স্বামীর একাধিক বিয়েকে অপছন্দ করা কি ঈমান ভঙ্গের কারণ

প্রশ্ন: স্বামীর একাধিক বিয়েকে অপছন্দ করা কি ঈমান ভঙ্গের কারণ? যেসকল নারী স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ে অপছন্দ করে এতে কি তাদের ইমান নষ্ট হওয়ার বা মুনাফিক হওয়ার সম্ভাবনা আছে?
▬▬▬▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: মূল আলোচনায় যাওয়ার আগে প্রথমে আমাদের একটি বিষয় জানা জরুরি আর তা হচ্ছে, মহান আল্লাহ তাআলা “হিকমত” বা প্রজ্ঞার গুণে গুণান্বিত। কেননা আল্লাহর সুন্দর নামগুলোর একটি নাম হলো الحكيم “আল-হাকীম” (বিচারক, নিপুণ ও প্রজ্ঞাবান)। “আল-হাকীম” হচ্ছেন যিনি সবকিছুর অস্তিত্বগত ও আইনগত সিদ্ধান্ত দেন এবং কর্ম ও সৃষ্টির দিক থেকে সবকিছুকে নিপুণভাবে সম্পাদন করেন। ‘হাকীম’ শব্দটা ‘হুকম’ (বিধান দান) এবং ‘হিকমাহ’ (প্রজ্ঞা) শব্দমূল থেকে উদ্ভূত। আল্লাহ তায়ালা একমাত্র বিধানদাতা। তার বিধানসমূহে রয়েছে চূড়ান্ত প্রজ্ঞা, পূর্ণতা ও নিপুনতা।আল্লাহ তাআলা সৃষ্টিকুলের স্রষ্টা। তিনি জানেন, কোন বিধান তাদের জন্য উপযুক্ত; কোন বিধান তাদের জন্য উপযুক্ত নয়। আর আল্লাহ তায়ালা যে বিধানই আরোপ করেন না কেন এর পেছনে রয়েছে সুমহান প্রভূত প্রজ্ঞা। হতে পারে আমরা সে প্রজ্ঞাগুলো জানতে পারব কিংবা আমাদের বিবেক-বুদ্ধি সেগুলোর দিশা পাবে না। আবার হতে পারে আমরা কিছু বিষয় জানতে পারব, আর এর অনেকগুলো আমাদের অজানা থেকে যাবে। আর এতে কোন সন্দেহ নাই যে, আল্লাহর প্রতিটি বিধান মানুষের কল্যাণের জন্য। তাঁর প্রতিটি বিধানেই রয়েছে সুনিপুণ হেকমত ও সুগভীর প্রজ্ঞা। সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখে এবং তাকে ভালোবাসে তার জন্য আবশ্যক হচ্ছে, আল্লাহর প্রতিটি বিধানের কাছে নিঃশর্তভাবে আত্মসমর্পণ করা। এটি ঈমানের দাবি। এর বিপরীতে আল্লাহর কোন একটি বিধানকে অপছন্দ করা বা ঘৃণা করা ঈমান ভঙ্গের অন্যতম একটি কারণ। আল্লাহ তাআলা বলেন,ذَ ٰ⁠لِكَ بِأَنَّهُمۡ كَرِهُوا۟ مَاۤ أَنزَلَ ٱللَّهُ فَأَحۡبَطَ أَعۡمَـٰلَهُمۡ “এটা এজন্যে যে, আল্লাহ যা নাজিল করেছেন তারা তা অপছন্দ করেছে। কাজেই তিনি তাদের আমলসমূহ বাতিল করে দিয়েছেন।” [সূরা মুহাম্মদ: ৯] এ আয়াত দ্বারা বুঝা যায়, আমল সমূহ বাতিল হওয়ার অন্যতম কারণ আল্লাহর নাযিলকৃত বিষয় অপছন্দ করা। উক্ত বিষয় আমল করলেও অপছন্দ করার কারণে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাবে। অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ আরো বলেন, لَقَدِ ابْتَغَوُا الْفِتْنَةَ مِنْ قَبْلُ وَقَلَّبُوْا لَكَ الْأُمُوْرَ حَتَّى جَاءَ الْحَقُّ وَظَهَرَ أَمْرُ اللهِ وَهُمْ كَارِهُوْنَ ‘তারা পূর্ব থেকেই বিভেদ সৃষ্টির সুযোগ সন্ধানে ছিল এবং আপনার কার্য সমূহ উলট-পালট করে দিচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত সত্য প্রতিশ্রুতি এসে গেল এবং জয়ী হ’ল আল্লাহর হুকুম, যে অবস্থায় তারা অপছন্দ করল’ (সূরা তওবা: ৪৮)। রাসুল সালাম আলাইহিস সালাম যা কিছু নিয়ে এসেছেন সে ব্যাপারে কেউ যদি অপছন্দ করে তাহলে সে ব্যক্তি মুসলিম ইমামগনের সর্বসম্মতিক্রমে কাফের। আর এ বিষয়ে ইজমা নকল করেছেন। ইমাম বাহওয়াতি (রাহিমাহুল্লাহ) “কাশশাফুল ক্বিনা’খন্ড: ৬ পৃষ্ঠা:১৬৮)
.
মহান আল্লাহ তায়ালা পুরুষদের জন্য বহুবিবাহ বৈধ করেছেন। তিনি তাঁর মহান কিতাবে বলেছেন: “তোমরা যদি এতিম মেয়েদের (বিয়ে করার) ক্ষেত্রে সুবিচার করতে না পারার আশঙ্কা করো, তাহলে (সাধারণ) নারীদের মাঝে তোমাদের পছন্দ হয় এমন দুইজন, তিনজন কিংবা চারজনকে পর্যন্ত বিয়ে করতে পারো। কিন্তু যদি (একাধিক স্ত্রীর সাথে) সুবিচার করতে না পারার আশঙ্কা করো, তাহলে মাত্র একজনকে অথবা নিজেদের অধিকারভুক্ত দাসীদের (রাখতে পারবে)। এটা তোমাদের অবিচার না করার নিকটতর।”[সূরা নিসা: ৩] বহুবিবাহের বৈধতার পক্ষে এটি দ্ব্যর্থহীন দলীল। ইসলামী শরীয়তে একজন পুরুষ এক, দুই, তিন বা চার বিয়ে করতে পারে। একসাথে চারের বেশি বিয়ে করা তার জন্য বৈধ না। মুফাস্‌সিরগণ ও ফকীহগণ এই কথা বলেছেন। এই ব্যাপারে মুসলিমদের ইজমা সংঘটিত হয়েছে; এতে কোনো মতভেদ নেই। সুতরাং নারী কিংবা পুরুষ যদি মনে করে যে, ইসলাম পুরুষদেরকে একাধিক বিয়ের বিধান দিয়ে নারীদের প্রতি জুলুম করেছে অথবা এই বিধানটি অস্বীকার করবে কিংবা মনে করে এই বিধানটি বর্তমান যুগে অনুপযোগী বা এটিকে কেউ ঘৃণার চোখে দেখে তাহলে সে ইসলাম থেকে বহিষ্কৃত মুরতাদ ও কাফের বলে গণ্য হবে।ফলে তাকে তওবার আহ্বান জানানো হবে। তওবানা করলে তাকে হত্যা করা হবে।
.
বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায আন-নাজদী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] জিজ্ঞেস করা হয়েছিল প্রশ্ন: কিছু মহিলা ইউরোপীয় সংস্কৃতি, পশ্চিমা সভ্যতা, অমুসলিমদের সংস্কৃতি কে শ্রেষ্ঠ মনে করে এবং বলে একাধিক বিবাহ নিষিদ্ধ। অথচ ইসলামী শরয়ী বিধানে একাধিক বিবাহ বৈধ। তাহলে ইসলামের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ লেপনের হুকুম কি হবে?

জবাবে শাইখ বলেন,

: من كره تعدد الزوجات وزعم أن عدم التعدد أفضل، فهو كافر مرتد عن الإسلام؛ لأنه -نعوذ بالله- منكر لحكم الله وكاره لما شرع الله، والله يقول سبحانه: {ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ كَرِهُوا مَا أَنزَلَ اللَّهُ فَأَحْبَطَ أَعْمَالَهُمْ} [محمد:9]، من كره ما أنزل الله حبط عمله، فالذي يكره تعدد الزوجات ويرى أن الشريعة يعني قد ظلمت أو أن في حكم الله في هذا ناقص أو مو بطيب، أو أن ما يفعلونه في بلاد النصارى من الواحدة أن هذا أولى وأفضل، هذا كله ردة عن الإسلام نعوذ بالله، كالذي يقول: إن فرض الصلاة ما هو مناسب، لو ترك الناس بدون الصلاة كان أحسن أو بدون صيام أحسن أو بدون زكاة، من قال هذا فهو كافر، من قال: إن عدم الصلاة أولى أو عدم الصيام أولى أو عدم الزكاة أولى أو عدم الحج أولى كان كافراً، وهكذا لو قال: لا بأس أن يحكم بغير الشريعة، يجوز، ولو قال: حكم الشريعة أفضل، لكن إذا قال: إن الحكم بغير ما أنزل الله جائز أو أنه حسن، كل هذا ردة عن الإسلام نعوذ بالله.فالحاصل من كره ما أنزل الله وما شرعه الله هو مرتد، وهكذا من أحب ورضي بما حرم الله وقال: إنه طيب وإنه مناسب كالزنا والسرقة يكون كافراً أيضاً .نعم. نسأل الله

