সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার জন্য যিনি জগতসমূহের প্রতিপালক। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক মুত্তাক্বীদের ইমাম ও বিনয়ীদের সরদার মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর এবং তাঁর পরিবারবর্গ ও সকল সাহাবীর উপর। অতঃপর জামআতে কিংবা একাকী সালাত আদায় করার সময় সালাত আদায়কারী ব্যক্তি (নারী-পুরুষ) তাদের দুই পায়ের মাঝখানে ফাঁকা রেখে দাঁড়াবে ইহা সালাতে কর্মকেন্দ্রিক সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু সালাত আদায়কারী ব্যক্তি (নারী-পুরুষ) দুই পায়ের মাঝে কতটুকু পরিমান ফাঁকা রাখবে এই মর্মে রাসূল (ﷺ) থেকে বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত কোন হাদিস পাওয়া যায় না। যদিও আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে যে সালাতে দাঁড়ানো অবস্থায় দু’পায়ের মাঝখানে চার আঙ্গুল পরিমাণ ফাঁকা রাখতে হবে। যেমন হানাফি মাজহাবের বিখ্যাত ফতোয়া গ্রন্থ ‘রাদ্দুল মুহতার’’-এ উল্লেখ রয়েছে-ﻭﺳﺒﻐﻨﻰ ﺃﻥْ ﺑﻜﻮﻥَ ﺑﻴﻨﻬﻤﺎ ﻣﻘﺪﺍﺭُ ﺃﺭﺑﻊِ ﺍﺻﺎﺑﻊ ﺍﻟﻴﺪ ﻟِﺎﻧّﻪُ ﺍَﻗْﺮَﺏُ ﺍِﻟَﻰ ﺍﻟﺨﺸﻮﻉ ﻫﻜﺬﺍ অর্থাৎ সালাতে দাঁড়ানো অবস্থায় দুই পায়ের মাঝখানে হাতের চার আঙ্গুল পরিমাণ ফাঁক রাখা উচিত। কেননা সালাতের মধ্যে খুশু বা একাগ্রতার জন্য এটি অতি নিকটবর্তী”।(রাদ্দুল মুহতার: ৩য় খণ্ড,পৃষ্ঠা: ৩৮৪) এমনকি তাদের মধ্যে কেউ কেউ দু’পায়ের মাঝে চার আঙুল পরিমাণ ফাঁকা রাখাকে সুন্নাত মনে করে। অথচ এভাবে চার আঙ্গুল নির্দিষ্ট করা সুন্নাহ সম্মত কথা নয়। কেননা একদিকে যেমন এই মর্মে বিশুদ্ধ দলিল নেই; তেমনি অন্যদিকে প্রত্যেক ব্যক্তির শরীরের ভারসাম্য একই রকম নয়। সুতরাং সালাতে দাঁড়ানো অবস্থায় দুই পায়ের মাঝখানে কতটুকু ফাঁকা রাখতে হবে এ বিষয়ে বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে সালাতে দাড়ানো ব্যক্তির শরীরের স্বাভাবিক ভারসাম্য অনুযায়ী জামআতে সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে পায়ে পা ও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মিশে মিশে দাঁড়াতে যতটুকু ফাঁকা রাখার প্রয়োজন হয় ততটুকু ফাঁকা রাখবে। আর হাদীস থেকেও এর ইঙ্গিত পাওয়া যায়।(সহীহ বুখারী হা ৭২৫; আবু দাঊদ হা/৬৬২)। তাছাড়া দুই পায়ের মাঝে জুতা জোড়া রাখা যায় এতটুকু ফাঁকা রাখার কথা হাদীস এসেছে। যেমন আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “তোমাদের কেউ যেন সালাত আদায়কালে জুতা খুলে তার ডান পাশে ও বাম পাশে না রাখে। কারণ তা অন্যের ডান পাশে হবে। অবশ্য বাম পাশে কেউ না থাকলে (রাখতে পারবে)। তবে জুতাজোড়া উভয় পায়ের মধ্যখানে রাখাই শ্রেয়”।(আবু দাঊদ হা/৬৫৪-৬৫৫; ইমাম হাকিম বলেন, এটি বুখারী ও মুসলিমের শর্তে সহীহ, অনুরূপ বর্ণনা দেখুন: ইবনু হিব্বান হা/৩৫৮; ইবনু খুযাইমাহ হা/১০০৯; বায়হাক্বী ‘সুনানুল কুবরা’২/৪৩২),
.
বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেন,وأما قول بعضهم : خلوا بين أرجلكم بسطة كف ، فلا أعلم له أصلاً من السنة “অতঃপর তাদের কথা:তোমরা তোমাদের দু-পায়ের মাঝে হাতের তালু পরিমাণ স্থান ফাঁকা রাখবে। সুন্নত থেকে এর কোন মূল ভিত্তি আমার জানা নেই”।(ইবনু উসাইমীন, মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল, খণ্ড: ১৩; পৃষ্ঠা: ২৯)
.
সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) ‘আলিমগণ বলেছেন:” لم يرد في السنة المطهرة حديث صحيح صريح يفيد إلصاق القدمين في حال القيام في الصلاة أو في حال السجود وبناء على ذلك ، فالأصل أن المصلي لا يتكلف إلصاقاً ولا تفريجاً كثيراً بين رجليه بل يكون معتدلاً “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ ব্যাপারে কোন স্পষ্ট সহিহ হাদিস পাওয়া যায় না যে যার মাধ্যমে সালাতে দাঁড়ানোর সময় বা সিজদার সময় দুই পায়ের মাঝখানে কতটুকু ফাঁকা থাকবে তা প্রমান করা যায় কিংবা তার উপর নির্ভর করা যায়। সুতরাং মূলনীতি হলো একজন মুসল্লি তার দুই পায়ের মাঝে একবারে মিলিয়ে রাখবেনা আবার বেশি ফাঁকাও রাখবেনা বরং সে সেই ক্ষেত্রে মধ্যমপন্থা বা সমতা বজায় রাখবে।(শরীরের স্বাভাবিক ভারসাম্য অনুযায়ী যতটুকু ফাঁকা রাখার প্রয়োজন হয় ততটুকু ফাঁকা রাখবে)।(ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ; খণ্ড: ৫; পৃষ্ঠা: ৩৫৭)
.
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে পরিপূর্ণ ভাবে কুরআন সুন্নাহ’র অনুসরণ করার তৌফিক দান করুন। আমীন। আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী।
___________________________
উপস্থাপনায়: জুয়েল মাহমুদ সালাফি।
সম্পাদনায়: ওস্তাদ ইব্রাহিম বিন হাসান (হাফি:) শিক্ষক, চর বাগডাঙ্গা সেরাজুল হুদা লতিফিয়া নুরিয়া ইসলামিয়া ও হাফিজিয়া মাদরাসা চাঁপাইনবাবগঞ্জ।