প্রশ্ন: মানুষ যখন সালাত আদায় করে তখন তার সামনের দিকে আল্লাহ্ থাকেন।”(সহিহ বুখারি হা/৪০৬) এই হাদিসের বিশুদ্ধ ব্যাখ্যা কি? এটি দ্বারা কি আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান প্রমাণিত হয়?
▬▬▬▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তরের সারাংশ: আল্লাহ, তিনি তাঁর আরশের উপর আছেন এবং তিনি যথার্থভাবে কোনো অপব্যাখ্যা ছাড়াই সালাত আদায়কারী ব্যক্তির চেহারার দিকে মুখ করে আছেন। যেভাবে তাঁর মর্যাদা ও পরিপূর্ণতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ সেইভাবে। বিস্তারিত জানতে পুরো আর্টিকেলটি পড়ুন।
.
বিস্তারিত উত্তর: প্রথমত: সমস্ত প্রশংসা বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য। আমাদের নবী মুহাম্মদের প্রতি, তাঁর পরিবার-পরিজন ও সাহাবীগণের প্রতি আল্লাহর রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক। অতঃপর একথা সবার জানা আবশ্যক যে, মহান আল্লাহর আসমা ও সিফাত তথা নাম ও গুণাবলির প্রতি বিশ্বাস পোষণ করা ইমানের একটি অন্যতম মৌলিক বিষয়। ব্যক্তির ‘আক্বীদাহর শুদ্ধাশুদ্ধি নির্ণীত হয় এই মৌলিক বিষয়ের মাধ্যমে। আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের আক্বীদাহ হল, আল্লাহ কুরআন মজীদে নিজেকে যেসমস্ত গুণে গুণাম্বিত করেছেন এবং যেসমস্ত নামে নিজেকে নামকরণ করেছেন তাঁর ওপর ঈমান আনয়ন করা আমাদের ওপর ওয়াজিব। এমনিভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর যে সমস্ত নাম ও গুণাবলী বর্ণনা করেছেন কোনো প্রকার পরিবর্তন, পরিবর্ধন অস্বীকৃতি, পরিচয়ের জন্য ধরণ নির্ধারণ করা বা উপমা পেশ করা ব্যতীত তার উপর ঈমান আনা আবশ্যক। পরিবর্তন সাধারণত হয়ে থাকে আয়াত ও হাদীসসমূহে। আর অস্বীকার হয়ে থাকে আকীদার ভিতরে, পদ্ধতি ও উপমা বর্ণনা করা হয় সিফাত তথা গুণের ভিতরে। সুতরাং উপরোক্ত চারটি দোষ হতে আমাদের ধর্মীয় বিশ্বাস পরিস্কার করতে হবে। আল্লাহর নাম ও গুণাবলীর ক্ষেত্রে কেন, কেমন,কিভাবে? এ ধরণের প্রশ্ন করা যাবে না। এমনিভাবে আল্লাহর গুণাবলীর ব্যাপারে ধরণ বর্ণনার চিন্তা করা থেকে মানুষ সম্পূর্ণ বিরত থাকতে হবে। এ পদ্ধতি অবলম্বন করলে অনেক বিষয় সহজ হয়ে যাবে। এটাই ছিল সালাফে সালেহীনের আদর্শ। ইমাম মালেকের (রাহিমাহুল্লাহ) কাছে এক লোক এসে বলল, হে আবু আবদুর রহমান! আল্লাহ তো ‘আরশের উপরে আছেন, তবে কীভাবে? উত্তরে ইমাম মালেক (রাহিমাহুল্লাহ) বললেন, ‘আরশের উপরে থাকার বিষয়টি জ্ঞাত আছে। কীভাবে আছেন তা আমাদের জানার বাইরে। এ বিষয়ে ঈমান রাখা ওয়াজিব। আর এ বিষয়ে প্রশ্ন করা