প্রশ্ন: গত ৮ জানুয়ারি আমার বাবা মারা যান।এখন এই রমাদানের শেষ দশকের জন্য আমার আম্মু কি ওমরায় যেতে পারবে? যদি সঠিক বিষয়টি আমাকে জানাতেন খুবই উপকৃত হতাম।
▬▬▬▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। প্রথমেই আমরা আল্লাহ্র কাছে দু’আ করছি তিনি যেন, আপনার পিতার প্রতি দয়া করেন এবং তাকে ক্ষমা করে দেন এবং মুসলিম উম্মাহর সকল মৃতব্যক্তিদের প্রতি দয়া করেন। অতঃপর কুরআন সুন্নাহ’র দলিল এবং আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের অধিকাংশ ইসলামি বিদ্বানের মতে মৃত স্বামীর ইদ্দত পালনকারী স্ত্রী নির্দিষ্ট সময় ইদ্দত পূর্ণ হওয়ার পূর্বে একান্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাহিরে যেতে পারবেন না এমনকি হজ্জ উমরা’হর জন্যেও না। কারন স্বামী মারা গেলে স্ত্রীকে ৪ মাস ১০ দিন ইদ্দত পালন করতে হবে। এর দলিল হচ্ছে আল্লাহ্র বাণী: “আর তোমাদের মধ্যে যারা স্ত্রী রেখে মারা যায়, তারা (স্ত্রীগণ) নিজেরা চার মাস দশ দিন অপেক্ষায় থাকবে”।(সূরা বাক্বারা, আয়াত: ২৩৪) অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা সমগ্র স্ত্রী জাতিকে সম্বোধন করেছেন। প্রাপ্তবয়স্কা, অপ্রাপ্তবয়স্কা, যুবতী, বৃদ্ধা ও বন্ধ্যা সব ধরনের স্ত্রী এর অন্তর্ভুক্ত (ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ)-এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট)। ইমাম ইবনু কুদামা,ইবনু আব্দিল বারর, ইবনুল মুনযির (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘আলিমগণ বলেছেন, এই আয়াত প্রমাণ করে যে, স্বামী মারা গেলে প্রত্যেক স্ত্রীকে ৪ মাস ১০ দিন ইদ্দত পালন করতে হবে। এখানে ছোট-বড়, প্রাপ্তবয়স্কা, অপ্রাপ্তবয়স্কা, বৃদ্ধা ও বন্ধ্যা সহ সব ধরনের স্ত্রীদের সম্বোধন করা হয়েছে, স্বামীর সাথে তার বাসররাত হোক কিংবা না হোক। এ আয়াত সাধারণভাবে সকল স্ত্রীদের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে: (আল-মুগনী, ৮ম খণ্ড, পৃ. ১১৫; আল-ইসতিযকার, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ১৭৮) তবে শুধু গর্ভবতী স্ত্রী ব্যতীত। কেননা গর্ভবতী নারীদের ইদ্দতকাল সন্তান প্রসব পর্যন্ত।এর দলিল হচ্ছে আল্লাহ্র বাণী: “আর গর্ভবতী নারীদের ইদ্দতকাল সন্তান প্রসব পর্যন্ত”।[সূরা ত্বালাক, আয়াত: ৪] এছাড়া বিবাহের পর বাসররাত না হয়ে থাকলেও স্বামীহারা নারী ঐ ইদ্দত পালন করবে। নাবালিকা কিশোরী অথবা অতিবৃদ্ধা হলেও ইদ্দত পালন করতে হবে।(মাজাল্লাতুল বুহূছিল ইসলামিয়্যাহ, ১৬তম খণ্ড, পৃ. ১১৪, ১২০, ১৩২)। যে নারীর স্বামী মারা গেছে তিনি চন্দ্র মাস অনুযায়ী ইদ্দত পালন করবেন; সৌর মাস অনুযায়ী নয়। কেননা শরিয়তের বিধি-বিধান চন্দ্র মাসের সাথে সম্পৃক্ত।আল-মাওসুআ আল-ফিকহিয়্যা”খণ্ড: ২৯; পৃষ্ঠা: ৩১৫-৩১৬)
.
ইমাম আবু বকর ইবনুল মুনযির (রহিমাহুল্লাহ) বলেন:
واختلفوا في خروج المعتدة للحج والعمرة .
فمنع من ذلك عمر بن الخطاب ، وروي ذلك عن عثمان بن عفان.وبه قال ابن المسيب ، والقاسم بن محمد ، والشافعي ، وأصحاب الرأي ، وأبو عبيد ، وحكاه أبو عبيد عن الثوري.
وقال مالك: ترد ما لم تحرم …قال أبو بكر: بالقول الأول أقول
“ইদ্দত পালনকারী নারীর হজ্জ বা উমরা’হর উদ্দেশ্যে বের হওয়া নিয়ে মতভেদ রয়েছে। উমর ইবনুল খাত্তাব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) এ বিষয়ে নিষেধ করেছেন, এবং ওসমান ইবন আফফান (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকেও এ মত বর্ণিত হয়েছে। এই অভিমত গ্রহণ করেছেন সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িব, আল-কাসিম ইবন মুহাম্মদ, ইমাম শাফিঈ, আহলে রায় (হানাফি মাজহাব), আবু উবাইদ এবং সুফিয়ান সাওরী। ইমাম মালিক (রহিমাহুল্লাহ) বলেন: “যদি সে (নারী) এখনো ইহরাম না বাঁধে,তাহলে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।” আবু বকর ইবনুল মুনযির (রহিমাহুল্লাহ) বলেন: “আমি প্রথম অভিমতকেই সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য মনে করি।”(ইবনুল মুনযির: আল-ইশরাফ খণ্ড: ৫; পৃষ্ঠা: ৩৪২)
.
হিজরী ৮ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়াহ (রহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] –কে প্রশ্ন করা হয়েছিল:“একজন নারী তার স্বামীর সঙ্গে হজের সংকল্প করেছিলেন, কিন্তু শাবান মাসে তার স্বামী ইন্তেকাল করেন। এখন কি সে নারী হজে যেতে পারবে?”
তিনি উত্তরে বলেন:
ليس لها أن تسافر في العدة عن الوفاة إلى الحج ، في مذهب الأئمة الأربعة ” .
“চার ইমামের (হানাফি, সাফিঈ,মালিকী হাম্বলী) মতানুযায়ী” স্বামীর মৃত্যুজনিত কারণে ইদ্দত পালনকারী স্ত্রীর জন্য হজ্জের উদ্দেশ্যে সফরে বের হওয়া জায়েজ না।”—(ইবনু তাইমিয়্যাহ মাজমুউ ফাতাওয়া, খণ্ড: ৩৪; পৃষ্ঠা: ২৯)
.
এই নিষেধাজ্ঞার মূল ভিত্তি হলো, নবিজি (ﷺ)-এর যুগে প্রখ্যাত সাহাবী আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)-এর বোন ফুরাই‘আহ বিনতু মালিক ইবনু সিনান (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা) নামে এক বিধবা নারীকে ইদ্দতকালে নিজ বাড়িতে অবস্থান করতে বলা হয়েছিল। হাদীসটি হচ্ছে, যাইনাব বিনতু কা‘ব ইবনু ‘উজরাহ (রহিমাহুল্লাহ) সূত্রে বর্ণিত। আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)-এর বোন ফুরাই‘আহ বিনতু মালিক ইবনু সিনান (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা) তাকে জানিয়েছে যে,তার স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি বনু খুদরায় তার পিতার বাড়ী চলে যাওয়ার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে জানতে চাইলে রাসূল (ﷺ) তাকে বলেছিলেন,اِمْكُثِىْ فِىْ بَيْتِكِ الَّذِىْ جَاءَ فِيْهِ نَعْىُ زَوْجِكِ حَتَّى يَبْلُغَ الْكِتَابُ أَجَلَهُ ‘তুমি সেই ঘরে অবস্থান কর, যে ঘরে তোমার কাছে তোমার স্বামীর মৃত্যু-সংবাদ এসেছে, যতক্ষণ না তোমার ইদ্দত পূর্ণ হয়’ (ইবনু মাজাহ, হা/২০৩১; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৭১৩২; আবূ দাঊদ, হা/২৩০০; তিরমিযী, হা/১২০৪, সনদ সহীহ)। যেহেতু ইদ্দত একটি নির্ধারিত সময়সীমার বাধ্যতামূলক শরয়ি ফরজ বিধান, যা পরবর্তীতে আদায় করা সম্ভব নয়, তাই এটি হজ্জের তুলনায় অগ্রাধিকার পাবে। কারণ, হজ্জ পরেও সম্পন্ন করা সম্ভব।
.
তাছাড়া ফিকাহর একটি সূত্র হচ্ছে: যখন একাধিক ওয়াজিব কাজ পরস্পরের সঙ্গে সংঘর্ষে পড়ে, তখন যে কাজের সময়সীমা সীমিত ও শিগগিরই শেষ হয়ে যাবে, সেটিকে সেই কাজের উপর অগ্রাধিকার দেওয়া হয় যার সময়সীমা দীর্ঘ এবং যা পরবর্তীতে সম্পন্ন করা সম্ভব।
.
ইমাম শিহাব আদ-দীন আবু আল-আব্বাস আহমাদ ইবনু ইদ্রিস আল-কারাফি আল মালেকী (রহিমাহুল্লাহ) [মৃত:১২৮৫ খ্রি:] বলেছেন:”قاعدة : إذا تزاحمت الواجبات قدم المضيق على الموسع ، والفوري على التراخي ، والأعيان على الكفاية ؛ لأن التضييق في الواجب يقتضي اهتمام الشرع به ، وكذلك المنع من تأخيره ، بخلاف ما جوز تأخيره ” ا”যখন একাধিক ওয়াজিব (অবশ্য পালনীয়) কাজের মধ্যে সংঘর্ষ সৃষ্টি হয় তখন সীমিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা জরুরি যে কাজ তাকে সেই কাজের ওপর অগ্রাধিকার দেওয়া হয়, যা দীর্ঘ সময় পর্যন্ত করা সম্ভব। অবিলম্বে সম্পাদন করা আবশ্যক যে কাজ, তাকে সেই কাজের ওপর অগ্রাধিকার দেওয়া হয়, যা বিলম্ব করা যেতে পারে।ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যেকের জন্য আবশ্যক যে কাজ, তাকে সেই কাজের ওপর অগ্রাধিকার দেওয়া হয়, যা সমষ্টিগতভাবে পালন করলেই যথেষ্ট হয়।এর কারণ হলো সংকীর্ণ সময়সীমার ওয়াজিব কাজগুলোর প্রতি শরীয়ত অধিক গুরুত্ব দেয় এবং বিলম্ব না করার নির্দেশ দেয়, যা বিলম্ব করা সম্ভব এমন কাজের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়”।(আয-যাখিরাহ খণ্ড,৩ পৃষ্ঠা:১৮৩)
.
হাম্বালী মাযহাবের প্রখ্যাত ফাক্বীহ, শাইখুল ইসলাম, ইমাম ‘আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন কুদামাহ আল-মাক্বদিসী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬২০ হি.] বলেছেন,ولو كانت عليها حجة الإسلام ، فمات زوجها ، لزمتها العدة في منزلها ، وإن فاتها الحج ، لأن العدة في المنزل تفوت ولا بدل لها ، والحج يمكن الإتيان به في غير هذا العام “যদি কোনো মহিলার ওপর ফরজ হজ্জ আদায় করা ওয়াজিব থাকে এবং তার স্বামী মারা যায়, তাহলে তাকে তার নিজ বাসস্থানে ইদ্দত পালন করতে হবে, যদিও তার হজ্জটি ওই বছর মিস হয়ে যাবে। কারণ, ইদ্দতের সময় পার হয়ে গেলে, তা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব নয়, কিন্তু হজ্জ পরবর্তী বছর কোনো সময় করা যেতে পারে।”(ইবনু কুদামাহ, আল-মুগনী, খণ্ড: ১১, পৃষ্ঠা: ৩০৫) তিনি (রাহিমাহুল্লাহ) অপর ফাতাওয়ায় বলেন,”স্বামীর মৃত্যুজনিত কারণে ইদ্দত পালনকারী নারী হজ্জের জন্য বা অন্য কোন উদ্দেশ্যে সফর করবে না।যদি হজ্জের সফরে বের হয় এবং পথে স্বামীর মৃত্যুর খবর জানতে পারে, তাহ’লে তিনি ফিরে আসবেন এবং স্বামীর বাড়ীতে ইদ্দত পালন করবেন।”(ইবনু কুদামাহ, আল-মুগনী, খণ্ড: ৮; পৃষ্ঠা: ১৬৭)
.
এমনকি এ বিষয়ে খলিফা উমর ইবনুল খাত্তাব (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-এর আমলও এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে।যেমন প্রখ্যাত তাবেঈ সাঈদ বিন মুসাইয়িব (রাহিমাহুল্লাহ) মৃত:৯৪ হি:] থেকে বর্ণিত:তিনি বলেন;أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ ، كَانَ يَرُدُّ الْمُتَوَفَّى عَنْهُنَّ أَزْوَاجُهُنَّ مِنَ الْبَيْدَاءِ ، يَمْنَعُهُنَّ الْحَجَّ ” ر “উমর ইবনুল খাত্তাব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) (হজ্জের উদ্দেশ্য বের হওয়া) বিধবা নারীদের ‘বাইদা’ (মক্কার নিকটবর্তী) স্থান থেকে ফিরিয়ে দিতেন এবং তাদেরকে হজ্জ করতে নিষেধ করতেন।”(মুয়াত্তা ইমাম মালিক হা/২১৯৪) বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ আলেম ইমাম আলবানী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন:”এর সনদে সকল বর্ণনাকারী বিশ্বস্ত, যদিও সাঈদ বিন মুসাইয়িব (রাহিমাহুল্লাহ) উমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে সরাসরি শ্রবণ করা নিয়ে মতভেদ আছে।”(ইমাম আলবানী;ইরওয়াউল গালীল,৭/২০৮ হা/২১৩২) অতএব ইদ্দত পালন শেষেই হজ্জ-ওমরাহ বা অন্য কোন সফরে বের হ’তে পারে, পূর্বে নয়।
.
▪️তাহলে কি স্বামীর মৃত্যুতে শোক পালনকারী স্ত্রী বাহিরে যেতে পারবেন না?
.
এ বিষয়ে বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে, স্বামী-মৃত্যুর ইদ্দত পালনকারী নারী যে বাড়ীতে তার স্বামী মারা গেছে সে বাড়ীতে অবস্থান করবেন। তার ইদ্দত শেষ হওয়া পর্যন্ত তিনি এখানে থাকবেন। ইদ্দত শেষ হবে চার মাস দশদিনে। তবে যদি গর্ভবতী হন তাহলে সন্তান প্রসব করার মাধ্যমে তার ইদ্দত শেষ হবে। যেমনটি আল্লাহ্ তাআলা বলেছেন: “আর গর্ভধারিনীদের ইদ্দতকাল সন্তান প্রসব পর্যন্ত।”[সূরা ত্বালাক, আয়াত: ৪] কোন প্রয়োজন কিংবা জরুরী অবস্থা ব্যতীত ঘর থেকে বের হবেন না। যেমন- অসুস্থ হলে হাসপাতালে যাওয়া, প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য ও এ জাতীয় অন্য কিছু কেনার জন্য কাউকে না পেলে বাজারে যাওয়া, অনুরূপভাবে ঘরটি যদি ধ্বসে পড়ে তাহলে তিনি এ ঘর ছেড়ে অন্য ঘরে চলে যাবেন, কিংবা তাকে সঙ্গ দেয়ার মত যদি কেউ না থাকে এবং তিনি নিজের উপর আশংকা করেন এ রকম প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে আপত্তি নেই।(বিস্তারিত জানতে দেখুন বিন বায; ফাতাওয়া ইসলামিয়্যা’ খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ৩১৫-৩১৬) তবে হা! কোন ক্ষতি বা শত্রুর ভয়ের আশঙ্কা থাকলে স্বামীর বাড়ি ছেড়ে অন্য স্থানেও ইদ্দত পালন করতে পারবেন।(ফাতাওয়া আল-লাজনাহ আদ-দায়েমাহ, ২০তম খণ্ড, পৃষ্ঠা: ৪৬৩)।
.
সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) ‘আলিমগণ বলেছেন,“মূল বিধান হলো: নারী তার স্বামীর বাসায় রাত্রি যাপন করবে; যে বাসায় থাকা অবস্থায় তার স্বামী মারা গেছে। কোন প্রয়োজন বা জরুরী কিছু ছাড়া সে বাসা থেকে বের হবে না; যেমন অসুস্থতার কারণে হাসপাতালে যাওয়া, বাজার থেকে রুটি বা এ জাতীয় কিছু কেনা; যদি তাকে এগুলো কিনে দেয়ার কেউ না থাকে।(ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ; খন্ড: ২০; পৃষ্ঠা: ৪২১ এবং পৃষ্ঠা: ৪৪০) ইদ্দতের সময়কালে স্বামীহারা স্ত্রীর করণীয় ও বর্জণীয় বিষয়সমূহ সম্পর্কে উম্মু ‘আতিয়্যা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, ‘নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘এ সময় তোমরা সুরমা এবং কোন প্রকারের সুগন্ধি ব্যবহার করবে না। হালকা রঙিন পোশাক ব্যতীত অন্য কোন চকচকে রঙিন পোশাক পরিধান করবে না। তবে ঋতুবতী মহিলারা পবিত্রতার গোসল করার পর আজফারের খোশবু মিশ্রিত বস্ত্রখণ্ড লজ্জাস্থানে রাখতে পারেন। খিযাব ও মেহেদি লাগাতে পারবে না এবং আমাদের জানাযার পেছনে যেতে নিষেধ করা হত।(সহীহ বুখারী, হা/৩১৩)।
.
হাম্বালী মাযহাবের প্রখ্যাত ফাক্বীহ,ইমাম ইবনু কুদামা, ইবনু আব্দিল বার্র, আবূ ইসহাক আশ-শিরাজী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘ইদ্দত চলাকালীন পতিহীনা স্ত্রী সাজসজ্জা ও রূপচর্চার যাবতীয় উপকরণ ও সুশোভিতকরণ পরিহার করবে। সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য রঙিন কাপড় যেমন, লাল, নীল, গেরুয়া, টকটকে কমলা ও হলুদ রঙের কাপড় পরিধান করা থেকে বিরত থাকবে। অলংকার, আংটি পরিধান করবে না। সর্বপ্রকার প্রসাধন ও অঙ্গরাগ যেমন, আতর বা সুগন্ধি, খিযাব, মেহেদি ও সুগন্ধিযুক্ত তেল ব্যবহার করবে না। সুরমা বা কাজল এবং প্রয়োজন ব্যতীত মাথায় চিরুনি লাগাবে না। স্বামীর গৃহে অবস্থান করবে। বিশেষ প্রয়োজনে দিনের বেলায় বাড়ী থেকে বাহির হতে পারে (যেমন,চিকিৎসা করার জন্য ইত্যাদি)। কিন্তু রাত্রিতে বাহির হওয়া সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ’ (উমদাতুল ফিক্বহ, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা:১০৭; আল-কাফী ফী ফিক্বহী আহলিল মাদীনা, ২য় খণ্ড,পৃষ্ঠা;৬২২)।
.
পরিশেষে প্রিয় পাঠক! উপরোক্ত আলোচনা থেকে যা প্রমানিত হয় তা হল: কোন নারীর স্বামী মারা গেলে সে নারীর জন্য ইদ্দত পালন করা ফরজ বা ওয়াজিব। তিনি এই সময় স্বামীর বাড়িতে থাকলে সেখানেই ইদ্দত পালন করবেন। তিনি তার এই ইদ্দত স্বামীর মৃত্যুর দিন থেকে গননা শুরু করবেন। তিনি ইদ্দতের এই সময় স্বামীর জন্য শোক পালন করবেন এবং জাঁক জমকপূর্ণ সাজ-সজ্জা বর্জন করবেন। ৪ মাস ১০ দিন ইদ্দত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি হজ্জ উমরাহ’য় যেতে পারবেন না। তিনি একান্ত প্রয়োজন হলে দিনের বেলায় জরুরি কাজে বাড়ির বাহিরে যেতে পারবেন।(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬
আপনাদের দ্বীনি ভাই: জুয়েল মাহমুদ সালাফি।
সম্পাদনায়: উস্তায ইব্রাহিম বিন হাসান হাফি.
অধ্যয়নরত, কিং খালিদ ইউনিভার্সিটি আবহা, সৌদি আরব।