প্রশ্ন: তাহিয়াতুল মসজিদ আদায় করার হুকুম কী? জুমআর খতিবের জন্য তাহিয়্যাতুল মাসজিদ সালাত আদায় করার এবং খুতবার সময়ের পূর্বে মসজিদে এসে বসে থাকা জায়েয কি?
▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬
প্রথমত: মূলনীতি হল সকাল, দুপুর সন্ধ্যা, রাতে যেকোন সময় মসজিদে প্রবেশ করলে সরাসরি না বসে আগে দু’রাকআত সালাত আদায় করা আবশ্যক। এ সালাতকে বলা হয় তাহিয়্যাতুল মসজিদ’। এটাকে ‘দুখুলুল মসজিদও বলা হয়। অধিকাংশ ফকীহর মতে, এ সালাত হলো সুন্নাতে মুআক্কাদাহ। অন্যান্য সুন্নাত সালাত যেভাবে পড়া হয় এ সালাতও এভাবেই পড়তে হয়। এমনকি জুমআর দিন খুতবা চলাকালে মসজিদে উপস্থিত ব্যক্তির জন্য সালাত নিষিদ্ধ হলেও ঐ সময়ে কেউ যদি মসজিদে প্রবেশ করে তাহলে তার জন্য হাল্কা করে ২ রাকআত সালাত পড়া আবশ্যক। যেমন কাউকে সালাত না পড়ে বসতে দেখলে খতীবের উচিৎ তাকে ঐ সালাত পড়তে আদেশ করা। খুতবা শোনা ওয়াজিব হলেও এ সালাতের গুরুত্ব দিয়েছেন খোদ মহানবী (ﷺ)। একদা খুতবা চলাকালে এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করে বসে পড়লে তিনি তাকে বললেন, “তুমি সালাত পড়েছ কি?” লোকটা বলল, না। তিনি বললেন, “ওঠ এবং হাল্কা করে ২ সালাত রাকআত পড়ে নাও।” (সহীহ বুখারী হা/৯৩০, মুসলিম, আবূদাঊদ হা/ ১১১৫-১১১৬) অতঃপর রাসূল (ﷺ) তার সকল উম্মতের জন্য চিরস্থায়ী একটি বিধান দেওয়ার উদ্দেশ্যে লোকেদেরকে সম্বোধন করে বললেন, “তোমাদের কেউ যখন ইমামের খুতবা দেওয়া কালীন সময়ে উপস্থিত হয়, সে যেন (সংক্ষেপে) ২ রাকআত সালাত পড়ে নেয়।”(সহীহ বুখারী হা/১১৭০ সহীহ মুসলিম হা/৮৭৫, আবূদাঊদ হা/১১১৭) একদা প্রখ্যাত সাহাবী আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) মসজিদ প্রবেশ করলেন। তখন মারওয়ান খুতবা দিচ্ছিলেন। তিনি সালাত পড়তে শুরু করলে প্রহ্রীরা তাঁকে বসতে আদেশ করল। কিন্তু তিনি তাদের কথা না শুনেই সালাত শেষ করলেন। সালাত শেষে লোকেরা তাকে বলল, আল্লাহ আপনাকে রহ্ম করুন। এক্ষনি ওরা যে আপনাকে অপমান করত। উত্তরে তিনি বললেন, আমি সে সালাত ছাড়ব কেন যে সালাত পড়তে নবী (ﷺ)-কে আদেশ করতে দেখেছি।(তিরমিযী হা/৫১১)
এমনকি মসজিদের ভিতর দিয়ে যাতায়াত করবে অথচ দুই রাকাত সালাত আদায় করবে না এটি কেয়ামতের একটি ছোট আলামত। হাদীসে এসেছে ক্বিয়ামতের পূর্বে এমন অবস্থা হবে যে বড় বড় মসজিদ নির্মাণ করা হবে এবং লোকেরা এর ভিতর দিয়ে অন্যত্র যাতায়াত করবে। অথচ মসজিদকে রাস্তা হিসাবে ব্যবহার করা ইসলামী শরী‘আতে নিষেধ। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, لَا تَتَّخِذُوا الْمَسَاجِدَ طُرُقًا، إِلَّا لِذِكْرٍ أَوْ صَلَاةٍ، ‘তোমরা মসজিদকে সালাত আদায় ও যিকির-আযকার ব্যতীত রাস্তা হিসাবে গ্রহণ করবে না’।(মু‘জামুল আওসাত্ব হা/৩১; সিলসিলা সহীহাহ হা/১০০১; সহীহুল জামে‘ হা/৭২১৫ হাদীসটি সহীহ)
.
