ভূমিকা: বান্দার হৃদয়ের ফোয়ারা থেকে যখন কোন পবিত্র বাক্য ও কথা উৎসারিত হয়, তখন আল্লাহ সেটা তাঁর কাছে তুলে নেন। তিনি বলেন, إِلَيْهِ يَصْعَدُ الْكَلِمُ الطَّيِّبُ وَالْعَمَلُ الصَّالِحُ يَرْفَعُهُ ‘তাঁর দিকেই অধিরোহন করে পবিত্র বাক্য। আর সৎকর্ম তাকে উচ্চ করে।’ (ফাত্বির ৩৫/১০)। ইমাম শাওকানী (রহঃ) বলেন, এখানে ‘পবিত্র বাক্য’ বলতে আল্লাহর যিকির, তাসবীহ-তাহমীদ, কুরআন তিলাওয়াত, সৎ কাজের আদেশ, অসৎ কাজের নিষেধ প্রভৃতিকে বুঝানো হয়েছে, যা নিয়ে ফেরেশতামন্ডলী আকাশে আরোহন করেন এবং আল্লাহ তার সওয়াব প্রদান করেন। (ফাৎহুল কাদীর ৪/৩৪১)। ইসলামী শরীআতে কতিপয় দোআ ও যিকিরের বিবরণ এসেছে, যার মাধ্যমে আকাশের দরজা খুলে দেওয়া হয়। যা নিম্নরূপ:
(১). কালিমায়ে ত্বইয়েবাহ: কালেমায়ে ত্বইয়েবাহ (পবিত্র বাক্য) হল لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ (লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ) ‘নেই কোন সত্য উপাস্য আল্লাহ ব্যতীত’। রাসূল (ﷺ) বলেন, কোন বান্দা একনিষ্ঠতার সাথে ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ পাঠ করলে তার জন্য আকাশের দ্বারসমূহ খুলে দেওয়া হয়। ফলে সেই কালিমা আরশ পর্যন্ত পৌঁছে যায়। যতক্ষণ সে কবীরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে।’(তিরমিযী হা/৩৫৯০; সহীহুল জামে হা/৫৬৪৮; সনদ হাসান)
(২). চারটি প্রিয় বাক্য: আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় বাক্য চারটি। নুমান বিন বাশীর (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘যারা ‘সুবহা-নাল্লাহ’, আল-হামদুলিল্লা-হ’, ‘আল্লাহু আকবার’ ও ‘লা ইলা-হা ইল্লা-হ’ বলে মহান আল্লাহর যিকির করে, তাদের পঠিত বাক্যগুলো আল্লাহর আরশের চারপাশে মৌমাছির মত প্রদক্ষিণ করতে থাকে এবং বাক্যগুলো পাঠকারীর নাম বলতে থাকে। তোমরা কি পছন্দ করো না যে, তোমাদের নাম আল্লাহর কাছে সর্বদা স্মরণ করা হোক?(আহমাদ হা/ ১৮৩৬২; হাকেম হা/ ১৮৪১; সনদ সহীহ)। এই কালেমাগুলো আরশে পৌঁছে যাওয়া প্রমাণ করে যে, আল্লাহর প্রিয় এই চারটি বাক্য পাঠ করলে আসমানের দরজা খুলে দেওয়া হয়। দরজা ছাড়া কোন কিছুই আকাশের সীমানা পার হতে পারে না। হাদীসের সোনালী পাতায় এই চারটি বাক্য আল্লাহর নিকট প্রিয় হওয়ার আরোও প্রমাণ মেলে।
(৩). সালাত শুরু করার বিশেষ দোআ: মুমিন বান্দা যখন সালাত শুরু করে, তখন তিনি যেন এক অপার্থিব জগতে প্রবেশ করেন। তার হৃদয়ের সকল আকুতি মহান রবের দরবারে পেশ করে পরিতৃপ্ত হন। কারণ একমাত্র আল্লাহই তার ব্যথিত হৃদয়ের কথা শোনেন এবং অশ্রুসিক্ত চোখের ভাষা বুঝেন। তার রুকু-সিজদা সবকিছু আল্লাহর জন্যই সমর্পিত হয়। দুনিয়ার সকল চিন্তা ও দুর্ভাবনা থেকে অবসর হয়ে তাকবীরে তাহরীমার