প্রশ্ন: পাঁচটি জিনিসের পূর্বে পাঁচটি জিনিসকে মূল্যায়ন করা সংক্রান্ত হাদীসটির সঠিক ব্যাখ্যা কি? বিস্তারিত জানতে চাই।
▬▬▬▬▬▬▬▬❂▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: পাঁচ জিনিসের পূর্বে পাঁচ জিনিসের মূল্যায়ন সম্পর্কিত হাদিসটি মুসলিম উম্মার প্রতি আল্লাহর রাসূল (ﷺ) এর নসিহত এবং বিশেষ অসিয়ত। যেন উম্মতের প্রতিটি সদস্য সৌভাগ্যবান, সফল ও সর্বাঙ্গীণ সুন্দর জীবন লাভ করতে পারে। আমর ইবনু মায়মুন আল আওদী (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) জনৈক ব্যক্তিকে নাসীহাতস্বরূপ বললেন: পাঁচ জিনিসের পূর্বে পাঁচ জিনিসকে মূল্যায়ন করো। তা হল:
.
●(১) যৌবনকে মূল্যায়ন করো বার্ধক্যের আগে।
●(২) সুস্থতাকে মূল্যায়ন করো অসুস্থতা আসার আগে।
●(৩) স্বচ্ছলতাকে মূল্যায়ন করো দারিদ্র্যতা আসার আগে।
●(৪) অবসরকে মূল্যায়ন করো ব্যস্ততা আসার আগে।
●(৫) এবং জীবনকে মূল্যায়ন করো মৃত্যু আসার আগে।
(সহীহুল জামি ১০৭৭, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত তারহীব ৩৩৫৫, মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ্ ৩৪৩১৯, শুআবুল ঈমান ১০২৪৮, আল মুসতাদরাক লিল হাকিম ৭৮৪৬, মিশকাত,৫১৭৪)।
.
হাদীসটির ব্যাখ্যা: অত্র হাদীসে মুমিন জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ৫টি বিষয়কে অগ্রাধিকার দেওয়ার ব্যাপারে রাসূল (ﷺ) নসিহত করেছেন। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোকপাত করা হল:
.
❒ (১): شَبَابَكَ قَبْلَ هَرَمِكَ “বার্ধক্য আসার আগেই যৌবনকে গুরুত্ব দাও।”
.
উল্লেখিত হাদীসে বার্ধক্যের পূর্বে যৌবনকালকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। মানব জীবনের তিনটি কালের মধ্যে যৌবনকাল নিঃসন্দেহে সর্বশ্রেষ্ঠ। একথা সর্বজন স্বীকৃত যে একজন মানুষের যৌবন হচ্ছে তার সমস্ত কর্ম তৎপরতার উৎস। যৌবন মানুষকে কর্মঠ, দৃঢ়চেতা ও সাহসী করে তোলে। যৌবনের এই সময়ে মানুষ কঠোর পরিশ্রম করতে পারে, দুঃখ-কষ্ট সহ্য করতে পারে, ইচ্ছা করলে সকল প্রকার ইবাদত-বন্দেগীও সে করতে পারে। কিন্তু বুড়ো হয়ে গেলে যেমন পরিশ্রম করতে পারে না, তেমনি ভগ্ন স্বাস্থ্য নিয়ে সঠিকভাবে আল্লাহর ইবাদতও করতে পারে না। যৌবন বয়সে মানুষের শরীরে যে শক্তি-সামর্থ থাকে বুড়ো হওয়ার সাথে সাথে সেটা নিঃশেষ হয়ে যায়, তখন অনেক চেষ্টা করেও কোন কাজ করতে পারে না। এজন্য রাসূল (ﷺ) বলেছেন যৌবনের এ শক্তিকে কাজে লাগাও। বার্ধক্য আসার পূর্বেই যৌবনের শক্তিকে আল্লাহর পথে ব্যয় কর। ইসলামের সুমহান আদর্শের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা কর, তাহলেই তুমি নাজাত পাবে। তাই মুমিনের উপর আবশ্যক যে, সে মহান আল্লাহর ইবাদতের মাধ্যমে তাঁর যৌবন ও শক্তির সদ্ব্যবহার করবে। সে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করবে, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ হতে বাঁধা প্রদান করবে, রাসূল (ﷺ) এর সুন্নাহ অনুসারে জীবনকে পরিচালনা করবে। আর এসব কিছু করবে বার্ধক্য আসার আগে – যখন সে ইবাদত আদায়ে অক্ষম হয়ে পড়বে। প্রিয় নবী রাসূল (ﷺ) বলেছেন, যৌবনকাল ইবাদতে কাটানো যুবক সেই সাত ব্যক্তির অন্তর্ভুক্ত যাদেরকে মহান আল্লাহ কেয়ামতের কঠিন অবস্থায় তাঁর আরশের ছায়াতলে স্থান দান করবেন আর সেদিন তাঁর ছায়া ছাড়া অন্য কোন ছায়া থাকবে না। (সহীহ বুখারী ৬৬০, মুসলিম ১০৩১, নাসায়ী ৫৩৮০, তিরমিযী ২৩৯১, আহমাদ ৯৬৬৫, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪৪৮৬, ইরওয়া ৮৮৭, মিশকাত ৭০১)।
.
এমনকি আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন এই যৌবনকালের শক্তি-সামর্থ কোন পথে ব্যয় হয়েছে সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন। আল-হাদীসে বর্ণিত হয়েছে-ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) “পাঁচটি বিষয়ে প্রশ্ন না করা পর্যন্ত ক্বিয়ামত দিবসে আদম সন্তানের পদদ্বয় নড়বে নাঃ (১) তার বয়স সম্পর্কে কিভাবে তা ক্ষয় করেছে। (২) তার যৌবন সম্পর্কে কিভাবে তা অতিবাহিত করেছে। (৩) তার সম্পদ সম্পর্কে কিভাবে তা উপার্জন করেছে? (৪) কোন পথে তা খরচ করেছে। (৫) আর যা শিখেছে সে অনুযায়ী কি আমল করেছে?” (এ হাদীসটি ও বর্ণনা করেছেন তিরমিযী ২৪১৭, সহীহুল জামে ৭৩০০, সহিহ তারগিব ওয়াত তাহরিব হাদিস নং ১২৮)।
.
❒(২): وَصِحَّتَكَ قَبْلَ سَقَمِكَ “অসুস্থতার পূর্বেই সুস্থতাকে গুরুত্ব দাও।”
.
অত্র হাদীসে প্রতিটি সুস্থ মূহুর্তকে পরিপূর্ণভাবে সদ্ব্যবহার করার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে। সুস্থতা মানুষের জন্য মহান আল্লাহ তাআলার এক অপার মহিমা বিশাল নেয়ামত। সুস্থ অবস্থায় মানুষ আল্লাহর ইবাদত করার যে সামর্থ রাখে অসুস্থ হলে তার আর সামর্থ থাকেনা। কারণ মানুষের শরীর একটা স্বয়ংক্রীয় যন্ত্র বিশেষ। তাই এ যন্ত্রের একটু ব্যতিক্রম হলেই শরীরে নানা ধরণের বাহ্যিক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, তার নাম অসুস্থতা। সুস্থতা আল্লাহর একটি বড় নিয়ামত। মানুষ সুস্থ থাকলে সবকিছু করতে পারে কিন্তু অসুস্থ হয়ে গেলে আর কোন কাজ করতে পারে না। তাই যখন সে সুস্থ থাকে তখন তাকে নেয়ামত মনে করে ইবাদতে মশগুল হওয়া প্রয়োজন। কেননা সে জানে না যে, বর্তমানে যে অবস্থায় আছে পরবর্তীতে অবস্থা আরো অবনতি হয়ে যেতে পারে। এই অবস্থা সম্পর্কে রাসূল (ﷺ) অন্য হাদীসে বলেছেন, যে ব্যক্তি তার দিনটি পারিবারিক নিরাপত্তাবোধ ও সুস্থতার মধ্য দিয়ে শুরু করতে পারলো এবং নিজের দিনটিকে কাজে লাগাতে পারলো সে যেন সমগ্র দুনিয়া অধিকার করলো।” (সুনানে তিরমিযি ২৩৪৬, ইবনে মাজা ৪১৪১)।
.
❒(৩): وَغِنَاكَ قَبْلَ فَقْرِكَ “দারিদ্রতার পূর্বেই স্বচ্ছলতাকে গুরুত্ব দাও।”।
.
অর্থনীতির পরিভাষায় ‘অভাব অফুরন্ত’। মানুষের অভাব একটি পুরণ হলে আর একটি এসে হাজির হয়। এজন্য সে মনে করে আর একটু স্বচ্ছল হলে অমুক ভালো কাজটি করব। কিন্তু সে জানে না বর্তমানের চেয়ে সে আরো দরিদ্র হয়ে যেতে পারে। মানব দেহে যেমন যে কোন সময় অসুস্থতা আসতে পারে, ঠিক তেমনি যে কোন সময় মানব জীবনে দারিদ্রতাও এসে যেতে পারে। কারণ স্বচ্ছলতা এবং অস্বচ্ছলতা এর কোনটাই মানুষের নিয়ন্ত্রণে নেই। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করছেন স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন। পবিত্র কুরআনে এ সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে,মহান আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় তোমার রব যাকে ইচ্ছা করেন তার রিযিক বাড়িয়ে দেন। যাকে ইচ্ছা করেন তার রিযিক সংকীর্ণ করে দেন। তিনি অবশ্যই তাঁর বান্দাদের সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞাত, পূর্ণ দ্রষ্টা।” (সুরা বনী ইসরাইল ৩০)।
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, وَاللَّهُ يَرْزُقُ مَنْ يَشَاءُ بِغَيْرِ حِسَابٍ অর্থ: আর আল্লাহ যাকে চান, বেহিসাব রিয্ক দান করেন। (সূরা আল-বাকারা ২১২)। আল-কুরআনের ভাষ্যানুযায়ী আল্লাহ তাআলা যাকে ইচ্ছা তাকে সম্মান দান করেন, রিযিক দান করেন, আবার যাকে ইচ্ছা তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেন। বল, ‘হে আল্লাহ, রাজত্বের মালিক, আপনি যাকে চান রাজত্ব দান করেন, আর যার থেকে চান রাজত্ব কেড়ে নেন এবং আপনি যাকে চান সম্মান দান করেন। আর যাকে চান অপমানিত করেন, আপনার হাতেই কল্যাণ। নিশ্চয় আপনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান। আপনি রাতকে দিনের মধ্যে প্রবেশ করান এবং দিনকে রাতের মধ্যে প্রবেশ করান। আর মৃত থেকে জীবিতকে বের করেন এবং জীবিত থেকে মৃতকে বের করেন। আর যাকে চান বিনা হিসাবে রিয্ক দান করেন। (সূরা আলে-ইমরান ২৬-২৭)।
.
এ কথা মনে রাখতে হবে, কখন আপনার অর্থ সম্পদ আপনার হাত থেকে চলে যাবে, কখন আপনি দরিদ্র হয়ে যাবেন তার কোন নিশ্চয়তা নেই। তাই যে কোন সময় দারিদ্রতা এসে যেতে পারে এই চিন্তা করে অর্থ-সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে পরকালের পাথেয় সংগ্রহ করার চেষ্টা করতে হবে। কারণ আগামী কাল কি হবে এর কোন তথ্যই মানুষের কাছে নেই। আল্লাহ তাআলা বলেন: নিশ্চয় আল্লাহর নিকট কিয়ামতের জ্ঞান রয়েছে। আর তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং মাতৃগর্ভে যা আছে তা তিনি জানেন। আর কেউ জানে না আগামীকাল সে কী অর্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন স্থানে সে মারা যাবে। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সম্যক অবহিত। (সূরা লুকমান ৩৪)। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে: ইবনে উমার (রা.) নবী করীম (ﷺ) হতে বর্ণনা করেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, গাইব বা অদৃশ্যের চাবিকাঠি পাঁচটি। যথা: ১. আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না যে মায়ের গর্ভে কি তৈরী হচ্ছে। ২. শুধু তিনিই জানেন যে, আগামী কাল কী হবে। ৩. বৃষ্টি কখন হবে তাও কেবল তারই জানা। ৪. কোন প্রাণী জানে না যে, কোথায় তার মৃত্যু হবে এবং ৫. এটাও জানে না যে, কিয়ামত কবে হবে। (সহীহ বুখারী:৪৭৭৭, মুসলিম: ৯, ১০)।
.
❒(৪) وَفَرَاغَكَ قَبْلَ شُغُلُكَ “ব্যস্ততা আসার পূর্বেই অবসরকে গুরুত্ব দাও।”।
.
হাদীসের এ অংশে অবসরকে গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে। এবং ইসলামে অলস সময় কাটানোকে সম্পূর্ণভাবে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। তবে মনে রাখতে হবে ব্যস্ততা ও অবসর দু’টোই বান্দাহর জন্য নেয়ামত। ব্যস্ততা এজন্য নেয়ামত যে, ব্যস্ততা মানুষের অনেক অন্যায় ও বেহুদা কাজ থেকে বিরত রাখে। আর অবসর এই অর্থে নিয়ামত যে, সে এই অবসরে অনেক ভালো কাজ সম্পন্ন করে নেকী লাভ করতে পারেন। ব্যস্ততা মানব জীবনের সাথে ওৎপ্রোতভাবে জড়িত। কার কখন ব্যস্ততা এসে যাবে এটা কেউ বলতে পারেনা। আর অত্যাধিক ব্যস্ততা মানুষকে অনেক প্রয়োজনীয় কাজ থেকে অপারগ বানিয়ে ফেলে। এটাকে মনে রেখেই মানুষকে কর্ম পরিকল্পনা করতে হবে। মানব জীবনের একটি দূর্বলতা বা প্রবণতা আছে কোন কাজ তার সামনে এলে মনে করে একটু পরে কাজটি করে ফেলব। কিন্তু দেখা যায় একটু পরেই তার সামনে আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ উপস্থিত হয়ে গেল। সেটা শেষ করতে না করতেই আরো একটা উপস্থিত হলো। এভাবে প্রথম যে কাজটি অনায়াসে করা যেতো, সেটা করার কোন সুযোগই পাওয়া যায় না। তাই যখন সুযোগ পাওয়া যায় তখনই কাজটি সম্পন্ন করে ফেলা উচিত।অনুরূপভাবে আল্লাহর ইবাদতের ব্যাপারেও যদি কেউ মনে করে এখন না, একটু পরে ইবাদতটা করব, তার পরিণতিও অনুরূপ। সে ইবাদতটি করার সুযোগ আর নাও পেতে পারে। এভাবে প্রতিনিয়ত মানুষের যে সময় অতীত হয়ে যাচ্ছে সে সময় আর কখনও ভবিষ্যতে ফিরে আসবে না। তাই বর্তমানে যে সময়টা অবসর আছে এটাকে নেয়ামত মনে করে অপেক্ষাকৃত বেশী গুরুত্বপূর্ণ এবং অধিক লাভজনক কাজ গুলো সম্পন্ন করাই বুদ্ধিমানের কাজ। ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘এমন দুটি নিয়ামত আছে, বহু মানুষ সে দু’টির ব্যাপারে ধোঁকায় আছে। (তা হল) সুস্থতা ও অবসর।’ (সহীহুল বুখারী ৬৪১২, তিরমিযী ২৩০৪, ইবনু মাজাহ ৪১৭০, আহমাদ ২৩৩৬, ৩১৯৭, দারেমী ২৭০৭, রিয়াদুস সলেহিন হাদিস নং ৯৮)।
.
❒(৫) وَحَيَاتَكَ قَبْلَ مَوْتِكَ “মৃত্যু আসার পূর্বেই জীবনকে গুরুত্ব দাও।”।
.
মায়ের পেট থেকে পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হওয়া মাত্রই মানুষের জীবন শুরু হয় এবং মৃত্যুর মাধ্যমে তার জীবনের অবসান ঘটে। তবে পৃথিবী নামক এই গ্রহে কার অবস্থান কতটুকু সময় তা আমরা কেউ বলতে পারব না। কারণ জীবন-মৃত্যুর মালিক একমাত্র আল্লাহ তাআলা। কে কখন কিভাবে মৃত্যু বরণ করবে এটা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না। আল্লাহ তাআলা আল-কুরআনে এ সম্পর্কে বলেছেন, قُلْ إِنَّ الْمَوْتَ الَّذِي تَفِرُّونَ مِنْهُ فَإِنَّهُ مُلَاقِيكُمْ অর্থ: বল যে মৃত্যু হতে তোমরা পলায়ন করছ তা অবশ্যই তোমাদের সাথে সাক্ষাৎ করবে। (সূরা জুমুআ ৮)। আর মৃত্যুর পরেই মানুষের পরকালীন জীবনের হিসাব-নিকাশ শুরু হয়ে যায়। আর প্রত্যেক আত্মাকে মরতেই হবে। আল্লাহ বলেন, كُلُّ نَفْسٍ ذَآئِقَةُ الْمَوْتِ ‘প্রত্যেক আত্মাকে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে’ (সূরা আলে ইমরান ১৮৫)। মরণের সময় মানুষের কৃতকর্মই তার সাথী হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَجَاءَتْ كُلُّ نَفْسٍ مَّعَهَا سَائِقٌ وَّشَهِيْدٌ ‘প্রত্যেক ব্যক্তি আগমন করবে, তার সাথে থাকবে চালক ও কর্মের সাক্ষী’ (সূরা কাফ ৫০/২১)। যে শয়তানের প্ররোচনায় মানুষ দুনিয়াতে পাপাচার করে, সে আল্লাহর কাছে নিজেকে নির্দোষ দাবী করে বলবে, আমি তাকে পাপ কাজে লিপ্ত করিনি; বরং সে নিজেই পাপ করেছে। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, قَالَ قَرِيْنُهُ رَبَّنَا مَا أَطْغَيْتُهُ وَلَكِنْ كَانَ فِيْ ضَلاَلٍ بَعِيْدٍ ‘তার সঙ্গী শয়তান বলবে, হে আমাদের পালনকর্তা! আমি তাকে অবাধ্যতায় লিপ্ত করিনি। বস্ত্ততঃ সে নিজেই ছিল সুদূর পথভ্রান্তিতে লিপ্ত।’ (সূরা কাফ ৫০/২৭)। পরকালে প্রত্যেকে স্বীয় কর্ম দেখতে পাবে। আল্লাহ বলেন, ‘অতএব কেউ অণুপরিমাণ সৎকর্ম করলে তা দেখতে পাবে এবং কেউ অণুপরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও দেখতে পাবে।’(সূরা যিলযাল ৯৯/৭-৮)। ইহকাল ক্ষণস্থায়ী ও পরকাল চিরস্থায়ী। আল্লাহ বলেন, وَالْآخِرَةُ خَيْرٌ وَأَبْقَى ‘অথচ আখেরাতের জীবনই উত্তম ও চিরস্থায়ী।’ (সূরা আ’লা ৮৭/১৭)। উপরোক্ত আয়াত অনুযায়ী মৃত্যু কখন আসবে সেটা একমাত্র আল্লাহ জানেন, তাই আমাদের সব সময় মৃত্যুর কথা স্মরণে রেখে পরকালীন পাথেয় সংগ্রহের জন্য চেষ্টা করে যেতে হবে, কারণ মৃত্যুর ঘন্টা বেজে গেলে আর কোন ভালো কাজ করা সম্ভব হবে না। আল-কুরআনে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে,আর আমি তোমাদেরকে যে রিযক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় কর, তোমাদের কারো মৃত্যু আসার পূর্বে। কেননা তখন সে বলবে, হে আমার রব, যদি আপনি আমাকে আরো কিছু কাল পর্যন্ত অবকাশ দিতেন, তাহলে আমি দান-সদাকা করতাম। আর সৎ লোকদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। আর আল্লাহ কখনো কোন প্রাণকেই অবকাশ দেবেন না, যখন তার নির্ধারিত সময় এসে যাবে। আর তোমরা যা কর সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত। (সূরা মুনাফিকুন ১০-১১) উপরের বক্তব্য থেকে অনুধাবন করা যায়, মানুষের মৃত্যুর কোন গ্যারান্টি নেই, তাই এখনই মৃত্যু এসে যেতে পারে এই চিন্তা করে জীবনের প্রতিটি মুহুর্তকে কাজে লাগানোই হচ্ছে মুমিন জীবনের প্রধানতম কাজ।
.
পরিশেষে, উপরোক্ত হাদীস থেকে আমাদের জন্য শিক্ষা হচ্ছে, যৌবনই হলো পরকালীন সাফল্য অর্জন করার সর্বত্তোম সময়, কাজেই আমাদের উচিত এটাকে ভালো কাজে ব্যয় করে আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করা। সুস্থতা ও অবসর সময়কে কুরআন-হাদীসের জ্ঞান চর্চা ও দ্বীনের প্রচার-প্রসারে আত্মনিয়োগ করা। যে কোন সময় অস্বচ্ছল হয়ে যেতে পারি এই চিন্তা করে বেশী বেশী আল্লাহর পথে অর্থ খরচ করার চেষ্টা করা। সর্বোপরি মৃত্যুর কথা চিন্তা করে জীবনের প্রতিটা মুহুর্ত ‘আমলে সালেহ’ বা ভালো কাজে ব্যয় করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া।আমাদের আরো মনে রাখা দরকার, উক্ত হাদীসে উল্লেখিত পাঁচটি বিষয়ের প্রত্যেকটিই গুরুত্বপূর্ণ এবং একটি আর একটির পরিপূরক, তবে শেষের বিষয়টা সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর মধ্যে অন্য ৪টি বিষয় বিদ্যমান রয়েছে। মানুষের সুস্থতা-অসুস্থতা, ব্যবস্ততা-অবসর, স্বচ্ছলতা-অস্বচ্ছলতা, যৌবন-বার্ধক্য সবই জীবনেরই একটা মুহুর্তের অংশ। তাই সর্ববস্থায় মৃত্যুকে স্মরণ করে নিজের জীবনের প্রতিটা কাজ করলে বাকী চারটার গুরুত্বও দেওয়া হয়ে যায়। মহান আল্লাহ আমাদেরকে উপলব্ধি করে কাজে পরিণত করার তাওফিক দান করুন। আমীন। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬❂▬▬▬
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।