দ্বিতীয়ত: সাপ্তাহিক শুক্রবার জুমআর খতীবের জন্য সুন্নত হল যে, তিনি বাড়িতে সুন্নাত সালাত আদায় করে অপেক্ষা করবেন অতঃপর মোয়াজ্জিন যখন দ্বিতীয় আযান দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিবেন তখন খতীব মসজিদে প্রবেশ করবেন এবং কোন সালাত আদায় না করে সরাসরি খুতবা দেওয়ার জন্য মিম্বারে উঠে যাবেন। এই সময় তিনি তাহিয়্যাতুল মাসজিদের দুই রাকাআত সালাত কিংবা অন্য কোন সালাত আদায় করবেন না আর এটাই সুন্নত এবং এমনটাই ছিল সর্বশ্রেষ্ঠ মানব রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর আমল। আলহামদুলিল্লাহ আরব বিশ্বে এখনো এই সুন্নাহ চালু রয়েছে। হাদীসে এসেছে আম্মাজান আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন,”যখন মুয়াজ্জিন ফজরের সালাতের প্রথম আযান শেষ করতেন তখন আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়ে যেতেন এবং সুবহে সাদিকের পর ফজরের সালাতের পূর্বে দু’ রাক’আত সালাত সংক্ষেপে আদায় করতেন, অতঃপর ডান কাতে শুয়ে পড়তেন এবং ইক্বামাতের জন্য মুয়াজ্জিন তাঁর নিকট না আসা পর্যন্ত শুয়ে থাকতেন”।(সহীহ সহিহ বুখারী, হা/৬২৬; আ.প্র. ৫৯০, ই.ফা. ৫৯৮)। অপর বর্ননায় জাবির ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, সূর্য ঢলে পড়লেই বিলাল আযান দিতেন। কিন্তু রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বের হয়ে না আসা পর্যন্ত এবং তাকে না দেখা পর্যন্ত ইক্বামত দিতেন না। বের হয়ে আসার পর তিনি তাকে দেখতেন তখনই কেবল ইক্বামত দিতেন”।(সহিহ মুসলিম হা/১২৫৭; ই.ফা. ১২৪৫, ই.সে. ১২৫৮) এই হাদীসগুলো প্রমান করে খুতবার সময় কিংবা ইকামতের সময় ইমাম সাহেবের জন্য মসজিদে প্রবেশ করা সুন্নাহ।
.
ইবনু কাইয়্যিম আল-জাওজিয়্যা,(রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭৫১ হি.] বলেন:” وكان صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يمهل يوم الجمعة حتى يجتمعَ الناسُ ، فإذا اجتمعوا ، خرج إليهم ، فإذا دخل المسجد سلَّم عليهم ، فإذا صَعِد المنبر استقبل الناسَ بوجهه وسلَّم عليهم ، ثم يجلِس ، ويأخذ بلالٌ في الأذان ، فإذا فرغ منه ، قام النبي صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ” انتهى باختصار .
“জুমআর দিন মানুষ একত্রিত হওয়ার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেরি করতেন। যখন মানুষ একত্রিত হয়ে যেত তখন তাদের নিকটে বের হতেন। যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে প্রবেশ করতেন তখন লোকজনদেরকে সালাম দিতেন, তারপর যখন মেম্বারে উঠতেন তখন তিনি মানুষদের দিকে তাঁর মুখমন্ডল করতেন এবং তাদেরকে সালাম দিয়ে বসতেন। বেলাল আজান দিতেন। যখন তিনি আযান শেষ করতেন, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম (খুতবার জন্য) দাঁড়াতেন”।(ইবনু ক্বাইয়িম, যাদুল মা‘আদ, খণ্ড: ১ পৃষ্ঠা: ৪২৯)
.
