পুরুষ ও নারীর সতর

প্রশ্ন: একজন পুরুষের সামনে অপর একজন পুরুষের সতর এবং একজন পুরুষ কিংবা নারীর সামনে অপর নারীর সতরের সীমানা কী?
ভূমিকা: সকল প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার জন্য। আমরা তাঁর প্রশংসা করি, তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করি, তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করি। তাঁর কাছে স্বীয় কু-প্রবৃত্তি ও অসৎ কর্মের অনিষ্ট হতে আশ্রয় চাই। তিনি যাকে হেদায়াত দান করেন তাকে কেউ পথভ্রষ্ট করতে পারে না এবং তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন তাকে কেউ হেদায়াত দান করতে পারে না। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত সত্য কোন ইলাহ নেই। তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (ﷺ) তাঁর বান্দা ও রাসূল। সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক তাঁর, তাঁর পরিবারবর্গ, সাহাবায়ে কিরাম এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত আগত তাঁর সকল অনুসারীর উপর। অতঃপর।মহান আল্লাহ মানব জাতিকে নারী-পুরুষ দুই শ্রেণীতে বিভক্ত করেছেন এবং উভয়ের প্রতি আকর্ষণবোধও সৃষ্টি করেছেন। পাশাপাশি এই আকর্ষণ যেন অবৈধ স্থানে বিকশিত না হয় সে জন্য ইসলামী শরী‘আতে পর্দার মত নিরাপত্তার সুব্যবস্থা করেছে। বান্দার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হল যে, সে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করবে এবং তার ভালোবাসা অর্জন করবে। আর ওগুলো পাওয়ার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে পর্দা মেনে চলা। কেননা তিনি তা পছন্দ করেন। নবী (ﷺ) বলেন, إِنَّ اللهَ حَيِيٌّ سِتِّيْرٌ يُحِبُّ الْحَيَاءَ وَالسِّتْرَ ‘নিশ্চয় আল্লাহ লজ্জাশীল ও পর্দাশীল। তিনি লজ্জা ও পর্দাকে পসন্দ করেন।(বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, হা/৭৭৮৩; সহীহুল জামে‘, হা/১৭৫৬) অতএব আমরা শারঈ দৃষ্টিকোণ থেকে নারী পুরুষের সতরের সীমানা সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
.
(১). একজন পুরুষের সামনে অপর একজন পুরুষের সতরের সীমানা:
একজন সাবালক পুরুষের সামনে অপর পুরুষের সতরের সীমানা নাভি হতে হাঁটু পর্যন্ত। তবে সালাত আদায়কালীন সময়ে দুই কাঁধ ও নাভী হতে হাটু পর্যন্ত। অর্থাৎ এতটুকু স্থান অন্য ব্যক্তিদের সামনে এবং সালাতে কাধঁসহ ঢেকে রাখা ফরজ।(ইমাম নববী: আল মাজমু: খন্ড; ৩ পৃষ্ঠা: ১৭৩; ইবনে কুদামাহ আল মুগনী; খন্ড: ২ পৃষ্ঠা; ২৮৬) যেমনটি আল্লাহর নবী (ﷺ) বলেছেন, فَإِنَّمَا أَسْفَلُ مِنْ سُرَّتِهِ إِلَى رُكْبَتَيْهِ مِنْ عَوْرَتِهِ “তার (পুরুষের) নাভীর নিচ হতে হাঁটু পর্যন্ত সতর”(মুসনাদে আহমাদ, হা/৬৭৫৬, সনদ হাসান) অপর বর্ননায় যুরাআহ ইবনু আব্দুর রহমান ইবনু জারহাদ রাযিয়াল্লাহু আনহুমা হতে তার পিতা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এই ‘জারহাদ’ আছহাবে সুফফার অন্যতম সদস্য ছিলেন। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট বসলেন, আমার ঊরুদেশ তখন অনাবৃত ছিল। তিনি বললেন, (أَمَا عَلِمْتَ أَنَّ الْفَخِذَ عَوْرَةٌ ؟) তুমি কি জান না যে, ঊরু গোপন অঙ্গ? (আবূ দাঊদ, হা/৪০১৪ মুসনাদে আহমেদ হা/১৫৫০২) ইমাম ইবনে উসাইমিন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,”পুরুষের সতর নাভী থেকে হাঁটু পর্যন্ত এবং মহিলাদের সতর মুখমণ্ডল এবং হাত ব্যতীত সমস্ত শরীর”।(ইবনে উসাইমিন,মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল, ১২তম খণ্ড, পৃ. ২৬৪) .
ইসলাম নারী ও পুরুষ উভয়কে সতর বা গুপ্তাঙ্গ ঢেকে রাখার নির্দেশ দিয়েছে। আল কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন,”হে বনী আদম, আমি তোমাদের জন্য পোশাক অবতীর্ণ করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে এবং অবতীর্ণ করেছি সাজসজ্জার বস্ত্র”।(সুরা আরাফ: ২৬)। অন্য আয়াতে ঘোষিত হয়েছে, “হে বনী আদম, তোমরা প্রতি নামাজের সময় পোশাক পরিধান করে নাও”।(সুরা আরাফ: ৩১)। কোন পুরুষের জন্য অন্য কোন পুরুষের সতর দেখা এবং কোন মহিলার জন্য অন্য কোন মহিলার সতর দেখা হারাম। সতর বলতে শরীয়তের দৃষ্টিতে মানব শরীরের যে অঙ্গ দেখা অন্যের জন্য হারাম উহাকেই বুঝানো হয়।প্রখ্যাত সাহাবী আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন;لاَ يَنْظُرُ الرَّجُلُ إِلَى عَوْرَةِ الرَّجُلِ وَلاَ الْمَرْأَةُ إِلَى عَوْرَةِ الْمَرْأَةِ وَلاَ يُفْضِي الرَّجُلُ إِلَى الرَّجُلِ فِي ثَوْبٍ وَاحِدٍ وَلاَ تُفْضِي الْمَرْأَةُ إِلَى الْمَرْأَةِ فِي الثَّوْبِ الْوَاحِدِ ‏”‏ ‏. “কোন পুরুষ অপর পুরুষের লজ্জাস্থানের দিকে তাকাবে না এবং কোন মহিলা অপর মহিলা লজ্জাস্থানের দিকে তাকাবে না; কোন পুরুষ অপর পুরুষের সাথে এক কাপড়ের নীচে (উলঙ্গ অবস্থায়) ঘুমাবে না এবং কোন মহিলা অপর মহিলার সাথে একই কাপড়ের নীচে ঘুমাবে না”(সহীহ মুসলিম হা/৬৫৫; ইবনে মাজাহ হা/৬৬১; সহীহুল জামে‘ হা/৭৮০০)। অর্থাৎ কোন কারণে গোপন স্থান প্রকাশ পেয়ে গেলে সেদিকে তাকাবে না। সুতরাং সতরের অংশ সর্বদা ডেকে রাখাই উচিত। এমনকি একাকী বা নির্জনে হলেও সতর উন্মুক্ত করা উচিৎ নয় তবে প্যান্ট নাভীর নিছে চলে গেলে এর উপরে পোশাক থাকলে সমস্যা নেই ইনশাআল্লাহ।
.
(২). একজন নারীর সামনে অপর নারীর সতরের সীমানা:
.
বিশুদ্ধ মতে একজন সাবালক মেয়ের সামনে অন্য কোন মেয়ের সতর হাত, পা, ঘাড় ও মাথা ছাড়া তার বাকি অংশটুকু অর্থাৎ গলা বা ঘাড় থেকে হাঁটু পর্যন্ত সতরের অন্তর্ভুক্ত।(ফাতাওয়া লাজনা আদ-দায়িমাহ, ১৭তম খণ্ড, পৃ. ২৯৬; ইসলাম সুওয়াল ওয়াল জাওয়াব, ফৎওয়া নং- ৩৪৭৪৫) যদিও ফিকাহবিদ আলেমদের নিকট স্বতঃসিদ্ধ মূলনীতি হচ্ছে, এক নারীর কাছে অপর নারীর গোপন অঙ্গ হচ্ছে, العورة ما بين السرة والركبة “নাভী থেকে হাঁটুর মধ্যস্থিত স্থান”; চাই সেই নারী মা হোক, বোন হোক, কিংবা অনাত্মীয় কোন নারী হোক। তাই কোন নারীর জন্য তার বোনের নাভী থেকে হাঁটুর মধ্যস্থিত স্থানটুকু দেখা বৈধ নয়; একান্ত জরুরী অবস্থা কিংবা চিকিৎসার মত তীব্র প্রয়োজন ছাড়া। কিন্তু তার মানে এ নয় যে, একজন নারী নারীদের মাঝে তার নাভী থেকে হাঁটু পর্যন্ত বাদ দিয়ে সমস্ত শরীর উন্মুক্ত করে বসে থাকবেন। এমন কাজ বেহায়া ও নির্লজ্জ কিংবা অশালীন ফাসেক মহিলারা ছাড়া আর কেউ করে না। ফিকাহবিদ আলেমদের উক্তি “গোপন অঙ্গ হচ্ছে: নাভী ও হাঁটুর মধ্যবর্তী স্থান” কে ভুলভাবে বুঝা উচিত হবে না। তাদের এ কথার মধ্যে এমন কোন কিছু নাই যে, নারীর পোশাক এতটুকুন; যে পোশাক নারী সবসময় গায়ে পরবেন এবং যে পোশাক পরে তার বোন ও বান্ধবীদের সামনে আসবেন। কোন বিবেকবান মানুষ এমন অভিমতে সায় দিবেন না এবং স্বাভাবিক মানব প্রবৃত্তিও এর প্রতি আহ্বান করে না। বরং