উত্তর: আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের সর্বসম্মত মত হল: দুনিয়াতে স্বচক্ষে সরাসরি আল্লাহকে দেখা সম্ভব নয়। এমনকি নবী ও রাসূলগণও দেখেননি। তবে স্বপ্নে দেখার ব্যাপারে আলেমগণ মতানৈক্য করেছেন। অনেকে দাবী করেছেন যে, তিনি স্বপ্নে আল্লাহকে দেখেছেন। কেউ কেউ বলে থাকেন, ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল (রাহিমাহুল্লাহ) একশ’ বার স্বপ্নে আল্লাহকে দেখেছেন। আল্লাহই সর্বাধিক জ্ঞাত।শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ, ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িম, শায়খ ইবনু বায, শায়খ মুহাম্মাদ ইবনু সালিহ আল-উসাইমীন, শায়খ মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রাহিমাহুমুল্লাহ), শায়খ সালিহ আল-মুনাজ্জিদ (হাফিযাহুল্লাহ) ও সঊদী আরবের স্থায়ী ফাতাওয়া কমিটি বলেন, ‘ইজমা অর্থাৎ সাহাবীগণের ঐকমত্যানুযায়ী নবী (ﷺ) মি‘রাজের রাত্রীতে আল্লাহ তা‘আলাকে স্বচক্ষে দেখেননি। শুধু ইবনু আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা) ব্যতীত। প্রকৃতপক্ষে ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা)-এর মতটি কিন্তু অন্যান্য ছাহাবীর মতের বিরোধী নয়। কেননা তিনি এ কথা বলেননি যে, নবী (ﷺ) তাঁর মস্তিষ্কের চক্ষু দ্বারা আল্লাহ তা‘আলাকে দেখেছেন। বরং তিনি এ কথা বলেছেন যে, তিনি আল্লাহ তা‘আলাকে তাঁর অন্তরের চক্ষু দ্বারা দেখেছেন। এর উপর ভিত্তি করেই ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল (আলাইহিস সালাম) বলেন, নবী (ﷺ) সত্যিই তাঁর প্রভুকে স্বপ্নে দেখেছেন। আর নবীদের স্বপ্ন সত্য হয় এবং অবশ্যই তা বাস্তবে পরিণত হয়। ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল (রাহিমাহুল্লাহ) এটি বলেননি যে, তিনি জাগ্রত অবস্থায় চর্মচক্ষু দিয়ে দেখেছেন। যারা তাঁর থেকে এটি বর্ণনা করেছেন, তারা ভুল করেছেন। কিন্তু তিনি একবার বলেছেন, মুহাম্মাদ (ﷺ) তাঁর প্রভুকে দেখেছেন। আরেকবার ব্যাখ্যা করে বলেছেন, অন্তরের চক্ষু দিয়ে দেখেছেন। বিশুদ্ধ মতানুযায়ী, রাসূল (ﷺ) মি‘রাজের রাত্রীতে জিবরীলকে দেখেছেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَ لَقَدۡ رَاٰہُ نَزۡلَۃً اُخۡرٰی ‘নিশ্চয় সে তাকে আরেকবার দেখেছিল’ (সূরা আন-নাজম: ১৩)। এই আয়াতে যাকে দেখার কথা বলা হয়েছে তিনি হচ্ছেন জিবরীল’।(
বিস্তারিত জানতে দেখুন:ইজতিমাউল জুয়ূশিল ইসলামিয়্যাহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ১২-৪; ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ২য় খণ্ড, পৃ. ১৯২; আল-ফাতাওয়া আল-ইমারাতিয়্যাহ, পৃ. ৪; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়া,ব ফৎওয়া নং- ১২৪২৩)
.
আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,مَنْ حَدَّثَكَ أَنَّ مُحَمَّدًا ﷺ رَأَى رَبَّهُ فَقَدْ كَذَبَ وَهُوَ يَقُولُ (لَا تُدْرِكُهُ الْأَبْصَارُ) وَمَنْ حَدَّثَكَ أَنَّهُ يَعْلَمُ الْغَيْبَ فَقَدْ كَذَبَ وَهُوَ يَقُولُ لاَ يَعْلَمُ الْغَيْبَ إِلاَّ اللهُ.”যে ব্যক্তি তোমাকে বলে মুহাম্মাদ (ﷺ) স্বীয় রŸকে দেখেছেন, সে মিথ্যা বলল। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘চক্ষু তাঁকে দেখতে পায় না’। আর যে ব্যক্তি তোমাকে বলে মুহাম্মাদ (ﷺ) গায়িব জানেন, সেও মিথ্যা বলল। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘গায়িব জানেন একমাত্র আল্লাহ’।(সহীহ বুখারী, হা/৭৩৮০, ৪৮৫৬, ৩২৩৪) আবূ যার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, ‘আমি রাসূল (ﷺ)-কে জিজ্ঞেস করেছি, আপনি কি আপনার প্রতিপালককে দেখেছেন? তিনি বলেন, نُوْرٌ أَنَّىْ أَرَاهُ ‘তিনি (আল্লাহ) তো নূর, তা আমি কি রূপে দেখবো?’ অন্য বর্ণনায় তিনি বলেছেন, رَأَيْتُ نُوْرًا ‘আমি নূর (জ্যোতি) দেখেছি’।(সহীহ মুসলিম, হা/১৭৮; তিরমিযী, হা/৩২৮২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১৩১৩, ২১৩৯২, ২১৪৯৮, ২১৫২৭) অর্থাৎ আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা ও তাঁর মাঝে নূরের পর্দা ছিল। সহীহ সূত্রে প্রমাণিত যে, আল্লাহ তা‘আলা নূর দ্বারা আবৃত। যেমন রাসূল (ﷺ) বলেছেন, حِجَابُهُ النُّوْرُ لَوْ كَشَفَهُ لَأَحْرَقَتْ سُبُحَاتُ وَجْهِهِ مَا انْتَهَى إِلَيْهِ بَصَرُهُ مِنْ خَلْقِهِ ‘তিনি নূরের পর্দায় আচ্ছাদিত। যদি সে আবরণ খুলে দেয়া হয়, তবে তাঁর নূরের আলোচ্ছটা সৃষ্টি জগতের দৃশ্যমান সব কিছু ভস্ম করে দিবে’।(সহীহ মুসলিম, হা/১৭৯; ইবনু মাজাহ, হা/১৬২-১৬৩, ১৯৫-১৯৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯৫৩০, ১৯৫৮৭, ১৯৬৩২) তিনি আরো বলেছেন, واعلموا أنَّكُم لن ترَوا ربَّكُم حتَّى تموتوا ‘জেনে রাখো! মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে দেখতে পাবে না’।(আলবানী, তাখরীজু কিতাবিস সুন্নাহ, হা/৪২৯; সহীহুল জামি‘, হা/২৯৬৩)
.
বাস্তবে যখন মূসা (আলাইহিস সালাম) এবং আমাদের নবী (ﷺ)-এর পক্ষে আল্লাহ তা‘আলাকে সরাসরি দেখা সম্ভব হয়নি, তখন অন্য কারো পক্ষে যে তা আদৌ সম্ভবপর হবে না, তা বলা-ই বাহুল্য। এর পরেও কেউ যদি এ দুনিয়ায় আল্লাহকে সরাসরি স্বচক্ষে দেখেছেন বলে দাবী করেন, তবে সে যে একজন মস্তবড় মিথ্যুক হবে, তাতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। আক্বীদাহ বিষয়ক কবিতায় জনৈক কবি বলেন,و من قال في الدنيا يراه بعينهথ فذاك زنديق طغا و تمردا.و خالف كتاب الله و الرسل كلها থ و زاغ عن الشرع الشريف و أبعدا.
“যে বলে আল্লাহকে দুনিয়ায় স্বচক্ষে দেখা যায়, সে হলো যিন্দীক (কাফির), সে তো সীমালঙ্ঘন করেছে। আল্লাহর কিতাব এবং সকল রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করেছে। আর শরী‘আত থেকে বিপথগামী হয়ে বহু দূরে চলে গেছে”। সংকলিত। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।