কি করে বুঝবেন লোকটি যাদুকর কিনা?

আজকাল অনেক প্রতারক ও ভন্ড পীর-ফকির, মাযারের খাদেম, হুজুর মাওলানা বা এমন ধর্মীয় লেবাস পড়া লোক বেড়িয়েছে, যারা দাড়ি-টুপি নিয়ে, লম্বা জোব্বা ও পাগড়ি পড়ে জিনে ধরা রোগীর চিকিৎসা করা, হারানো ব্যক্তি বা বস্তু খুঁজে বের করে দেওয়া, যেকোন বিপদ-আপদ ও রোগের চিকিৎসা দেওয়া, দাম্পত্য কলহ ও নানা সমস্যার সমাধান করে দেবে, তদবীর করে প্রেম-ভালোবাসা ভেঙ্গে বা গড়ে দেবে, চাকুরী, ব্যবসা বা বিয়ে ঠিক করে দেবে, জিনের বাদশাহ, পাথর দিয়ে ভাগ্য পরিবর্তন করে. . .ইত্যাদি কথা বলে ধর্মের নামে ব্যবসা খুলে বসে আছে। এমনকি এরা পত্রিকাতে, টিভিতে বিজ্ঞাপন দিয়ে, মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে হাজার হাজার মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছে। এদের অনেকে স্রেফ মিথ্যা কথা বলে মানুষের টাকা মেরে খাচ্ছে, আবার এদের মাঝে অনেকে আসলে যাদুকর, তন্ত্র-মন্ত্র ও জিনের কারসাজির মতো শিরকি-কুফুরী কথা ও কাজের সাথে জড়িত। সাধারণ মানুষ এদেরকে ‘আলেম’, ‘আল্লাহর ওয়ালী’, ‘কামেল ও বুজুর্গ’ লোক মনে করে সমস্যার সমাধান নিতে যাচ্ছে আর নিজের অজান্তে শিরকি ও কুফুরী কাজে লিপ্ত হয়ে ঈমান নষ্ট করছে।

আপনি কারো কাছ থেকে ‘রুকইয়া’ বা ক্বুরান ও হাদীসের ঝাড়ফুঁক দিয়ে শরয়ী চিকিৎসা নিতে যান; এমতাবস্থায় তারা যদি আপনার সাথে নিচের কোন কাজ করে তবে তার কাছে থেকে চিকিৎসা নেওয়া থেকে বিরত থাকুন এবং অন্যদেরও তারা ব্যাপারে সতর্ক করুন। কারণ এইগুলো হচ্ছে যাদুকর ও প্রতারক লোকদের কিছু লক্ষণঃ

১. আপনার নাম জিজ্ঞেস করে এবং আপনার মায়ের নাম জিজ্ঞেস করে কিংবা আপনার জন্ম তারিখ।
২. আপনার ছবি কিংবা কাপড়ের কোন কিছু দিতে বলে।
৩. আপনার চুল, গয়না বা অলংকার, নিত্য ব্যবহার্য কোন জিনিস কিংবা আপনার কোন কিছু চায়।
৪. আপনাকে কোন প্রাণী (লাল মোরগ, কালো ছাগল বা কবুতর ইত্যাদি) এনে দিতে বলে কিংবা কুরবানী বা জবাই করতে বলে।
৫. কোন ফিসফিসানি কিংবা এমন দুর্বোধ্য ভাষার ব্যবহার যা আপনি বুঝতে পারেন না এবং ক্বুরান বা হাদীসের কোন কিছু নয়।
৬. আপনাকে কোন তাবিজ-তুমার, বালা বা আংটি দেয়।
৭. আপনার ছেলে-মেয়েকে তার সাথে সাক্ষাত করার সময় নিয়ে যেতে বলা।
৮. কুরআন এবং সুন্নাহভিত্তিক দুয়া ব্যতীত অন্যকিছু পাঠ করা।
৯. আপনাকে স্পর্শ করতে চাওয়া (যদি আপনি মহিলা হোন)।
১০. তারা আপনাকে নির্দিষ্ট অর্থ বা সম্পদের বিনিময়ে সুস্থ বা সমস্যার সমাধান করার দাবি করে।
১১. আপনার কাছে প্রচুর টাকা-পয়সা দাবি করে।
১২. আপনাকে পানিতে পাড়া দেয়া কিংবা জীনকে বোতলবন্দী করার কথা বলে।
১৩. আপনাকে চড়ি কিংবা পাথর দিয়ে তা আংটিতে লাগিয়ে পড়তে কিংবা বহন করতে বলে।
১৪. সে যদি আপনার অতীতের কোন ঘটনা বলে কিংবা আপনার ভবিষ্যৎ জানার দাবি করে।
১৫. অন্ধকারে ধূপ বাতি জ্বালিয়ে বসা।
১৬. সে আরোগ্য দানে সক্ষম, এমন দাবি করা।
১৭. তার সাফল্য নিয়ে অহংকার করা।

এইগুলো একজন ভ্রষ্ট, জীনের কারসাজি ও ভেল্কি দেখায় এমন কিংবা যাদুকরের লক্ষণ। এদের কাছ থেকে দুরে থাকুন, তাদের ব্যপারে সতর্ক হন। আর বিশেষ করে নারীরা নিজেদের বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগান। এদের পাল্লায় পড়ে গোপনে বহু নারীর সর্বনাশ হয়, দিনের পর দিন যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। যারা এইগুলোর ভুক্তভোগী তারা খুব ভালো করে জানেন, এদের আপাত নূরানী(!) মুখোশের আড়ালে কি পরিমান হিংস্র জানোয়ার বসবাস করে।

Share: