প্রশ্ন: মহিলাদের কণ্ঠের পর্দার হুকুম কি? মহিলা শিল্পীদের কন্ঠে কুরআন তেলোয়াত, কিরআত পাঠ, ইসলামী সংগীত ও ওয়াজ করা শরয়ী দৃষ্টিতে বৈধ কিনা জানতে চাই।
▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: মহিলাদের কণ্ঠের পর্দা সম্পর্কে ওলামায়ে কেরামের মতভেদ রয়েছে। তবে সর্বাধিক বিশুদ্ধ মত হলো, নারীদের কণ্ঠ সতরের অন্তর্ভুক্ত নয়।বিশেষ প্রয়োজনে পর পুরুষের সাথে বা নন মাহারাম নারী পুরুষের সাথে কথা বলা জায়েজ রয়েছে তবে এক্ষেত্রে শর্ত হলো নারীকে কথা বলার সময় আকর্ষণীয় ও আকৃষ্টকারী নরম কণ্ঠ ও প্রয়োজনের অতিরিক্ত কথা পরিহার করতে হবে কারণেই আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে শিক্ষা দিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন,তোমরা অন্য নারীদের মত নও; যদি তোমরা আল্লাহ্কে ভয় কর তবে পরপুরুষের সাথে কোমল কণ্ঠে এমনভাবে কথা বলো না, যাতে অন্তরে যার ব্যাধি আছে সে প্রলুব্ধ হয়। আর তোমরা সদালাপ কর।স্বাভাবিকভাবে কথা বল। [সূরা আহযাবঃ ৩২]।
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, ‘তোমরা তাদের নিকট কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাদের অন্তরের জন্যে অধিকতর পবিত্রতার কারণ’ [সূরা আহযাব, ৫৩]
এমনকি বাসায় সালাত আদায়ের সময় যদি পাশে গায়ের মাহরাম পুরুষ থাকলে উচ্চস্বরে পড়া সালাতের কিরআত নীরবে পাঠ করার কথা বলা হয়েছে। [আল-মাজমূ‘ ৩/১০০; বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ৯/৩৫; আহকাম ওয়া ফাতাওয়া মারআতিল মুসলিমাহ ১৮০ পৃ.]।
.
তবে অপ্রাপ্ত বয়স্কা মেয়ে শিশুদের কণ্ঠে উত্তম কথা সম্বলিত ইসলামী গান শোনা যাবে [বুখারী হা/৯৮৭, ৩৫২৯; মিশকাত হা/১৪৩২]।
.
কিন্তু প্রাপ্তবয়স্কা মহিলাদের কণ্ঠে ইসলামী গান ওয়াজ করা বা শোনা বৈধ নয়। সূরা আহযাবে মহিলাদের সুন্দর কণ্ঠস্বর পরপুরুষকে শুনাতে নিষেধ করা হয়ে হাদিসে এসেছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,ঐসব মহিলারা পরপুরুষকে নিজেদের দিকে আকৃষ্টকারীণী হিসাবে গণ্য হবে। রাসূল (সাঃ) অন্যকে আকৃষ্টকারী নারীর কঠোর শাস্তির ব্যাপারে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন [মুসলিম হা/২১২৮; মিশকাত হা/৩৫২৪ ‘ক্বিছাছ’ অধ্যায়, ২ অনুচ্ছেদ]।
.
অতএব, যেখানে বলা হয়েছে, প্রয়োজনে যদি কথা বল, তাহলে আকর্ষণহীন ভাষায় কাটাকাটা কথা বলবে। নরম ও ললিত ভাষায় কথা বলো না। এতে যেসব পুরুষের মনে রোগ আছে (পরনারীর প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ার মত ব্যক্তিদের রোগী বলা হয়েছে) তারা অকারণেই ফেতনায় পতিত হতে পারে। যার দায় আকর্ষণকারীনী নারীকেও নিতে হবে। সুতরাং নারীর কণ্ঠও একরকম পর্দার আওতায় চলে এসেছে। নারীরা নারী মহলে আলোচনা বা ওয়াজ করতে পারে। কিন্তু পুরুষ মহলে পর্দার আড়াল থেকেও তারা কেরাত, হামদ-না’ত বা ওয়াজ নিঃশর্তভাবে করতে পারে না। নারীদের কেরাত, না’ত বা ওয়াজের রেকর্ড পরিচ্ছন্ন অন্তরের বয়সী ব্যক্তিত্ববান ও দায়িত্বশীল পুরুষের জন্যও ফেতনা থেকে মুক্ত নয়। সাধারণভাবে তরুণ, যুবকসহ সব পুরুষের জন্য কীভাবে নিরাপদ হতে পারে। এর মধ্য থেকে দিলের খাহেশাত পূরণের নিয়ত না থাকলেও অনিচ্ছাকৃত ভালো লাগাটুকু যে একসময় গুনাহের পর্যায়ে চলে যাবে না, তার নিশ্চয়তা কি? তবে মহিলাদের নিরাপদ দাওয়াত পৌঁছানোর সর্বোত্তম পদ্ধতি হল, সপ্তাহের কোন এক দিন নিরাপদ স্থানে পর্দার পরিবেশ বজায় রেখে একজন আলেমের মাধ্যমে নছীহত করানো। রাসূল (সাঃ) এমনটিই করতেন [বুখারী হা/১০১; মিশকাত হা/১৭৫৩ ‘জানায়েয’ অধ্যায়]। মহান আল্লাহ সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন। আমীন। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
_________________________
উপস্থাপনায়
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।