“যে ব্যক্তি একাধিক বিবাহকে অপছন্দ করবে এবং একাধিক বিবাহ না করাই উত্তম বলে ধারণা করবে নিঃসন্দেহে সে কাফের এবং ইসলাম বিচ্যুত। কেননা সে আল্লাহর বিধান কে অস্বীকার কারী এবং আল্লাহর শরীয়ত অপছন্দ কারী। নাউ’যুবিল্লাহ। আল্লাহ তায়ালা বলেন,{ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ كَرِهُوا مَا أَنزَلَ اللَّهُ فَأَحْبَطَ أَعْمَالَهُمْ} “এটা এ জন্যে যে, আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তারা তা অপছন্দ করে।সুতরাং আল্লাহ তাদের কর্মসমূহ নিস্ফল করে দেবেন।(সূরা মুহাম্মদ: ৯) যে ব্যক্তি আল্লাহ কর্তৃক অবতীর্ণ বিষয়ে অপছন্দ করবে তার আমল নষ্ট হয়ে যাবে। সুতরাং যে ব্যক্তি একাধিক বিবাহকে অপছন্দ করবে এবং ধারণা করবে যে শরীয়ত মহিলাদের উপর জুলুম করেছে অথবা এই ক্ষেত্রে শরীয়ত অপূর্ণাঙ্গ অথবা খ্রিস্টান রাষ্ট্রে যে এক স্ত্রীতে সিমাবদ্ধ সেটাই উত্তম। এই সমস্ত ধারণাই ব্যক্তিকে ইসলাম থেকে বের করে দিবে। (নাউ’যুবিল্লাহ)। যেমন কেউ বলে স্বলাতের বিধান ফরজ এটা উপযুক্ত নয়। মানুষেরা যদি স্বলাত বর্জন করে তাহলে সেটাই ভালো হবে অথবা সিয়াম বর্জন করে তাহলে সেটাই ভালো হবে অথবা যাকাত বর্জন করে তাহলে সেটাই ভালো হবে। যে ব্যক্তি এই কথা বলবে সে কাফের। যে ব্যক্তি বলে, স্বলাত আদায় না করাই উত্তম, সিয়াম পালন না করাই উত্তম, যাকাত প্রদান না করাই উত্তম, হজ্জ পালন না করাই উত্তম। সে কাফের। অনুরুপ ভাবে যে ব্যক্তি বলে, যদিও বলে শরয়ী হুকুমই উত্তম তার পরেও যদি ইসলামী শরিয়ত বহির্ভূত কোন কিছু জারী করে কোন সমস্যা নেই বলা জায়েজ। তবে যদি বলে, আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তা বহির্ভূত কোন কিছু দ্বারা বিধান বাস্তবায়ন করা জায়েয বা ভালো তাহলে সে ইসলাম থেকে বহিষ্কার হয়ে যাবে। নাউ’যুবিল্লাহ। মোট কথা, আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, যা শরীয়ত হিসেবে নির্ধারণ করেছেন সেটাকে যে ব্যক্তি অপছন্দ করবে সে মুরতাদ হয়ে যাবে। অনুরুপ ভাবে যে ব্যক্তি আল্লাহ কর্তৃক হারাম বিষয়ে সন্তুষ্ট থাকে এবং পছন্দ করে এবং এটাই (যেমন যেনা করা, চুরি করা) ভালো ও উপযুক্ত বলে সেও কাফের। হ্যাঁ !(শাইখের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট, ফাতওয়া নং: ৪৮৮৩)
.
অপরদিকে কোন নারী যদি ইসলামে একাধিক বিবাহ জায়েজ একথা অন্তরে বিশ্বাস রাখে এবং আল্লাহর উক্ত বিধানের প্রতি সম্মান বজায় রাখে কিন্তু ব্যক্তিগত মানবিক দুর্বলতা ও অনিচ্ছার কারণে স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করুক এটা না চায় বা তার দ্বিতীয় বিয়েকে অপছন্দ করে তাহলে তাতে সমস্যা নেই। এ কারণে সে ঈমান থেকে বের হয়ে যাবে না বা মুনাফিক বলে গণ্য হবে না। এর উদাহরণ হিসেবে বলা যায়,মানুষ রোগাক্রান্ত হলে অস্ত্রোপচার, ইনজেকশন নেওয়া বা ওষুধ খাওয়াকে স্বভাবগতভাবে অপছন্দ করে কিন্তু সুস্থতার স্বার্থে তা মেনে নেয়।অনুরূপভাবে জি-হাদ তথা কাফেরদের সাথে যু/দ্ধে লিপ্ত হওয়া স্বভাবগতভাবে মানুষের অপছন্দনীয়। এ ব্যাপারে আল্লাহ বলেন,كُتِبَ عَلَیۡكُمُ ٱلۡقِتَالُ وَهُوَ كُرۡهࣱ لَّكُمۡۖ وَعَسَىٰۤ أَن تَكۡرَهُوا۟ شَیۡـࣰٔا وَهُوَ خَیۡرࣱ لَّكُمۡۖ وَعَسَىٰۤ أَن تُحِبُّوا۟ شَیۡـࣰٔا وَهُوَ شَرࣱّ لَّكُمۡۚ وَٱللَّهُ یَعۡلَمُ وَأَنتُمۡ لَا تَعۡلَمُونَ “তোমাদের উপর কি/তা/ল (যু-দ্ধ) করাকে ফরজ করা হয়েছে যদিও তোমাদের নিকট তা অপছন্দনীয়। কিন্তু তোমরা যা অপছন্দ কর হতে পারে তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর এবং যা ভালবাস হতে পারে তা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। আর আল্লাহ জানেন তোমরা জান না।” [সূরা বাকারা: ২১৬] অনুরূপভাবে, ঠাণ্ডার রাতে ঘুম থেকে উঠে অজু করে মসজিদে যাওয়া, সফরের কষ্ট, ক্লান্তি ও নানা রোগ-ব্যাধি সত্বেও পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা, নিজের সম্পদ থেকে জাকাত বের করে গরিবদেরকে