প্রশ্ন: হাত তুলে দু’আ-মুনাজাত করার শেষে মুখমন্ডল মাসেহ করার হুকুম কি?
▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: মুনাজাতের পর মুখে হাত মাসাহ করা সুন্নাহ সম্মত নয়। কেননা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে প্রমাণিত হাত তুলে দু‘আর অনেক হাদীস বর্নিত হয়েছে, কিন্তু দু‘আর পর মুখে হাত মাসাহ করার কোন সহীহ দলীল পাওয়া যায় না। বরং এই মর্মে যত হাদীস রয়েছে তার সবগুলোই যঈফ। সুতরাং দু’আ যেহেতু ইবাদত তাই তা শারঈ পদ্ধতিতেই করতে হবে। আর দু’আ করার শরীয়ত সম্মত পদ্ধতি হচ্ছে দু‘আ শেষে এমনিতেই হাত নামিয়ে ফেলা। কারণ মুখে হাত মাসাহ করা মর্মে বর্ণিত হাদীছগুলো যঈফ।যেমন ইবনু আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা হাতের পৃষ্ঠের দ্বারা নয় বরং হাতের তালুর দ্বারা আল্লাহর কাছে চাইবে। অতঃপর দু‘আ শেষে তোমাদের হাতের তালু দিয়ে নিজের চেহারা মুছবে’।(আবূ দাঊদ, হা/১৪৮৫; ইমাম আলবানী, ইরওয়াউল গালীল, ২/১৮০, হা/৪৩৪; মিশকাত হা/২২৪৩) তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি যঈফ। এর সনদে আব্দুল মালেক ও ইবনু হিসান নামে দুইজন দুর্বল রাবী রয়েছে। স্বয়ং ইমাম আবুদাঊদ উক্ত হাদীছ উল্লেখ করে মন্তব্য করেন, ‘এই হাদীছ অন্য সূত্রেও মুহাম্মাদ বিন কা‘ব থেকে এ হাদীছ কয়েক সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। তবে সবগুলোয় নিতান্তই দুর্বল। এ হাদীছের দুর্বলতার ব্যাপারে সকলেই একমত।(খুলাছাতুল আহকাম, ১/৪১৬)।
.
ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত্যু ২৪১ হি./৮৫৫ খ্রি.]বলেছেন, لا يعرف هذا ، أنه كان يَمسح وجهه بعد الدعاء إلا عن الحسن “হাসান বসরি ছাড়া অন্য কেউ দুআ করার পর মুখমন্ডল মাসাহ করতেন বলে জানা যায় না”।(আল-ইলাল আল-মুতানাহিয়্যাহ: ২/৮৪০, ৮৪১)।
.
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:
وأما رفع النبي صلى الله عليه وسلم يديه في الدعاء : فقد جاء فيه أحاديث كثيرة صحيحة ، وأما مسحه وجهه بيديه فليس0 عنه فيه إلا حديث أو حديثان ، لا تقوم بهما حُجة .
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু‘আ করার সময় হাত উত্তোলনের বিষয়ে অনেক সহিহ হাদিস বর্ণিত হয়েছে কিন্তু দু’আ করার শেষে তাঁর মুখমণ্ডল মাসাহ করার ব্যাপারে একটা কিংবা দুটি হাদীস বর্নিত হয়েছে, কিন্তু সে সংক্রান্ত হাদীছগুলোকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না”।(অর্থাৎ বর্ননাগুলো জয়ীফ)।(মাজমু’ল ফাতওয়া: খন্ড: ২২ পৃষ্ঠা: ৫১৯)।
.
শায়খ আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) এ সংক্রান্ত হাদীছগুলো পর্যালোচনা শেষে বলেন.وَلَايَصِحُّ حَدِيْثٌ فِىْ مَسْحِ الْوَجْهِ بِالْيَدَيْنِ بَعْدَ الدُّعَاءِ “দু‘আর পর মুখে দু’হাত মাসাহ করা সম্পর্কে কোন ছহীহ হাদীছ নেই” (ইমাম আলবানী, মিশকাত হা/২২৫৫ -এর হাশিয়া খন্ড: ২ পৃষ্ঠা: ৬৯৬)।
.
বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.]-কে দুআ করার পর হাত দিয়ে মুখমন্ডল মোছার হুকুম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল।
তিনি জবাব দিলেন:
فأجاب فضيلته بقوله: مسح الوجه باليدين بعد الدعاء الأقرب أنه غير مشروع؛ لأن الأحاديث (١) الواردة في ذلك ضعيفة حتى قال شيخ الإسلام – رحمه الله -: إنها لا تقوم بها الحجة، وإذا لم نتأكد أو يغلب على ظننا أن هذا الشيء مشروع فإن الأولى تركه؛ لأن الشرع لا يثبت بمجرد الظن إلا إذا كان الظن غالباً. فالذي أرى في مسح الوجه باليدين بعد الدعاء أنه ليس بسنة والنبي صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كما هو معروف دعا في خطبة الجمعة بالاستسقاء ورفع يديه ولم يرد أنه مسح بهما وجهه، وكذلك في عدة أحاديث جاءت عن النبي صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أنه دعا ورفع يديه ولم يثبت أنه مسح وجهه.
“দু’আ করার পর হাত দিয়ে মুখমন্ডল মুছে ফেলা ইসলামে নির্ধারিত না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি, কারণ এ সম্পর্কে বর্ণিত হাদীসগুলো যঈফ (দুর্বল)। এমনকি শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ বলেন: এগুলোকে প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। যদি আমরা নিশ্চিত না হই বা আমরা সম্ভবত মনে করি যে এটি শরীয়ত সম্মত তাহলে অবশ্যই তা পরিত্যাগ করা অধিক উত্তম। কারণ ইসলামের বিধানগুলি নিছক অনুমানের ভিত্তিতে প্রমাণ করা যায় না। তবে যখন ধারণাটি প্রাধান্য বিস্তার করে তখন ভিন্ন কথা। সুতরাং দোয়া করার পর দুই হাত দ্বারা মুখ মাসাহ করার ক্ষেত্রে আমি যা মনে করি, তা হল: অবশ্য এটি সুন্নাত নয়।যেমনটি সর্বজনবিদিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জুমার খুতবার সময় বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করেছিলেন এবং তার দুহাত উত্তোলন করতেন। অথচ এখানে বর্ণিত হয়নি যে, তিনি তার দুই হাত দ্বারা তার মুখ মাসাহ করতেন। অনুরূপভাবে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে প্রমাণিত হাত তুলে দু‘আর অনেক হাদীছ আছে, কিন্তু দু‘আর পর মুখে হাত মাসাহ করার কোন সহীহ দলীল পাওয়া যায় না।(মাজমূ’ঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল খণ্ড: ১৩; পৃষ্ঠা: ২৬০)
.
অতএব উপরোক্ত আলোচনা থেকে একথা পরিস্কার যে, দু’আ করার পর মুখমন্ডল মাসাহ করা থেকে বিরত থাকাই উত্তম। তবে যদি কেউ হাদিসটি মেনে আমল করেন তাহলে বলা যাবে না যে তিনি বিরাট ভুল কাজ করেছেন কিংবা জঘন্য বিদআত করেছেন। যেহেতু একদল আলেম হাদিসটির উপর আমল করা সমর্থন করেছেন। কিন্তু আমাদের (সালাফি আহালুল হাদিস আলেমরা) এই আমল পরিত্যগ করার পক্ষে। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
____________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।