বিদ‘আত। শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] আল্লাহ্র আসমা ওয়াস সিফাতের ক্ষেত্রে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা’আতের আকীদাহ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন,الْإِيمَانُ بِمَا وَصَفَ بِهِ نَفْسَهُ فِي كِتَابِهِ وَبِمَا وَصَفَهُ بِهِ رَسُولُهُ مُحَمَّدٌ ﷺ مِنْ غَيْرِ تَحْرِيفٍ وَلَا تَعْطِيلٍ، وَمِنْ غَيْرِ: تَكْيِيفٍ وَلَا تَمْثِيلٍ“আল্লাহ্ স্বীয় কিতাবে তাঁর যেসব গুণ ও নামসমূহের দ্বারা নিজেকে গুণান্বিত করেছেন এবং তাঁর রাসূল মুহাম্মাদ (ﷺ) যা দ্বারা তাঁকে গুণান্বিত করেছেন কোন প্রকার তাহরীফ (تَحْرِيْف) তথা বিকৃতি করা, তা‘তীল (تَعْطِيْل) তথা নিষ্ক্রিয় বা নাকচ করা, তাকয়ীফ (تَكْيِيْف) তথা ধরণ নির্ধারণ ও তামসীল (تَمْثِيْل) তথা দৃষ্টান্ত স্থাপন করা ছাড়াই তার প্রতি ঈমান আনয়ন।”(ইবনু তাইমিয়্যাহ, আকীদাতুল ওয়াসিতিয়্যাহ, পৃষ্ঠা: ৫৭)
.
দ্বিতীয়ত: একটি হাদিস দিয়ে জাহমিয়া ফিরকাসহ অন্যান্য বাতিল ফিরকার লোকেরা দাবি করে আল্লাহ তা’আলা যমীনে তার সৃষ্টির সঙ্গে আছেন’ এই মিথ্যা দাবির মাধ্যমে তারা আল্লাহ তা’আলার সর্বোর্ধ্বে থাকা এবং ‘আরশের উপরে থাকাকে নাকচ করে দেন। অথচ কুরআন, সুন্নাহ, যুক্তিবুদ্ধি, স্বচ্ছ মানবপ্রকৃতি ও সালাফদের ইজমার দ্বারা একথা প্রমাণিত যে আল্লাহ তা‘আলা সর্বোচ্চে ও সর্বোর্ধ্বে। তাঁর জ্ঞানে, কুদরতে, শ্রবণে, দর্শনে, নিয়ন্ত্রণে এবং রুবুবিয়াতের অন্যান্য অর্থে সকল মাখলুকের ঊর্ধ্বে আরশের ওপর থাকা সত্ত্বেও সকল সৃষ্টিকে পরিবেষ্টন করে আছেন। জাহামিয়ারা আল্লাহর আরশের উপর থাকাকে অস্বীকার করার ক্ষেত্রে যেসকল দলিলের অপব্যাখ্যা করে তার মধ্যে একটি হচ্ছে, প্রখ্যাত সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) [মৃত: ৭৩ হি.] থেকে বর্ণিত: আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: إِذَا كَانَ أَحَدُكُمْ يُصَلِّي، فَلاَ يَبْصُقْ قِبَلَ وَجْهِهِ، فَإِنَّ اللَّهَ قِبَلَ وَجْهِهِ إِذَا صَلَّى ”. “যখন তোমাদের কেউ সালাত আদায় করে সে যেন তার সামনের দিকে থুথু না ফেলে। কেননা, সে যখন সালাত আদায় করে তখন তার সামনের দিকে আল্লাহ্ তা’আলা থাকেন।”(সহীহ বুখারি: ৪০৬, ৪০৮ ও ৪০৯; সহীহ মুসলিম: ৫৪৭) এই হাদীসটি উল্লেখ করে তারা দাবি করে আল্লাহ আরশের উপর নয়; বরং আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান।(লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ) আসুন হাদীসটির প্রকৃত অর্থ ও ব্যাখ্যা সম্পর্কে বিশিষ্ট ইমামগণ কী বলেছেন তা পর্যালোচনা করি।
.
হাদিসটির বিশুদ্ধ ব্যাখ্যা: মহিমান্বিত, সর্বশক্তিমান আল্লাহ, তিনি তাঁর আরশের উপর আছেন এবং তিনি যথার্থভাবে কোনো অপব্যাখ্যা ছাড়াই সালাত আদায়কারী ব্যক্তির চেহারার দিকে মুখ করে আছেন। যেভাবে তাঁর মর্যাদা ও পরিপূর্ণতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ সেইভাবে তিনি সালাত আদায়কারী ব্যক্তির সামনে আছেন। তবে সেটার ধরন আমাদের জ্ঞানের বাইরে, যেমন তাঁর সত্তা ও গুণাবলিও মানুষের কল্পনার ঊর্ধ্বে। সালাফে সালেহীন বলেন, আল্লাহ তা’আলা কর্তৃক বান্দার ‘সঙ্গে থাকা’র বিষয়টি তার যে প্রকৃত অর্থ সে অর্থেই সত্য। তবে তা এমন ‘সঙ্গে থাকা’ যা আল্লাহর জন্য উপযোগী এবং যা এক মাখলুক কর্তৃক অন্য মাখলুকের সঙ্গে থাকার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ নয়; কেননা আল্লাহ তা’আলা তাঁর নিজ সম্পর্কে বলেছেন: لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ “তাঁর মত কিছুই নেই,তিনি হচ্ছেন সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।”[সূরা শুরা, আয়াত: ১১) সুতরাং উক্ত হাদীস দ্বারা কোন অবস্থাতেই আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান প্রমাণিত হয় না। বরং যারা বিশ্বাস করে আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান’ তাদের আক্বীদা বাতিল। আল্লাহর সত্তা সর্বত্র বিরাজমান নয়। বরং তাঁর ইলম ও কুদরত অর্থাৎ জ্ঞান ও ক্ষমতা সর্বত্র বিরাজমান। তিনি সপ্তম আসমানের উপরে তাঁর আরশের উপর উঠেছেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা তাঁর পরিচয় দিয়ে বলেন,الرَّحْمَنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوَى ‘দয়াময় (আল্লাহ) আরশের উপর উঠেছেন” (সূরা ত্ব-হা:৫)।
..
হাদিসটি সম্পর্কে হিজরী ৮ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ আল-হার্রানী আন-নুমাইরি, (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন:قَوْلُهُ صلى الله عليه وسلم : ( إذَا قَامَ أَحَدُكُمْ إلَى الصَّلَاةِ فَإِنَّ اللَّهَ قِبَلَ وَجْهِهِ فَلا يَبْصُقْ قِبَلَ وَجْهِهِ ) حَقٌّ عَلَى ظَاهِرِهِ ، وَهُوَ سُبْحَانَهُ فَوْقَ الْعَرْشِ وَهُوَ قِبَلَ وَجْهِ الْمُصَلِّي ; بَلْ هَذَا الْوَصْفُ يَثْبُتُ لِلْمَخْلُوقَاتِ . فَإِنَّ الإِنْسَانَ لَوْ أَنَّهُ يُنَاجِي السَّمَاءَ أَوْ يُنَاجِي الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ لَكَانَتْ السَّمَاءُ وَالشَّمْسُ وَالْقَمَرُ فَوْقَهُ وَكَانَتْ أَيْضًا قِبَلَ وَجْهِهِ اهـ “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই বাণী (যখন তোমাদের কেউ সালাতের জন্য দাঁড়ায়, তখন আল্লাহ তার মুখমণ্ডলের সামনে থাকেন, সুতরাং সে যেন তার মুখের দিকে থুতু না ফেলে) এই কথাটি তার বাহ্যিক অর্থে সত্য, আল্লাহ তাঁর আরশের উপরে আছেন এবং তিনি মুসল্লির মুখমণ্ডলের সামনের দিকেও আছেন; বরং এই উভয় বিষয়টি সৃষ্টজীবের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য (একত্র) হতে পারে। যদি কোনো মানুষ আকাশের দিকে অথবা সূর্য ও চাঁদের দিকে কিছু বলার জন্য মুখ তুলে ধরে,তাহলে আকাশ, সূর্য এবং চাঁদ তার ঊর্ধ্বে থাকবে এবং একই সঙ্গে এগুলো তার মুখমণ্ডলের সম্মুখেও থাকবে।”(ইবনু তাইমিয়্যাহ মাজমুউ ফাতাওয়া, খণ্ড: ৫; পৃষ্ঠা: ১০১) শাইখুল ইসলাম আরো বলেছেন:وَمِنْ الْمَعْلُومِ أَنَّ مَنْ تَوَجَّهَ إلَى الْقَمَرِ وَخَاطَبَهُ – إذَا قُدِّرَ أَنْ يُخَاطِبَهُ – لا يَتَوَجَّهُ إلَيْهِ إلا بِوَجْهِهِ مَعَ كَوْنِهِ فَوْقَهُ ، فَهُوَ مُسْتَقْبِلٌ لَهُ بِوَجْهِهِ مَعَ كَوْنِهِ فَوْقَهُ . . . فَكَذَلِكَ الْعَبْدُ إذَا قَامَ إلَى الصَّلاةِ فَإِنَّهُ يَسْتَقْبِلُ رَبَّهُ وَهُوَ فَوْقَهُ ، فَيَدْعُوهُ مِنْ تِلْقَائِهِ لا مِنْ يَمِينِهِ وَلا مِنْ شِمَالِهِ ، وَيَدْعُوهُ مِنْ الْعُلُوِّ لا مِنْ السُّفْلِ “এটি জানা কথা যে, যখন কেউ চাঁদের দিকে মুখ করে কথা বলে, যদি তা সম্ভব হয় তখন সে তার মুখটি চাঁদের দিকে ফিরিয়ে কথা বলে, কারণ চাঁদ তার উপরে থাকে। সুতরাং সে তার মুখ দিয়ে চাঁদের দিকে মুখ করে থাকে। তেমনিভাবে একজন মুসল্লি যখন সালাতে দাঁড়ায় তখন সে তার রবের দিকে মুখ করে থাকে, যিনি তার উপরে রয়েছেন। সে তার রবকে তার সম্মুখ থেকে আহ্বান করে, ডান দিক থেকে নয়, বাম দিক থেকেও নয়, এবং নিম্ন দিক থেকেও নয়; বরং সে তাঁকে ঊর্ধ্ব দিক থেকে আহ্বান করে।”(ইবনু তাইমিয়্যাহ মাজমুউ ফাতাওয়া, খণ্ড: ৫; পৃষ্ঠা: ৬৭২)
.
আশ-শাইখ, আল-‘আল্লামাহ, আল-মুহাদ্দিস, আল-মুফাসসির, আল-ফাক্বীহ,আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ বিন আবু বকর ইবনুল কাইয়্যিম আল-জাওজিয়্যা,(রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭৫১ হি.] বলেছেম:فَلَا تَنَافِيَ بَيْنَ الْأَمْرَيْنِ ، فَأَيْنَمَا وَلَّى الْمُصَلِّي فَهِيَ قِبْلَةُ اللَّهِ ، وَهُوَ مُسْتَقْبِلٌ وَجْهَ رَبِّهِ ; لِأَنَّهُ وَاسِعٌ ، وَالْعَبْدُ إِذَا قَامَ إِلَى الصَّلَاةِ فَإِنَّهُ يَسْتَقْبِلُ رَبَّهُ تَعَالَى ، وَاللَّهُ مُقْبِلٌ عَلَى كُلِّ مُصَلٍّ بِوَجْهِهِ ، كَمَا تَوَاتَرَتْ بِذَلِكَ الْأَحَادِيثُ الصَّحِيحَةُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ …. فَإِنَّهُ قَدْ دَلَّ الْعَقْلُ وَالْفِطْرَةُ وَجَمِيعُ كُتُبِ اللَّهِ السَّمَاوِيَّةِ : عَلَى أَنَّ اللَّهَ تَعَالَى عَالٍ عَلَى خَلْقِهِ فَوْقَ جَمِيعِ الْمَخْلُوقَاتِ ، وَهُوَ مُسْتَوٍ عَلَى عَرْشِهِ ، وَعَرْشُهُ فَوْقَ السَّمَاوَاتِ كُلِّهَا ، فَهُوَ سُبْحَانَهُ مُحِيطٌ بِالْعَوَالِمِ كُلِّهَا “আর (আল্লাহ আরশের উপর রয়েছেন এবং সালাত আদায় কারীর সামনে) এই দুইটি বিষয়ের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই, কারণ যেখানেই মুসল্লি (সালাত আদায়কারী) মুখ ফিরাবে, সেটাই আল্লাহর কিবলা, আর সে (সালাতের সময়) তার রবের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকে; কারণ তিনি অসীম এবং বান্দা যখন সালাতের জন্য দাঁড়ায় তখন যেন সে তার রবকে সম্মুখে করে নিলো, আর আল্লাহ প্রত্যেক মুসল্লির দিকে তাঁর মুখোমুখি হয়ে তাকিয়ে থাকেন, যেমনটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সহিহ হাদিসের মাধ্যমে পরম্পরাগতভাবে বর্ণিত হয়েছে। বুদ্ধি (আকিল), প্রাকৃতিক প্রবৃত্তি (ফিতরাত) এবং আল্লাহর সকল আসমানী কিতাব থেকে প্রমাণিত যে আল্লাহ তাআলা তাঁর সকল সৃষ্টির উপরে আছেন এবং তিনি তাঁর আরশের উপর রয়েছেন, আর তাঁর আরশ সমস্ত আসমানসমূহের ঊর্ধ্বে রয়েছে। তিনিই সুবহানাহু ওয়া তাআলা সমস্ত জগতকে পরিবেষ্টন করে আছেন।” (ইবনুল ক্বাইয়িম, মুখতাসার সাওয়ায়েকুল মুরসালাহ, খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৪১৭)
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন:
يمكن الجمع بين ما ثبت من علو الله بذاته ، وكونه قِبَل المصلي من وجوه :
الأول: أن النصوص جمعت بينهما ، والنصوص لا تأتي بالمحال .
الثاني: أنه لا منافاة بين معنى العلو والمقابلة ، فقد يكون الشيء عالياً وهو مقابل ، لأن المقابلة لا تستلزم المحاذاة ، ألا ترى أن الرجل ينظر إلى الشمس حال بزوغها فيقول : إنها قبل وجهي , مع أنها في السماء ، ولا يعد ذلك تناقضاً في اللفظ ولا في المعنى ، فإذا جاز هذا في حق المخلوق ، ففي حق الخالق أولى .
الثالث : أنه لو فُرض أن بين معنى العلو والمقابلة تناقضاً وتعارضاً في حق المخلوق ؛ فإن ذلك لا يلزم في حق الخالق ، لأن الله تعالى ليس كمثله شيء في جميع صفاته ، فلا يقتضي كونه قِبل وجه المصلي ، أن يكون في المكان أو الحائط الذي يصلي إليه ، لوجوب علوه بذاته ، ولأنه لا يحيط به شيء من المخلوقات ، بل هو بكل شيء محيط ” .
“নিম্নোক্ত উপায়ে আল্লাহ কর্তৃক সালাত আদায়কারীর সামনে থাকা এবং তাঁর সত্তা আরশের উপরে থাকার বিষয়ে যা প্রমাণিত হয়েছে তা একত্রিত করা সম্ভব:
প্রথম: হাদীসের ভাষাসমূহ আল্লাহর উপরে থাকা ও মুসল্লির সামনে থাকার বিষয়টি একত্রিত করেছে। আর জানা কথা যে সহীহ হাদীস কখনো অসম্ভব কিছু সরবরাহ করে না।
.