দান করা, রমজান মাসে সারাদিন ক্ষুধা-পিপাসায় কাতর হয়ে রোজা রাখা; ইত্যাদি মানুষের স্বভাবজাত অপছন্দনীয় বিষয়। কিন্তু তারপরও কেউ যদি আল্লাহর বিধানের প্রতি সম্মান প্রদর্শন পূর্বক জাহান্নামের আগুনের ভয়ে এ কাজগুলো করে তাহলে তার জন্য রয়েছে অবারিত সওয়াব। ঠিক তদ্রুপ কোন নারী যদি স্বামীর একাধিক বিয়ের প্রতি অন্তরে কষ্ট অনুভব করার পরেও আল্লাহর বিধানের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং স্বামীকে সন্তুষ্ট করার স্বার্থে তা মেনে নেয় তাহলে সে আল্লাহর কাছে সওয়াবের অধিকারী হবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ বলেন, وَٱصۡبِرُوٓاْۚ إِنَّ ٱللَّهَ مَعَ ٱلصَّٰبِرِينَ﴾ [الانفال: ٤٦]“তোমরা ধৈর্য্যধারণ কর। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।” [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ৪৬] রাসূল ﷺ বলেছেন,”মুসলিম ব্যক্তির উপর যে কষ্ট-ক্লেশ, রোগ-ব্যাধি, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, কষ্ট ও পেরেশানী আপতিত হয়, এমনকি তার দেহে যে কাঁটা ফুটে, এসবের বিনিময়ে আল্লাহ তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন”।(সহীহ বুখারী হা/৫৬৪১)
.
কিন্তু এর বিপরীতে স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করার কারণে স্ত্রী যদি তার প্রতি কোন ধরনের জুলুম-নির্যাতন করে, খারাপ আচরণ ও গালাগালি করে, তার গোপনীয়তা প্রকাশ, গিবত‌ ও আমানতের খেয়ানত করে, তাকে অপমান-অপদস্থ করে বা অন্য কোন ভাবে তাকে কষ্ট দেয় তাহলে সে মারাত্মক গুনাগার হবে।‌ এই বিষয়গুলো সাধারণভাবেই কবিরা গুনাহ। কিন্তু স্বামীর সাথে করা হলে তার ভয়াবহতা আরও বেশি। আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:لَا يَنْظُرُ اللهُ إِلَى امْرَأَةٍ لَا تَشْكُرُ لِزَوْجِهَا، وَهِيَ لَا تَسْتَغْنِيْ عَنْهُ.‘‘আল্লাহ্ তা‘আলা এমন মহিলার দিকে (সন্তুষ্টির দৃষ্টিতে) তাকান না যে নিজ স্বামীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না; অথচ সে তার স্বামীর প্রতি সর্বদাই মুখাপেক্ষিণী’’।(নাসায়ী সুনানুল কুবরা হা/ ৯১৩৫: মুস্তাকরাক হাকেম হা/২৭৭১) অপর বর্ননায় রাসূল ﷺ বলেন,”কোন মহিলা তার স্বামীকে দুনিয়াতে কষ্ট দিলে তার জান্নাতী অপরূপা সুন্দরী স্ত্রীরা বলে: তাকে কষ্ট দিও না। আল্লাহ্ তোমাকে ধ্বংস করুক! কারণ সে তো তোমার কাছে কিছু দিনের জন্য। বেশি দেরি নয় যে, সে তোমাকে ছেড়ে আমাদের কাছে চলে আসবে’’।(ইবনু মাজাহ্ হা/২০৪৪) সুতরাং স্বামীর দ্বিতীয় বিবাহ করলে স্ত্রীর তার কর্তব্য হবে,আল্লাহর বিধানের প্রতি আত্মসমর্পণ এবং স্বামীর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সর্বোচ্চ ধৈর্য ও সহনশীলতার পরিচয় দেওয়া। তা করা সম্ভব না হলে বুক ভরা সীমাহীন কষ্ট সহ্য করে সংসার অব্যাহত রাখা আবশ্যক নয়। ইচ্ছা করলে সে খোলা তালাকের মাধ্যমে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার অধিকার রাখে।যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন; ‘‘অতঃপর যদি তোমাদের ভয় হয় যে, তারা উভয়েই আল্লাহর নির্দেশ বজায় রাখতে পারবে না, তাহলে সেক্ষেত্রে স্ত্রী যদি কিছু বিনিময় দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয় তবে উভয়ের কারো পাপ হবে না।’’ (সূরা আল- বাকারহ্: ২/২২৯)। এখানে খুলা’ (খোলা তালাকের) কথা বলা হচ্ছে। অর্থাৎ, স্ত্রী স্বামী থেকে পৃথক হতে চাইলে, স্বামী তার স্ত্রীকে দেওয়া মোহরানা ফিরিয়ে নিতে পারে।
.
আর স্বাভাবিক ভাবে স্বামীর দ্বিতীয় বিবাহ অপছন্দ করা ঈমান ভঙ্গের কারণ নয়। যেমন: সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] জিজ্ঞেস করা হয়েছিল প্রশ্নকারী: কিছু মহিলা পুরুষের একাধিক বিবাহের আলোচনা শুনলে বিরক্ত বোধ করে, বরং পুরুষের একাধিক বিবাহের আলোচনা শুনলে তাদের আচরণ পরিবর্তন হয়ে যায়। এই ক্ষেত্রে ঐ মহিলাদের জন্য আপনারা কি উপদেশ দিবেন?

