সালাতে সিজদারত অবস্থায় দুই পায়ের পাতা আলেদা থাকবে নাকি মিলিত থাকবে? বিষয়টি নিয়ে আহালুল আলেমগনের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে এক্ষেত্রে প্রসিদ্ধ দুটি মত রয়েছে:
.
(১). সিজদায় দুটি পা আলাদা রাখা মুস্তাহাব।
.
এটি অধিকাংশ আলেমদের অভিমত। তারা দলীল হিসেবে সুন্নাতে প্রমাণ উদ্ধৃত করেছেন যে, সেজদা করার সময় হাঁটু ও উরু আলাদা রাখা মুস্তাহাব। তারা বলেন: আর পা যেন তাদের অনুসরণ করে। তাই মূল নীতি হল তাদেরও আলাদা রাখা উচিত। তাদের দলিল: আবু হুমাইদ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নামায বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন: “যখন তিনি সিজদা করতেন, তখন তিনি তার উরু আলাদা রাখতেন।”(সুনানে আবু দাউদ,হা/৭৩৫ শাইখ আলবানী সনদ জয়ীফ বলেছেন আবার কেউ কেউ হাসান বলেছেন)। উক্ত হাদীসের আলোকে ইমাম শাওকানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:রাসূল (ﷺ) তার উরু আলাদা রেখেছেন” শব্দের অর্থ হল তিনি তার উরু, হাঁটু এবং পা আলাদা রেখেছেন। ইমাম শাফেঈ (রাহিমাহুল্লাহ)-[মৃত্যু: ৭৬৭ খ্রি] বলেন,দু’গোড়ালীর মাঝে এক বিঘত ফাঁক থাকবে (নায়লুল আওত্বার,২/২৯৭)।
শাফি‘ঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ইমাম মুহিউদ্দীন বিন শারফ আন-নববী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৭৬ হি.] বলেছেন,ইমাম শাফেঈ (রাহিমাহুল্লাহ) ও তাঁর অনুসারীরা বলেনঃ সিজদাকারীর জন্য হাঁটু ও পা আলাদা রাখা মুস্তাহাব। আল-কাদি আবুল তাইয়্যেব তার তাফসীরে বলেছেন: আমাদের সঙ্গীরা বলেছেন: তার পায়ের মধ্যে এক হাতের দূরত্ব থাকতে হবে।(ইমাম নববী আল-মাজমু’,খন্ড:৩ পৃষ্ঠা:৪০৭)
.
(২). অপর একদল আলেম বলেন,সিজদায় দুটি পা মিলিয় রাখা মুস্তাহাব।
.
দলিলের আলোকে এই মতটি অধিক বিশুদ্ধ। এ মতের পক্ষে সমসাময়িক ইমামগনের মধ্যে,এই মতটি বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] এবং বিগত শতাব্দীর অন্যতম আরেক শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ফাদ্বীলাতুশ শাইখ, ইমাম মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] সমর্থন করেছিলেন। (ইসলামি সাওয়াল জবাব ফাতাওয়া নং-১১৫৫৬৭)
যারা এই মতের পক্ষে ছিলেন তারা মুমিনদের জননী আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি প্রমাণ হিসেবে উদ্ধৃত করেছেন, আম্মিজান ‘আইশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা) [মৃত: ৫৮ হি.] বলেন, فَقَدْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَكَانَ مَعِي عَلَى فِرَاشِي، فَوَجَدْتُهُ سَاجِدًا رَاصًّا عَقِبَيْهِ مُسْتَقْبِلًا بِأَطْرَافِ أَصَابِعِهِ الْقِبْلَةَ
অর্থাৎ রাসূল ﷺ আমার সাথে আমার বিছানাতে ছিলেন। কিন্তু তাকে আমি খুঁজে পাচ্ছিলাম না। (অন্ধকারে খুঁজতে গিয়ে) আমি সিজদারত অবস্থায় পেলাম, তখন তার দুই গোড়ালি মিলিত অবস্থায় ছিল, আর আঙ্গুলগুলো ক্বিবলার দিকে মুখ করা ছিল।…(সহীহ ইবনু খুযায়মা, হা/৬৫৪;সহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৬৬১৪; সুনানে কুবরা, বায়হাক্বী, হা/২৭৬০ সনদ সহীহ) ইমাম বায়হাক্বী রহ এই হাদীছের পূর্বে অধ্যায় রচনা করেছেন, بابُ ما جاءَ في ضَمِّ العَقِبَينِ في السُّجودِ ‘সিজদায় দুই গোড়ালি মিলিয়ে রাখা সম্পর্কে’। (অধ্যায় ২/১৬৭)
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন: সুন্নাহ থেকে যে বিষয়টি প্রতীয়মান হয় তা হল, সিজদায় দুই পা একসাথে রাখা অর্থাৎ একে অপরকে স্পর্শ করা, যেমনটি ‘আইশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা) [মৃত: ৫৮ হি.] থেকে সহীহ হাদীসে বলা হয়েছে, তিনি বলেন, ‘এক রাত্রিতে আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বিছানায় না পেয়ে আমার হাত দিয়ে খুঁজতে থাকলাম। অতঃপর আমার হাত তাঁর দু’পায়ের উপর পতিত হয়। তখন তিনি সিজদারত ছিলেন এবং তাঁর পা দু’টি খাঁড়া ছিল।আর এক হাত দুই পায়ের ওপরে পতিত হয়না যদি না দুটি পা একসাথে থাকে। উল্লেখিত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর হাদীস সহীহ ইবনে খুযায়মাতেও তা উল্লেখ আছে যে, সিজদায় রাসূল ﷺ এর গোড়ালি মিলিত অবস্থায় ছিল, এর উপর ভিত্তি করে, বলা যায় উরু ও হাতের বিপরীতে পা একসাথে রাখা সুন্নত। (ইমাম উসাইমীন আশ শারহুল মুমতে খন্ড: ৩ পৃষ্ঠা: ১৬৯)
.
পরিশেষে আমার বক্তব্য হল: সিজদায় দুই পা কিভাবে থাকবে বিষয়টি মতানৈক্য পূর্ণ তবে দলিলের আলোকে দুটি পা একসাথে মিলিয়ে রাখাই উত্তম এই বিধান নারী পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।তবে সর্বোপরি বিষয়টি মুস্তাহাব আমল। তাই এটি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করে একজন সালাত আদায়কারী সিজদায় তার দুই পা খাড়া অথবা মিলানো যেভাবে সহজ হবে সেভাবেই রাখতে পারে। এতে কোন বাধ্যবাধকতা নেই। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
______________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।