দ্বিতীয়: (এটি বোঝা জরুরি যে) উচ্চতায় থাকা এবং চেহারার বিপরীতে থাকার মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। কখনো কখনো কোনো কিছু একই সাথে উচ্চতায় থাকা এবং বিপরীত থাকতে পারে, কারণ বিপরীতে থাকার জন্য সারিবদ্ধতার প্রয়োজন হয় না। আপনি কি দেখতে পাচ্ছেন না যে একজন মানুষ সূর্য উদিত হওয়ার সাথে সাথে সূর্যের দিকে তাকায় এবং বলে: এটা আমার মুখের সামনে? যদিও এটি আকাশে রয়েছে, এটি শব্দ বা অর্থের দ্বন্দ্ব হিসাবে বিবেচিত হয় না, যদি এটি একটি সৃষ্ট সত্তার ক্ষেত্রে জায়েয হয় তবে স্রষ্টার ক্ষেত্রে এটি আরও বেশি উপযুক্ত।
.
তৃতীয়: যদি আমরা ধরে নিই যে, কোনো সৃষ্ট সত্তার ক্ষেত্রে উচ্চতা ও সামনা-সামনি গুণ দুটি বিরোধপূর্ণ, তাহলেও তা স্রষ্টার জন্য বিরোধপূর্ণ হওয়া আবশ্যক করে না। কারণ আল্লাহ তাআলা তাঁর সকল গুণের দিক দিয়েই বান্দার মতো নয়। তাই তিনি সালাত আদায়কারীর সামনে থাকা এটা দাবী করে না যে তাঁর সত্তা সে মুসল্লির সামনে থাকা কোনো স্থান বা প্রাচীরের মধ্যে থাকবেন, কারণ তাঁর জন্য সত্তাগতভাবে উপরে থাকার বিষয়টি বহু (নকলী, আকলী, ফিতরী) দলীল বাধ্যতামূলকভাবে সাব্যস্ত করে। তাছাড়া কোনো প্রাণীই তাঁকে ঘিরে নেই বা পরিবেষ্টন করে নেই, বরং তিনি সবকিছুকে (তাঁর জ্ঞান ও ক্ষমতার মাধ্যমে) পরিবেষ্টন করে আছেন।”ইবনু উসাইমীন,মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল, খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ৫১)
.
অতএব উপরোক্ত আলোচনা থেকে একথা পরিস্কার যে, আল্লাহ তা‘আলার বরত্ব ও মর্যাদার সাথে যেভাবে উপযোগী সেভাবে তিনি সালাত আদায়কারীর সামনে থাকেন, এ কথার সঙ্গে,আল্লাহ তা‘আলা আরশের ওপরে আছেন, এর কোনো সংঘর্ষ নেই। তবে এর ধরন আমাদের জানা নেই,বিষয়টিকে আল্লাহর কাছে সোপর্দ করতে হবে যিনি এ ব্যাপারে সুপরিজ্ঞাত।আমাদের মহান রব স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন যে, তিনি সালাত আদায়কারীর সামনে থাকেন, যদিও তিনি আরশের ওপরে আছেন। সুতরাং ঊর্ধ্বতা এবং সালাত আদায়কারীর সামনে থাকা এই উভয় সত্যের মাঝে কোনো বিরোধ নেই। অতএব মাখলুকের সঙ্গে থাকা আল্লাহ তা‘আলার ঊর্ধ্বতাকে বাতিল করে দেয় না। বরং উভয়টিই সত্য।(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়: জুয়েল মাহমুদ সালাফি।
সম্পাদনায়: উস্তায ইব্রাহিম বিন হাসান হাফি.।
অধ্যয়নরত, কিং খালিদ ইউনিভার্সিটি, সৌদি আরব।