শাইখ জবাবে বলেন,

تعني بالتعدّد تعدّد الزوجات والمرأة بطبيعتها تكره التعدّد ويحدث لها من الغيرة ما يصل إلى حد الجنون تقريبا.

السائل : نعم يا شيخ.

الشيخ : وهي غير ملومة بذلك لأن هذه طبيعة المرأة لكن المرأة العاقلة لا تُغلّب جانب العاطفة والغيرة على جانب الحكمة والشريعة فالشرع أباح للرجل أن يُعدّد بشرط أن يأمن نفسه من الجوْر وأن يكون قادرا على العدل قال الله تعالى { فَانكِحوا ما طابَ لَكُم مِنَ النِّساءِ مَثنى وَثُلاثَ وَرُباعَ فَإِن خِفتُم أَلّا تَعدِلوا فَواحِدَةً أَو ما مَلَكَت أَيمانُكُم ذلِكَ أَدنى أَلّا تَعولوا } يعني ألا تجوروا فأوجب الله الاقتصار على الواحدة إذا خاف الإنسان ألا يعدل.
والمرأة لا شك أنها إذا سمعت أن زوجها يريد أن يتزوّج تتغيّر على زوجها ولكن ينبغي لها أن توطّد نفسها وتطمئنها وتعلم أن هذا النفور والغيرة التي حصلت ستزول إذا حصل الزواج كما هو مجرّب لكن على الزوج أن يتقي الله عز وجل في إقامة العدل بين الزوجة الأولى والثانية لأن بعض الأزواج إذا رغِب في الثانية أجْنف عن الأولى ونسي ما كان بينهما من الحياة السعيدة قبل ذلك فيميل إلى الثانية أكثر ومن كان كذلك فليستعد لهذه العقوبة التي ذكرها النبي صلى الله عليه وعلى ءاله وسلم “من كانت له امرأتان فمال إلى إحداهما جاء يوم القيامة وشقّه مائل” والعياذ بالله يشهده العالم كلهم، يشهدونه وشقّه مائل لأنه مال عن العدل فجوزي بمثل ذنبه نسأل الله العافية. نعم.

“মহিলারা স্বভাবগত ভাবেই একাধিক বিবাহকে অপছন্দ করে। এই ক্ষেত্রে তাঁদের আবেগ/ইর্ষা বা আত্মমর্যাদাবোধ তাঁদেরকে অনেকটাই পাগলামি পর্যায়ে নিয়ে যায়।

প্রশ্নকারী: জি শাইখ।

শাইখ: সে এই কারণে তিরস্কৃত/নিন্দিত না। কেননা এটাই মহিলাদের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য। কিন্তু জ্ঞানী মহিলা কখনোই আবেগ ও আত্মমর্যাদাবোধকে শরীয়ত ও তার হিকমাহ-এর উপর প্রাধান্য দেবে না। সুতরাং শরীয়ত পুরুষের জন্য জুলুম থেকে তার নিজেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করন এবং ইনসাফ নিশ্চিত করণের শর্তে একাধিক বিবাহকে বৈধ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,{ فَانكِحوا ما طابَ لَكُم مِنَ النِّساءِ مَثنى وَثُلاثَ وَرُباعَ فَإِن خِفتُم أَلّا تَعدِلوا فَواحِدَةً أَو ما مَلَكَت أَيمانُكُم ذلِكَ أَدنى أَلّا تَعولوا } “সুতরাং বিবাহ কর (স্বাধীন) নারীদের মধ্যে যাকে তোমাদের ভাল লাগে; দুই, তিন অথবা চার।আর যদি আশংকা কর যে, সুবিচার করতে পারবে না, তবে একজনকে (বিবাহ কর) অথবা তোমাদের অধিকারভুক্ত (ক্রীত অথবা যুদ্ধবন্দিনী) দাসীকে (স্ত্রীরূপে ব্যবহার কর)।এটাই তোমাদের পক্ষপাতিত্ব না করার অধিকতর নিকটবর্তী”।(সূরা নিসা:৩)।অর্থাৎ তোমরা জুলুম করো না। ফলে পুরুষ যখন একাধিক স্ত্রীর মাঝে ইনসাফ করতে আশংকা করবে, তখন তার ক্ষেত্রে এক স্ত্রীতে সিমাবদ্ধ থাকাতে আল্লাহ তায়ালা ওয়াজিব করেছেন। আর নিঃসন্দেহে কোন মহিলা যখন শুনে যে তার স্বামী আরো একটি বিবাহ করতে চাচ্ছে,তখন সে তার স্বামীর উপর রাগান্বিত হয়।অথচ তার উচিত ছিল, সে নিজেকে শান্ত রাখবে এবং সে শক্ত হবে।আর তার মাথায় রাখা উচিত ছিল, এই আবেগ বা ইর্ষা ও দুরত্ব তৈরি হয়েছে তা বিবাহের পর অতিশীঘ্রই দূর হয়ে যাবে। মূলত তা পরীক্ষামূলক। তবে স্বামীর উপর আবশ্যক হলো, প্রথম ও দ্বিতীয় স্ত্রীর মাঝে ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় আল্লাহকে ভয় করা। কেননা কিছু স্বামী দ্বিতীয় বিবাহ করে প্রথম স্ত্রীর প্রতি জুলুম করে এবং ইতিপূর্বে তাদের মাঝে যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ছিল তা ভুলে যায়।যার ফলে সে দ্বিতীয় স্ত্রীর প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয়। সুতরাং যে ব্যক্তির অবস্থা এমন হবে,ফলে সে যেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক উল্লেখিত শাস্তির প্রস্তুতি গ্ৰহণ করে, যেখানে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,مَنْ كَانَتْ لَهُ امْرَأَتَانِ فَمَالَ إِلَى إِحْدَاهُمَا جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَشِقُّهُ مَائِلٌ “যে ব্যক্তি দুই’জন স্ত্রী থাকা অবস্থায় তাদের একজনের প্রতি ঝুঁকে পড়ল,ক্বিয়ামাতের দিন সে পঙ্গু অবস্থায় উপস্থিত হবে”।(আবু দাউদ হা/২১৩৩) আমরা আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। যে ব্যক্তি দুনিয়ায় ইনসাফ করবে না, কিয়ামতের ময়দানে সকলেই তাকে একপার্শে ঝোঁক অবস্থায় প্রত্যক্ষ করবে। আমরা আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করি। হ্যাঁ!

প্রশ্ন কারী: শাইখ! খরচের ক্ষেত্রে ইনসাফ, রাত্রি যাপনের ক্ষেত্রে ইনসাফ করা ছাড়াও আর কোন কোন ক্ষেত্রে ইনসাফ করতে হবে? শাইখ: সম্ভবপর সর্বক্ষেত্রে ইনসাফ নিশ্চিত করতে হবে। যে ক্ষেত্রগুলোতে ইনসাফ করা সম্ভব সে ক্ষেতগুলোতে ইনসাফ করতে হবে। এমনকি সক্ষম হলে স্ত্রী সহবাসেও ইনসাফ নিশ্চিত করতে হবে। হ্যাঁ ! প্রশ্ন কারী: আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুন এবং বারাকাহ দিন।(উসাইমীন, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ দারব, পৃষ্ঠা: ২২৬)
.
আল্লাহ আমাদেরকে দুনিয়াবী জীবনে যাবতীয় পরীক্ষায় ঈমানের সাথে মোকাবেলা করার তৌফিক দান করুন আমীন। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
___________________
আপনাদের দ্বীনি ভাই:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

Share: