যেসকল আমলের মাধ্যমে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব রাসূল (ﷺ) এর দোআয় শামিল হওয়া যায় আজ আমরা সেগুলো জানার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
ভূমিকা: আসমানের নিচে জমিনের উপরে আগত যত নবী-রাসূল এসেছেন সকল নবী-রাসূলের মাঝে আমাদের রাসূল মুহাম্মাদ (ﷺ) এর মর্যাদা হলো তারাভরা রাতের আকাশে একটি রূপালী চাঁদের মত। তিনি সর্বশেষ ও শ্রেষ্ঠ রাসূল। তিনি পৃথিবীবাসীর জন্য রহমত হিসাবে আবির্ভূত হয়েছিলেন (সূরা আম্বিয়া,২১/১০৭)। তার আগমনে ভুবনে শান্তির নির্মল সমীরণ প্রবাহিত হয়েছিল। তাঁর আনীত দ্বীনের অনুসরণ করে মানুষের নিস্পন্দ হৃদয়ে অপার্থিব জান্নাতি অনুভূতির স্পন্দন জেগে উঠেছিল। তাঁর পরিশীলিত আদর্শের অনুসরণে জাগতিক শান্তি ও পরকালীন মুক্তির ঠিকানা নিশ্চিত করা সম্ভব। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ছিলেন অতুলনীয় ব্যক্তি বৈশিষ্ট্যে মণ্ডিত ও সুশোভিত সর্বকালোপযোগী এক পরিপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। মহান আল্লাহ মুহাম্মাদ (ﷺ) কে এক অতুলনীয় আদর্শবোধ, একাগ্রচিত্ততা এবং চরিত্র সম্পদে ভূষিত করেছিলেন। রাসূল ﷺ এর চরিত্র ও তাঁর আদর্শ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِيْ رَسُوْلِ اللهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ ‘আল্লাহর রাসূলের মধ্যে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ নিহিত আছে’ (সূরা আহযাব ৩৩/২১)তিনি আরো বলেন, وَإِنَّكَ لَعَلَى خُلُقٍ عَظِيمٍ ‘অবশ্যই তুমি মহত্তম চরিত্রে অধিষ্ঠিত’ (সূরা কলম ৬৮/৪) ক্বিয়ামতের কঠিন দিনে একমাত্র তিনিই বিচার কাজ শুরু করার জন্য এবং আমাদের জন্য শাফা‘আত করবেন। তাঁর সুপারিশেই আমরা পেতে পারি জান্নাতী সওগাত। কিন্তু যদি এক জীবনে এই মহান রাসূলের দোআ লাভ করা যায়, তাহলে এর চেয়ে বড় সৌভাগ্যের বিষয় কী কল্পনা করা যায়? তিনি আমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থণা করেছেন, রহমত নাযিলের দোআ করেছেন বিষয়গুলো ভাবতেই হৃদয় জুড়ে প্রশান্তি অনুভূত হয়। চলুন কিভাবে রাসূল (ﷺ) এর দুআয় যুক্ত হতে পারবো আজ আমরা তেমনি কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
রাসূল (ﷺ) এর দোআ লাভের উপায়: ইবরাহীম (আঃ) যেমন তার পরবর্তী বংশধরদের জন্য, মক্কা নগরীর জন্য বিভিন্ন দোআ করেছেন এবং সেই দোআর মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্ম যুগ-যুগান্তরে উপকৃত হয়েছে এবং আজও হচ্ছে, ঠিক তেমনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও তাঁর উম্মতের জন্য বিভিন্ন দো‘আ করেছেন। পৃথিবীর ধ্বংসের পূর্ব পর্যন্ত কোন মুমিন বান্দা সেই আমলগুলো সম্পাদনের মাধ্যমে তাঁর দো‘আয় নিজেকে শামিল করতে পারে। নিমেণ রাসূল (ﷺ) এর দোআ লাভের কতিপয় উপায় বা আমল বিবৃত হল:
(১) তাওহীদী বিশ্বাসকে সঠিক ও স্বচ্ছ রাখা: যারা শিরক থেকে মুক্ত হয়ে সঠিক তাওহীদী বিশ্বাস রেখে মারা যাবে, তাদের জন্য রাসূলুল্লাহ (ﷺ) জান্নাত লাভের দোআ করেছেন। রাসূল (ﷺ) কে আল্লাহ পাঁচ বিষয় প্রদান করেছেন। তার মধ্যে পঞ্চম টি হল দুআ। রাসূল (ﷺ) বলেন, আমি আমার রবের নিকট পঞ্চম বিষয়টি চেয়েছি। আমি তাঁর নিকটে দাবী করে বলেছি, ‘(হে আল্লাহ!) আমার উম্মতের কোন বান্দা আল্লাহর একত্বে বিশ্বাসী হয়ে মারা গেলে, তুমি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাও।’ অতঃপর তিনি আমাকে এই দাবী পূরণের নিশ্চয়তা প্রদান করছেন।’ (ইবনু হিব্বান হা/৬৩৯৯; সহীহ মাওয়ারিদুয যাম’আন হা/১৭৮১, সনদ সহীহ লিগায়রিহী)
(২) আসরের সালাতের পূর্বে চার রাক‘আত নফল ছালাত আদায় করা: রাসূল (ﷺ) এর দোআ লাভের অন্যতম একটি উপায় হলো আসরের ফরয সালাতের পূর্বে চার রাকআত নফল সালাত আদায় করা। ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, رَحِمَ اللهُ امْرَأً صَلَّى قَبْلَ الْعَصْرِ أَرْبَعًا، ‘আল্লাহ সেই ব্যক্তির উপর রহমত বর্ষণ করেন, যে আসরের সালাতের পূর্বে চার রাকআত (নফল) সালাত আদায় করে।’ (আবু দাউদ হা/১২৭১; তিরমিযী হা/৪৩০; আহমাদ হা/৫৯৮০; সহীহুত তারগীব হা/৫৮৮, সনদ হাসান)। রাসূল (ﷺ) দুই সালামে তথা দুই দুই রাকআত করে এই সালাত আদায় করতেন। (তিরমিযী হা/৪২৯; সহীহুত তারগীব হা/৫৮৮; মিশকাত হা/১১৭১, সনদ হাসান)। তবে আসরের পূর্বের এই চার রাকআত সালাত সুন্নাতে রাত্বেবা নয়; রবং এই চার রাকআত সালাত আদায় করা মুস্তাহাব, যা নিয়মিত সম্পাদন করা জরূরী নয়। যেমন মাগরিবের আযান ও ইক্বামতের মাঝখানে দুই রাকআত সালাত আদায় করা মুস্তাহাব। (ইবনু বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ দারব ১০/২৮১; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ৬/১২৩।
(৩) জামাআতের প্রথম বা দ্বিতীয় কাতারে সালাত আদায় করা: যারা জামাআতে প্রথম বা দ্বিতীয় কাতারে সালাত আদায় করে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। ইরবায ইবনে সারিয়া (রাঃ) বলেন, كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَسْتَغْفِرُ لِلصَّفِّ الْمُقَدَّمِ ثَلَاثًا، وَلِلثَّانِي مَرَّةً، ‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ) প্রথম কাতারের মুসল্লীদের জন্য তিনবার এবং দ্বিতীয় কাতারের মুসল্লীদের জন্য একবার ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।(ইবনু মাজাহ হা/৯৯৬; সহীহুত তারগীব হা/৪৯০, সনদ সহীহ) নাসাঈর বর্ণনায় রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাদের জন্য রহমতের দোআ করেছেন।(নাসাঈ হা/৮১৭; আহমাদ হা/ ১৭১৯৭; সনদ সহীহ)। ফলে ফেরেশতারাও তাদের জন্য দোআ করেন এবং আল্লাহ তাদের প্রতি রহমত বর্ষণ করেন। (আহমাদ হা/২২২৬৩; সহীহুত তারগীব হা/৪৯১, সনদ হাসান)
(৪) আযান দেওয়া ও সালাতের ইমামতি করা: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইমামদের জন্য হেদায়াতের দোআ করেছেন এবং মুওয়াযযিনদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন,الْإِمَامُ ضَامِنٌ وَالْمُؤَذِّنُ مُؤْتَمَنٌ، اللَّهُمَّ أَرْشِدِ الْأَئِمَّةَ وَاغْفِرْ لِلْمُؤَذِّنِينَ! ‘ইমাম হচ্ছে যামিন্দার এবং মুওয়াযযিন আমানতদার। হে আল্লাহ! তুমি ইমামদেরকে সৎ পথে পরিচালিত কর এবং মুয়াজ্জিনদেরকে ক্ষমা কর। (আবু দাঊদ হা/৫১৭; তিরমিযী হা/২০৭; মিশকাত হা/৬৬৩, সনদ সহীহ)। অপর বর্ণনায় রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইমাম ও মুওয়াযযিনদের জন্য তিনবার দোআ করে বলেছেন, اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِلْمُؤَذِّنِينَ وَسَدِّدِ الْأَئِمَّةَ! ‘হে আল্লাহ! মুয়াজ্জিনদেরকে ক্ষমা কর এবং ইমামদেরকে সঠিক পথে অবিচল রাখ।'(ইবনু খুযায়মাহ হা/১৫৩১; সহীহুত তারগীব হা/২৩৭, সনদ সহীহ)
(৫) হজ্জ সম্পাদনের পর মাথা মুন্ডন করা অথবা চুল ছেটে ফেলা: রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর দোআয় নিজেকে শামিল করার আরেকটি উপায় হলো হজ্জ সম্পাদনের পর মাথা মুন্ডন করা অথবা চুল ছেটে ফেলা। কেননা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাদের জন্য রহমতের প্রার্থনা করেছেন।(দেখুন সহীন বুখারী হা/১৭২৭; মুসলিম হা/২৬৪৮; মিশকাত হা/৩১৭)
(৬) রাসূল (ﷺ) এর শাফাআত আবশ্যককারী ইবাদত সম্পাদন করা: ক্বিয়ামতের ময়দানে রাসূল (ﷺ) এর শাফাআত প্রত্যেক উম্মতের জন্য জরূরী। নিঃসন্দেহে আখেরাতের জীবনে রাসূল (ﷺ)-এর শাফাআত বান্দার জন্য সবচেয়ে বড় পাওয়া। কেননা মহান আল্লাহ রাসূল (ﷺ) এর শাফাআত অব্যশই কবুল করবেন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, প্রত্যেক নবীর জন্য এক বিশেষ দোআ করার অনুমতি প্রদান করা হয়েছে, যা অবশ্যই কবুল হবে। সকল নবী তাদের দোআ করে ফেলেছেন এবং তা কবুলও করা হয়েছে। কিন্তু আমি আমার এই দোআটি ক্বিয়ামত দিবসে আমার উম্মতের জন্য শাফাআত করতে মুলতবি রেখেছি। (বুখারী হা/৬৩০৪; মুসলিম হা/৩৩৯; মিশকাত হা/২২২৩)। যারা পার্থিব জীবনে শিরক বর্জন করে নির্ভেজাল তাওহীদে বিশ্বাসী হবে এবং বিদআতকে বর্জন করে রাসূল (ﷺ) এর পদাঙ্ক অনুসরণ করবে, তারাই শাফাআত লাভের সৌভাগ্য অর্জন করবে। আর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর শাফাআত লাভের অন্যতম একটি উপায় হলো আযানের পর তাঁর প্রতি দরূদ পেশ করা এবং আযানের দোআ পাঠের মাধ্যমে তাঁর ওসীলা কামনা করা। (আরো দেখুন সহীহ মুসলিম হা/৩৮৪; আবু দাউদ হা/৫২৩; তিরমিযী হা/৩৬১৪; নাসাঈ হা/৬৭৮; মিশকাত হা/৬৫৭ বুখারী হা/৬১৪; আবু দাঊদ হা/৫২৯; তিরমিযী হা/২১১; নাসাঈ হা/৬৮১; মিশকাত হা/৬৫৯)
(৭) তাহাজ্জুদের ব্যাপারে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সহযোগিতা: কোন দম্পতি যদি তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করে এবং পরস্পরকে সেই ইবাদতে উৎসাহিত করে, তাহলে সেই স্বামী-স্ত্রী রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর রহমতের দোআ লাভের সৌভাগ্য অর্জন করতে পারে। আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, আল্লাহ সেই ব্যক্তির উপর রহম করেন, যে রাত জেগে সালাত আদায় করে; অতঃপর সে তার স্ত্রীকে ঘুম হতে জাগ্রত করে। আর যদি সে ঘুম হতে উঠতে না চায়, তাহলে সে তার মুখে পানি ছিটিয়ে দেয় (নিদ্রাভঙ্গের জন্য)। আর আল্লাহ সেই মহিলার উপরেও রহম করেন, যে রাতে উঠে সালাত আদায় করে এবং নিজের স্বামীকে জাগ্রত করে। যদি সে ঘুম হতে উঠতে অস্বীকার করে, তখন সে তার মুখে পানি ছিটিয়ে দেয়।’ (আবু দাঊদ হা/১৩০৮; ইবনু মাজাহ হা/১৩৩৬; নাসাঈ হা/১৬১০; মিশকাত হা/ ১২৩০, আবু দাঊদ হা/১৩০৯; ইবনু মাজাহ হা/১৩৩৫, সনদ সহীহ)
