প্রশ্ন: কন্যা সন্তান জাহান্নামের আগুন হতে প্রতিবন্ধক হবে।(ইবনে মাজাহ হা/৩৬৬৯) হাদীসটির ব্যাখ্যা কী?
▬▬▬▬▬▬▬▬ ◈ ▬▬▬▬▬▬▬▬
ভূমিকা: ইসলাম নারীকে মহান মর্যাদা দিয়েছে। ইসলাম মা হিসেবে নারীকে সম্মান দিয়েছে। মায়ের সাথে সদ্ব্যবহার করা, মায়ের আনুগত্য করা, মায়ের প্রতি ইহসান করা ফরয করেছে। মায়ের সন্তুষ্টিকে আল্লাহ্র সন্তুষ্টি হিসেবে গণ্য করেছে। ইসলাম জানিয়েছে, মায়ের পদতলে বেহেশত। ইসলাম নারীকে মেয়ে হিসেবেও সম্মানিত করেছে। ইসলাম মেয়ে সন্তান প্রতিপালন ও শিক্ষা দেয়ার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছে। মেয়ে সন্তান প্রতিপালনের জন্য মহা প্রতিদান ঘোষণা করেছে। তাছাড়া রাসূল (ﷺ) নিজেও কন্যাদের বড় ভালোবাসতেন। মেয়েরা ছিল তাঁর আদরের দুলালী। আজীবন তিনি কন্যাদের ভালো বেসেছেন এবং কন্যা সন্তান প্রতিপালনে উদ্বুদ্ধ করেছেন। যেমন: প্রখ্যাত সাহাবী আনাস ইবনু মালিক (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) [মৃত: ৯৩ হি.] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,«مَنْ عَالَ جَارِيَتَيْنِ حَتَّى تَبْلُغَا جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَنَا وَهُوَ وَضَمَّ أَصَابِعَهُ»“যে ব্যক্তি সাবালক হওয়া পর্যন্ত দুটি কন্যার ভার বহন করবে কিয়ামতের দিন আমি আর সে আবির্ভূত হব। একথা বলে তিনি তার হাতের দুই আঙ্গুল একসঙ্গে করে দেখান।” [সহীহ মুসলিম: ৬৪৬৮] এমনকি তিনি আরো বলেছেন, لا تَكْرَهُوا الْبَنَاتِ فَإِنَّهُنَّ الْمُؤْنِسَاتُ الْغَالِيَاتُ»“তোমরা মেয়েদের অপছন্দ করো না, কারণ তারা মূল্যবান সঙ্গী।” [সিলসিলাহ সহীহাহ: ৩২০৬]
.
যে ব্যক্তি দুইজন কিংবা তিনজন মেয়েকে অথবা বোনকে শরীয়ত সম্মত উপায়ে প্রতিপালন করবে ও তাদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করবে তার জন্য রয়েছে মহা পুরস্কার জান্নাত। যেমন: আনাস ইবনে মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,”مَنْ عَالَ جَارِيَتَيْنِ حَتَّى تَبْلُغَا جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَنَا وَهُوَ وَضَمَّ أَصَابِعَهُ”. “যে ব্যক্তি দুটি মেয়ে সন্তানকে সাবালক হওয়া পর্যন্ত প্রতিপালন করে, কিয়ামতের দিন সে ও আমি এমন পাশাপাশি অবস্থায় থাকবো, এ বলে তিনি তার হাতের আঙ্গুলগুলো মিলিয়ে দিলেন।” [সহীহ মুসলিম: ২৬৩১] অপর বর্ননায় উকবা বিন আমের (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন:( مَنْ كَانَ لَهُ ثَلَاثُ بَنَاتٍ فَصَبَرَ عَلَيْهِنَّ ، وَأَطْعَمَهُنَّ ، وَسَقَاهُنَّ ، وَكَسَاهُنَّ مِنْ جِدَتِهِ ، كُنَّ لَهُ حِجَابًا مِنَ النَّارِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ) “যে ব্যক্তির তিনজন মেয়ে আছে, সে মেয়েদের ব্যাপারে ধৈর্য ধারণ করে এবং তার সামর্থ্য অনুযায়ী তাদের ভরণ-পোষণ করে এ মেয়েরা কিয়ামতের দিন তার জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে আড়াল হবে।”(সুনানে ইবনে মাজাহ হা/৩৬৬৯; ইমাম আলবানী ‘সহিহু ইবনে মাজাহ’ গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]
.
হাদীসটির ব্যাখ্যায় হাফিজ ইরাক্বী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:
” المراد بالإحسان إليهن صيانتهن ، والقيام بما يصلحهن من نفقة وكسوة وغيرها ، والنظر في أصلح الأحوال لهن ، وتعليمهن ما يجب تعليمه ، وتأديبهن وزجرهن عما لا يليق بهن ، فكل ذلك من الإحسان ، وإن كان بنهر أو ضرب عند الاحتياج لذلك ، وينبغي للإنسان أن يخلص نيته في ذلك ، ويقصد به وجه الله تعالى ، فالأعمال بالنيات ، ومن تمام الإحسان أن لا يظهر بهن ضجرا ولا قلقا ولا كراهة ولا استثقالا ، فإن ذلك يكدر الإحسان .
قوله : ( كن له سترا من النار ) أي : كن سببا في أن يباعده الله من النار ، ويجيره من دخولها ، ولا شك في أن من لم يدخل النار دخل الجنة ، فلا منزل سواهما ، ويدل لذلك الرواية التي سقناها من عند مسلم أن الله قد أوجب لها بها الجنة .
وإنما خص البنات بذلك لضعف قوتهن ، وقلة حيلتهن ، وعدم استقلالهن ، واحتياجهن إلى التحصين وزيادة كلفتهن ، والاستثقال بهن ، وكراهتهن من كثير من الناس ، بخلاف الصبيان ، فإنهم يخالفونهن في جميع ذلك .
ويحتمل أن هذا خرج على واقعة مخصوصة ، فلا يكون له مفهوم ، ويكون الصبيان كذلك ”
“(তাদের প্রতি ইহসান করা) দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে তাদেরকে সুরক্ষা করা, তাদের ভরণ-পোষণ ও অন্যান্য যা প্রয়োজন সেটা প্রদান করা। তাদের স্বার্থটা দেখা। তাদের জন্য যা কিছু শেখা আবশ্যকীয় তাদেরকে সেটা শিক্ষা দেওয়া। যা কিছু বাঞ্ছিত নয় সেটার কারণে তাদেরকে ধমক দেওয়া ও শাস্তি দেওয়া। এ সবকিছু ইহসানের অন্তর্ভুক্ত। এমনকি প্রয়োজন হলে যদি ধমক দেওয়া হয় বা মারা হয় সেটাও। ব্যক্তির উচিত এক্ষেত্রে নিজের নিয়তকে আল্লাহ্র জন্য একনিষ্ঠ করা এবং এর মাধ্যমে আল্লাহ্র সন্তুষ্টির আশা করা। কেননা আমলসমূহ ধর্তব্য হয় নিয়তের ভিত্তিতে। তাদের প্রতি ইহসানের পরিপূর্ণতা হল তাদের ব্যাপারে বিরক্তি, উদ্বিগ্নতা, অবজ্ঞা ও সংকোচন প্রকাশ না করা। কারণ এগুলোর প্রকাশ ইহসানকে মলিন করে দিবে।
হাদিসের কথা: كن له سترا من النار (তারা তার জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে আড়াল হবে): অর্থাৎ আল্লাহ্ তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে দূরে রাখার ক্ষেত্রে তারা কারণ হবে এবং জাহান্নামে প্রবেশ করা থেকে রক্ষা করবে। নিঃসন্দহে যে ব্যক্তি জাহান্নামে প্রবেশ করবে না; সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। যেহেতু জান্নাত ও জাহান্নাম ছাড়া আর কোন আবাসস্থল নেই। সহিহ মুসলিমের যে বর্ণনাটি আমরা উদ্ধৃত করেছি তাতে এর সপক্ষে প্রমাণ রয়েছে যে, আল্লাহ্ তাআলা ঐ নারীর উক্ত কর্মের কারণে তার জন্য জান্নাত অবধারিত করে দিয়েছেন। হাদিসে মেয়েদের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যেহেতু মেয়েরা দুর্বল, তাদের পরিস্থিতি মোকাবেলার ক্ষমতা কম, তারা স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়, তাদের সুরক্ষা প্রয়োজন এবং তাদের পেছনে খরচাদি বেশি লাগে। তাছাড়া অনেক মানুষ তাদেরকে বোঝা মনে করে ও অবজ্ঞা করে; যেটা ছেলেদের বেলায় করে না। কারণ উল্লেখিত দিকগুলোতে ছেলেরা মেয়েদের বিপরীত। তবে হাদিস থেকে এমনটি বুঝারও সম্ভাবনা রয়েছে যে, এ কথাটি শুধু বিশেষ ঐ ঘটনার ক্ষেত্রে উদ্ধৃত হয়েছে। সেটা ছাড়া এ বাণীর আর কোন মাফহুম (নির্দেশনা) নেই। ছেলেদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।(তারহুত তাসরিব; খন্ড: ৭; পৃষ্ঠা: ৬৭)।(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
______________________
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।