও আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের বীজ বপন করা। মহান আল্লাহ আমাদের স্রষ্টা এবং জীবন ও মৃত্যু দাতা। ভালো কাজ করলে তিনি পরকালে আমাদেরকে পুরস্কৃত করবেন এবং খারাপ কাজের প্রতিদানে শাস্তি প্রদান করবেন।
এছাড়াও ইসলামের অন্যান্য আকীদা ও বিশ্বাসের মৌলিক বিষয়গুলো তার হৃদয়পটে প্রথিত করা।
🔸 ৫. ধৈর্য ধারণ করা। সময়, শ্রম, তার অনাগ্রহ, অভদ্র আচরণ ইত্যাদির ক্ষত্রে ধৈর্যের পরিচয় দেয়া। তাড়াহুড়া ফল লাভের আশা করা ঠিক নয়। আপনার আজকের দাওয়াত হয়ত বহু দিন পর তার হৃদয়কে আলোড়িত করবে। তাই দাওয়াত অব্যহত রাখতে হবে। কোনভাবেই হতাশা অনুভব করা যাবে না। বরং দীর্ঘ মেয়াদী চিন্তা সামনে রেখে সবরের পরিচয় দেয়া জরুরি।
🔸 ৬. তাকে কুরআন পড়ার জন্য উৎসাহিত করা। প্রয়োজনে তাকে কুরআনের তরজমা ও তাফসীর উপহার দেয়া।
🔸 ৭. তার সামনে ইসলামের সৌন্দর্যময় দিকগুলো ফুটিয়ে তোলা। অন্যের ধর্ম বা মতবাদের বদনামের চেয়ে তার কাছে ইসলামের সৌন্দর্যময় দিকগুলো তুলে ধরা অধিক প্রলপ্রসূ।
🔸 ৮. দাওয়াতের স্বার্থে যাকে দাওয়াত দিতে চান তার সেবা ও সমস্যা সমাধানে নিজের সময়, শ্রম, মেধা ও যথাসম্ভব অর্থ খরচ করা।
🔸 ৯. তার জন্য ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞানার্জনের উপায়-উপকরণগুলো সহজলভ্য করা। যেমন কিছু ভালো বই পড়তে দেয়া বা ভালো ওয়েব সাইট, ভিডিও ক্লিপ ইত্যাদিগুলো সরবরাহ করা।
🔸 ১০. তার হেদায়েতের জন্য মহান আল্লাহর নিকট দুআ করা।

মনে রাখতে হবে, আল্লাহই প্রকৃত হেদায়েতের মালিক। তিনি যাকে ইচ্ছা আলোকিত পথের সন্ধান দেন। আমাদের কাজ কেবল দ্বীনের দিকে আহ্বান জানানো এবং এ পথে যথাযথভাবে পরিশ্রম করা এবং ফলাফল একমাত্র আল্লাহর উপর সমর্পন করা।
▬▬▬▬●◈●▬▬▬▬
উত্তর প্রদান ও গ্রন্থনায়: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সৌদি আরব
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।।

Exit mobile version