টাকা দিয়ে ফিতরা আদায় করলে তা যথেষ্ট হবে কিনা এ নিয়ে বিংশ শতাব্দীর চারজন শ্রেষ্ঠ আলেমের ফতওয়া

টাকা দিয়ে ফিতরা আদায় করলে তা যথেষ্ট হবে কিনা এ নিয়ে বিংশ শতাব্দীর চারজন শ্রেষ্ঠ আলেমের ফতওয়া ও সাউদির স্থায়ী ফতওয়া বোর্ডের  ফতওয়া নিম্নরুপ—-

1f4da📚১. আল্লামাহ নাছির-উদ-দ্দিন আলবানী (রহিমাহুল্লাহ্) বলেছেন, “যারা বলেন, অর্থ দ্বারা ফিতরা আদায় করা জায়েয, তারা ভুলে পতিত হয়েছেন। কেননা তারা সুস্পষ্ট দলিলের বিরোধিতা করছেন।”
রেফারেন্স – আলবানী (রহিমাহুল্লাহ্), সিলসিলাতুল হুদা ওয়ান নূর; ২৭৪ নং অডিও ক্লিপ

1f4da📚২. আল্লামাহ বিন বায (রহিমাহুল্লাহ্) টাকা দিয়ে ফিতরা আদায়ের বিষয় টি নিয়ে লম্বা একটি আলোচনা শেষে বলেন—

”ومما ذكرنا يَتَّضِحُ لصاحب الحق أن إخراج النقود في زكاة الفطر لا يجوز ولا يجزئ عمن أخرجه؛ لكونه مخالفا لما ذُكر من الأدلة الشرعية.“

“আমরা যে আলোচনা করলাম তা সত্যানুসন্ধানী ব্যক্তির কাছে স্পষ্ট করে দেয় যে, অর্থ দিয়ে ফিতরা আদায় করা জায়েয নয়, আর যে ব্যক্তি অর্থ দিয়ে আদায় করে তার পক্ষ থেকে তা যথেষ্ট হবে না। যেহেতু তা উল্লিখিত শার‘ঈ দলিল বিরোধী।”
রেফারেন্স — ইমাম ইবনু বায (রহিমাহুল্লাহ্), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতিম মুতানাওয়্যা‘আহ্, খণ্ড: ১৪; পৃষ্ঠা: ২১১; দারুল ক্বসিম, রিয়াদ্ব (রিয়াদ) ছাপা; সন: ১৪২০ হিজরী (১ম প্রকাশ)।

1f4da📚৩. আল্লামাহ সলেহ ‘উছাইমীন (রহিমাহুল্লাহ্) বলেছেন,

”لا يجوز أن تُدفَعَ زكاة الفطر نقودا بأي حال من الأحوال، بل تدفع طعاما، والفقير إذا شاء باع هذا الطعام وانتفع بثمنه.“

“অর্থ দিয়ে ফিতরা দেওয়া কোনো অবস্থাতেই জায়েয নয়। বরং তা খাদ্য দ্বারা আদায় করা হবে। আর ফকির চাইলে সে খাদ্য বিক্রি করবে এবং তার মূল্য থেকে (নিজে) উপকৃত হবে।”
রেফারেন্স – ইমাম ইবনু ‘উছাইমীন (রহিমাহুল্লাহ্), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া রসাইল; খণ্ড:১৮; পৃষ্ঠা: ২৭৭; দারুছ ছুরাইয়্যা, রিয়াদ্ব (রিয়াদ) ছাপা; সন: ১৪২৩ হি./২০০৩ খ্রি. (১ম প্রকাশ)।

