۞ আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেছেন,”তারা বলে,‘যদি‘এ ব্যাপারে আমাদের করণীয় কিছু থাকতো,তাহলে
আমরা এখানে নিহত হতাম না” (আল ইমরান . ১৫৪)
۞ আল্লাহ তাআলা আরো এরশাদ করেছেন,”যারা ঘরে বসে থেকে [যুদ্ধে না গিয়ে তাদের [যোদ্ধা] ভাইদেরকে
বলে, আমাদের কথা মতো যদি তারা চলতো৷ তবে তারা নিহত হতো না৷ (আল–ইমরান . ১৬৮)
۞ সহীহ বুখারীতে আয়েশা রা. হবে বর্ণিত আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন,
” যে জিনিস তোমার উপকার সাধন করবে, তার ব্যাপারে আগ্রহী হও এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও, আর কখনো অক্ষমতা প্রকাশ করো না৷ যদি তোমার উপর কোন বিপদ এসে পড়ে, তবে এ কথা বলো না, ‘যদি আমি এরকম করতাম, তাহলে অবশ্যই এমন হতো‘৷ বরং তুমি এ কথা বলো, ‘আল্লাহ যা তাকদীরে রেখেছেন এবং যা ইচ্ছা করেছেন তাই হয়েছে৷ কেননা ‘যদি‘ কথাটি শয়তানের জন্য কুমন্ত্রণার পথ খুলে দেয়৷” (বুখারী)
মুসলিম শরীফেও হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে, এভাবে ;
দুর্বল মুমিন অপেক্ষা অধিকতর শক্তিশালী মুমিন আল্লাহর নিকট বেশি প্রিয়।
প্রত্যেক বস্তুতেই (কিছু না কিছু) কল্যাণ নিহিত রয়েছে্।
যা তোমাকে উপকৃত করবে তুমি তার প্রত্যাশী হও
আর মহান আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করো
এবং নিজেকে পরাভূত মনে করো না।
যদি কোন কিছু( দুঃখ কষ্ট বিপদ আপদ) তোমার উপর আপতিত হয়,
তবে সেই অবস্থায় একথা বলো না যে, ‘যদি আমি এ কাজ করতাম‘
বরং বলো, ‘আল্লাহ তা নির্ধারণ করেছেন বলে ঘটেছে, তিনি যা ইচ্ছা করেন তাই ঘটে থাকে’।
কেননা, ‘যদি‘ কথাটি শয়তানের দ্বার খুলে দেয়”।
[মুসলিম ৪/২০৫২]
এ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা যায় .
১৷ সূরা আল- ইমরানের ১৫৪ নং আয়াত এবং ৬৮ নং আয়াতের উল্লেখিত অংশের তাফসীর৷
২৷ কোন বিপদাপদ হলে ‘যদি‘ প্রয়োগ করে কথা বলার উপর সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা৷
৩৷ শয়তানের [কুমন্ত্রণামূলক] কাজের সুযোগ তৈরির কারণ৷
৪৷ উত্তম কথার প্রতি দিক নির্দেশনা৷]
৫৷ উপকারী ও কল্যাণজনক বিষয়ে আগ্রহী হওয়ার সাথে সাথে আল্লাহর কাছে সাহায্য কামনা করা৷
৬৷ এর বিপরীত অর্থাৎ ভাল কাজে অপারগতা ও অক্ষমতা প্রদর্শনের উপর নিষেধাজ্ঞা৷
বাক্যের মধ্যে ‘যদি‘ ব্যবহার প্রসঙ্গ ব্যাখাঃ
বান্দা কর্তৃক বাক্যের মধ্যে “যদি” শব্দের ব্যবহার দুই ধরনের৷
- এক . নিন্দনীয়৷
- দুই . প্রশংসনীয়৷
এক . নিন্দনীয়ঃ ‘যদি‘ শব্দের নিন্দনীয় ব্যবহার হচ্ছে, কোন বান্দার পক্ষে কিংবা বিপক্ষে তার অপছন্দনীয় কোন কিছু ঘটলে সে বলে, ‘আমি যদি এরকম করতাম তাহলে এমন হতো‘৷ এর রকম বলা নিন্দনীয় এবং শয়তানের কাজ৷
কারণ, এর দু‘টি ক্ষতিকর দিক আছে৷
- একটি হচ্ছে,এরকম কথা বান্দার অনুতাপ, রাগ এবং দুশ্চিন্তার দ্বার উন্মুক্ত করে দেয়, যা বন্ধ করে দেয়া উচিত৷
- অপরটি হচ্ছে, এতে আল্লাহর প্রতি এবং তাঁর নির্ধারিত তাকদীরের প্রতি অসৌজন্যমূলক আচরণ ও বেয়াদবি প্রমাণিত হয়৷কেননা ছোট- বড় যাবতীয় ঘটনাবলি আল্লাহর ফয়সালা ও তাকদীরের ইঙ্গিতেই সংঘটিত হয়৷ যা সংঘটিত হয়েছে তা সংঘটিত হওয়ারই বিষয় ছিল, তা রোধ করা কিছুতেই সম্ভব নয়৷ তাই ‘যদি এরকম হতো অথবা এরকম করতাম, তাহলে এমন হতো’ বান্দার এ ধরনের কথা আল্লাহর বিরুদ্ধে এক ধরনের প্রতিবাদ এবং তাঁর ফয়সালা ও তাকদীরের প্রতি ঈমানের দুর্বলতা৷
- এতে কোন সন্দেহ নেই যে, দূষণীয় উক্ত বিষয় দুটি পরিত্যাগ করা ব্যতীত বান্দার ঈমান ও তাওহীদ পরিপর্ণ হবে না৷
দুই. প্রশংসনীয় ব্যবহার হচ্ছে, বান্দা ‘যদি‘ শব্দকে মঙ্গল কামনার্থে ব্যবহার করবে৷ যেমন, কোন ব্যক্তি কল্যাণ কামনার্থে একরম বলা, ‘আমার যদি অমুকের মত এ সম্পদ থাকতো, তাহলে আমি অমুকের মত ভাল কাজ করতাম৷‘
‘আমার ভাই মুসা যদি ধৈর্য্যধারণ করতো তাহলে আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে তাঁদের কিসসা সম্পর্কে[আরো ] বর্ণনা দিতেন’৷ [অর্থাৎ মুসা আলাইহি সালামের এর সাথে খিজির আলাইহি সালামের এর কিস্সার কথা আরো বর্ণনা করতেন৷]
অতএব, ‘যদি’ শব্দের ব্যবহার যখন কল্যাণার্থে হবে, তখন এর ব্যবহার প্রশংসনীয় বলে গণ্য হবে৷
আর যদি খারাপ অর্থে ব্যবহৃত হয়, তখন এর ব্যবহার নিন্দনীয় বলে গণ্য হবে৷
‘যদি’ শব্দের ব্যবহার ভাল কি মন্দ তা মূলত, নির্ভর করে তার ব্যবহারের অবস্থা ও প্রেক্ষিতের উপর৷
তাই এর ব্যবহার যদি অস্থিরতা, দুশ্চিন্তা, আল্লাহর ফয়সালা ও তাকদীরের উপর দুর্বল ঈমানের কারণ এবং অমঙ্গল কামনার্থে হয়, তাহলে এর ব্যবহার হবে দূষণীয়৷
পক্ষান্তরে, ‘যদি‘ শব্দের ব্যবহার যদি কল্যাণ ও সত্য পথ প্রদর্শন এবং শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে হয়, তাহলে এর ব্যবহার হবে প্রশংসনীয় ।
বইঃ কিতাবুত তাওহীদ, অধ্যায় ৫৭