🔸এক,
এতে ‘ইলাহ’- এর গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্যে খালেক তথা সৃষ্টিকর্তার সাথে মাখলুক তথা সৃষ্ট বস্তুর তুলনা করা হয়। কেননা যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করলো, সে প্রকারান্তরে তাকে আল্লাহর অনুরূপ ও সমকক্ষ বলে স্থির করলো। মহান আল্লাহতাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর সাথে শরীক করা মহা অন্যায়।’ — [সূরা লুক্বমান, আয়াত : ১৩]
জুলুম বলা হয় কোন বস্তুকে তার আসল জায়গা থেকে সরিয়ে অন্য জায়গায় রাখা। সুতরাং যে গায়রুল্লাহর ইবাদত করে, সে মূলত: ইবাদাতকে তার আসল স্থানে না রেখে ইবাদাত পাওয়ার উপযুক্ত নয় এমন কারো উদ্দেশ্যে তা নিবেদন করে। আর এটা হল সবচেয়ে বড় জুলুম এবং অন্যায়।
.
🔸দুই,
আল্লাহ তাআলা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলে দিয়েছেন, শিরক করার পর যে ব্যক্তি তা থেকে তওবা করবেনা, তিনি তাকে ক্ষমা করবেন না। মহান আল্লাহ বলেন: নিশ্চয়ই আল্লাহর তাঁর সাথে শরীক করার পাপ ক্ষমা করেন না। এতদ্ব্যতীত অন্যান্য অপরাধ তিনি ক্ষমা করেন, যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন।’— [সূরা নিসা, আয়াত : ৪৮]
.
🔸তিন,
আল্লাহ এও বলেন যে, তিনি মুশরিকদের জন্য জান্নাতকে হারাম করে দিয়েছেন এবং তারা চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামে অবস্থান করবে।
মহান আল্লাহ বলেন: ‘নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরীক করে, আল্লাহ তার জন্যে জান্নাত হারাম করে দেন এবং তার বাসস্থান হবে জাহান্নাম। অত্যাচারীদের কোন সাহায্যকারী নেই।’ — [সুরা মায়িদা, আয়াত :৭২]
.
🔸চার,
শিরক সকল আমলকে নষ্ট ও নিষ্ফল করে দেয়।
মহান আল্লাহতাআলা বলেন: ‘যদি তারা শিরক করত, তবে তাদের কাজকর্ম নিষ্ফল হয়ে যেত।’
— [ সূরা আন আম, আয়াত : ৮৮ ]
মহান আল্লাহ আরো বলেন: ‘আপনার প্রতি এবং আপনার পূর্ববর্তীদের প্রতি ওহী প্রেরণ করা হয়েছে যদি আল্লাহর শরীক স্থির করেন, তবে আপনার কর্ম নিষ্ফল হবে এবং আপনি ক্ষতিগ্রস্তদের একজন হবেন।’
— [সূরা যুমার, আয়াত : ৬৫]
.
🔸পাঁচ,
কবীরা গোনাহসমূহের মধ্যে শিরক সবচেয়ে বড় গোনাহ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ‘আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় কবীরা গোনাহের সংবাদ দিব না? আমরা বললাম- জ্বী, অবশ্যই হে আল্লাহর রাসূল ! তিনি বললেন: আল্লাহর সাথে শিরক করা এবং পিতা- মাতার অবাধ্য হওয়া।’
— [বুখারী, মুসলিম]
মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই শিরক একটি বড় জুলুম। — ’[সুরা লুকমান, আয়াত : ১৩]
.
অতএব শিরক হচ্ছে সবচেয়ে বড় জুলুম এবং তাওহীদ হচ্ছে সর্বোত্তম আদল ও ইনসাফ। আর যা বিশ্ব সৃষ্টির এই উদ্দেশ্যের সবচেয়ে বেশী পরিপন্থী, তাই সবচেয়ে বড় কবীরা গোনাহ। এ ব্যাপারে ইবনুল কাইয়েম আরো বলেন: যখন শিরকই হলো এই উদ্দেশ্যের পরিপন্থী, তাই সর্বতোভাবে এটাই সবচেয়ে বড় কবীরা গোনাহ। আল্লাহ প্রত্যেক মুশরিকের উপর জান্নাতকে হারাম করে দিয়েছেন এবং তার জান-মাল ও পরিবার- পরিজনকে তাওহীদ পন্থীদের জন্য হালাল করে দিয়েছেন। তদুপরি তাদেরকে দাস হিসাবে গ্রহণ করার ও অনুমতি দিয়েছেন, কেননা তারা আল্লাহর ইবাদত ও দাসত্বের কাজ আদায় করা থেকে বিরত থেকেছে। আল্লাহ মুশরিক ব্যক্তির কোন কাজ কবুল করতে, আখিরাতে তার ব্যাপারে কোন সুপারিশ গ্রহণ করতে ও তার কোন দোয়া কবুল করতে এবং তার কোন আশা বাস্তবায়ন করতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেছেন। প্রকৃতপক্ষে মুশরিক ব্যক্তি আল্লাহ সম্পর্কে সবচেয়ে অজ্ঞ। কেননা সে সৃষ্টির কাইকে আল্লাহর সমকক্ষ স্থির করে। অথচ এ হল চূড়ান্ত অজ্ঞতা এবং সর্বোচ্চ পর্যায়ের জুলুম। যদিও বস্তবিকভাবে মুশরিক ব্যক্তি তার রব আল্লাহ তাআলার উপর জুলুম করেনা। বরং সে নিজের উপরই জুলুম করে থাকে।
.
সর্বশেষ, শিরক হলো এমন ত্রুটি ও দোষ যা থেকে আল্লাহ তাআলা নিজেকে পবিত্র বলে ঘোষণা করেছেন। অতএব যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরীক করলো, সে আল্লাহর জন্য ওটাই সাব্যস্ত করলো যা থেকে তিনি নিজেকে পবিত্র বলে ঘোষণা দিয়েছেন। আর তাই শিরক হলো আল্লাহর পরিপূর্ণ নাফরমানী, চূড়ান্ত হঠকারিতা ও তাঁকে কষ্ট দেওয়ারই নামান্তর।
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