লেখকঃ আবু হাযম মুহাম্মাদ সাকিব চৌধুরী
কিবার শব্দটি একটি বহুবচন শব্দ যার অর্থ সিনিয়রবৃন্দ। এর এক বচন কুবার বা কাবির যার অর্থ সিনিয়র।
সূত্রঃ http://bit.ly/2vT6nLg
যাই হোক, আজকের এই লেখা আরাবি ব্যাকরণ বিষয়ক নয়। একটি বিশেষ সমস্যা নিয়ে বাধ্য হয়ে লিখতে বসেছি।
ইসতিলাহে বা পরিভাষায় কিবার শব্দ বলে কিছু নেই। অর্থাৎ ইসলামী শারিয়াতে কিবার বলে জ্ঞানের বিশেষ কোন স্তর নেই। সৌদি আরবে হাই’আহ কিবার আল উলামা বলে একটি কমিটি আছে যা প্রায়ই পরিবর্তিত হয়, যাদের কাজ নানা বিষয়ে ফাতাওয়া দেওয়া। এ বছরের মেম্বার নিম্নের আলেমবৃন্দঃ
০১। শাইখ আব্দুল আযীয বিন আব্দিল্লাহ বিন মুহাম্মাদ আল আশ শাইখ।
০২। শাইখ সালেহ বিন মুহাম্মাদ আল লুহাইদান।
০৩। শাইখ সালেহ বিন ফাওযান আল ফাওযান।
০৪। শাইখ আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ আল আশ শাইখ।
০৫। শাইখ আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল মুহসীন আত তুরকী।
০৬। শাইখ আব্দুল্লাহ বিন সুলাইমান আল মুনি’।
০৭। শাইখ সালেহ বিন আব্দিল্লাহ আল হুমাইদ।
০৮। শাইখ আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ আল মুতলাক।
০৯। শাইখ আহমাদ বিন আলী সির আল মুবারাকী।
১০। শাইখ সা’দ বিন নাসীর আশ শিথরী।
১১। শাইখ মুহাম্মাদ বিন আব্দিল কারীম আল ‘ইসী।
১২। শাইখ আব্দুল ওয়াহহাব বিন ইবরাহীম আবু সুলাইমান।
১৩। শাইখ আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ আল খুনাইন।
১৪। শাইখ ইয়া’কুব বিন আব্দিল ওয়াহহাব আল বাহিসীন।
১৫। শাইখ আব্দুর রাহমান বিন আব্দিল আযীয আল কুলাইয়াহ।
১৬। শাইখ মুহাম্মাদ বিন হাসান আল আশ শাইখ।
১৭। শাইখ আব্দুল কারীম বিন আব্দিল্লাহ আল খুদাইর।
১৮। শাইখ মুহাম্মাদ বিন মুহাম্মাদ মুখটার মুহাম্মাদ আশ শানকীতি।
১৯। শাইখ সুলাইমান বিন আব্দিল্লাহ আবাল খেইল।
২০। শাইখ জিবরীল বিন মুহাম্মাদ বিন হাসান আল বাসীলী।
২১। শাইখ সালেহ বিন আব্দিল্লাহ বিন হামদ আল আসীমী।
সূত্রঃ http://bit.ly/2fUstZR
লক্ষ্য করবেন এই লিস্টে অনেক বড় বড় আলেম অনুপস্থিত। আবার অনেক কম বয়সী আলেম উপস্থিত। (আলহামদুলিল্লাহ একজন আমাদের পড়িয়েছেন এদের মধ্য হতে।)। এর অর্থ দাঁড়াল যে সকল বড় আলেম যাদের আমরা সিনিয়র বলতে পারি তারা কিন্তু এই কমিটিতে নেই। (উদাহরণ স্বরূপ শাইখ আব্দুল মুহসীন আল আব্বাদ, শাইখ ওয়াসী উল্লাহ আব্বাস, শাইখ আদাম আল ইথিওবী, শাইখ মুহাম্মাদ যিয়া উর রাহমান আল আযমী, শাইখ রাবী’ বিন হাদী আল মাদখালী – এরা সবাই বয়স্ক এবং উপরোক্ত কমিটির অনেকের চাইতে জ্ঞানের দিক থেকে বড় বলে পরিচিত।)
এবার দেখুন সৌদির বর্তমান পার্মানেন্ট স্ট্যান্ডিং কমিটি তথা আল লাজনাতুদ দা’ইমাহ এর মেম্বার যেসব আলেমবৃন্দঃ
০১। শাইখ আব্দুল আযীয বিন আব্দিল্লাহ বিন মুহাম্মাদ আল আশ শাইখ।
০২। শাইখ আহমাদ বিন আলী সির আল মুবারাকী।
০৩। শাইখ সালেহ বিন ফাওযান আল ফাওযান।
০৪। শাইখ আব্দুল কারীম বিন আব্দিল্লাহ আল খুদাইর।
০৫। শাইখ মুহাম্মাদ বিন হাসান আল আশ শাইখ।
সূত্রঃ http://bit.ly/2v1m95h
অর্থাৎ এই কমিটি আরো ছোট!!
(সাইড নোটঃ অনেকের ভুল ধারণা আছে যে বাংলাদেশের শাইখ কামাল উদ দীন জাফরি এই দুই কমিটির মেম্বার। জী না তিনি এই দুই প্রধান কমিটির মেম্বার নন।)
এই দুই লিস্টে সৌদি এবং সৌদির বাহিরের অনেক বড় বড় আলেম অনুপস্থিত। এই যে কিছু দিন পূর্বে শাইখ যাহীর উদ দীন মুবারাকপুরী ইন্তেকাল করলেন, উনি নেই। কোন ভারতীয় আলেম নেই। পাকিস্তানী আলেম নেই (শাইখ বিন বাযের ছাত্র লাহোরের মুফতি শাইখ থানা উল্লাহ আল মাদানী কোথায়?), তেমনি সারা বিশ্বের শত শত বড় আলেম অনুপস্থিত। এর অর্থ এই নয় যে তারা কিবার নন। সৌদি আরবও তা কখনো দাবী করে নি।
এখন এখানে একটা সমস্যা তৈরী হয়ে গিয়েছে। সারা বিশ্বে কিছু বোকা শ্রেণীর লোক ধরে নিয়েছে যারা শুধু মাত্র প্রথম কমিটির মেম্বার তারাই মনে হয় কিবার।
আবার আরেক দলের গল্প আরেক রকম। এরা মূলত সৌদি আরবের শ্রমিক ভাই। তাদের ইসলামী শিক্ষার ব্যাকগ্রাউন্ড নেই। এরা মূলত বিভিন্ন দাওয়াহ সেন্টার পরিচালিত বাংলা ভাষার হালকা কোর্স (৫ বছরের শুনলাম) করে থাকেন। এনাদের অন্য শিক্ষার সে রকম অবস্থাই নেই। এদের বাংলা বলতেই দাঁত ভাঙে। এরকম দুই জনের অদ্ভুত দুটো গল্প বলি।
গল্প ১ঃ
আমাকে কিছু বছর আগে ঢাকা নিবাসী এক ভাই বললো তার সাথে এমনই এক শ্রমিক ভাইয়ের সাথে দেখা হয়েছে। তার কাছে ভাই জানতে চাইলেন তিনি শাইখ ওয়াসী উল্লাহ আব্বাসকে চেনেন কি না। উত্তরে মূর্খ শ্রমিক বললো, আরে উনাকে কেউ সিরিয়াসলী নেয় না। সবাই উনাকে নিয়ে হাসে!!!
ঢাকার ঐ ভাই আমাকে এসে এ কথা জানানোর পর আমি কিছু ক্ষণ “থ” হয়ে ছিলাম। উম্মুল কুরার হাদীস ডিপার্টমেন্টের প্রফেসর, হারামে তাঁর চেয়ার আছে। বড় বড় সব আলেম থেকে পড়ে আসা এই আলেম একজন মুহাদ্দিসদের একজন। আর এই অশিক্ষিত মূর্খ জাহিল শাইখ ওয়াসীর ছাত্রদের ছাত্রদের ছাত্রদের কাছে দাওয়াহ সেন্টারের বাংলায় ফাটা ফুটো কোর্স করে এসে এখন তার বাপের বয়সী আলেম নিয়ে কথা বলছে।
পড়ুনঃ শাইখ ওয়াসী উল্লাহ আব্বাসের জীবনীঃ http://bit.ly/2ws6HCM
গল্প ২ঃ
আমাকে কিছুদিন আগে এক ভাই ম্যাসেজ করে বললেন একজন তালিবুল ‘ইলম দাবী করছে আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক শাইখ সুহাইব হাসান কিবার দের কেউ নন। আমি ভাবলাম কে এই জিনিয়াস!! আমাকে ভাই হঠাৎ করে না জানিয়ে একটা গ্রুপে নিয়ে গেলেন। সেখানে দু জন ভাই ছিলেন আমাকে নিয়ে যাওয়া ভাই ব্যতীত। তার মধ্যে একজন আমার স্নেহের ছোট ভাই, কিন্তু আসলে সে অনুপস্থিত ছিল। তার আইডি ঐ গ্রুপে ছিল। আর অপরজন ঠিক প্রথম গল্পের মত কোয়ালিফিকেশন সম্পন্ন এক ভাই (তার প্রোফাইল থেকে দেখলাম)। আমি দেখেই গ্রুপ ছেড়ে চলে এসেছি। ভাই কে বললাম আমি আসলে কনফ্রন্টেশনাল মানুষ নই। এভাবে অপরিচিত মানুষের সাথে আমি কথা বলি না।
বাস্তবতা হচ্ছে আমার নিজের দৃষ্টিতে এই সব নন ইস্তিলাহী শব্দ যেমন শাইখ, কিবার ইত্যাদির তেমন কোন মূল্য নেই। আমি শাইখ ব্যবহার করি বয়স্ক লোকের জন্যে সম্মান দেখাতে।তবে যখন দেখি এত ক্ষুদ্র শ্রেণীর লোকেরা এত বড় বড় মানুষদের নিয়ে কথা বলছে, তখন আশ্চর্য হয়ে যাই।
গত কিছু দিন আগে এক ভাইও শাইখ রাবী’ কে নিয়ে মন্তব্য করলেন যে শাইখ নাকি অত বড় নন। আমি সাথে সাথে তাকে বললাম মনে হয় শাইখ সম্বন্ধে আপনি গবেষণা করে কথা বলছেন না – উনার সম্বন্ধে বলতে হলে উনার বই, উনার জীবনী, উনার শিক্ষক সম্বন্ধে জানতে হবে। সেই ভাই আমতা আমতা করে এড়িয়ে গেলেন, পরিষ্কার হল, না জেনে অপমান করবার চক্রান্ত।
দেখুন জিদ্দা দাওয়াহ সেন্টারের সৌদি শাইখ – শাইখ মুহাম্মাদ আল মালকী কি বলছেন এই সব বোকা ভাইদের ব্যাপারেঃ
www.youtube.com/watch?v=u-gCuQAicts
এই সব কথা বার্তা এই সব বোকা ছেলে পেলে কোথা থেকে পায়? আমার মনে হয় বাংলা আর উর্দু সালাফী দাওয়াতের মধ্যে কিছু বেয়াদব বসে আছে, যারা এই সব স্বল্প শিক্ষিত বোকা হাবাদের এই সব কথা শেখাচ্ছে। তাদের কান ধরে মূল উৎপাটন করা দরকার।
যে কোন আলেম সম্বন্ধে লিখতে হলে তাদের জীবনী সম্পর্কে পড়তে হবে। তাদের শিক্ষকদের সম্পর্কে জানতে হবে। তাঁর শিক্ষকদের কাছ থেকে তাঁর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা যায়। আর যদি তাঁরা বেঁচে না থাকেন তাহলে জীবিত আছেন এমন বড় আলেমদের কাছ থেকে তাদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতে হবে। বিষয়টা তো সোজা।
শাইখ সুহাইবের ব্যাপারে জানতে হলে শাইখ ওয়াসী উল্লাহকে জিজ্ঞেস করুন। শাইখ আব্দুল মুহসীন আল আব্বাদকে জিজ্ঞেস করুন। পাকিস্তানী বৃদ্ধ আলেমদের কাছ থেকেও জিজ্ঞেস করতে পারেন, যেমন লাহোরের শাইখ থানাউল্লাহ আল মাদানী। আরাবী জানা থাকলে আর এনাদের সাথে সরাসরি জিজ্ঞেস করলেই আপনার ল্যাঠা চুকে যায়। কে বললো আপনার ক্ষুদ্র মস্তিষ্কে কিবার গাইরু কিবার নির্ধারণ করতে? আরে এভাবে যদি বাংলা উর্দুর শ্রোতারা কিবার, শাইখ ইত্যাদি কে আর কে না ইত্যাদি বলা শুরু করে, কি ধরণের বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে একবার চিন্তা করতে পারেন?