মাধ্যমে তিনি সালাত শুরু করেন। তাকবীরে তাহরীমার পরে পঠিতব্য প্রায় ১২টি দোআর ব্যাপারে হাদীসে বর্ণনা এসেছে। তন্মধ্যে কতিপয় দোআ রয়েছে, যা পাঠ করলে আকাশের দরজা খুলে দেওয়া হয়। যেমন: আব্দুল্লাহ ইবনে ওমার (রাঃ) বলেন, ‘আমরা একদা আল্লাহর রাসূলের সাথে সালাত আদায় করছিলাম। হঠাৎ কওমের এক ব্যক্তি তাকবীরে তাহরীমার পর বলে উঠল,“আল্লাহু আকবার কাবীরা- ওয়াল হামদুলিল্লা-হি কাসীরা- ওয়া সুবহা-নাল্লাহি বুকরাতান ওয়া আসীলা।”(অর্থাৎ- আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ, বড়। সব প্রশংসা আল্লাহর। আর সকাল ও সন্ধ্যায় তারই পবিত্রতা বর্ণনা করতে হবে)। রাসূল (ﷺ) সালাত শেষ করে জিজ্ঞেস করলেন, এই কথাগুলো কে বলল? সবার মধ্য থেকে জনৈক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমি বলেছি। তখন তিনি বললেন, ‘কথাগুলো আমার কাছে বিস্ময়কর মনে হয়েছে। কারণ কথাগুলোর জন্য আসমানের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়েছিল।’(মুসলিম হা/৬০১; তিরমিযী হা/৩৫৯২; সনদ সহীহ)। বার জন ফেরেশতা এর সওয়াব আগে ভাগে আকাশে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাড়াহুড়া করছিল।(নাসাঈ হা/ ৮৮৫; সনদ সহীহ)
(৪). ক্বওমার দোআ: রুকু থেকে উঠে সুস্থির হয়ে দাঁড়ানোকে ক্বওমা বলে। হযরত রিফা‘আহ বিন রাফে আয-যুরাক্বী (রাঃ) বলেন, ‘আমরা একদা নবী করীম (ﷺ)-এর সাথে সালাত আদায় করছিলাম। যখন তিনি রুকু থেকে মাথা তুলে বললেন, سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ ‘সামি‘আল্লা-হু লিমান হামিদাহ’ (আল্লাহ শোনেন তার কথা যে তাঁর প্রশংসা করে), তখন তাঁর পিছন থেকে এক ব্যক্তি বলে উঠল رَبَّنَا وَلَكَ الحَمْدُ حَمْدًا كَثِيْرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيهِ ‘রব্বানা ওয়া লাকাল হাম্দ, হামদান কাছীরান ত্বইয়েবাম মুবা-রাকান ফীহ।’ (হে আমার রব! আপনার জন্য অগণিত প্রশংসা, যা পবিত্র ও বরকতময়। অতঃপর সালাম ফেরার পর রাসূল (ﷺ) বললেন, مَنِ الـمُتَكَلِّمُ ‘এই বাক্য কে বলল?’ লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমি বলেছি। তখন তিনি বললেন, ‘আমি ৩০-এর অধিক ফেরেশতাকে দেখলাম যে, তারা পরস্পর প্রতিযোগিতা করছে, কে এই দো‘আ পাঠকারীর নেকী আগে লিখবে।’(বুখারী হা/৭৯৯; নাসাঈ হা/১০৬২; আবু দাউদ হা/৭৭০; মিশকাত হা/৮৭৭)। উল্লেখ্য, কোন আমলের নেকী আকাশের দরজা ছাড়া আল্লাহর কাছে পৌঁছাতে পারে না। সুতরাং বোঝা গেল যে, ক্বওমার উক্ত দোআ পাঠকালে আসমানের দরজা খুলে দেওয়া হয়। তবে ক্বওমাতে পঠিতব্য আরো একাধিক দোআ আছে, যা সহীহ সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত।
(৫). মাযলূমের দোআ: নির্যাতিত, নিপীড়িত মানুষের ব্যথিত হৃদয় থেকে উৎসারিত দোআ আল্লাহ সাথে সাথে কবুল করে নেন। কোন প্রতিবন্ধকতা এই দোআ কবুলকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে না। এজন্য রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মুআয বিন জাবাল (রাঃ)-কে ইয়ামেনে পাঠানোর সময় উপদেশ দিয়ে বলেছিলেন, اتَّقِ دَعْوَةَ الـمَظْلُومِ، فَإِنَّهَا لَيْسَ بَيْنَهَا وَبَيْنَ اللهِ حِجَابٌ ‘তুমি মাযলুমের বদ দোআ থেকে বেঁচে থাক। কেননা সেই বদ দোআ ও আল্লাহর মাঝে কোন প্রতিবন্ধকতা থাকে না।’(বুখারী হা/ ১৪৯৬; মুসলিম হা/ ১৯; তিরমিযী হা/ ১২)। এমনকি সেই বদ দো‘আ কোন কাফের অথবা পাপী লোকের পক্ষ থেকে হলেও আল্লাহ তা সাথে সাথে কবুল করে নেন।(আহমাদ হা/ ৮৭৯৫; মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হা/২৯৩৭৪; সহীহুল জামে হা/২৬৮২, ৩৩৮২)। মাযলুমের দোআ এতই গুরুত্ববহ যে, এটা আল্লাহর কাছে পৌঁছার জন্য আকাশের দরজা খুলে দেওয়া হয়।
(৬). জিহাদের ময়দানে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো সৈনিকদের দোআ: আল্লাহর দ্বীনের ঝান্ডাকে উড্ডীন করার জন্য জিহাদের ময়দানে সারিবদ্ধ সৈনিকের দোআ আল্লাহ তাড়াতাড়ি কবুল করেন। সাহল বিন সা‘দ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, দু’টি সময়ে আকাশের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়। আর এই সময় প্রার্থনাকারীর দোআ কদাচিৎ ফিরিয়ে দেওয়া হয়। সময় দুটি হলো, সালাতের সময় এবং আল্লাহর পথে (জিহাদের ময়দানে) সারিবদ্ধ হওয়ার সময়।(সহীহুল জামে হা/৩৫৮৭; সনদ সহীহ)
(৭). ওযুর শেষে বিশেষ দোআ পাঠ করা: আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,‘যে ব্যক্তি ওযু শেষে এই দোআটি পাঠ করবে, ‘সুবাহা-নাকা আল্লা-হুম্মা ওয়া বিহামদিকা আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লা আনতা আসতাগফিরুকা ওয়া আতূবু ইলাইকা’, একটি বিশেষ মোহর দ্বারা দোআটি মোহরাঙ্কিত করে দেওয়া হয়। অতঃপর সেটা আরশের নিচে রেখে দেওয়া হয়, ক্বিয়ামত পর্যন্ত সেই মোহর খোলা হয় না। (মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক হা/৭৩০; সহীহ তারগীব হা/২২৫)। অপর বর্ণনায় রয়েছে, সেই দোআটি তার জন্য একটি কাগজে লেখা হয় এবং তাতে সীল মেরে দেওয়া হয়, যা ক্বিয়ামত দিবস পর্যন্ত খোলা হয় না। (সহীহ তারগীব হা/২২৫)
(৮). আরোও একটি কালেমা: আকাশের দরজা উন্মোচনকারী আরোও একটি যিকির রয়েছে, যা একনিষ্ঠতার সাথে পাঠ করলে আল্লাহ পাঠকারীর জন্য আসমানের দরজা খুলে দেন এবং ঐ খোলা দরজা দিয়ে তার প্রতি বিশেষ দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এ ব্যাপারে ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে একনিষ্ঠতার সাথে জিহ্বা ও হৃদয় দিয়ে সত্যায়ন করে বলবে- ‘লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহূ লা-শারীকা লাহূ লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ইয়ুহয়ী ওয়া ইয়ুমীতু ওয়া হুয়া ‘আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বদীর’ (আল্লাহ ছাড়া কোন মাবূদ নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই। সকল রাজত্ব একমাত্র তাঁরই। সকল প্রশংসা তাঁর জন্য। তিনিই জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান। সকল কিছুর উপর তিনিই সর্ব শক্তিমান)। তাহলে তার জন্য এমনভাবে আকাশের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয় যে, মহান রব দুনিয়াবাসীর মধ্য হতে এই বাক্য পাঠকারীর প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেন। আর আল্লাহ যখন কোন বান্দার প্রতি দৃষ্টি দেন, তখন বান্দার চাওয়া-পাওয়া পূরণ করা তাঁর জন্য আবশ্যক হয়ে যায়। (ইবনু খুযায়মাহ, কিতাবুত তাওহীদ ২/৯০৫)। এছাড়াও সহীহ হাদীস সমূহে এই কালেমার আরোও অনেক ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। (আহমাদ হা/২৩৫৬৮; ত্বাবারানী, দোআ হা/৩৩৭; সহীহা হা/১১৪ তিরমিযী হা/৩৫৩৪; সহীহ তারগীব হা/; সনদ হাসান)
◾যেসব আমল সম্পাদনকালে আকাশের দরজাগুলো খোলা হয়:
_______________________________________
(১) যোহরের পূর্বে চার রাক‘আত সুন্নাত সালাত আদায় করা: পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সালাতের পূর্বে ও পরে ১০/১২ রাক‘আত সুন্নাত সালাত আদায় করা অত্যন্ত ফযীলতপূর্ণ। তন্মধ্যে যোহরের ফরয সালাতের পূর্বের চার রাক‘আত এমন অন্যতম, যা আদায়ের প্রাক্কালে আকাশের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়। (তিরমিযী হা/৪৭৮; তাবারানী, আল-মু‘জামুল আওসাত হা/৪৪১২।
(২). এক ফরয সালাত শেষে অপর সালাতের জন্য অপেক্ষা করা: এক ফরয সালাত আদায়ের পর অপর ফরয সালাতের জন্য অপেক্ষায় থাকলে আল্লাহ ঐ বান্দাদেরকে নিয়ে ফেরেশতাদের সামনে গর্ব করেন এবং তাদের জন্য আসমানের বিশেষ একটি দরজা খুলে দেন। (ইবনু মাজাহ হা/৮০১; আল-মু‘জামুল কাবীর হা/১৪৫২৩; মুসলিম হা/২৫১; তিরমিযী হা/৫১)
(৩). আল্লাহর কিতাব পঠন-পাঠনের মজলিসে: কোন বান্দা যদি তার রবের সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তাঁর কিতাব পঠন-পাঠনে সময় অতিক্রান্ত করে এবং তাঁর গৃহে সমবেত হয়ে দ্বীন শিক্ষা ও প্রশিক্ষণে রত থাকে, তাহলে ফেরেশতারা আকাশের দরজা খুলে যমীনে অবতরণ করে ঐ বান্দাদেরকে ঘিরে রাখেন এবং আকাশের উন্মোচিত দরজা দিয়ে তাদের উপর রহমত ও প্রশান্তি বর্ষিত হতে থাকে। (মুসলিম হা/২৬৯৯; আবু দাঊদ হা/১৪৫৫; বুখারী হা/৫০১৮)
