১। ভাইয়েরা আপনারা যারা নিজেদের স্ত্রীদেরকে পরপুরুষের চোখের মনোরঞ্জনের ব্যবস্থা করছেন, স্ত্রীদের ছবি ফেসবুকে দিয়ে সবাইকে দেখাচ্ছেন, স্ত্রীকে সাজিয়ে নিয়ে বাইরে বের হচ্ছেন আর পরপুরুষ ও লম্পটরা চোখকে পরিতৃপ্ত করছে সেসব প্রত্যেক পুরুষের “দাইয়্যুস” টার্মটির ব্যাপারে জ্ঞান থাকা আবশ্যক। একজন পুরুষ হাদিসের ভাষ্যমতে দাইয়্যুস সাব্যস্ত হবে যদি সে তার বোন, স্ত্রী, কন্যাদের বেপর্দাভাবে চলাফেরা করাকে বন্ধ না করে, তাদেরকে অশ্লীলতা, ব্যভিচার থেকে দূরে না রাখে। যেসব ভাইয়েরা এখনও দাইয়্যুসের কাতারে আছেন আজই তাওবা করুন, নিজের পরিবারের মহিলাদের বুঝান, দাওয়াহ দিন। তারপরও না বুঝলে বাধ্য করুন, কেননা তাদের ব্যাপারে আপনি জিজ্ঞাসিত হবেন। এমনকি আপনার জান্নাত জাহান্নামও অনেকাংশে তাদের উপর নির্ভর করছে। কারণ তারা আপনার অধিনস্ত।
রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
“তিনজন আছেন যাদের দিকে আল্লাহ সুবহানু তায়ালা কিয়ামাতের দিন নজর দেবেন না। যে পিতামাতার অবাধ্য, যে নারী বেশভূষায় পুরুষের অনুকরণ করে এবং দাইয়্যুস ব্যক্তি।”
[সুনান আন নাসাঈ: ২৫৬২, হাদিস সাহীহ]
ইমাম আহমাদের বর্ণনাকৃত অন্য আরেকটি সাহীহ হাদীসে ‘আল্লাহ নজর দেবেন না’ এর সাথে এসেছে দাইয়্যুস ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। [মুসনাদে আহমাদ]
রাসুলুল্লাহ(ﷺ) আরও বলেছেন, “আল্লাহ প্রত্যেক আদম সন্তানের জন্যে তার অংশের অনিবার্য জিনা লিখে রেখেছেন, হোক সে তার ব্যাপারে জ্ঞাত বা অজ্ঞাত। চোখের জিনা হল দৃষ্টিপাত করা (যে দিকে বা যার দিকে দৃষ্টি দেবার অনুমতি নেই সেদিকে দৃষ্টিপাত করা), জিহ্বার জিনা হল উচ্চারণ করা (যা উচ্চারণ করা বা বলা বৈধ নয়)। আর নফসের ইচ্ছা জাগে (জিনার জন্যে) এবং গুপ্তাংগ তা বাস্তবতায় রূপ দেয় অথবা তা অস্বীকার করে।“ [সাহীহ বুখারীঃ ৬৬১২]
উলামায়ে কিরামের মতে মুখের জিনা, চোখের জিনা, হাতের জিনা, পায়ের জিনা সবই জিনার দরজা আর অনস্বীকার্য অংশ। অতএব যে ব্যক্তি তার স্ত্রীকে এইসব জিনা থেকে বাধা দেবে না, সে ব্যক্তিও দাইয়্যুসের কাতারে পরে যাবে। মহান আল্লাহ আমাদেরকে দাইয়্যুস হওয়া থেকে হিফাজত করুন এবং মা বোনদের যথাযথভাবে পর্দা করারতাওফিক দান করুন।
২ । আমার স্ত্রী সর্বাবস্থায় আমারই স্ত্রী। আমার স্ত্রীর সৌন্দর্য উপভোগ ও অবলোকনের পূর্ণ অধিকার একমাত্র আমারই। যে কোন স্ত্রীর রূপ ও ভূষণ-সজ্জার সৌন্দর্য-দর্শনের একমাত্র হকদার সেই মহিলার স্বামী। এই যদি হয়ে থাকে সর্বজন স্বীকৃত সত্য, তাহলে আমার স্ত্রীর চেহারা দশজনকে আহবান করে দেখাবার কোন প্রয়োজন পড়ে না। পকেটের পয়সা খরচ করে পত্রিকায় এ্যাড ছাপিয়ে পরোহ্মভাবে এ কথা বুঝবার-ও তো দরকার পড়েনা যে, দেখ দেখ দুনিয়ার মানুষ আমি কি একখানা চীজ পেয়েছি।
(তাহলে ফেসবুকে যে নব দম্পতিদের ছবি আপলোডের হিড়িক বয়ে যায় তার কী হবে!)
নিজের স্ত্রীকে স্বশরীরে বা তার স্ব-ছবিকে হাজার হাজার লোকের চোখের সামনে তুলে ধরলে অনেকে হা-পিত্তেস করবে, টীকা টিপ্পনী কাটবে। বলুনতো এসব কেমন করে বরদাস্ত করা যায়? মান ইজ্জত ও সৌন্দর্যের নিরাপত্তার জন্য ইসলাম পর্দা প্রথার যে ব্যবস্থা রেখেছে, সেই ব্যবস্থার বাইরে কদম রাখলেই নানা কথা শোনতে হয়, নানা কেলেংকারী ডেকে আনা হয়। নানা অঘটন ঘটে।
সদ্যবিবাহিতা স্ত্রীর চেহারা কাগজে ছাপিয়ে/ ফেসবুকে আপলোড করে কি লাভ? তিনিতো দশের মনোরঞ্জনের জন্য আমার স্ত্রী হয়ে আমার ঘরে আসেননি। তাছাড়া তিনি কোন বাজারী পণ্যও নন যে, তাকে বাজারে পরিচিতি করাতে হবে বাজারজাত হওয়ার জন্য। হাঁ, এমন কোন চিন্তা কারো মনে প্রচ্ছন্নে উঁকি দিয়ে থাকলে অবশ্য ভিন্ন কথা, কিন্তু তা যদি না হয়ে থাকে, তাহলে নিজের সুন্দরী বউয়ের এ্যাড ছাপিয়ে বাজারী সওদার মত দশজনের দৃষ্টি আকর্ষনের কি অর্থ থাকতে পারে? পাবলিসিটির নেশা যদি একান্তই না কাটে, তাহলে ছবি ছাড়া বিয়ের সংবাদটা সংবাদ হিসেবে ছাপিয়ে দিলেই তো হয় সুখী দাম্পত্য জীবনের দোয়া চেয়ে।
নিজের ভোগের বস্তুকে এত পাবলিসিটি দিলে স্বাদ আর কিছু থাকে না। যার কাছে যে বস্তু যত বেশী দামী, সেই বস্তুর মালিক তত সযতনে তা সংরহ্মণ করে থাকেন। যে মালিক তার প্রিয় দামী বস্তুর কদর বুঝে না, সে এই মূল্যবান বস্তুটি এখানে সেখানে ফেলে রাখে, হাজার জন দেখে, নাড়াচাড়া করে, হাজার কথা বলে। এসব কথার মাঝে অশ্লীল মন্তব্যও থাকে বেশী। পাবলিসিটি আর প্রদর্শনী করলে মস্তানেরা কাছে ভিড়বার সুযোগ পায়। অতএব বিয়ের পরিচ্ছন্ন মানসিকতা নিয়ে যারা বিয়ে করেছেন, তারা নিঃসন্দেহে উত্তম কাজ করেছেন। এখন সুন্দরমত ঘর সংসার করুন। ঘরে বসে নিরিবিলি নতুন বউয়ের সংগে নতুন সংসার গড়ার আলাপ শুরু করুন। এ নিয়ে বাহিরে ডুগডুগি বাজাবেন না।
৩। ফেসবুকে ও ব্লগে ছবি আপলোডের নেশায় দম্পতিরা
আপনি জানেন কি? কোথাও গেলেই ছবি তোলার এবং তা ফেসবুকে আপলোডের চিন্তা যদি আপনার মনে জাগে, তাহলে তা একটা মানসিক রোগ। আপনি এই রোগের উচ্চমানের রোগী নন তো? আপনি দু’জনের অন্তরঙ্গতা এখন ফেসবুকে চেনা অচেনা সবাইকে দেখিয়ে লাইক চাচ্ছেন? নাকি চাইছেন আপনার স্ত্রীকে সবাই দেখুক, দেখে মন্তব্য করুক আপনি সুন্দরী পেয়েছেন বউ। এই রূপ-চেহারা আর কয়দিন ভাই? ৫-৭ বছর পরে আর ছবি তুলতেও লজ্জা পাবেন এই চিন্তাগুলা মাথায় থাকলে। আর অল্প কিছু বছর পরেই আপনাদের দু’জনকেই সাদা কাপড়ে তুলে মাটির নিচে রেখে আসবে গন্ধ লাগবে বলে… এমন কিছু করতে যাবেন না, যার খারাপ প্রতিফল সেই কবরে আপনাকে ধাওয়া করবে…
আপনাদের দু’জনার জড়াজড়ি আর গলাগলি ছবি দেখে কেউ সুখী বলে ভেবেছেন? আপনি হয়ত জানেন না শয়তানের কাজ। আপনি হয়ত জানেন না ওয়াসওয়াসা কেমন হয়। আপনার কল্পনাই নেই আপনার খুব কাছের কারো কতটা হিংসার পাত্র আপনি হয়ে গেলেন। অথচ আপনি নিজেই জানেন, এই ছবি দেখে লোকে যতটা সুখী ভাববে আপনাদের, ততটা সুখী আপনারা নন।
প্রেম জিনিসটা দু’জনের মধ্যেই রাখুন। পারলে ইমাম আহমাদের মতন করে ৩০ বছর পরে গিয়ে বলবেন স্ত্রীর মৃত্যুর পরে যে তার স্ত্রীর সাথে তার কোনদিন ঝগড়া হয়নি। তারা একজন খেপে গেলে আরেকজন চুপ করে থাকতেন। প্রেম বুঝতে চান? তাহলে এই হলো প্রেম, ভালোবাসা।
ছবি প্রদর্শনের মানসিক রোগ থেকে মুক্তি পাক সদ্য বিবাহিত দম্পতিরা। ভালোবাসা শুরুর দিকে বেশি থাকে, এসময়ের বিষয়গুলোকে মন দিয়ে গেঁথে নিন, তাতে সামনের সময়গুলোতে তা অনুপ্রেরণা দিবে, দু’জনের সম্পর্ক মধুময় হবে। এখন লোককে দেখিয়ে বেড়ালে আপনাদের ভালোবাসার গোপন আকর্ষণ নষ্ট হবে পরস্পরের কাছে। সাবধান হোন সময় থাকতেই।
২- মরহুম জহুরী,
৩- সাফওয়ান
সংকলনে – মিডিয়ায় নারী যখন পণ্যঃ উপেক্ষিত হিজাব ডেস্ক।