তবে হা! যদিও খতীবের জন্য নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে মসজিদে আসা সুন্নাহ সম্মত নয়; তবুও ইমাম যদি শারঈ কোন কল্যাণের স্বার্থে (তার বাসা মসজিদ থেকে অনেক দুরে কিংবা অন্য কোন শারঈ উদ্দেশ্য) তিনি জুমার দিন দ্বিতীয় আযান তথা খুতবার সময় হওয়ার পূর্বেই মসজিদে প্রবেশ করেন তাহলে তিনি তাহিয়্যাতুল মাসজিদের দুই রাকাআত সালাত আদায় করবেন। শাইখ সালিহ আল-মুনাজ্জিদ (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন:إذا بكر الإمام قبل الإقامة لكون بيته بعيدا عن المسجد، أو لمصلحة، فإن المشروع في حقه أن يصلي تحية المسجد، وأن يصلي السنة القبلية إن لم يكن صلاها في بيته، ثم يجلس في أي موضع من المسجد، أو يأمر المؤذن فيقيم.”ইমাম সাহেব ইকামাতের আগেই মসজিদে আসেন যদি ইমাম তার বাড়ি মসজিদ থেকে অনেক দূরে থাকার কারণে বা কোনো কারণে আগে তাড়াতাড়ি চলে আসে, তাহলে তার জন্য তাহিয়্যাতুল মাসজিদ স্বলাত আদায় করা শরীয়ত সম্মত এবং বাড়িতে নফল (ফরজ সলাতের আগের পরের সুন্নাত) সালাত আদায় না করে থাকলে তিনি সেখানে সুন্নত আদায় করতে পারবেন, তারপরে মসজিদের যে কোন স্থানে বসবেন অথবা মোয়াজ্জেনকে আযান দিতে বলে তিনি মসজিদে অবস্থান করবেন”।(ইসলাম সুওয়াল জাওয়াব, ফাতাওয়া নং-৩৭৩৮০৮) কিন্তু শরীয়ত সম্মত কারণ ছাড়া বিনা কারনেই ইমামের জন্য মসজিদে আগে ভাগে চলে আসা সুন্নাতের খেলাফ। এই বিষয়ে সালাফদের কয়েকটি ফাতওয়া উল্লেখ করা হল:
.
শাফি‘ঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ইমাম মুহিউদ্দীন বিন শারফ আন-নববী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৭৬ হি.] বলেছেন, ইমাম নববী (রাহিমাহুল্লাহ) তার আল মাজমু গ্রন্থে এ বলেন: মুতাওয়াল্লি বলেছেন:
: يستحب للخطيب أن لا يحضر للجمعة ، إلا بعد دخول الوقت ، بحيث يشرع فيها أول وصوله المنبر ; لأن هذا هو المنقول عن رسول الله صلى الله عليه وسلم ، وإذا وصل المنبر صعده ، ولا يصلي تحية المسجد , وتسقط هنا التحية : بسبب الاشتغال بالخطبة ، كما تسقط في حق الحاج إذا دخل المسجد الحرام ، بسبب الطواف ….. ”
“খতিবের জন্য মুস্তাহাব বিষয় হল: সময়ের পূর্বে মসজিদে প্রবেশ না করা, যখন সে মসজিদে পৌঁছবে তখন মিম্বারে উঠে যাবে। এমনটি বর্ণনা এসেছে রাসূল (ﷺ)-এর কাছ থেকে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মিম্বারে পৌঁছতেন তখন তিনি উঠে যেতেন তিনি তাহিয়াতুল মসজিদ সালাত আদায় করতেন না। এ ক্ষেত্রে খুতবায় ব্যস্ত থাকার কারণে তাহিয়াতুল মাসজিদ সালাত ছাড় দেওয়া হয়েছে ঠিক তেমনিভাবে মসজিদে হারামে যখন হাজীগণ প্রবেশ করে তখন তাদেরকেও তাহিয়াতুল মসজিদ সালাত আদায় করতে হবে না তাওয়াফ করায় ব্যস্ত থাকার কারণে”।(নববী আল মাজমূ ৪র্থ খন্ড পৃষ্ঠা: ৪০১)
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.]-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে: জুমার দিনে খতিবের জন্য তাহিয়াতুল মসজিদ সালাত আদায় করে বসা কি জায়েজ রয়েছে অথবা সরাসরি মেম্বারে উঠে যাওয়া কি জায়েজ রয়েছে?
তিনি জবাবে বলেছেন:
هذه المسألة نجيب عنها على وجهين :
الوجه الأول : أن بعض أئمة الجوامع يتقدمون ويأتون في الساعة الأولى أو الثانية ؛ رجاء أن يصيبوا أجر من تقدم ، ثم يصلون ما شاء الله ، ثم يجلسون إلى أن تزول الشمس ثم يقوم فيصعد المنبر ، وهذا اجتهادٌ ، لكنه خلاف الصواب ، فإن النبي صلى الله عليه وسلم لم يكن يأتي يوم الجمعة ، ويجلس ينتظر الزوال ، ثم يقوم فيسلم على الناس ، بل كان عليه الصلاة والسلام يأتي حين الزوال ، أو حين يريد أن يخطب ، دون أن يتقدم .
الوجه الثاني : أن الخطيب إذا دخل في الوقت الذي يريد أن يخطب فيه ، فإنه لا يصلى ركعتين بل السنة أن يتقدم إلى المنبر ويصعد إلى المنبر ويأتي بالخطبة ” .
“এই মাসআলার ক্ষেত্রে আমরা দুটি উত্তর দিয়ে থাকি:
এক: কিছু ইমাম বলেছেন: তারা প্রথম বা দ্বিতীয় সময়ে চলে আসে এই আশায় যে তারা প্রথমে আসার সওয়াব অর্জন করবে। তারপর আল্লাহ যতটুকু চান ততটুকু সালাত আদায় করে সূর্য ঢলা পর্যন্ত বসে থাকে এরপর মিম্বারে ওঠে। এটা একটি ইজতেহাদী কথা , যা সঠিক নয়।নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমার দিন আগে এসে সূর্য ঢলার অপেক্ষা করতেন না এবং সময় হলে দাঁড়িয়ে মানুষদেরকে সালাম দিতেন না। বরং তিনি সূর্য ঢলার সময়ে আসতেন অথবা যখন খুতবা দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করতেন তখন তিনি আসতেন কিন্তু আগে আসতেন না।
দুই: খতীব সাহেব খুতবা দিতে চান এমন সময়ে প্রবেশ করেন তবে তিনি দুই রাকাআত নামায পড়েন না, বরং তার জন্য মিম্বরের কাছে গিয়ে মিম্বরে উঠা এবং খুতবা দেওয়া সুন্নত। (ইবনু উসাইমীন,ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ দারব: ২/৮)
.
শাইখ সৌদ ইবনু ইব্রাহিম আশ শুরাইম যিনি মক্কার হারামের ইমাম তিনি এই মাসালার ক্ষেত্রে আহলুল ইলমদের কথা বর্ণনা করে বলেন:
وبهذا تعلم أن السنة ألا يبكر الخطيب قبل وقت دخوله ؛ عملاً بهدي النبي صلى الله عليه وسلم ، وأن من فعل ذلك : لم يكن قد فعل محرمًا ، ولكنه فعل ما هو خلاف السنة ، إلا أن بعض المساجد لها من الخصوصية في الواقع ، ما يستلزم حضور الخطيب قبل وقته ، لأسباب ترجع إلى كل مسجد بحسبه ، فمثلاً في المسجد الحرام تقتضي الحال تبكير الخطيب قبل وقت دخوله بزمن يسير ، وهذا أمر لا بأس به ، غير أن الأكمل والأقرب لهدي النبي صلى الله عليه وسلم ألا يدخل الخطيب المسجد إلا إلى منبره مباشرة ، والعلم عند الله تعالى ”
“আমি বলছি এ দ্বারা জেনে রাখুন যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাজকে অনুসরণ করার ক্ষেত্রে খতিবের জন্য সময়ের পূর্বে আসা সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত নয়। তবে কেউ যদি সময়ের পূর্বে চলে আসে তাহলে সে হারাম কাজ করলো বিষয়টি এমন নয়। কিন্তু সে সুন্নাতের বিপরীত করল। তবে কিছু মসজিদের নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে যে সময়ের পূর্বে খতিবের উপস্থিত হওয়া খুব প্রয়োজন যাতে করে মসজিদের প্রয়োজন অনুসারে কারণ গুলো মিটে যায়। উদাহরণস্বরূপ মসজিদে হারামের ক্ষেত্রে কিছু সময় পূর্বে খতিব সাহেব আগমন করতে পারেন এটা কোন সমস্যা নাই তবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে নির্দেশনার নিকটবর্তী এবং পরিপূর্ণ অনুসারীর নিয়ম হলো খতিব সাহেব মসজিদে প্রবেশ করে সরাসরি মেম্বারে উঠে যাবেন।(আল্লাহ তায়ালা সবচেয়ে ভালো জানেন)। (আশ শামুল ফি ফিক্বহিল খতীব ওয়াল খুতবাহ পৃষ্ঠা: ৭৭ )
.
বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায আন-নাজদী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.]কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল প্রশ্ন: মসজিদের ইমাম যদি বাড়িতে অপেক্ষা করে থাকেন, ইকামাতের সময় ছাড়া মসজিদে না আসেন, বাড়িতে নফল সালাত বা কুরআন পাঠে ব্যস্ত না থাকেন, তবে ইকামাতের আগে তাড়াতাড়ি মসজিদে যাওয়া কি তার জন্য উত্তম?
তিনি উত্তর দিয়েছেন:
هذا لا نعلم فيه حدا محدودا، ولا سنة واضحة، بل الأمر يرجع إلى الإمام، فإن رأى أن حضوره للمسجد أصلح لقلبه وأنفع للناس ليصلي ما تيسر ويقرأ، وربما كان عالما فيفتي الناس بما يسألونه عنه ونحو ذلك كان هذا أفضل، وإن رأى أن بقاءه في البيت أصلح له، يقرأ في بيته ويصلي الرواتب في بيته، ثم يأتي عند إقامة الصلاة كما هو الغالب من فعل النبي عليه الصلاة والسلام، والمعروف من فعله صلى الله عليه وسلم أنه كان يبقى في البيت، فإذا جاء وقت الإقامة خرج إلى الناس عليه الصلاة والسلام هذا هو الأصل؛ أن يبقى في بيته، ويشتغل بما يسر الله له من قراءة أو علم أو صلاة نافلة أو نحو ذلك، ويحرص على الرواتب التي شرعها الله من أربع قبل الظهر وثنتين بعدها، وثنتين بعد المغرب، وثنتين بعد العشاء، وثنتين قبل صلاة الصبح، الرواتب التي حافظ عليها النبي عليه الصلاة والسلام، فإن فعلها الإمام في البيت، وفعل ما يسر الله له من الخير؛ كقراءة القرآن أو قراءة علم، أو يحفظ شيئا ينفعه من العلم أو القرآن فكل هذا طيب، فالأصل أن الإمام يبقى في البيت اقتداء بالنبي عليه الصلاة والسلام، ثم يأتي وقت الإقامة فيقيم الصلاة، فإذا رأى في حالة من الحالات أو في قرية من القرى أو بلد من البلدان أن مجيئه إلى المسجد قبل الصلاة، ينتظرها مع الناس في المسجد، ويصلي ما كتب الله له مما شرع الله، ويقرأ القرآن أو يسبح ويهلل في محل من المسجد، حتى يحضر وقت الإقامة كل هذا لا بأس به، والخلاصة أن الأصل والأفضل أن يكون في البيت حتى يأتي وقت الإقامة اقتداء بالنبي عليه الصلاة والسلام، فإذا حصل له أمر آخر يقتضي أنه يحضر في المسجد، وأن في ذلك لمصلحة راجحة على البقاء في البيت فلا أعلم في هذا بأسا، بل ينبغي له أن يتحرى ما هو أقرب إلى المصلحة والنفع للمسلمين”
“আমরা এ ব্যাপারে কোন সুনির্দিষ্ট সীমা বা স্পষ্ট সুন্নাহ জানি না বরং বিষয়টি ইমামের সাথে সম্পর্কিত। যদি ইমাম মনে করেন যে মসজিদে গেলে তার অন্তর পরিতৃপ্তি লাভ করে এবং মানুষেরও উপকার হয় তাহলে সে সেখানে সালাত আদায় করে কোরআন তেলাওয়াত করবে, অবস্থান করবে, কখনো এমনও দেখা যায় যে ইমাম সাহেব একজন আলেম ব্যক্তি মানুষেরা তাকে প্রশ্ন করে বিভিন্ন জিনিস জানার জন্য, এছাড়াও আরো অনেক উপকারের দিকে লক্ষ্য করে সেখানে যেতে পারে। যদি তিনি মনে করেন যে বাড়িতে থাকাই তার জন্য উত্তম, তার উচিত বাড়ীতে তেলাওয়াত করা এবং বাড়িতে সুন্নাত সালাত পড়া, তারপর ইকামাতের সময় হলে এসে উপস্থিত হবেন, যেমনটি প্রায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেছেন। তিনি বাড়িতে থাকতেন ইকামতের সময় মসজিদের দিকে রওনা দিতেন। আর এটাই হল মূলনীতি যে, বাড়িতে অবস্থান করবে নফল সালাত আদায় করবে কুরআন তিলাওয়াত করবে ইত্যাদি। সুন্নাতে রাতেবাগুলোর প্রতি আগ্রহশীল হওয়া জরুরি যেগুলো আল্লাহ তা’আলা নির্ধারণ করেছেন যেমন জোহরের আগে চার রাকাআত পরে দুই রাকাআত, মাগরিবের পরে দুই রাকাআত, এশারের পরে দুই রাকাআত, কিফজরের পূর্বে দুই রাকাআত এগুলো হলো সুন্নাতে রাতেবা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এগুলোর প্রতি খুব যত্নবান ছিলেন। যদি ইমাম বাড়িতে তা করে এবং আল্লাহ তার জন্য যা কিছু সহজ করে দিয়েছেন (নফল সালাত, কুরআন তেলাওয়াত) তা করে; যেমন কু্রআন পড়া বা জ্ঞান অর্জন করা, বা কোন কিছু মুখস্থ করা যা তাকে জ্ঞান ও কুরআনের ক্ষেত্রে উপকার সাধিত করে, এ সবগুলোই হল উত্তম কাজ। ফলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ করার জন্য বাড়িতে অবস্থান করাটাই হল মূলনীতি। অতঃপর ইকামাতের সময় উপস্থিত হয়ে সে সালাতে দাঁড়াবে এবং যদি সে এমন কোন পরিস্থিতি দেখে অথবা গ্রামগঞ্জ বা শহর এলাকা থেকে মুসল্লী মসজিদে আসতেই থাকে তাহলে ইমাম সাহেব মানুষের সাথে বড় জামাআত করে সালাত আদায় করার জন্য একটু অপেক্ষা করবেন এবং সেই ফাঁকে যথাসাধ্য সালাত আদায় করবেন। তিনি কুরআন তেলাওয়াত করবেন বা মসজিদের কোন এক জায়গায় বসে তাসবিহ পাঠ করবেন তারপর যখন ইকামতের সময় হয়ে যাবে তখন সালাতের জন্য দাঁড়িয়ে যাবে। মূল কথা এবং উত্তম পদ্ধতি হলো বাড়িতে অবস্থান করে ইকামতের সময় মসজিদে প্রবেশ করা এটা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণীয় পদ্ধতি। যদি তার সাথে অন্য কোনো বিষয় অর্জন হয়, যার জন্য তাকে মসজিদে উপস্থিত থাকতে হয়, এটি বাড়িতে থাকার চেয়ে বেশি উপকার হলে,আমি এতে দোষের কিছু মনে করি না, বরং ইমাম সাহেব ওই কাজটাই করবে যেটাতে মানুষের বেশি কল্যাণকর দিক রয়েছে”।(বিন বায; ফাতাওয়া নুরুন আলাদ দারব; ১২/১৩৪)
.
আল্লাহ আমাদেরকে আকীদা, আমল, কথা, দাওয়াত, চরিত্র ইত্যাদিসহ জীবনের সকল ক্ষেত্রে প্রকৃত সালাফী ও আহলে হাদীস হওয়ার তৌফিক দান করুন এবং এই বিজয় কাফেলাকে সার্বিকভাবে সর্বত্র নিরাপত্তা দান করুন। আমীন!! (আল্লাহই ভাল যানেন)। ______________________________
উপস্থাপনায়: জুয়েল মাহমুদ সালাফি।
সম্পাদনায়: ওস্তাদ ইব্রাহিম বিন হাসান (হাফি:) শিক্ষক, চর বাগডাঙ্গা সেরাজুল হুদা লতিফিয়া নুরিয়া ইসলামিয়া ও হাফিজিয়া মাদরাসা চাঁপাইনবাবগঞ্জ।