(৪). প্রতিশোধ বর্জন করে সহনশীল হওয়া: যারা প্রতিশোধ না নিয়ে ধৈর্য ধারণ করতে পারে, তারা সফলকাম। তাদের জন্য আকাশের দরজা খুলে দেওয়া হয় এবং আকাশ থেকে ফেরেশতা নাযিল হয়ে তাদের পক্ষে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।(আবু দাঊদ হা/৪৮৯৬; শু‘আবুল ঈমান হা/৬২৪২; সহীহাহ হা/২৩৭৬। মুসনাদে আহমাদ হা/৯৬২২; মিশকাত হা/৫১০২; সহীহাহ হা/২২৩১।মুসনাদে আহমাদ হা/১৭৪৮৮; সহীহাহ হা/৯৮১)
(৬). যিকিরের মজলিস অংশগ্রহণ করা: যখন কোন বৈঠকে আল্লাহর যিকির করা হয়, তখন আকাশের দরজা খুলে দেওয়া হয়। আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে নিযুক্ত একদল ফেরেশতা আছেন, যারা যিকিরের মজলিস অনুসন্ধান কারার জন্য সর্বদা যমীনে পরিভ্রমণ করে বেড়ান। আর যখন কোন মজলিস খুঁজে পান, তখন আকাশ-যমীন পরিব্যাপ্ত হয়ে সেই মজলিসকে ঘিরে রাখেন। (বুখারী হা/৬৪০৮ ও ৪২০৫।)
(৭). রোগীকে দেখতে যাওয়া: নবী করীম (ﷺ) রোগীর সেবা এবং অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার ব্যাপারে তাঁর উম্মতকে অনুপ্রাণিত করেছেন। তিনি বলেন, عُودُوا الْمَرِيْضَ، وَاتَّبِعُوا الْجَنَازَةَ تُذَكِّرُكُمُ الْآخِرَةَ، ‘তোমরা রোগীর সেবা কর এবং জানাযার সালাতে অংশগ্রহণ কর, যা তোমাদেরকে আখিরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দিবে।’ (মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হা/১০৮৪১) রাসূল (ﷺ) বলেন, কোন মুসলিম ব্যক্তি সকাল বেলা কোন রোগীকে দেখতে গেলে সত্তর হাযার ফেরেশতা তার সাথে রওনা দেয়। প্রত্যেক ফেরেশতাই সন্ধ্যা পর্যন্ত তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে। আর তার জন্য জান্নাতে একটি বাগান তৈরী করা হয়। আর সে যদি সন্ধ্যা বেলা কোন রোগীকে দেখতে বের হয়, তাহলে সত্তর হাযার ফেরেশতা তার সাথে রওনা দেয়। প্রত্যেক ফেরেশতাই সকাল পর্যন্ত তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে এবং তার জন্য জান্নাতে একটি বাগান বরাদ্দ করে রাখা হয়।’ (মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হা/১০৮৪১ আরো দেখুন আহমাদ হা/২২১৪৬; সহীহাহ হা/৩৩৮৪)
.
পরিশেষে, আকাশের দরজা একটি গায়েবী বিষয়। মুমিন বান্দারা চর্ম চোখে তা দেখতে না পেলেও তার প্রতি নিশ্চিত বিশ্বাস করেন। সেই দরজাসমূহ খুলে দেওয়ার সময়গুলো মুমিনের হৃদয়ে প্রেরণা যোগায়। কারণ এই মুহূর্তগুলোতে আল্লাহ বান্দার প্রার্থনা শ্রবণ করেন, তার দোআ কবুল করেন এবং তার আমলের নেকীগুলো সাত আসমানের সীমানা পেরিয়ে আল্লাহর কাছে চলে যায়। তাই মুমিন অলসতা ঝেড়ে ফেলে আল্লাহর ইবাদতে রত হয়। আল্লাহ আমাদের হৃদয়সমূহকে তাক্বওয়া ও ইখলাস দ্বারা পরিপূর্ণ করে দিন। আমীন! সংকলিত। আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী
___________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।