সালাম প্রদানের গুরুত্ব ও মর্যাদা এবং সালাম দেওয়া এবং নেওয়ার সঠিক উচ্চারণ

প্রশ্ন: সালাম প্রদানের গুরুত্ব ও মর্যাদা কি?সালাম দেওয়া এবং নেওয়ার সঠিক উচ্চারণ কোনটি?
▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। মানবজীবনের এমন কোন দিক নেই, যার পূর্ণাঙ্গ বিবরণ ইসলাম প্রদান করেনি। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও আন্তর্জাতিক পরিমল সহ সকল ক্ষেত্রেই মেনে চলার জন্য ইসলাম দিয়েছে বিস্তারিত ও ভারসাম্যপূর্ণ বিধান শরিয়তে যে কোন কথা বলার আগেই সালাম দেওয়া মুস্তাহাব।প্রথমে সালাম না দিলে রাসূল (ﷺ) কথা বলার অনুমতি দিতে নিষেধ করেছেন। অর্থাৎ কথা বলা বা কোন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার পূর্বে সালাম দিতে হবে এবং এটাই শরীয়তের বিধান রাসূল (ﷺ) বলেন,لاَ تَأْذَنُوْا لِمَنْ لَمْ يَبْدَأْ بِالسَّلاَمِ ‘যে ব্যক্তি আগে সালাম দেয় না তোমরা তাকে (কথা বলার) অনুমতি দিও না’। (সহীহাহ হা/৮১৭; ছহীহুল জামে হা/৭১৯০)।
.
সালাম আরবি শব্দ, এর অর্থ হচ্ছে শান্তি, প্রশান্তি, কল্যাণ, দোয়া, শুভকামনা। সালাম একটি সম্মানজনক, অভ্যর্থনামূলক, অভিনন্দনজ্ঞাপক, উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন পরিপূর্ণ ইসলামি অভিবাদন। ‘সালাম’ আল্লাহর সুন্দর নামসমূহের মধ্যে অন্যতম। (সুরা- হাশর: ২৪) সালামের গুরুত্ব ও মর্যাদা এতটাই অধিক যে, জান্নাতে জান্নাতীদের সাথে আল্লাহর তা‘আলার অভিবাদন হবে সালাম। আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতীদেরকে সালাম প্রদান করবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, سَلٰمٌ قَوۡلًا مِّنۡ رَّبٍّ رَّحِیۡمٍ ‘পরম দয়ালু প্রতিপালকের পক্ষ হতে তাদেরকে বলা হবে সালাম’ (সূরা ইয়াসিন : ৫৮)। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন, تَحِیَّتُہُمۡ یَوۡمَ یَلۡقَوۡنَہٗ سَلٰمٌ وَ اَعَدَّ لَہُمۡ اَجۡرًا کَرِیۡمًا ‘যেদিন তারা আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে, সেদিন তাদের অভিবাদন হবে সালাম। তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন উত্তম প্রতিদান’ (সুরা আল-আহযাব : ৪৪)।
.
ইসলামের অনন্য সৌন্দর্য প্রকাশ পায় সালামের মাধ্যমে। সালাম পরস্পরে সম্পর্ক বৃদ্ধি করে, ভালোবাসা গভীর করে। বেশি বেশি সালাম প্রদানের ব্যাপারে নবী (ﷺ) আমাদের আদেশ করেছেন। আজান, ইকামত, নামাজ, ইস্তিঞ্জা ইত্যাদি ছাড়া বাকি সর্বাবস্থাই সালাম দেয়া যায়। সালাম সর্বাবস্থায় আদান-প্রদান করা যায়। রাসূল (ﷺ) ছালাতরত অবস্থাতেও হাতের ইশারায় সালামের উত্তর দিতেন (আবুদাউদ হা/৯২৬, তিরমিযী হা/৩৬৭, মিশকাত হা/৯৯১)। কেবল পেশাব-পায়খানার সময় তিনি সালামের উত্তর দিতেন না, বরং বের হয়ে উত্তর দিতেন (যদি সেই ব্যক্তি মওজুদ থাকত) (বুখারী হা/৩৩৭, আবুদাঊদ হা/১৭, মিশকাত হা/৪৬৭, ৫৩৫)।
.
সালাম প্রদানকারী: যে আগে সালাম দিবে, সে নিম্নোক্ত বাক্যে সালাম দিবে- (اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ) অথবা (اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ) অথবা (اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُه)। অর্থ : তোমাদের উপর শান্তি, আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক ।(আবূ দাঊদ, হা/৫১৯৫)
সুতরাং সালাম প্রদানের সঠিক উচ্চারণ হলো,*
السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ

*আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি, ওয়া বার-কাতুহ্।*

🔰সালামের ভুল উচ্চারণঃ

◾স্লামালাইকুম,❌
◾সালামালাইকুম, ❌
◾আস্লামালাইকুম ,❌
◾সেলামালাইকুম, ❌
◾আসসামালাইকুম ইত্যাদি❌

সালামের উত্তর প্রদানকারী: যে ব্যক্তি সালামের উত্তর দিবে সে বলবে (وَعَلَيْكُمُ السَّلَامُ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ)। অর্থ: তোমাদের উপরও শান্তি, আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক (মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৬৩৩, সনদ সহীহ)।
সুতরাং সালামের সঠিক জবাব হল,

وَعَلَيْكُمُ السَّلَامُ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ

*‘ওয়া আলাইকুমুস-সালাম, ওয়া রহমাতুল্লাহি, ওয়া বার-কাতুহ্।* এটাই বিশুদ্ধ।

🔰সালামের ভুল জবাব:
◾ওয়ালাইকুম সালাম❌
◾ওয়ালাইকুম আসসালাম❌
◾ওয়ালাইকুম স্লাম❌
◾অলাইকুম সালাম;❌
◾অলাইকুম আস-সালাম ইত্যাদি।❌
.
অনুপস্থিত ব্যক্তির সালামের উত্তর: অনুপস্থিত কোন ব্যক্তি যদি সালাম প্রদান করে, তাহলে তার সালামের উত্তর এভাবে বলবে: (عَلَيْكَ وَعَلَيْهِ السَّلَامُ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ)। অর্থ : তোমার এবং তার উপর শান্তি ও আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক। (সহীহ বুখারী, হা/৩২১৭, ৩৭৬৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৯০১) অথবা শুধু বলবে: (وَعَلَيْهِ السَّلَامُ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ) অর্থ: তার উপর শান্তি ও আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক। (সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৪৪৯)।
.
মহান আল্লাহ্ আমাদের সকলকে সঠিকভাবে সালাম উচ্চারণের তাওফীক দান করুন। আমীন। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
_____________________
উপস্থাপনায়,
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

Share: