প্রশ্ন: যানবাহন যেমন রেলগাড়ি, বাস, ট্রেন, বিমান, নৌকা, লঞ্চ ইত্যাদিতে ফরজ সালাত আদায়ের বিধান কী?
▬▬▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: যানবাহনের উপরে সালাত আদায় করা জায়েজ কিনা এই মাসালাটি সহজে বুঝার জন্য আমরা সালাতকে মৌলিক ভাবে দুটি ভাগে বিভক্ত করতে পারি আর তা হচ্ছে (ক). ফরজ বা ওয়াজিব সালাত (খ). সুন্নত বা নফল সালাত।।
.
প্রথমত সুন্নত বা নফল সালাত: পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ সালাতের বাহিরে দৈনিক ১২ কিংবা ১০ রাকাআত সুন্নত সালাত, বিতির সালাত, তারাবিহ-তাহাজ্জুদ ইত্যাদি সালাতসমুহ যানবাহন তথা: রেলগাড়ি, বাস, ট্রেন, বিমান, নৌকা, লঞ্চ ইত্যাদি বাহনসমুহে আদায় করা জায়েজ এ বিষয়ে মুসলিম উম্মার কারো মধ্যে কোন মতভেদ নেই বরং সবাই একমত। আর এ ক্ষেত্রে মতভেদ না থাকার কারন হচ্ছে রাসূল (ﷺ) নিজে বাহনের উপর নফল সালাত আদায় করেছেন। যেমন সালিম (রহ.) হতে বর্ণিত, ‘আবদুল্লাহ্ (রাযি.) সফরকালে রাতের বেলায় সওয়ারীর উপর থাকা অবস্থায় সালাত আদায় করতেন, কোন্ দিকে তাঁর মুখ রয়েছে সে দিকে লক্ষ্য করতেন না এবং ইবনু ‘উমার (রাযি.) বলেন,يُسَبِّحُ عَلَى الرَّاحِلَةِ قِبَلَ أَىِّ وَجْهٍ تَوَجَّهَ، وَيُوتِرُ عَلَيْهَا، غَيْرَ أَنَّهُ لاَ يُصَلِّي عَلَيْهَا الْمَكْتُوبَةَ. “আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সওয়ারীর উপর নফল সালাত আদায় করেছেন, সওয়ারী যে দিকে মুখ ফিরিয়েছে সে দিকেই এবং তার উপর বিতরও আদায় করেছেন। কিন্তু সওয়ারীর উপর ফরজ সালাত আদায় করতেন না।(সহীহ বুখারী হা/১০৯৯) অপর বর্ননায় আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত-كان إذا أراد أن يتطوع في السفر استقبل بناقته القبلة، ثم صلى حيث وجهت ركابه “অর্থাৎ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সফর অবস্থায় নফল সালাত আদায়ের ইচ্ছা করতেন তখন উটনীকে ক্বিবলামুখী করতেন, অতঃপর তিনি সালাত আদায় করতেন, এরপর সওয়ারী যেদিকেই ফিরুক না কেন।(আবূ দাঊদ ১২২৫, দারাকুত্বনী ১৪৭৮) উপরোক্ত হাদীসের আলোকে নফল সালাত যেকোন বাহনের উপর আদায় করা জায়েজ ইজমা (ঐকমত্য) নকল করেছেন ইমাম তিরমিজি, ইবনে আব্দুল বার, ইবনে কুদামাহ, ইমাম নববী, শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া, এবং ইমাম শাওকানী প্রমুখ।(দেখুন ইবনু আব্দিল বার, আত-তামহীদ; খন্ড:১৭; পৃষ্ঠা: ৭২)
.
দ্বিতীয়ত ফরজ বা ওয়াজিব সালাত: যাবতীয় যানবাহন (রেলগাড়ি, বাস, ট্রেন, বিমান, নৌকা, লঞ্চ…) ইত্যাদির উপর ফরজ সালাত আদায় করা যাবে কিনা এটি একটি মতভেদ পূর্ণ বিষয়। আর এই মতানৈক্যের কারন হচ্ছে মহানবী (ﷺ) সওয়ারীর উপর ফরজ সালাত পড়েছেন বলে বিশুদ্ধ সূত্রে জানা যায়না। তাছাড়া ইবনু ‘উমার (রাযি.) থেকে বর্নিত বুখারীর হাদিসের শেষে রয়েছে,غَيْرَ أَنَّهُ لاَ يُصَلِّي عَلَيْهَا الْمَكْتُوبَةَ. কিন্তু (রাসূল (ﷺ) সওয়ারীর উপর ফরজ সালাত আদায় করতেন না।(সহীহুল বুখারী হা/১০৯৯) সহীহ বুখারীতে আমির ইবনু রাবী‘আহ (রাযি.) হতে অপর এক বর্ননা রয়েছে,وَلَمْ يَكُنْ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَصْنَعُ ذَلِكَ فِي الصَّلاَةِ الْمَكْتُوبَةِ “আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরজ সালাতে এমন করতেন না।(সহীহুল বুখারী: ১০৯৭)
.
উক্ত হাদীস গুলোর আলোকে উলামাদের একটি অংশ ফরজ সালাত যানবাহনের উপর আদায় হবেনা মর্মে ইজমা নকল করেছেন।যেমন ইমাম ইবনু বাত্বাল, কাযী ঈয়ায, নববী ও ইবনু মুলাককীন রহ: প্রমুখ।(দেখুন: মুহাম্মাদ ইবনু হিযাম ফাতহুল আল্লাম; খন্ড: ২; পৃষ্ঠা:১৮৫) বিগত শতাব্দীর অন্যতম আলেম ইমাম আলবানী রহ বলেছেন,صلاة الفريضة على الراحلة لم يكن ﷺ يفعله রাসূল (ﷺ) যানবাহনে ফরয সালাত আদায় করেননি।(জামিউত তুরাছ; খন্ড:৩; পৃষ্ঠা: ৩৩) ইমাম ইবনে বাত্তাল (রাহিমাহুল্লাহ) বলেনঃأجمع العلماء على أنه لا يجوز لأحد أن يصلي الفريضة على الدابة من غير عذر. ولأن أداء الفرائض على الدابة مع القدرة على النزول لا يجوز. ولأن شرط الفريضة المكتوبة أن يكون المصلي مستقبل القبلة مستقراً في جميعها, فلا تصح من الراكب المخل بقيام أو استقبال “আলেমগণের এই বিষয়ে ইজমা রয়েছে যে, কারো জন্য বিনা ওজরে পশুর উপর ফরজ সালাত আদায় করা জায়েয নয়। আর এর কারণ হলো পশুর উপর থেকে নেমে সালাত আদায়ের সাধ্য থাকা সত্ত্বেও তার উপর ফরজ সালাত আদায় বৈধ না। কারণ ফরজ সালাতের ক্ষেত্রে শর্ত হলো যে, সালাত আদায়কারী ব্যক্তির জন্য ক্বিবলাকে সামনে করা ও তার ভিতরের যাবতীয় কার্যাবলী সম্পাদনের ক্ষেত্রে স্থির থাকা। সুতরাং ক্বিয়াম/দাঁড়ানো অথবা ক্বিবলাকে সামনে করার পরিপন্থী আরোহী ব্যক্তির পক্ষ থেকে সালাত আদায় করা শুদ্ধ হবে না।(আল-মাওসুআতুল ফিক্বহিয়্যাহ: খন্ড: ২৭, পৃষ্ঠা: ২৩১)।
.
তাছাড়া স্বাভাবিক ভাবে যানবাহনে ফরজ সালাত আদায় শরীয়ত সম্মত না হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে, যানবাহনে ফরজ সালাত আদায় করতে চাইলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সালাতের আবশ্যকীয় কিছু রুকন পূরন করা সম্ভব হয়না। উসুলুল ফিকহ এর পরিভাষায় শর্ত হলো: “যার শূন্যতা শূন্যতাকে আবশ্যক করে; কিন্তু যার অস্তিত্ব অস্তিত্বকে আবশ্যক করে না।” তাই সালাত শুদ্ধ হওয়ার শর্তগুলো হলো: যেগুলোর ওপর সালাত শুদ্ধ হওয়া নির্ভর করে। অর্থাৎ যদি এই শর্তগুলোর কোন একটি বাদ পড়ে তাহলে সালাত সহিহ নয়। তনুদ্ধে অন্যতম দুটি রুকন হচ্ছে, (১). সালাত কিবলামুখী হওয়া, (২). সালাতে ক্বিয়াম বা দাঁড়ানো।
.
(১). ক্বিবলা অভিমুখী হওয়া। সালাত শুদ্ধ হওয়ার শর্তাবলির মধ্যে রয়েছে কিবলামুখী হওয়া। এটি সালাত শুদ্ধ হওয়ার অন্যতম শর্ত। এ ব্যাপারে আলেমদের মাঝে কোন মতভেদ নেই। কেননা আল্লাহ্ তাআলা কুরআনে সে নির্দেশ দিয়েছেন এবং সে নির্দেশের পুনরাবৃত্তি করেছেন। তাই যে ব্যক্তি সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কোন ফরয সালাত ক্বিবলার দিক ব্যতীত অন্যদিকে ফিরে পড়বে তার সালাত আলেমদের ইজমার ভিত্তিতে বাতিল। যেহেতু আল্লাহ্ তাআলা বলেন: “তুমি যেখান থেকেই বের হও না কেন মসজিদে হারামের দিকে মুখ ফিরাও; আর তোমরাও যেখানেই থাক না কেন এই মসজিদের দিকেই মুখ ফিরাও।”[সূরা বাক্বারা, ২: ১৫০] এবং সালাত অসঠিকভাবে আদায়কারী ব্যক্তিকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “এরপর তুমি কিবলামুখী হবে এবং তাকবীর দিবে।”(সহিহ বুখারী হা/৬৬৬৭)
.
(২). সালাতে ক্বিয়াম বা দাঁড়ানো সালাতের একটি রুকন। শরিয়ত অনুমোদিত ওজর ছাড়া যে ব্যক্তি সালাতের তাকবীরে তাহরীমার শুরু থেকে সালাম ফেরানো পর্যন্ত দাঁড়াবে না তার সালাত বাতিল। আল্লাহ্তাআলা বলেন: “তোমরা আল্লাহ্র জন্য বিনয়াবনত হয়ে দাঁড়াও”[সূরা বাক্বারা; ২:২৩৮] ‘দাঁড়ানোটা’ সলতের রুকন হওয়া ফরয সালাতের জন্য খাস। নফল সালাত দাঁড়ানো ওয়াজিব নয়। বরং বসে সালাত পড়া জায়েয। কেউ যদি বসে সালাত পড়ে তাহলে সে ব্যক্তি অর্ধেক সওয়াব পাবে। দাঁড়ানোটা’ ফরজ সালাতের সাথে খাস হওয়ার দলিল হল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিস: “তুমি দাঁড়িয়ে সালাত পড়”।(সহিহ বুখারী হা/১০৬৬)] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সওয়ারীর ওপর নফল সালাত পড়তেন। যখন ফরজ সালাত পড়তে চাইতেন তখন তিনি সওয়ারী থেকে নেমে যেতেন।[সহিহ বুখারী হা/৯৫৫) ও সহিহ মুসলিম হা/৭০০)] তিনি এটি করতেন দাঁড়ানোর রুকন আদায় করা ও কিবলামুখী হওয়ার জন্য। সুতরাং সফরে (মোটর গাড়ি, গরুর গাড়ি, উট, হাতি, ঘোড়া প্রভৃতি) যানবাহনে সালাতের সময় হলে যানবাহন থামিয়ে সালাত পড়তে হবে। কিন্তু যে যানবাহনে থামার বা নামার সুযোগ নেই, অথচ সেখানে যথানিয়মে পূর্ণরুপে সালাত আদায় সম্ভব সে যানবাহনে যথা সময়ে সালাত পড়তে হবে।
.
▪️তাহলে কখন যানবাহনের উপর ফরজ সালাত আদায় করা জায়েজ?
.
শারঈ দলিলগুলো পর্যালোচনা করে আহালুল আলেমগন বলেছেন যদি কোন ওয়াক্তের ফরজ সালাতের সময় শেষ হওয়ার পূর্বে যানবাহন থেকে নামার সুযোগ পাওয়া যায় তাহলে অবশ্যই বাহন থেকে নেমেই সালাত আদায় করতে হবে। পক্ষান্তরে এর বিপরীত যেমন যানবাহন থেকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সালাত আদায় করার সুযোগ না থাকলে এবং যাত্রী যদি এই আশঙ্কা করে যে তার গন্তব্যস্থলে পৌঁছানোর আগেই সালাতের সময় অতিবাহিত হয়ে যাবে তাহলে তাকে সে যানবাহনের উপরেই যথাসময়ে সালাত পড়ে নিতে হবে। কারন একদিকে তিনি ওজরগস্থ অপরদিকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সালাত আদায় করা ফরজ। যেমন আল্লাহ্ তাআলা বলেন: নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায় করা মুমিনদের উপর ফরজ”।[সূরা নিসা, আয়াত: ১০৩] আর ক্ষেত্রবিশেষে বাহনের উপর সালাত আদায় করা জায়েজ মর্মে হাদীস থেকে একটি দলিল হচ্ছে, প্রখ্যাত সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) [মৃত: ৭৩ হি.] বলেন,নবী (ﷺ) নৌকায় সালাত পড়ার বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হলে তিনি বললেন,صَلّ فيها قائِمًا إلَّا أنْ تَخافَ الغَرَقَ” ডুবে যাওয়ার ভয় না থাকলে তাতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সালাত পড়।” (দারাক্বুত্বনী, খন্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৩৯৫; ইমাম বায়হাকী হা/৫৬৯৮; মুস্তাদরাক হাকেম: হা/১০১৯; আলবানী; সিফাতু স্বালাতিন নাবী (ﷺ) পৃষ্ঠা: ৭৯) হাদীসটি ইমাম হাকেম সহীহ মুসলিমের শর্তে সহীহ বলেছেন, ইমাম যাহাবী একমত পোষণ করেছেন। আলবানী সিফাতু স্বালাতিন নাবী (ﷺ) পৃষ্ঠা: ৭৯ এ সহীহ বলেছেন) উক্ত হাদীসের আলোকে একদল আলেম কিয়াস করে বলেছেন সালাতের আরকান সমূহ ঠিক রেখে কিবলামুখী হয়ে সালাত আদায় করা সম্ভব এমন প্রত্যেক যানবাহনে ফরজ সালাত আদায় করা বৈধ। যেমন উড়ো জাহাজ, ট্রেন, নৌকা, জাহাজ ইত্যাদি। বিস্তারিত জানতে দেখুন; ফাতওয়া মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্,খন্ড: ৫; পৃষ্ঠা:১৯০)
.
▪️যানবাহনে ফরজ সালাত আদায়ের পদ্ধতি কেমন হবে?
.
একান্ত বাধ্যগত অবস্থায় যানবাহনে ফরজ সালাত আদায়ের পদ্ধতি হল উড়ো জাহাজ, ট্রেন, বাস প্রভৃতি যানবাহনের ভিতরে জামাআত সহকারে সালাত সম্ভব হলে জামাআত সহকারেই পড়তে হবে। কিন্তু সেটা সম্ভব না হলে একাকী নিজে কিবলামুখী হয়ে সর্বপ্রথম দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করার চেষ্টা করতে হবে কিন্তু তা সম্ভব না হলে গাড়ির সিটে বসেই কিবলামুখী হয়ে সালাত শুরু করার পর ইশারায় রুকু-সেজদা করতে হবে। রুকুর জন্য মাথাটা সামনের দিকে সামান্য ঝুঁকাতে হবে আর সেজদার জন্য তার চেয়ে একটু বেশি ঝুঁকাতে হবে। এভাবে যথানিয়মে সালাত শেষ করবে।ইবনে কুদামা আল-মাক্বদিসি বলেন:
أجمع أهل العلم على أن من لا يطيق القيام له أن يصلي جالساً .
“আলেমগণ এই মর্মে ইজমা করেছেন যে, যেই ব্যক্তি দাঁড়াতে পারে না সে বসে সালাত পড়বে।”(ইবনে কুদামাহ আল-মুগনী; খন্ড: ১ পৃষ্ঠা: ৪৪৩)
.
এখানে একটি বিষয় জেনে রাখা ভাল আর তা হচ্ছে, সফর অবস্থায় দু ওয়াক্তের সালাত একত্রিত করে পড়া জায়েজ আছে। দূরে সফরকালীন সময় যোহর, আসর, মাগরিব ও ইশার সালাতকে যেমন যথাসময়ে আদায় করা জায়েজ অনুরূপভাবে যোহর ও আসর এবং মাগরিব ও ইশাকে একত্রিত করে অগ্রিম বা পিছিয়ে আদায় করা জায়েজ রয়েছে। অর্থাৎ যোহরের সময় প্রথমে যোহরের দু রাকআত ফরয কসর করা তারপর আসরের দু রাকআত কসর সালাত অগ্রিম পড়া। অথবা যোহরের সময় যোহরের সালাত না পড়ে তা পিছিয়ে আসরের সময় প্রথমে যোহরের দু রাকআত কসর পড়া তারপর আসরের দু রাকআত সালাত কসর পড়া। অনুরূপভাবে মাগরিবের সময় প্রথমে মাগরিবের ৩ রাকআত আদায় করা তারপর ইশার দু রাকআত সালাত অগ্রিম পড়া অথবা মাগরিবকে পিছিয়ে ইশার সময় প্রথমে মাগরিবের ৩ রাকআত আদায় করা অত:পর ইশার দু রাকআত ফরয সালাত কসর পড়া।
.
বসে সালাত আদায়ের পদ্ধতি সম্পর্কে বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায আন-নাজদী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেন:
الواجب على من صلى جالسا على الأرض ، أو على الكرسي ، أن يجعل سجوده أخفض من ركوعه ، والسنة له أن يجعل يديه على ركبتيه في حال الركوع ، أما في حال السجود فالواجب أن يجعلهما على الأرض إن استطاع ، فإن لم يستطع جعلهما على ركبتيه ، لما ثبت عن النبي صلى الله عليه وسلم أنه قال : ( أمرت أن أسجد على سبعة أعظم : الجبهة – وأشار إلى أنفه – واليدين ، والركبتين ، وأطراف القدمين ) .ومن عجز عن ذلك وصلى على الكرسي فلا حرج في ذلك ، لقول الله سبحانه : ( فَاتَّقُوا اللَّهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ ) وقول النبي صلى الله عليه وسلم : ( إِذَا أَمَرْتُكُمْ بِأَمْرٍ فَأْتُوا مِنْهُ مَا اسْتَطَعْتُمْ ) متفق على صحته .
“যে ব্যক্তি ভূমিতে বসে বা চেয়ার বসে সালাত পড়ে তার উপর আবশ্যক হলো: তার সেজদাকে রুকুর চেয়ে নীচু করা। সুন্নাহ হলো: রুকুর সময় সে তার হাতদ্বয় তার হাঁটুর উপর রাখবে। আর সেজদা অবস্থায় ওয়াজিব হলো: সক্ষম হলে হাতদ্বয় ভূমিতে রাখা। আর সক্ষম না হলে হাতদ্বয় হাঁটুর উপর রাখা। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সাব্যস্ত হয়েছে যে, তিনি বলেন: “আমাকে আদেশ দেয়া হয়েছে সাতটি হাড্ডির উপর সেজদা করতে: কপাল, তিনি নাকের দিকে ইশারা করেন, হাতদ্বয়, হাঁটুদ্বয় এবং পায়ের আঙ্গুলের উপর।”যে ব্যক্তি এভাবে করতে অক্ষম তার জন্য চেয়ারে বসে সালাত আদায় করে তাতে কোন আপত্তি নেই। দলিল হলো আল্লাহ্ তাআলার বাণী: “তোমরা আল্লাহকে সাধ্যানুযায়ী ভয় কর”। এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “আমি যখন তোমাদেরকে কোন আদেশ করি তখন তোমরা সাধ্যানুযায়ী সেটি পালন কর।”[সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিম ফাতাওয়া বিন বায;১২/১৪৫, ১৪৬) আল্লাহ আমাদেরকে যথাযথ নিয়মে তার আনুগত্য করা তৌফিক দান করুন। আমীন। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
____________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।