নিজের বোনদের ও অন্য নারীদের সামনে তার পোশাক পরিপূর্ণ শরীর ঢাকে এমন হওয়া বাঞ্চনীয়; যা নারীর লজ্জাশীলতা ও গাম্ভীর্যের পরিচায়ক হবে। কাজের সময় ও কোন সেবা দেয়ার সময় যতটুকু প্রকাশ হয়ে পড়ে ততটুকুর বেশি প্রকাশ করবে না; যেমন- মাথা, গলা, দুই হাতের বাহু, দুই পায়ের পাতা। উল্লেখ্য যে,অমুসলিম মহিলার নিকট মুসলিম মহিলা পর্দা করা জরুরি কি না এ বিষয়ে আলেমদের মাঝে দ্বিমত রয়েছে। তবে অধিক বিশুদ্ধ কথা হল, এ ক্ষেত্রে মুসলিম ও অমুসলিম নারীর একই বিধান।অর্থাৎ শরীরের যে সমস্ত অঙ্গ মুসলিম নারীর সামনে খোলা জায়েয আছে, অমুসলিম মহিলার সামনেও সেগুলো খোলা জায়েয রয়েছে। তবে যদি আশংকা থাকে যে, কোন মহিলা তার স্বামীর নিকট এই মহিলার রূপ সৌন্দর্য বর্ণনা করবে তাহলে তার নিকট পর্দা করতে হবে। চাই সে মুসলিম হোক অথবা অমুসলিম হোক।(বিস্তারিত জানতে দেখুন; উছায়মীন, ফাতাওয়াল মারআতিল মুসলিমাহ; ১/৪১৭, ২/৫৮২ পৃ.)।
.
(৩). একজন পুরুষের সামনে একজন নারীর সতরের সীমানা:
.
একজন সাবালক পুরুষের সামনে একজন নারীর দুটি অবস্থা হতে পারে হয় পুরুষ মানুষটি ঐ নারীর মাহরাম অথবা নন মাহারাম। যদি পুরুষ মানুষটি মাহরাম হয় আর নারীর জন্য মাহরাম বলতে ঐসব পুরুষদেরকে বুঝায় যাদের সাথে উক্ত নারীর বৈবাহিক সম্পর্ক চিরতরে হারাম; সেটা ঘনিষ্ট আত্মীয়তার কারণে। যেমন পিতা, যত উপরের স্তরে হোক না কেন। সন্তান, যত নীচের স্তরের হোক না কেন। চাচাগণ। মামাগণ। ভাই। ভাই এর ছেলে। বোনের ছেলে।কিংবা দুধ পানের কারণে। যেমন- নারীর দুধ ভাই। দুধ-মা এর স্বামী। কিংবা বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে। যেমন- মা এর স্বামী। স্বামীর পিতা, যত উপরের স্তরের হোক না কেন। স্বামীর সন্তান, যত নীচের স্তরের হোক না কেন। সুতরাং পুরুষ যদি মাহারাম হয় তাহলে মাহরাম পুরুষদের সামনে একজন নারীর সতর হচ্ছে, তার গোটা দেহ; কেবল চেহারা, চুল, ঘাড়, হাতের বাহুদ্বয় ও পদযুগল যা সচরাচর প্রকাশিত হয়ে পড়ে সেগুলো ব্যতিত। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “তারা যেন তাদের স্বামীগণ, পিতাগণ, স্বামীর পিতাগণ, ছেলেগণ, স্বামীর ছেলেগণ, ভাইগণ, ভাইয়ের ছেলেগণ, বোনের ছেলেগণ, আপন নারীগণ, তাদের মালিকানাধীন দাস, যৌনকামনা রহিত অধীনস্থ পুরুষ এবং নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ শিশুরা ছাড়া কারো নিকট নিজেদের সাজসজ্জা (সাজসজ্জার অঙ্গগুলো) প্রকাশ না করে।”[সূরা নূর, আয়াত: ৩১] অর্থাৎ আল্লাহ্‌ তাআলা নারীর জন্য তার স্বামীর সামনে ও তার মাহরামদের সামনে নিজের সাজসজ্জা প্রদর্শন জায়েয করেছেন। এখানে সাজসজ্জা দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে— সাজসজ্জার স্থানগুলো। যেমন আংটি পরার স্থানের মধ্যে পড়বে হাতের কব্জি। চুড়ি পরার স্থানের মধ্যে পড়বে হাতের বাহু। কানফুল পরার স্থানের মধ্যে পড়বে কান। গলার হার পরার স্থানের মধ্যে পড়বে গলা, বুক। নূপুর পরার স্থানের মধ্যে পড়বে পায়ের গোছা।উপরোক্ত সূরা নূরের ৩১ নং আয়াতের তাফসিরে আবু বকর আল-জাস্‌সাস তার তাফসিরে বলেন:
” ظاهره يقتضي إباحة إبداء الزينة للزوج ولمن ذكر معه من الآباء وغيرهم ، ومعلوم أن المراد موضع الزينة وهو الوجه واليد والذراع …فاقتضى ذلك إباحة النظر للمذكورين في الآية إلى هذه المواضع ، وهي مواضع الزينة الباطنة ؛ لأنه خص في أول الآية إباحة الزينة الظاهرة للأجنبيين ، وأباح للزوج وذوي المحارم النظر إلى الزينة الباطنة . وروي عن ابن مسعود والزبير : القرط والقلادة والسوار والخلخال …وقد سوى في ذلك بين الزوج وبين من ذكر معه ، فاقتضى عمومه إباحة النظر إلى مواضع الزينة لهؤلاء المذكورين كما اقتضى إباحتها للزوج “
“এ বাণীর বাহ্যিক মর্মের দাবী হচ্ছে সাজসজ্জা স্বামীর জন্য এবং পিতাসহ অন্য যাদেরকে স্বামীর সাথে উল্লেখ করা হয়েছে তাদের সামনে প্রকাশ করা বৈধ। জ্ঞাতব্য, সাজসজ্জা দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে— সাজসজ্জার স্থান। আর সে স্থানগুলো হচ্ছে চেহারা, হাত ও হাতের বাহু…। তাই এই বাণীর দাবী হচ্ছে আয়াতে উল্লেখিত ব্যক্তিবর্গের জন্য উল্লেখিত স্থানগুলো দেখা বৈধ। এগুলো হচ্ছে আভ্যন্তরীণ সাজের স্থান। কেননা আয়াতের প্রথমাংশে বাহ্যিক সাজসজ্জা গাইরে-মাহরাম ব্যক্তিদের জন্য দেখা জায়েয করা হয়েছে। আর স্বামী ও মাহরাম ব্যক্তিবর্গের জন্য আভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা দেখাকে জায়েয করা হয়েছে। ইবনে মাসউদ (রাঃ) ও যুবাইর (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে: কানের দুল, গলার হার, চুড়ি ও নূপুর…। যেহেতু আয়াতে স্বামী ও উল্লেখিত ব্যক্তিদের জন্য বিধানকে সমান করা হয়েছে তাই আয়াতের সামগ্রিকতার দাবী হচ্ছে উল্লেখিত ব্যক্তিবর্গের জন্য এ সকল সাজসজ্জার স্থানের দিকে তাকানো বৈধ; যেমনিভাবে স্বামীর জন্য বৈধ।”(ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-৮২৯৯৪) ইমাম বাগাভী ( (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:
قوله تعالى : ( ولا يبدين زينتهن ) أي لا يظهرن زينتهن لغير محرم ، وأراد بها الزينة الخفية ، وهما زينتان خفية وظاهرة ، فالخفية : مثل الخلخال ، والخضاب في الرِّجْل ، والسوار في المعصم ، والقرط والقلائد ، فلا يجوز لها إظهارها ، ولا للأجنبي النظر إليها ، والمراد من الزينة موضع الزينة “
“নিজেদের সাজসজ্জা প্রকাশ না করে” অর্থাৎ গাইরে মাহরামের সামনে প্রকাশ না করে। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে আভ্যন্তরীণ সাজ। সাজ দুই প্রকার: আভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক। আভ্যন্তরীণ সাজ হল: নূপুর, পায়ের মেহেদি, হাতের কব্জিতে চুড়ি, কানের দুল ও গলার হার। তাই নারীর জন্য এগুলো প্রকাশ করা নাজায়েয এবং গাইরে মাহরামের জন্য এগুলো দেখা নাজায়েয। আর এখানে সাজ দ্বারা উদ্দেশ্য সাজের স্থান।”কাশ্‌শাফুল ক্বিনা গ্রন্থে বলা হয়েছে “ولرجل أيضا نظر وجه ورقبة ويد وقدم ورأس وساق ذات محارمه . قال القاضي على هذه الرواية : يباح ما يظهر غالبا كالرأس واليدين إلى المرفقين“পুরুষের জন্য তার মাহরাম নারীদের চেহারা, ঘাড়, হাত, পা, মাথা, পায়ের গোছা দেখা জায়েয। এই বর্ণনায় ক্বাযী বলেন: সচরাচর যা প্রকাশিত হয়ে পড়ে, যেমন- মাথা, কনুই পর্যন্ত হাত দেখা বৈধ।”(কাশ্‌শাফুল ক্বিনা; ৫/১১)
.
এই মাহরামগণ নৈকট্যের দিক ও ফিতনা থেকে নিরাপদ হওয়ার দিকের বিবেচনা থেকে একই স্তরে নয়। তাই একজন নারী তার বাবার সামনে যা কিছু প্রকাশ করবেন তার স্বামীর ছেলের সামনে সেসব কিছু প্রকাশ করবেন না। কুরতুবী বলেন: ” لما ذكر الله تعالى الأزواج وبدأ بهم ثنّى بذوي المحارم وسوى بينهم في إبداء الزينة ، ولكن تختلف مراتبهم بحسب ما في نفوس البشر ، فلا مرية أن كشف الأب والأخ على المرأة أحوط من كشف ولد زوجها . وتختلف مراتب ما يُبدى لهم ، فيبدى للأب ما لا يجوز إبداؤه لولد الزوج “
“আল্লাহ্‌ তাআলা যখন স্বামীদের কথা উল্লেখ করলেন তখন তিনি তাদেরকে দিয়ে আলোচনা শুরু করেন, দ্বিতীয় পর্যায়ে মাহরাম পুরুষদের কথা উল্লেখ করেন। সাজসজ্জা প্রকাশ করার ক্ষেত্রে উভয় শ্রেণীর জন্য সমান বিধান দিয়েছেন। কিন্তু মানুষের মনে যা কিছুর উদ্রেক হয় সে বিবেচনা থেকে মাহরামদের মর্যাদার ভেদ রয়েছে। কোন সন্দেহ নাই যে, পিতার সামনে, ভাইয়ের সামনে নারীর কোন কিছু প্রকাশ করা স্বামীর ছেলের সামনে প্রকাশ করার চেয়ে অধিক নিরাপদ। অনুরূপভাবে মাহরামদের সামনে কোন অঙ্গটি প্রকাশ করা হচ্ছে সেটার বিবেচনা থেকেও স্তরভেদ রয়েছে। তাই পিতার সামনে এমন কোন অঙ্গ প্রকাশ করা বৈধ; যা স্বামীর ছেলের সামনে প্রকাশ করা বৈধ নয়।”(ইসলামি সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-৮২৯৯৪)
.
সৌদি ফতোয়া বোর্ড এবং সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য, যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] বলেন:لا يجوز للمرأة أن تلبس القصير من الثياب أمام أولادها ومحارمها ، ولا تكشف عندهم إلا ما جرت به العادة بكشفه مما ليس فيه فتنة ، وإنما تلبس القصير عند زوجها فقط “কোন মহিলার জন্য তার সন্তান কিংবা মাহরামদের সামনে ছোট পোশাক পরিধান করা জায়েজ নয়, এবং সে যেন তাদের সামনে প্রথার চেয়ে বেশি উন্মোচন না করে যা কোন ফিতনা সৃষ্টি করবে। একজন নারী শুধুমাত্র তার স্বামীর সামনে ছোট পোশাক পরিধান করতে পারেন।(আল-মুনতাক্বা মিন ফাতাওয়াস শাইখ সালিহ আল-ফাওযান:খন্ড:৩ পৃষ্ঠা:১৭০) শায়খ সালিহ আল-ফাওজান আরো বলেছেন: لا شك أن لبس المرأة للشيء الضيِّق الذي يبيِّن مفاتن جسمها : لا يجوز ، إلا عند زوجها فقط ، أما عند غير زوجها : فلا يجوز ، حتى لو كان بحضرة النساء ، ( و) لأنَّها تكون قدوة سيئة لغيرها ، إذا رأينها تلبس هذا : يقتدين بها . وأيضاً : هي مأمورة بستر عورتها بالضافي والساتر عن كل أحد ، إلا عن زوجها ، تستر عورتها عن النساء كما تسترها عن الرجال ، إلا ما جرت العادة بكشفه عن النساء ، كالوجه واليدين والقدمين ، مما تدعو الحاجة إلى كشفه . أ.هـ নিঃসন্দেহে একজন মহিলার জন্য শুধুমাত্র স্বামীর উপস্থিতি ব্যতীত, অন্য কারো উপস্থিতিতে এমন আঁটসাঁট পোশাক পরিধান করা জায়েয নয় যা তার শরীরের সৌন্দর্য প্রকাশ করে: এমনকি যদিও এটি অন্য মহিলাদের উপস্থিতিতে হয়, কারণ তিনি অন্যদের কাছে খারাপ উদাহরণ হতে পারে কেননা যদি তারা তাকে এমন পোশাক পরতে দেখে তারাও তাই করতে পারে। এছাড়াও একজন মহিলাকে তার স্বামী ব্যতীত অন্য সকলের সামনে ঢিলেঢালা এবং গোপন কাপড় দিয়ে তার আওরাহ ঢেকে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তার উচিৎ নারীদের সামনে তার আওরাহ ঢেকে রাখা যেমন সে পুরুষদের সামনে ঢেকে রাখে। মহিলারা প্রথাগতভাবে অন্যান্য মহিলাদের সামনে যা প্রকাশ করে তা ছাড়া, যেমন মুখ, হাত ও পা, যা কিছু খোলার প্রয়োজন হতে পারে।(আল-মুনতাক্বা মিন ফাতাওয়াস শাইখ সালিহ আল-ফাওযান: খন্ড: ৩ পৃষ্ঠা: ১৭৬-১৭৭)
.
পাশাপাশি জেনে রাখা ভাল যে, মহিলাদের জন্য সালাতের সময়ে একাকী থাকলেও সতর ঢাকা আবশ্যক। কেননা সতর ঢাকা হলো সালাতের একটি শর্ত, যেটি ছাড়া আল্লাহ তাআলা সালাত কবুল করবেন না; বরং ইচ্ছাকৃতভাবে সতরের কোনো অংশ না ঢাকলে সেই সালাত বাতিল হয়ে যাবে।(সহীহ বুখারী, হা/৩৬১; সহীহ মুসলিম, হা/৩০১০; আবূ দাঊদ, হা/৬৪১; তিরমিযী, হা/৩৭৭)।ইমাম ইবনে আব্দুল কাদের বার (রহঃ) বলেন: ولا تبطل الصلاة بكشف يسير من العورة بلا قصد …ولو كان الانكشاف اليسير في زمن طويل ، وكذا لا تبطل الصلاة إن انكشف من العورة شيء كثير في زمن قصير , فلو أطارت الريح سترته عن عورته , فظهر منها ما لم يُعْفَ عنه لو طال زمنه لفُحْشه ولو كان الذي انكشف كل العورة ، فأعادها سريعاً بلا عمل كثير لم تبطل صلاته , لقصر مدته أشبه اليسير في الزمن الطويل ، فإن احتاج في أخذ سترته لعمل كثير بطلت صلاته “যারা সতর ঢাকাকে নামাযের ফরজ আমল বলেন তারা ইজমা দিয়ে দলিল দেন যে, যে ব্যক্তি সতর ঢাকতে সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও সতর না ঢেকে উলঙ্গ হয়ে নামায পড়ে তার নামায বাতিল।” তিনি আরও বলেন: “তারা সকলে এ ব্যাপারে ইজমা বা ঐকমত্য করেছেন।”(দেখুন আল-মুগনি (১/৩৩৭) তবে যে ব্যক্তি সতর ঢেকে নামায পড়ছিলেন কিন্তু অনিচ্ছাকৃতভাবে সতরের কিছু অংশ অনাবৃত হয়ে গেছে এবং সে সাথে সাথে ঢেকে নিয়েছে তাহলেও তার নামায শুদ্ধ হবে। সে ব্যক্তি পুরুষ হোক অথবা নারী হোক। সতরের সে অংশ সাধারণ অঙ্গ হোক অথবা বিশেষ অঙ্গ হোক। উন্মুক্ত অংশ কম হোক অথবা বেশি হোক। যেমন:
.
কাশশাফুল কিনা গ্রন্থে বলা হয়েছে;ولا تبطل الصلاة بكشف يسير من العورة بلا قصد …ولو كان الانكشاف اليسير في زمن طويل ، وكذا لا تبطل الصلاة إن انكشف من العورة شيء كثير في زনা من قصير , فلو أطارت الريح سترته عن عورته , فظهر منها ما لم يُعْفَ عنه لو طال زمنه لفُحْشه ولو كان الذي انكشف كل العورة ، فأعادها سريعاً بلا عمل كثير لم تبطل صلاته , لقصر مدته أشبه اليسير في الزمن الطويل ، فإن احتاج في أخذ سترته لعمل كثير بطلت صلاته ” অনিচ্ছাকৃতভাবে সতরের কিছু অংশ উন্মুক্ত হয়ে গেলে নামায বাতিল হবে না। যদি সতরের কিছু অংশ দীর্ঘ সময়ের জন্য উন্মুক্ত থাকে তবুও। আর যদি সতরের বড় একটা অংশ স্বল্প সময়ের জন্য উন্মুক্ত হয়ে পড়ে সে ক্ষেত্রেও সালাত বাতিল হবে না। যদি বাতাসে তার সতর থেকে আচ্ছাদন সরে যায়, এমনকি এতটুকু সরে যায় দীর্ঘসময় যতটুকু উন্মুক্ত রাখা যায় না; এমনকি এতে করে যদি তার সম্পূর্ণ সতর উন্মুক্ত হয়ে পড়ে কিন্তু সে দ্রুত সময়ের মধ্যে আমলে কাছির (বেশি কাজ) না করে ঢেকে নিতে পারে তাহলেও তার সালাত বাতিল হবে না। কারণ সময়ের স্বল্পতা সামান্য সতর বেশি সময় ধরে উন্মুক্ত থাকার সাথে তুল্য। যদি সতর ঢাকতে গিয়ে আমলে কাছির (বেশি কাজ) এ লিপ্ত হতে হয় তাহলে সালাত বাতিল হয়ে যাবে।(কাশশাফুল কিনা;১/২৬৯) শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন: “إذا انكشف كثير وستره في زمن يسير، فإن صلاته لا تبطل، ويُتَصَوَّرُ ذلك فيما لو هبَّت ريحٌ ، وهو راكع وانكشف الثَّوب ، ولكن في الحال أعاده ، فظاهر كلام المؤلِّف أن الصَّلاة تبطل ، والصَّحيح : أنها لا تبطل ؛ لأنه ستره عن قُرْب ، ولم يتعمَّد الكشف ، وقد قال تعالى : ( فَاتَّقُوا اللَّهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ )”যদি সতরের বেশি অংশ সামান্য সময়ের জন্য উন্মুক্ত হয়ে পড়ে তাহলে সালাত বাতিল হবে না। যেমন- ‘কেউ সালাতের রুকুতে ছিলেন, এর মধ্যে তীব্র বাতাসে কাপড় সরে গেল এবং তাৎক্ষণিকভাবে সে কাপড় ঠিক করে নেয়’ গ্রন্থকারের মতে এ ব্যক্তির সালাত বাতিল। কিন্তু সঠিক মতানুযায়ী সালাত বাতিল হবে না। যেহেতু তিনি অতিদ্রুত কাপড়টি ঠিক করতে পেরেছেন এবং তিনি তো ইচ্ছাকৃতভাবে সতর খোলেন নি। আল্লাহ তাআলা বলেন: “তোমরা সাধ্যানুযায়ী আল্লাহকে ভয় কর।”(সূরা আত-তাগাবুন, আয়াত: ১৬; উসাইমীন; শরহে আল-শরহুল মুমতি; খন্ড: ২ পৃষ্ঠা; ৭৫)
.
(৪). একজন গায়রে মাহরাম পুরুষের সামনে একজন নারীর সতরের সীমানা:
.
নন মহরম পুরুষের সামনে একজন নারীর মাথা ও মুখ মণ্ডল সহ সারা শরীরটাই সতরের অন্তর্ভুক্ত যা আবৃত রাখা আবশ্যক।পর পুরুষের সামনে নারীর চেহারাও যে পর্দার অন্তর্ভুক্ত এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,یٰۤاَیُّہَا النَّبِیُّ قُلۡ لِّاَزۡوَاجِکَ وَ بَنٰتِکَ وَ نِسَآءِ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ یُدۡنِیۡنَ عَلَیۡہِنَّ مِنۡ جَلَابِیۡبِہِنَّ ؕ ذٰلِکَ اَدۡنٰۤی اَنۡ یُّعۡرَفۡنَ فَلَا یُؤۡذَیۡنَ ؕ وَ “হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রী ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের বড় চাদর বা ওড়না তাদের উপর দিয়ে ঝুলিয়ে দেয়। এতে তাদের চেনা সহজ হবে। ফলে তাদের উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু’ (সূরা আল-আহযাব: ৫৯)। উক্ত আয়াতে ‘জালাবীব’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, যা ‘জিলবাব’ শব্দের বহুবচন। আরবী অভিধানের বিখ্যাত গ্রন্থ ‘লিসানুল আরাবে ইমাম মুনজিরি (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত্যু: ৬৫৬ হি:] বলেন: ‘জিলবাব’ ওই চাদরকে বলা হয় যা মহিলারা নিজেদের মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঢাকার জন্য ব্যবহার করে। (লিসানুল আরাব’;১/২৭৩) অভিধান থেকে সরে গিয়ে মুফাসসিরগণের বক্তব্য দেখলেও জানা যায়, ‘জিলবাব’ এমন কাপড়কে বলে যদ্বারা মহিলারা নিজেদের শরীর ঢাকেন। ‘জিলবাব’ অর্থ বড় চাদর, যা দ্বারা মুখমণ্ডল ও পূর্ণ দেহ আবৃত করা যায়”।(কুরতুবী, আল-জামে‘ লিআহকামিল কুরআন: ১৪/২৪৩) উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় প্রখ্যাত সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন,أَمَرَ اللهُ نِسَاءَ الْمُؤْمِنِيْنَ إِذَا خَرَجْنَ مِنْ بُيُوْتِهِنَّ فِيْ حَاجَةٍ أَن يُّغْطِيْنَ وُجُوْهَهُنَّ مِنْ فَوْقِ رُءُوْسِهِنَّ بِالْجَلَابِيْبِ وَيُبْدِيْنَ عَيْنًا وَاحِدَةً”আল্লাহ তা‘আলা মুমিন নারীদেরকে আদেশ করেছেন যখন তারা কোন প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হবে, তখন যেন মাথার উপর থেকে বিশেষ চাদর টেনে স্বীয় মুখমণ্ডল আবৃত করে, আর (চলাফেরার সুবিধার্থে) শুধু এক চোখ খোলা রাখে”(ইবনু জারীর আত-ত্বাবারী, জামিঊল বয়ান ফী তা’বীলিল কুরআন (মুওয়াসসাসাতুর রিসালাহ, ১ম সংস্করণ, ১৪২০ হি./২০০০ খ্রি.),২০তম খণ্ড, পৃ. ৩২৪) মুহাম্মাদ ইবনু সীরীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,سَأَلْتُ عَبِيْدَةَ السَّلْمَانِيَّ عَنْ قَوْلِ اللهِ تَعَالٰى یُدۡنِیۡنَ عَلَیۡہِنَّ مِنۡ جَلَابِیۡبِہِنَّ فَغَطَّى وَجْهَهُ وَرَأْسَهُ وَأَبْرَزَ عَيْنَهُ الْيُسْرٰى “আমি ‘আবীদাহ আস-সালমানী (রাহিমাহুল্লাহ)-কে یُدۡنِیۡنَ عَلَیۡہِنَّ مِنۡ جَلَابِیۡبِہِنَّ আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি, তার বড় চাদর দ্বারা মাথা ও চেহারা আবৃত করলেন এবং এক চোখ খোলা রাখলেন’।(অর্থাৎ জিলবাব বা বড় চাদর দ্বারা চেহারা আবৃত করার বাস্তব ব্যাখ্যা দেখালেন।(আবুল ফিদা ইসমাঈল ইবনু ওমর ইবনু কাসীর আদ-দিমাশক্বী, তাফসীরুল কুরআনিল ‘আযীম (দারু ত্বাইয়েবা, ২য় সংস্করণ, ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.), ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ৪৮২)
ইমাম সূয়ুত্বী (রাহিমাহুল্লাহ) এই আয়াত সম্পর্কে বলেন, ‘এটি সকল নারীর জন্য পর্দার নির্দেশ সম্বলিত আয়াত। এর দ্বারা তাদের মাথা ও চেহারা ঢাকা ফরয করা হয়েছে’।(আওনুল মা‘বূদ শরহু সুনানি আবী দাঊদ (বৈরূত: দারুল কুতুব, ২য় সংস্করণ, ১৪১৫ হি.), ১১তম খণ্ড, পৃ. ১০৬)
.
বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফকীহ ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেন: আয়াতে বর্ণিত جلباب হচ্ছে, এক ধরনের লম্বা বিশেষ চাদর, যা সমস্ত শরীরকে আবৃত করে। মহান আল্লাহ তার রাসূল (ﷺ)-কে নির্দেশ দিচ্ছেন, তিনি যেন তার স্ত্রী-কন্যা ও মুমিন নারীদেরকে চাদর দিয়ে তাদের দেহ আবৃত করতে বলেন, যাতে তাদের গলা ও মুখমণ্ডলও ঢেকে যায়। পবিত্র কুরআন, সহীহ সুন্নাহ এবং বিশুদ্ধ রায় দ্বারা প্রমাণিত যে, পরপুরুষের সামনে নারীদের মুখ ঢেকে রাখা ওয়াজিব”।(বই মুসলিম পরিবার সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর) অন্য হাদীসে এসেছে عَنْ ابْنِ مَسْعُوْدٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَرأَةُ عَوْرَةٌ فَإِذَا خَرَجَتْ إِسْتَشْرَفَهَا الشَّيْطَانُ.ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ﷺ)বলেছেন,”নারী হচ্ছে গোপন বস্তু। যখন সে বাড়ি থেকে বের হয়, তখন শয়তান তাকে নগ্নতার প্রতি ক্ষিপ্ত করে তুলে”।(তিরমিযী মিশকাত হা/৩১০৯)। অপর বর্ননায় পর্দাহীনতার বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:صِنْفَانِ مِنْ أَهْلِ النَّارِ لَمْ أَرَهُمَا قَوْمٌ مَعَهُمْ سِيَاطٌ كَأَذْنَابِ الْبَقَرِ يَضْرِبُونَ بِهَا النَّاسَ وَنِسَاءٌ كَاسِيَاتٌ عَارِيَاتٌ مُمِيلاَتٌ مَائِلاَتٌ رُءُوسُهُنَّ كَأَسْنِمَةِ الْبُخْتِ الْمَائِلَةِ لاَ يَدْخُلْنَ الْجَنَّةَ وَلاَ يَجِدْنَ رِيحَهَا وَإِنَّ رِيحَهَا لَيُوجَدُ مِنْ مَسِيرَةِ كَذَا وَكَذَا ‘দুই শ্রেণীর লোক জাহান্নামী; যাদেরকে আমি আমার যুগে দেখে যাইনি। এক শ্রেণীর লোক, তারা এমন এক সম্প্রদায়, তাদের সাথে থাকবে গরুর লেজের মত এক ধরনের লাঠি যা দিয়ে তারা মানুষকে পিটাবে। অপর শ্রেণী হল, কাপড় পরিহিতা নারী; অথচ নগ্ন, তারা পুরুষদেরকে আকৃষ্টকারী ও নিজেরা তাদের প্রতি আকৃষ্ট। তাদের মাথা হবে উটের কুঁজের মত বাঁকা। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এমনকি জান্নাতের সু-ঘ্রাণও তারা পাবে না। অথচ জান্নাতের সুঘ্রাণ অনেক অনেক দূর থেকে পাওয়া যাবে”।(সহীহ মুসলিম হা/২১২৮; মিশকত হা/৩৫২৪ আরো বিস্তারিত জানতে ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-২১৪৩৮৬) মহান আল্লাহ আমাদেরকে পরিপূর্ণ ভাবে মানহাজুস সালাফদের আলোকে শারঈ বিধি বিধান পালন করার তৌফিক দান করুন।(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
________________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।
সম্পাদনায়: ওস্তাদ ইব্রাহিম বিন হাসান (হাফি:)।
শিক্ষক, চর বাগডাঙ্গা সেরাজুল হুদা লতিফিয়া নুরিয়া ইসলামিয়া ও হাফিজিয়া মাদরাসা‌ চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বাংলাদেশ।
Share: