কখন ঈদের শুভেচ্ছা জানানো উচিত

প্রশ্ন: কখন ঈদের শুভেচ্ছা: ( تَقَبَّلَ اللهُ مِنَّا وَمِنْكُمْ ) বা ঈদ মোবারক বলা উচিত? ঈদের এক দিন বা দুই দিন আগে ঈদের শুভেচ্ছা জানানোর হুকুম কি?
▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: পবিত্র ঈদুল ফিতর কিংবা ঈদুল আযহা উপলক্ষে মুসলিমদের পরস্পর ঈদের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন বৈধ বিষয়াবলীর অন্তর্ভুক্ত। কোন কোন সাহাবী থেকে এটি বর্ণিত আছে। ঈদের শুভেচ্ছা জানানো উচিত ঈদের নামাজের পর।কেননা আমাদের সালাফগন এমনটাই করেছেন। কিন্তু কেউ যদি ঈদ শুরু হওয়ার আগেই:(تَقَبَّلَ اللهُ مِنَّا وَمِنْكُمْ ) বা “ঈদ মোবারক” এজাতীয় বাক্যে অভিনন্দন জানায়, ইনশাআল্লাহ এতে দোষের কিছু নেই।
.
হাম্বালী মাযহাবের প্রখ্যাত ফাক্বীহ, শাইখুল ইসলাম, ইমাম ‘আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন কুদামাহ আল-মাক্বদিসী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬২০ হি.] বলেছেন,

“وذكر ابن عقيل في تهنئة العيد أحاديث، منها، أن محمد بن زياد، قال: كنت مع أبي أمامة الباهلي وغيره من أصحاب النبي صلى الله عليه وسلم، فكانوا إذا رجعوا من العيد يقول بعضهم لبعض: تقبل الله منا ومنك ، وقال أحمد: إسناد حديث أبي أمامة إسناد جيد.”

“ইবনে আকীল ঈদের শুভেচ্ছার ব্যাপারে কিছু হাদিস উল্লেখ করেছেন। যেমন মুহাম্মদ বিন যিয়াদ বলেন, আমি আবু উমামা আল-বাহেলি (রাঃ) ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অন্য কিছু সাহাবীর সাথে ছিলাম। তারা যখন ঈদ থেকে প্রত্যাবর্তন করতেন তখন একে অপরকে বলতেন: تَقَبَّلَ اللهُ مِنَّا وَمِنْكُمْ (আল্লাহ্‌ আমাদের পক্ষ থেকে ও আপনাদের পক্ষ থেকে কবুল করুন)। ইমাম আহমাদ বলেন: আবু উমামা (রাঃ)-এর হাদিসের সনদ জাইয়্যেদ (ভাল)।”(ইবনু কুদামাহ, আল-মুগনী, খন্ড: ২ পৃষ্ঠা: ১৩০)
.
তাই সাহাবায়ে কেরামের আমল ও তাদের বর্ণনার প্রত্যক্ষ মর্ম হল: ঈদের শুভেচ্ছা ঈদের নামাযের পরে জ্ঞাপন করতে হয়। যদি ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবীদের অনুসরণে এর মাঝে সীমাবদ্ধ থাকে তাহলে সেটাই ভাল। আর যদি কেউ তার বন্ধুকে সবার আগে শুভেচ্ছা জ্ঞাপনার্থে নামাযের আগেই শুভেচ্ছা জানায় তাতেও ইনশা আল্লাহ্‌ কোন অসুবিধা হবে না। যেহেতু ঈদের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন অভ্যাস শ্রেণীয় বিষয়। অভ্যাস শ্রেণীয় বিষয়াবলির ক্ষেত্রে প্রশস্ততা রয়েছে। মানুষের মাঝে প্রচলিত প্রথাই এ শ্রেণীয় বিষয়ের নীতি নির্ধারক।(ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-১৯২৬৬৫)
.
একটি উসূল আমাদের জানা উচিত আর তা হচ্ছে, মানুষের মাঝে প্রচলিত প্রথার মৌলিক মান হলো বৈধতা, যতক্ষণ পর্যন্ত শরীয়তে এর নিষেধাজ্ঞার দলিল রয়েছে। যেমন:
.
ঈদের ঈদের নামাজের পর করমর্দন, কোলাকুলি এবং মুবারকবাদ জানানোর বিধান কী?”এমন একটি প্রশ্ন সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সাবেক সদস্য, বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফাক্বীহ ও উসূলবিদ আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেন,

ﻫﺬﻩ ﺍﻷﺷﻴﺎﺀ ﻻ ﺑﺄﺱ ﺑﻬﺎ؛ ﻷﻥ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻻ ﻳﺘﺨﺬﻭﻧﻬﺎ ﻋﻠﻰ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﺘﻌﺒﺪ ﻭﺍﻟﺘﻘﺮﺏ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﺰ ﻭﺟﻞ، ﻭﺇﻧﻤﺎ ﻳﺘﺨﺬﻭﻧﻬﺎ ﻋﻠﻰ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻌﺎﺩﺓ، ﻭﺍﻹﻛﺮﺍﻡ ﻭﺍﻻﺣﺘﺮﺍﻡ، ﻭﻣﺎﺩﺍﻣﺖ ﻋﺎﺩﺓ ﻟﻢ ﻳﺮﺩ ﺍﻟﺸﺮﻉ ﺑﺎﻟﻨﻬﻲ ﻋﻨﻬﺎ ﻓﺈﻥ ﺍﻷﺻﻞ ﻓﻴﻬﺎ ﺍﻹﺑﺎﺣﺔ ﻛﻤﺎ ﻗﻴﻞ : ﻭﺍﻷﺻﻞ ﻓﻲ ﺍﻷﺷﻴﺎﺀ ﺣﻞ، ﻭﻣﻨﻊ ﻋﺒﺎﺩﺓ ﺇﻻ ﺑﺈﺫﻥ ﺍﻟﺸﺎﺭﻉ.

“এগুলো করায় কোনো অসুবিধা নেই। কারণ মানুষগন এগুলো ইবাদত হিসেবে অথবা আল্লাহ’র সন্তুষ্টি/নৈকট্য অর্জনের জন্য করে না। বরং তারা এগুলো দেশাচারমূলক প্রথা হিসেবে করে এবং একে অপরকে সম্মান ও মর্যাদা প্রদানের জন্য করে। যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো আচার বা প্রথার ব্যাপারে শরিয়তের নিষেধাজ্ঞা সাব্যস্ত হচ্ছে না, ততক্ষণ পর্যন্ত তার মৌলিক হুকুম হলো বৈধতা। যেমন বলা হয় ‘সকল (প্রথাগত) বিষয়ের মৌলিক মান হলো বৈধতা, আর শরিয়তপ্রণেতার অনুমতি ছাড়া সকল ইবাদতের মৌলিক মান হলো নিষিদ্ধতা’।” [ইমাম ইবনু ‘উসাইমীনবা (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল; খণ্ড: ১৬; পৃষ্ঠা: ২০৯; দারুস সুরাইয়্যা, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত)
.
ইমাম আশ-শারওয়ানি আশ-শাফেয়ি (রাহিমাহুল্লাহ)
বলেন:

“ويؤخذ من قوله في يوم العيد أنها لا تطلب – أي: التهنئة – في أيام التشريق وما بعد يوم عيد الفطر، لكن جرت عادة الناس بالتهنئة في هذه الأيام ولا مانع منه؛ لأن المقصود منه التودد وإظهار السرور، ويؤخذ من قوله يوم العيد أيضاً: أن وقت التهنئة يدخل بالفجر لا بليلة العيد خلافا، لما في بعض الهوامش. ا هـ، وقد يقال: لا مانع منه أيضاً إذا جرت العادة بذلك ؛ لما ذكره من أن المقصود منه التودد وإظهار السرور، ويؤيده ندب التكبير في ليلة العيد.”

গ্রন্থাকারের বক্তব্য “ঈদের দিন” থেকে গ্রহণ করা যায় যে, ঈদের দিনের পরে তাশরিকের দিনগুলোতে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন প্রত্যাশা করার নয়। কিন্তু মানুষের অভ্যাস হচ্ছে এ দিনগুলোতেও শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করা। এতে কোন আপত্তি নেই। কেননা এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে সম্প্রীতি বাড়ানো ও আনন্দ প্রকাশ করা। গ্রন্থাকারের বক্তব্য “ঈদের দিন” থেকে আরও গ্রহণ করা যায় যে, শুভেচ্ছা জ্ঞাপনের সময় ফজরের ওয়াক্ত প্রবেশের মাধ্যমে শুরু হয়; ঈদের রাত থেকে নয় যেমনটি কোন কোন পার্শ্বটীকাতে উদ্ধৃত হয়েছে। এটাও বলা যেতে পারে যে, এতেও কোন আপত্তি নেই যদি এ ধরণের প্রথা জারী থাকে। যেহেতু পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, শুভেচ্ছা জ্ঞাপনের উদ্দেশ্য হচ্ছে সম্প্রীতি ও আনন্দ প্রকাশ। ‘ঈদের রাতে তাকবীর দেয়া মুস্তাহাব’ হওয়ার মধ্যেও এ অভিমতের পক্ষে সমর্থন পাওয়া যায়।”।(দেখুন আশ-শারওয়ানি রচিত ‘তুহফাতুল মুহতাজ’ এর হাশিয়া খন্ড: ২ পৃষ্ঠা: ৫৭) আরো বিস্তারিত জানতে দেখুন: ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-১৯২৬৬৫) আল্লাহ্‌ই সবচেয়ে জ্ঞানী।
_______________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

Share: