উত্তর: সাধারণভাবে একজন মুসলিমের জন্য প্রয়োজনে ই/হু/দী, খ্রি/স্টা/ন অথবা অন্যান্য অমুসলিমের সঙ্গে লেনদেন বা ক্রয়-বিক্রয় করা এমনকি তাদের সাথে চাকরি করাও জায়েয যদি না কাজটি অমুসলিমদের ব্যক্তিগত চাকর হিসাবে করা হয় এবং কর্মটি হারামের সাথে সম্পৃক্ত না হয় ও ইবাদতে কোন প্রকার বিঘ্ন না ঘটে। কারন মূলনীতি হচ্ছে কোন মুসলমান শ্রমিক অমুসলিম মালিকের অধীনস্ত থেকে সেই কাজই করতে পারবে যে কাজ তার মুসলমান হিসাবে সম্পাদন করা শরী‘আত সম্মত। মুসলিম শ্রমিকদের জন্য প্রয়োজনে অমুসলিম মালিকের কাজ করা জায়েজ। দলিল হচ্ছে: প্রখ্যাত সাহাবী আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন,كُنْتُ أَدْلُو الدَّلْوَ بِتَمْرَةٍ وَأَشْتَرِطُ أَنَّهَا جَلْدَةٌ ‘আমি ই/হু/দী বাগান মালিকের কূপ থেকে এক একটি উত্তম খেজুর প্রদানের শর্তে এক বালতি করে পানি উত্তোলন করেছি”।(ইবনু মাজাহ, হা ২৪৪৭; আত-তা‘লীক্বাতুর রাযীয়্যাহ, ২/৪৪২; সহীহ আত-তারগীব হা/৩২৭১; বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/১১৪৩০ হাদীসটির সনদ হাসান)।
.
মাওযূ‘আতুল ফিক্বহিয়াহ আল-কুয়েতিয়াহ, কুয়েতি ফিক্বহ বিশ্বকোষ গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে:
اتفق الفقهاء على جواز خدمة الكافر للمسلم. واتفقوا كذلك على جواز أن يؤجر المسلم نفسه للكافر في عمل معين في الذمة، كخياطة ثوب وبناء دار، وزراعة أرض وغير ذلك، لأن عليا رضي الله عنه أجر نفسه من يهودي يسقي له كل دلو بتمرة، وأخبر النبي صلى الله عليه وسلم بذلك فلم ينكره. ولأن الأجير في الذمة يمكنه تحصيل العمل بغيره.
كما اتفقوا على أنه لا يجوز للمسلم أن يؤجر نفسه للكافر، لعمل لا يجوز له فعله، كعصر الخمر ورعي الخنازير وما أشبه ذلك”
“ফকিহগণ একমত হয়েছেন যে, মুসলিমের জন্য কাফিরের কাছ থেকে সেবা গ্রহণ করা বৈধ। একইভাবে তারা এই বিষয়েও একমত যে, মুসলিম তার শ্রম বা দক্ষতা ব্যবহার করে নির্দিষ্ট কিছু কাজের ক্ষেত্রে কাফিরের সেবা প্রদান করতে পারে, যেমন কাপড় সেলাই, ঘর নির্মাণ, জমি চাষাবাদ ইত্যাদি। এর প্রমাণ হচ্ছে,আলী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) একবার এক ইহু/দির জন্য পানির কূপ থেকে দড়ি দিয়ে পানি তুলেছিলেন এবং প্রতিটি বালতির বিনিময়ে খেজুর গ্রহণ করেছিলেন। তিনি এ ঘটনা নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে জানালে, তিনি এতে কোনো আপত্তি প্রকাশ করেননি। এছাড়া, এই কাজগুলো এমন ধরনের, যা অন্য কাউকে দিয়ে সম্পন্ন করানোও সম্ভব।
তবে ফকিহগণ এ বিষয়েও একমত হয়েছেন যে, মুসলিমের জন্য কাফি/রের এমন কোনো কাজে নিজেকে নিয়োজিত করা বৈধ নয়, যা ইসলামে নিষিদ্ধ। যেমন মদ তৈরি বা বিক্রি করা, শুকর পালন করা এবং এ ধরনের অন্য কোনো হারাম কাজ”।(আল মাওযূ‘আতুল ফিক্বহিয়াহ আল-কুয়েতিয়াহ, কুয়েতি ফিক্বহ বিশ্বকোষ, ১৯ তম খণ্ড, পৃষ্ঠা: ৪৫)
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.]-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল: “এক ব্যক্তি কাফিরদের সঙ্গে কাজ করে, তাকে আপনি কী পরামর্শ দেবেন?”
তিনি উত্তরে বলেন:
ننصح هذا الأخ الذي يعمل مع الكفار، أن يطلب عملا ليس فيه أحد من أعداء الله ورسوله، ممن يدينون بغير الإسلام، فإذا تيسر فهذا هو الذي ينبغي، وإن لم يتيسر فلا حرج عليه؛ لأنه في عمله، وهم في عملهم. ولكن بشرط أن لا يكون في قلبه مودة لهم ومحبة وموالاة، وأن يلتزم ما جاء به الشرع فيما يتعلق بالسلام عليهم، ورد السلام ونحو هذا، وكذلك أيضا لا يشيع جنائزهم، ولا يحضرها، ولا يشهد أعيادهم، ولا يهنئهم بها ” ان
“আমরা এই ভাইকে পরামর্শ দিবো যে, তিনি এমন কাজ খুঁজে বের করুন যেখানে কাফি/রদের সাথে কোনো সম্পর্ক বা কর্মসম্পর্ক না থাকতে হয়। যদি এমন কোনো উপায় পাওয়া যায় তাহলে সেটি করা উচিত। কিন্তু যদি এটা সম্ভব না হয়, তাহলে এতে (কাফি/রদের কাজ করতে) কোনো সমস্যা নেই, কারণ তিনি তার কাজ করছেন এবং তারা তাদের কাজ করছে। তবে এটি শর্তসাপেক্ষ যে, তিনি কাফে/রদের প্রতি অন্তরে ভালোবাসা পোষণ করবেন না, তাদেরকে ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবেন না এবং ইসলামের নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের সাথে সম্পর্ক রাখবেন। উদাহরণস্বরূপ তিনি তাদেরকে সালাম দেওয়া বা সালামের উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে ইসলামের শিক্ষা মেনে চলবেন, তাদের জানাজায় অংশগ্রহণ করবেন না, তাদের উৎসব বা বিশেষ অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন না এবং তাদের এই উৎসবগুলোতে অভিনন্দন জানাবেন না।”(ইবনু উসাইমীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল, খণ্ড: ৩, পৃষ্ঠা: ৩৯)
.
পরিশেষে উপরোক্ত আলোচনা থেকে একথা পরিস্কার যে, স্বাভাবিক ভাবে অমুসলিমদের কোম্পানিতে মুসলিম শ্রমিকদের কাজ করা অনুচিত হলেও নিষিদ্ধ নয়। কেননা নবী (ﷺ) ও সাহাবীগণ মদীনার ইহুদীদের সঙ্গে আদান-প্রদান ও লেনদেন এবং কাজ কর্ম করেছেন। তবে এক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
________________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।