(৮) শারীরিক ও আভ্যন্তরীণভাবে পবিত্র থাকা: পবিত্রতা দুই ধরনের। একটি হল শারীরিকভাবে পবিত্রতা, যা ওযু, গোসল, তায়াম্মুম প্রভৃতির মাধ্যমে অর্জিত হয়। আরেকটি হলো অন্তরের পবিত্রতা, যা তওবা, ইস্তিগফার প্রভৃতির মাধ্যমে অর্জিত হয়। (মানাভী, ফায়যুল ক্বাদীর শারহে জামে‘উছ ছাগীর ৪/২৭১)। আর যারা এই দুই পবিত্রতা অর্জন করে রাতের বেলা ঘুমিয়ে পড়ে, তারা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর দোআ অর্জনের পাশাপাশি ফেরেশতাদেরও দোআ লাভ করে।(তাবারানী, মু‘জামুল কাবীর হা/১৩৬২০; সহীহুত তারগীব হা/৫৯৯; সহীহুল জামে’ হা/৩৯৩৬, সনদ হাসান)
(৯) ঋণের পাওনা আদায়ে ও ক্রয়-বিক্রয়ে সহনশীল হওয়া: সহনশীলতা মানব চরিত্রের একটি মহান গুণ। জীবনের পথ চলায় লেনদেন, ক্রয়-বিক্রয়, দেনা-পাওনা আদায়ে যারা সহনশীলতা ও কোমলতা প্রদর্শন করে, রাসূল (ﷺ) তাদের জন্য রহমত ও জান্নাত লাভের দোআ করেছেন। জাবের (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ করেছেন,رَحِمَ اللهُ عَبْدًا سَمْحًا إِذَا بَاعَ، سَمْحًا إِذَا اشْتَرَى، سَمْحًا إِذَا اقْتَضَى، ‘আল্লাহ সেই বান্দার প্রতি রহমত বর্ষণ করেন, যে বান্দা ক্রয়-বিক্রয়ের সময় উদারচিত্ত হয় এবং (ঋণের) পাওনা আদায়ের ক্ষেত্রে সহনশীল হয়।’ (ইবনু মাজাহ হা/২২০৩, সনদ সহীহ তিরমিযী হা/১৩২০; বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান হা/৭৭৫৮, সনদ সহীহ।)
(১০) জিহ্বার হেফাযত করা: জিহ্বার অন্যতম ইবাদত হল জিহ্বার মাধ্যমে হক্ব ও কল্যাণকর কথা বলা এবং অশ্লীলতা, গীবত-তোহমত ও বাজে কথা থেকে জিহ্বাকে হেফযত করা। যারা এই কাজটি করতে পারে, তারা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর দোআ লাভ করবে। কেননা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) জিহবার হেফাযতকারী বান্দাদের জন্য দোআ করে বলেন,رَحِمَ اللهُ عَبْدًا قَالَ خَيْرًا فَغَنِمَ، أَوْ سَكَتْ عَنْ سُوءٍ فَسَلِمَ، ‘আল্লাহ সেই বান্দার প্রতি রহমত বর্ষণ করেন, যে ভাল কথা বলে। ফলে সে (এই কথার মাধ্যমে) বিনা কষ্টে সাফল্য লাভ করে অথবা সে খারাপ কথা বলা থেকে চুপ থাকে, ফলে সে নিরাপত্তা লাভ করে।’ (ইবনুল মুবারক, আয-যুহদ হা/৩৮০; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৪৯৬; সহীহাহ হা/ ৮৫৫; সনদ হাসান। সিলসিলা সহীহাহ হা/৫৩৪; সহীহুল জামে’ হা/১২০১; সনদ সহীহ)
(১১) অধীনস্থ লোকের উপর কোমল হওয়া: অধীনস্থ যে কোন ব্যক্তির উপর কোমলতা ও নম্রতা প্রদর্শনের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর দোআ লাভ করা যায়। নবী কারীম (ﷺ) তাঁর উম্মতের কোমলতা প্রদর্শনকারী ব্যক্তিদের জন্য দোআ করে বলেন,اللهُمَّ مَنْ وَلِيَ مِنْ أَمْرِ أُمَّتِي شَيْئًا فَشَقَّ عَلَيْهِمْ، فَاشْقُقْ عَلَيْهِ، وَمَنْ وَلِيَ مِنْ أَمْرِ أُمَّتِي شَيْئًا فَرَفَقَ بِهِمْ، فَارْفُقْ بِهِ، ‘হে আল্লাহ! যে ব্যক্তি আমার উম্মতের কোনরূপ কর্তৃত্ব লাভ করে এবং তাদের প্রতি কঠোরতা আরোপ করে, তুমি তার প্রতি কঠোর হও। আর যে আমার উম্মতের উপর কোনরূপ কর্তৃত্ব লাভ করে তাদের প্রতি কোমল আচরণ করে, তুমিও তার প্রতি কোমল ও সদয় হও।’ (সহীহ মুসলিম হা/১৮২৮; মিশকাত হা/৩৬৮৯)। সুতরাং আল্লাহর রাসূলের দোআ পেতে হলে অধীনস্থ ব্যক্তিবর্গের প্রতি নম্র ব্যবহার করা জরূরী।
(১২) সকালের সময়কে কাজে লাগানো: সকাল বেলায় সম্পাদিত যাবতীয় কাজে বরকত নাযিল হয়। রাসূল (ﷺ) প্রভাতকালে বরকত নাযিলের জন্য আল্লাহর কাছে দো‘আ করেছেন। ছাখ্র আল-গামেদী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, اللَّهُمَّ بَارِكْ لِأُمَّتِي فِيْ بُكُوْرِهَا، ‘হে আল্লাহ! আমার উম্মতের ভোর বেলার মধ্যে তাদেরকে বরকত দান করুন। যখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কোথাও কোন ক্ষুদ্র বা বিশাল বাহিনী প্রেরণের সিদ্ধান্ত নিতেন, তখন সকাল বেলায়ই পাঠাতেন। বর্ণনাকারী সাহাবী ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। তিনিও তার পণ্যসামগ্রী কোথাও পাঠালে দিনের প্রথম অংশ বা সকালে পাঠাতেন। ফলে তিনি সম্পদশালী হয়েছিলেন এবং তার সম্পদ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছিল।’ (আবু দাঊদ হা/২৬০৬; তিরমিযী হা/১২১২; ইবনু মাজাহ হা/২২৩৬; মিশকাত হা/৩৯০৮, সনদ সহীহ)
(১৩) হাদীছ মুখস্থ করা ও প্রচার করা: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) দোআ লাভের সৌভাগ্য হাছিলের উল্লেখযোগ্য উপায় হলো তাঁর হাদীস মু-খস্থ করা এবং তা মানুষের মাঝে প্রচার করা। নবী করীম (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহ সেই ব্যক্তিকে মর্যাদামন্ডিত করেন, যে আমার কথা শুনেছে, তা মুখস্থ করেছে, সংরক্ষণ করেছে এবং অন্যের নিকটে তা পৌঁছে দিয়েছে। অনেক জ্ঞানের বাহক যার নিকট জ্ঞান বহন করে নিয়ে যান তিনি তার (বাহকের) চাইতে বেশী বুদ্ধিমান হতে পারেন।’ (তিরমিযী হা/২৬৫৮; আবূদাঊদ হা/৩৬৬০; ইবনু মাজাহ হা/২৩৬; মিশকাত হা/২৩০, সনদ সহীহ)। ইমাম ইবনু আব্দিল বার্র (রহঃ) তার বিখ্যাত ‘জামি‘উ বায়ানিল ইলমি ওয়া ফাযলিহী’ নামক গ্রন্থে একটি অধ্যায়ের শিরোনাম লিখেছেন এভাবে- دعاء رسول الله صلى الله عليه وسلم لمستمع العلم وحافظه ومبلغه، (মনোযোগ দিয়ে ইলম শ্রবণকারী, মুখস্থকারী এবং প্রচারকারীর জন্য রাসূল (ﷺ) এর দো‘আ)। (জামি‘উ বায়ানিল ইলমি ওয়া ফাযলিহী ১/১৭৫)
পরিশেষে বলা যায়, রাসূল (ﷺ) এর দোআ আমাদের জীবনে এক পশলা বৃষ্টির মত, এই দোআর বৃষ্টি যার জীবনজুড়ে যত বেশী বর্ষিত হয়, তার হৃদয় যমীন আখেরাতের ফসল ফলাতে তত বেশী উপযোগী হয়ে ওঠে। ফলে প্রশান্তি অনুভূত হয় তার হৃদয়ে, জীবন তরী পৌঁছে যায় সফলতার বন্দরে। তাই আসুন! আল্লাহর একনিষ্ঠ ইবাদতের মাধ্যমে রাসূল (ﷺ) এর দোআ নিজেকে শামিল করে নেই। যেন দুনিয়াতে তাঁর দোআ এবং আখিরাতে তাঁর শাফাআত লাভে ধন্য হতে পারি। মহান আল্লাহ আমাদেরকে সেই তাওফীক্ব দান করুন। আমীন! সংকলিত। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
________________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।