1f4da📚 ৪. যুগশ্রেষ্ঠ ফক্বীহ্ আল্লামাহ স্বলিহ্ আল ফাওযান (হাফিয্বাহুল্লাহ্) বলেছেন, “অর্থ দিয়ে ফিতরা আদায় করা (আদায় হিসেবে) যথেষ্ট হবে না। কেননা তা নাবী (স্বল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নির্দেশ বিরোধী। যেহেতু রসূল (স্বল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খাদ্য দ্বারা ফিতরা আদায় করতে আদেশ করেছেন।… এটাই অধিকাংশ ‘আলিমের মত। এটা তিন ইমাম তথা মালিক, শাফি‘ঈ ও আহমাদ (রহিমাহুমুল্লাহ্) ‘র মত। আবূ হানীফাহ্ (রহিমাহুল্লাহ্) অর্থ দিয়ে আদায় করা জায়েয বলেছেন। কিন্তু এটা সুস্পষ্ট দলিল বিরোধী এবং সুস্পষ্ট দলিলের সাথে ইজতিহাদ। আর দলিলের বিদ্যমানতায় ইজতিহাদ জায়েয নয়। একারণে যখন ইমাম আহমাদ (রহিমাহুল্লাহ্) কে অর্থ দিয়ে ফিতরা আদায়ের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হয় এবং বলা হয় যে অমুক (‘আলিম) ‘অর্থ দিয়ে ফিতরা আদায় বৈধ’ ফতোয়া দিয়েছেন, তখন তিনি (রহিমাহুল্লাহ্) বলেন, ‘তারা রসূলুল্লাহ্ (স্বল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কথা পরিত্যাগ করছে, আর অমুকের ফতোয়া গ্রহণ করছে!’ সুতরাং সুস্পষ্ট দলিল অনুযায়ী আমল করা ওয়াজিব।”
রেফারেন্স – – ইমাম স্বলিহ্ আল ফাওযান (হাফিয্বাহুল্লাহ্), শারহু যাদিল মুস্তাক্বনি‘; খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৩০৩-৩০৫; দারুল ‘আস্বিমাহ্, রিয়াদ্ব (রিয়াদ) ছাপা; সন: ১৪২৪ হি./২০০৪ খ্রি. (১ম প্রকাশ)।

1f4da📚৫. সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফতোয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির ‘আলিমগণ ফতোয়া দিয়েছেন,
ﻻ ﻳﺠﻮﺯ ﺩﻓﻊ ﺍﻟﻨﻘﻮﺩ ﺑﺪﻻً ﻣﻦ ﺍﻟﻄﻌﺎﻡ ﻓﻲ ﺻﺪﻗﺔ ﺍﻟﻔﻄﺮ ؛ ﻷﻥ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺃﻣﺮ ﺑﺈﺧﺮﺍﺝ ﺍﻟﻄﻌﺎﻡ ﻓﻲ ﺻﺪﻗﺔ ﺍﻟﻔﻄﺮ،

“খাদ্যের পরিবর্তে অর্থ দিয়ে ফিতরা আদায় করা জায়েয নয়। কেননা নাবী (স্বল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খাদ্য দিয়ে ফিতরা আদায় করতে আদেশ করেছেন।”
দ্র.: ফাতাওয়া লাজনাহ্ দাইমাহ্; আল ইফতা ডট নেটে রমাদ্বান মাস সেকশনের ‘যাকাত ও ফিতরা’ অংশের ফতোয়া; প্রশ্ন নং: ৫; সংগৃহীত: alifta.net

বি:দ্র– অনেক অঞ্চলে এই অযুহাতে টাকা দিয়ে ফিতরা আদায় করা হয় যে, গরিব/মিসকিন লোকেরা খাদ্যশস্য নিতে চায় না বরং তারা নগদ টাকা নিতে চায় তাই আমরা টাকা দিয়ে ফিতরা আদায় করি কিন্তু এই দলিল কতটুকু গ্রহণযোগ্য? এ প্রসঙ্গে আল্লামাহ স্বলিহ্ আল ফাওযান (হাফিয্বাহুল্লাহ্) কে জিজ্ঞেস করা হয় যে, “আমাদের দেশে অর্থ দ্বারা ফিতরা আদায় করা হয় এ দলিলের ভিত্তিতে যে, মিসকীনরা শস্য চায় না। এক্ষেত্রে আমরা কী করবো ?”

উত্তরে শাইখ (হাফিয্বাহুল্লাহ্) বলেন, “এটা মিসকীনদের কথা অনুযায়ী হবে না। এটা একটি ‘ইবাদত। রসূল (স্বল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে যেভাবে বর্ণিত হয়েছে সেভাবেই তা সম্পাদন করা হবে। আর যে খাদ্য চায় না, সে মূলত অভাবীই নয়। ফিতরা অভাবী ব্যক্তিকে দাও, যে খাদ্য চায়।”
রেফারেন্স –
www.alfawzan.af.org.sa/ar/node/12939.

Share: