ব্যাংকে একাউন্ট খুলে আমানত রাখার হুকুম কি

প্রশ্ন: ব্যাংকে একাউন্ট খুলে আমানত রাখার হুকুম কি? লাভ-লোকসানে অংশীদার হবে এমন শর্তে কোন ইসলামী ব্যাংকে টাকা রেখে তার লভ্যাংশ গ্রহণ করা যাবে কি?
▬▬▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬▬▬▬
ভূমিকা: লেনদেনের অধিকার না দিয়ে সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে অন্যের কাছে যা কিছু জমা রাখা হয় সেটাকে আমানত বলা হয়। হোটেল বা এ জাতীয় স্থানগুলোতে ‘লকার’ নামে যা থাকে সেটার ক্ষেত্রে এ সংজ্ঞা প্রযোজ্য হয়। হতে পারে কোন কোন ব্যাংকেও এ ধরণের লকার রয়েছে। পক্ষান্তরে, যেটাকে ‘ব্যাংকিং আমানত’ বলা হয় সেটি এ সংজ্ঞার আওতায় পড়ে না। যেহেতু ব্যাংক জমাকৃত অর্থ সংরক্ষণ করে রাখে না; বরং এ অর্থ দিয়ে লেনদেন করে। এই হল আমানতের পরিচতি সংক্রান্ত আলোচনা। আর হুকুমের ব্যাপারে কথা হল আমানত দুই প্রকার:

(এক). লাভজনক আমানত। এটাকে চাহিবামাত্র প্রদেয় আমানত কিংবা চলতি হিসাব বলা হয়। এর বৈশিষ্ট্য হল: গ্রাহক ব্যাংকে তার অর্থ জমা রাখবেন এবং যখন ইচ্ছা তখন উত্তোলন করতে পারবেন। তবে কোন লাভ পাবেন না। এ ধরণের লেনদেনে কোন আপত্তি নেই। যেহেতু এটি প্রকৃতপক্ষে গ্রাহকের কাছ থেকে ব্যাংকের ঋণ গ্রহণ। কিন্তু যদি ব্যাংকটি সুদি ব্যাংক হয় তাহলে এমন ব্যাংকে অর্থ জমা রাখা জায়েয নয়। যেহেতু সুদি ব্যাংক এ অর্থ থেকে উপকৃত হবে এবং এ অর্থের মাধ্যমে তার হারাম কর্মকাণ্ডগুলোকে মজবুত করবে। অথচ মহান আল্লাহ পাপ কাজে পারস্পরিক সহযোগিতা করা থেকে নিষেধ করেছেন। মহান আল্লাহ বলেছেন,”তোমরা পাপ ও সীমালঙ্ঘনের কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা কোরো না।’(সুরা মায়িদা: ২)। তবে কোন গ্রাহকের যদি তার অর্থ ব্যাংকে সংরক্ষণ করার প্রয়োজন হয় যেমন টাকা যদি চুরি হয়ে যাওয়া, ছিনতাই হয়ে যাওয়া বা এমন অন্য কিছুর মাধ্যমে হারিয়ে যাওয়ার আশংকা করে সেক্ষেত্রে অর্থ সংরক্ষণার্থে ইসলাম ব্যাংক পাওয়া না গেলে সেক্ষেত্রে সুদমুক্তভাবে সুদী ব্যাংকে বা সুদী প্রতিষ্ঠানে জমা রাখার অবকাশ দেওয়া হবে। সুতরাং এক্ষেত্রে তার সম্পদ সুদি ব্যাংকে সংরক্ষণ করলে গুনাহ হবে না। কারন মহান আল্লাহ বলেন, فَاتَّقُوا اللّٰهَ مَا اسۡتَطَعۡتُمۡ “তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর”(সূরা তাগাবুন: ১৬) অপর আয়াতে আরো বলেছেন:لَا یُكَلِّفُ اللّٰهُ نَفۡسًا اِلَّا وُسۡعَهَا ؕ “আল্লাহ কারো উপর এমন কোন দায়িত্ব চাপিয়ে দেন না যা তার সাধ্যাতীত”।(সূরা বাকারা: ২৮৬)। সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) ‘আলিমগণ বলেছেন যে, ‘বিশেষ প্রয়োজনে সূদী ব্যাংকে খাতা খোলা জায়েয। যেমন ব্যবসায়িক লেনদেন সংক্রান্ত সুবিধা, দেশ-বিদেশে অর্থ আদান-প্রদানের সুবিধা, অর্থের নিরাপত্তা ইত্যাদি। কিন্তু হারাম সূদের মাধ্যমে অর্থ বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে খাতা খোলা হারাম। কেননা নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূদখোর, সূদদাতা, তার সাক্ষীদাতা ও তার লেখককে অভিসম্পাত করেছেন এবং বলেছেন, ওরা সবাই সমান’ (সহীহ মুসলিম, হা/১৫৯৮; তিরমিযী, হা/১২০৬; ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ১৩ তম খণ্ড; পৃষ্ঠা: ৩৭৫)।
.
(দুই): সঞ্চয়ী আমানত। এর বৈশিষ্ট্য হল: গ্রাহক মুনাফার বিনিময়ে তার অর্থ ব্যাংকে রাখবেন। চুক্তি অনুযায়ী নির্দিষ্ট মেয়াদে মেয়াদে তিনি সেই মুনাফা পাবেন। এ প্রকার আমানতের কিছু জায়েয পদ্ধতি রয়েছে। আবার কিছু হারাম পদ্ধতি রয়েছে।

(ক).জায়েয পদ্ধতি: আর তা হচ্ছে গ্রাহক ও ব্যাংকের মধ্যকার চুক্তিটি মুদারাবা চুক্তি হওয়া। অর্থাৎ ব্যাংক নির্দিষ্ট আনুপাতিক লাভ দেয়ার বিপরীতে মুবাহ (শরিয়ত অনুমোদিত) প্রজেক্টসমূহে আমানতের অর্থ বিনিয়োগ করা। এ ধরণের চুক্তি জায়েজ হওয়ার ক্ষেত্রে শর্তগুলো হল:

(১)। ব্যাংক কর্তৃক মুবাহ খাতগুলোতে অর্থ বিনিয়োগ করা। যেমন: উপকারী প্রজেক্টগুলো বাস্তবায়ন, আবাসন তৈরী, ইত্যাদি। সুদি ব্যাংক বা সিনেমা হল প্রতিষ্ঠা করা কিংবা অস্বচ্ছল লোকদেরকে সুদভিত্তিক ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে অর্থ বিনিয়োগ করা জায়েয হবে না। তাই ব্যাংক কি কি খাতে বিনিয়োগ করে সেটা জানা আবশ্যক। কিন্তু ব্যাংক কোথায় কোথায় বিনিয়োগ করবে, সেই দিকগুলো যদি নির্দিষ্ট করে উল্লেখ না করে, তাহলে এ বিষয়টি পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত এতে অংশগ্রহণ করা জায়েয হবে না।

(২)। মূলধন ফেরত দেয়ার গ্যারান্টি না দেয়া। অর্থাৎ লোকসান বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে ব্যাংক মূলধন ফেরত দিতে বাধ্য হবে না; যতক্ষণ না ব্যাংকের পক্ষ থেকে কসুরের কারণে লোকসান না হয় এবং ব্যাংকই এ লোকসানের প্রধান কারণ না হয়। কারণ এটি বাইয়ে মুযারিবাহ এর অন্তর্ভুক্ত। আর বাইয়ে মুযারিবাতে বিনিয়োগকারীই লোকসানের ভার নেবে’ (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ১৪তম খণ্ড, পৃ. ৩৩৪)। আর যদি মূলধন গ্যারান্টিযুক্ত হয়, তাহলে সেটি আসলে একটি ঋণের চুক্তি হিসাবে গণ্য হবে এবং এর থেকে আনিত লভ্যাংশ সূদ হিসাবে বিবেচিত হবে। কারণ ব্যবসা লাভ-ক্ষতি উভয়ের সঙ্গে জড়িত। কখনো আংশিক ক্ষতি, আবার কখনো সম্পূর্ণটাই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ব্যাংক গ্যারান্টি দেয়া মানে শুধু লভ্যাংশের ভিত্তিতে বিনিয়োগ করা হচ্ছে, যা স্পষ্ট সূদ। আর আলেমরা এই মর্মে ইজমা করেছেন যে, যে ঋণ ঋণদাতাকে কোন প্রকার উপকার দেয় সেটাই সুদ।
.
ইমাম ইবনে কুদামা (রাহিমাহুল্লাহ) তার ‘আল-মুগনী’ বইয়ে বলেন: ” وَكُلُّ قَرْضٍ شَرَطَ فِيهِ أَنْ يَزِيدَهُ ، فَهُوَ حَرَامٌ بِغَيْرِ خِلَافٍ ، قَالَ ابْنُ الْمُنْذِرِ : أَجْمَعُوا عَلَى أَنَّ الْمُسَلِّفَ إذَا شَرَطَ عَلَى الْمُسْتَسْلِفِ زِيَادَةً أَوْ هَدِيَّةً ، فَأَسْلَفَ عَلَى ذَلِكَ : أَنَّ أَخْذَ الزِّيَادَةِ عَلَى ذَلِكَ رَبًّا .وَقَدْ رُوِيَ عَنْ أُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ ، وَابْنِ عَبَّاسٍ ، وَابْنِ مَسْعُودٍ ، أَنَّهُمْ نَهَوْا عَنْ قَرْضٍ جَرَّ مَنْفَعَةً “যে ঋণে বৃদ্ধির শর্ত করা হয়েছে সেটা হারাম হওয়ার ব্যাপারে দ্বিমত নেই। ইবনুল মুনযির বলেন: তারা (আলেমগণ) এই মর্মে ইজমা করেছেন যে, ধারদাতা যদি ধারগ্রহীতার কাছে অতিরিক্ত বা উপহারের শর্ত করে এবং সেটার উপর ভিত্তি করে ধার দেয়; তাহলে অতিরিক্ত অংশ গ্রহণ করা সুদ বলে গণ্য হবে। উবাই ইবনে কা‘ব (রাঃ), ইবনে আব্বাস (রাঃ), ইবনে মাসউদ (রাঃ) প্রমুখ থেকে বর্ণিত আছে যে, তারা এমন ঋণ থেকে নিষেধ করেছেন যেটা কোন প্রকার উপকার দেয়।”(ইবনু কুদামাহ আল-মুগনী’ খন্ড: ৪ পৃষ্ঠা: ২৪০)

(৩)। শুরু থেকে লাভ নির্দিষ্ট থাকা ও চুক্তিতে উল্লেখিত থাকা। তবে লাভ নির্দিষ্ট করতে হবে লভ্যাংশের সাধারণ অনুপাতের ভিত্তিতে; মূলধন থেকে নয়। উদাহরণতঃ এক পক্ষ পাবে লাভের এক তৃতীয়াংশ কিংবা অর্ধেক কিংবা ২০%। অবশিষ্টাংশ পাবে অপর পক্ষ। যদি লাভ অজ্ঞাত ও অনির্দিষ্ট থাকে তাহলে এমন চুক্তি সঠিক হবে না। ফিকাহবিদ আলেমগণ উল্লেখ করেছেন যে, লাভের অনুপাত অজ্ঞাত থাকলে মুদারাবা চুক্তি নষ্ট হয়ে যায়। (বিস্তারিত জানতে দেখুন: ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-১৫১৩৬৬)।
.
ইসলাম ওয়েব’-এর আলিমগণ বলেন, সূদমুক্ত ইসলামী ব্যাংকে অর্থ বিনিয়োগ করা শরী‘আতের দৃষ্টিতে আপত্তিকর নয়। যতক্ষণ পর্যন্ত ব্যাংক ইসলামী শরী‘আতের মূলনীতি অনুযায়ী উক্ত বিনিয়োগকৃত অর্থের উপর কাজ করবে বা তাকে বৈধ ও হালাল ব্যবসায় লাগাবে এবং বিনিয়োগকারীকে মূলধনের গ্যারান্টি দিবে না (অর্থাৎ লাভ-লোকসান ও ক্ষতির)। অতঃপর লাভ হলে তা চুক্তি অনুপাতে উভয়ের মধ্যে বণ্টন করে নিবে। চুক্তিপত্রে লাভের শতাংশ উল্লেখ থাকা অপরিহার্য। উপরিউক্ত শর্তানুযায়ী বিনিয়োগ করা এবং লভ্যাংশ গ্রহণ করা বৈধ’ (ইসলাম ওয়েব, ফৎওয়া নং-২৭৮৬৪৭)।
.
(খ).মুদারাবার হারাম পদ্ধতিগুলোর মধ্যে রয়েছে:

(১)। মূলধন ফেরত দেয়ার গ্যারান্টি দেয়া। উদাহরণতঃ গ্রাহক ১০০ মুদ্রা আমানত রাখল; যাতে করে তার মূলধন ফেরত দেয়ার গ্যারান্টিসহ সে ১০ মুদ্রা মুনাফা পায়। এটি সুদভিত্তিক ঋণ। অধিকাংশ ব্যাংকে এ লেনদেন চলে। এ ধরণের লেনদেনকে আমানত কিংবা ইনভেস্টমেন্ট সার্টিফিকেট কিংবা সঞ্চয়ী বই নামে অভিহিত করা হয়। এ মুনাফা বিভিন্ন মেয়াদে বিতরণ করা হয় কিংবা লটারীর মাধ্যমে বিতরণ করা হয়; যেমনটি করা হয় ‘সি’ ক্যাটাগরীর ইনভেস্টমেন্ট সার্টিফিকেটের ক্ষেত্রে। উল্লেখিত সব লেনদেন হার

(২)। ব্যাংক কর্তৃক হারাম প্রজেক্টগুলোতে অর্থ বিনিয়োগ করা। যেমন- সিনেমা হল বানানো,পর্যটন ভিলেজ তৈরী করা; যেসব ভিলেজে শরিয়ত গর্হিত কর্মকাণ্ড সংঘটিত হয়, পাপের সয়লাব ঘটে। এমন ব্যাংকে বিনিয়োগ করা হারাম। যেহেতু এর মাধ্যমে পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করা হয়। ব্যাংকগুলো যে ধরণের আমানতগুলোর লেনদেন করে সেগুলোর ব্যাপারে এটাই সার কথা।
.
ওআইসি-এর অধিভুক্ত ‘ইসলামী ফিকাহ একাডেমী’ এর সিদ্ধান্তে এসেছে যে:

” أولاً : الودائع تحت الطلب (الحسابات الجارية) سواء أكانت لدى البنوك الإسلامية أو البنوك الربوية هي قروض بالمنظور الفقهي ، حيث إن المصرف المتسلم لهذه الودائع يده يد ضمان لها ، هو ملزم شرعا بالرد عند الطلب .
ولا يؤثر على حكم القرض كون البنك (المقترض) ، مليئاً .

ثانياً : إن الودائع المصرفية تنقسم إلى نوعين بحسب واقع التعامل المصرفي :
أ‌- الودائع التي تدفع لها فوائد ، كما هو الحال في البنوك الربوية ، هي قروض ربوية محرمة ، سواء أكانت من نوع الودائع تحت الطلب (الحسابات الجارية) ، أم الودائع لأجل ، أم الودائع بإشعار ، أم حسابات التوفير .
ب‌- الودائع التي تسلم للبنوك الملتزمة فعليا بأحكام الشريعة الإسلامية بعقد استثمار على حصة من الربح هي رأس مال مضاربة ، وتنطبق عليها أحكام المضاربة (القراض) في الفقه الإسلامي التي منها عدم جواز ضمان المضارب ( البنك ) لرأس مال المضاربة ”

“এক: চাহিবামাত্র প্রদেয় (চলতি হিসাব) আমানতগুলো ইসলামী ব্যাংকসমূহে হোক কিংবা সুদি ব্যাংকসমূহে হোক ইসলামী ফিকাহর দৃষ্টিতে এগুলো ঋণ। এই আমানতগুলোর উপর গ্রহণকারী ব্যাংকের কর্তৃত্ব হচ্ছে ফেরত দেয়ার গ্যারান্টিযুক্ত কর্তৃত্ব। গ্রাহক চাহিবামাত্র ব্যাংক আমানতের এ অর্থ ফেরত দিতে আইনতঃ বাধ্য।
ব্যাংক (ঋণগ্রহীতা) সামর্থ্যবান হওয়ায় এ ঋণের হুকুমের উপর কোন প্রকার প্রভাব পড়বে না।

দুই: ব্যাংকিং সেক্টরে বিদ্যমান লেনদেনের ভিত্তিতে ব্যাংকিং আমানত দুই ধরণের:

(ক).যে আমানতগুলোর বিপরীতে মুনাফা দেয়া হয়। সুদি ব্যাংকগুলোতে যা বিদ্যমান। এ ঋণগুলো সুদভিত্তিক ও হারাম; চাই সেগুলো চাহিবামাত্র প্রদেয় (চলতি হিসাব) শ্রেণীর আমানত হোক কিংবা মেয়াদী আমানত হোক কিংবা নোটিশসহ আমানত হোক কিংবা সঞ্চয়ী হিসাব হোক।

(খ).যে ব্যাংকগুলো বাস্তবে ইসলামী শরিয়ার বিধিবিধান মেনে চলে সে সব ব্যাংকে বিনিয়োগের চুক্তিতে মুদারাবার মূলধন হিসেবে যে আমানতগুলো জমা করা হয়; এই শর্তে যে লভ্যাংশের একটি ভাগ গ্রাহক পাবে। এমন আমানতগুলোর ক্ষেত্রে ইসলামী ফিকাহ শাস্ত্রে উল্লেখিত মুদারাবার বিধিবিধানগুলো প্রযোজ্য। যে বিধানগুলোর মধ্যে রয়েছে যে, মুদারিব (ব্যাংক) এর জন্য মুদারাবার মূলধনের গ্যারান্টি দেয়া নাজায়েয।”[মাজাল্লাতুল মাজমায়িল ফিকহ, সংখ্যা-৯, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-৯৩১] আরো বিস্তারিত জানতে দেখুন ইসলামি সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-১১৩৮৫২)
.
পরিশেষে প্রিয় পাঠক!বাংলাদেশের কোন ব্যাংকই পরিপূর্ণ সূদমুক্ত নয়। ইসলামী ব্যাংকগুলো সূদমুক্ত মর্মে প্রচার করলেও শতভাগ সূদমুক্ত নয়।কেননা এ ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শর্তের সাথে চুক্তিবদ্ধ, যা একশ’ভাগ সূদের সাথে জড়িত। তাছাড়া বিনিয়োগকৃত খাতগুলোও গ্রাহকদের কাছে অস্পষ্ট এবং গোপনীয়। অথবা বিনিয়োগও হচ্ছে সূদের ভিত্তিতে। যেমন ব্যাংক মধ্যস্বত্বভোগী বা তৃতীয় পক্ষ হিসাবে কোন কোম্পানি থেকে নির্দিষ্ট মূল্যে পণ্য ক্রয় করে কাস্টমারকে দিল এবং অবৈধ শর্ত দিয়ে তার থেকে কিস্তিতে বেশী মূল্য নিল। এই কৌশল হারাম। তাই এ ধরনের লভ্যাংশ প্রাপ্তির আশায় বিনিয়োগ করা সন্দেহজনক। সেজন্য প্রদত্ত লভ্যাংশ ভক্ষণ করা যাবে না। যেহেতু এগুলো পুরোপুরি সূদমুক্ত নয়,তাই কোন মুসলিমের জন্য এরূপ সন্দেহযুক্ত উপার্জন ভক্ষণ করা উচিত নয়। তবে হা! ইসলামি ব্যাংকগুলো যদি সুদমুক্ত হয় এবং ব্যাংক যদি গ্রাহকদের আমানতকৃত অর্থকে বৈধ প্রজেক্টে বিনিয়োগ করে, গ্রাহকের মূলধন ফেরত দেয়ার গ্যারান্টি না দেয়, নির্দিষ্ট আনুপাতিক লাভের উপর চুক্তিবদ্ধ হওয়া ইত্যাদি বিধিগুলো মেনে চলে তাহলে এ ধরনের ইসলামি ব্যাংকে বিনিয়োগ হিসেবে আমানত রাখতে কোন অসুবিধা নেই। অনুরূপভাবে এ ব্যাংকে চলতি হিসাব খুলতেও কোন অসুবিধা নাই ইনশাআল্লাহ।(আল্লাহ্‌ই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
_________________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

Share: