প্রশ্ন:মৃত্যুর পূর্ব লক্ষন ও মৃত্যুর যন্ত্রণা কেমন?যে সকল লক্ষণ দেখে মৃত্যু নিশ্চিত হওয়া বুঝা যায়। এবং মৃত্যুর পরে রূহের অবস্থায় কোথায় হবে?
▬▬▬▬▬▬▬

▬▬▬▬▬▬▬



কবি বলেছেন,জীবনের দীপ নিভে আসে যবে ঢেউ জাগে দেহ তীরে,ওপারে দাঁড়ায়ে ডাকে ‘মহাকাল’ আয় মোর কোলে ফিরে।”মুমিন বান্দা যখন দুনিয়াকে ত্যাগ করতে এবং আখেরাতের দিকে অগ্রসর হতে থাকে,অর্থাৎ মৃত্যুর পূর্ব মুহুর্তে মরণােন্মুখ ব্যক্তি মালাকুল মাওত (মওতের ফিরিশ্তা) দেখতে পায়। লোক ভালো হলে তাকে সুশ্রী চেহারায় দেখে থাকে। আর তার সাথে দেখে রহমতের আরো কয়েকজন শুভ্র চেহারা বিশিষ্ট ফিরিশ্তাকে যাদের সঙ্গে থাকে জান্নাতের কাফন এবং সুগন্ধি। পক্ষান্তরে লোক মন্দ হলে মালাকুল মউতকে কুশ্রী চেহারায় দেখতে পায়। আর তার সাথে কালো চেহারা বিশিষ্ট কয়েকজন আযাবের ফিরিশ্তাও দেখে থাকে, যাদের সাথে থাকে জাহান্নামের কাফন ও দুর্গন্ধ। এই সময় মুমূর্ষূর সমস্ত শক্তি চূর্ণ হয়ে যায়। বিকল হয়ে যায় সকল প্রকার প্রতিরোধক্ষমতা। অনায়াসে নিজেকে সঁপে দিতে চায় মরণের হাতে। আর শুরু হয় তার বিভিন্ন প্রকার মৃত্যু যন্ত্রণা।(মুসনাদে আহমাদ ৪/২৮৭-২৮৮, আবুদাউদ ৪৭৫৩ হাদিস সম্ভার,১৩৮২)

___________________________



আম্মাজান আয়েশা (রাঃ) নবী রাসূল (ﷺ) এর মৃত্যু সময়কালীন কষ্ট বর্ণনা করে বলেন, তার হাতের কাছে একটি পানির পাত্র রাখা ছিল। তাতে হাত ডুবিয়ে তিনি বারবার মুখ মুছতে লাগলেন এবং বলতে লাগলেন, “লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ অবশ্যই মৃত্যুর রয়েছে কঠিন যন্ত্রণা।” অতঃপর তিনি তাঁর হাত উপর দিকে তুলে বললেন, “হে আল্লাহ! আমাকে পরম বন্ধুর সাথে (মিলিত কর।” অতঃপর তাঁর রূহ কবয হলে তাঁর হাত লুটিয়ে পড়ল। (বুখারী ৬৫১০ সহীহ ইবনু হিব্বান ৬৬১৭ মিশকাত,৫৯৫৯)
অপর একটি বর্ণনায় আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মৃত্যুর কষ্ট দেখার পর অন্য কারো মৃত্যুর সময় কষ্ট হলে আমার হিংসা হয় না।(তিরমিজী, ৯৮১ শামায়েলে তিরমিজি,২৯৭)
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মৃত্যুর কষ্ট ভোগ করছিলেন, তখন ফাতেমা (রাঃ) বললেন, হায়! আমার আব্বার কতই না কষ্ট হচ্ছে! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আজকের পর তোমার পিতার আর কোন কষ্ট থাকবে না। তোমার পিতার নিকট মৃত্যু নামক এমন এক বিষয় উপস্থিত হয়েছে, যা থেকে ক্বিয়ামত পর্যন্ত কেউ রেহাই পাবে না।(ইবনে মাজাহ, হা/১৬২৯ শামায়েলে তিরমিযি, হাদিস নং ৩০৫)
সুতরাং যদি এই অবস্থা সৃষ্টির সেরা মানুষ মহানবী (ﷺ) এর হয়, তাহলে আরো অন্যান্যের যে কী হাল হতে পারে, তা বলাই বাহুল্য।

_________________________________






মহান আল্লাহ তাআলা বলেন,যখন প্ৰাণ কণ্ঠাগত হবে,এবং বলা হবে, ‘কে তাকে রক্ষা করবে ?’তখন তার প্রত্যয় হবে যে, এটা বিদায়ক্ষণ।আর পায়ের গোছার সঙ্গে পায়ের গোছা জড়িয়ে যাবে।(সুরা কিয়ামাহ ২৬-২৯)।
এই তো সেই শেষ নির্ধারিত সময় যার কোন প্রকার অন্যথা হবে না।মহান আল্লাহ বলেন, অর্থাৎ,আর প্রত্যেক জাতির রয়েছে একটি নির্দিষ্ট সময়। অতঃপর যখন তাদের সময় আসবে, তখন তারা এক মুহূর্ত বিলম্ব করতে পারবে না এবং এগিয়েও আনতে পারবে না। (সুরা আ’রাফ,৩৪)
উম্মে সালামাহ (রাঃ) বলেন, নবী (ﷺ) আবু সালামার নিকট এলেন; তখন তার চক্ষু স্থির হয়ে গিয়েছিল। তিনি তার চক্ষু বন্ধ করে বললেন, “রূহ কবয হয়ে গেলে চক্ষু তার দিকে চেয়ে থাকে।”(সহীহ মুসলিম ১৫২৮, ইবনে মাজাহ ১৪৪৪)

___________________________________
সমস্ত নবী-রাসূল একমত যে,রূহ আল্লাহর সৃষ্টি, তাঁর প্রতিপালিত ও তাঁরই হুকুমে পরিচালিত।
অর্থাৎ রূহ এমন একটি আকৃতি (কাঠামো) যা বাহ্যিক শরীরের সত্তা (প্রকৃতি) থেকে আলাদা। রূহ নূরানী আকৃতি, ঊর্ধ্বমুখী, অতিসূক্ষ্ম, জীবিত ও চলনশীল। এটি শরীরের প্রধান কাজ করে, গোলাপের মধ্যে যেমন পানি গোপন থাকে তেমনিভাবে শরীরে রূহ গোপন থাকে; যাইতুনের মধ্যে যেমন তেল বিদ্যমান থাকে তেমনিভাবে শরীরের মধ্যে রূহ বিদ্যমান; কয়লার মধ্যে যেভাবে আগুন সূক্ষভাবে থাকে তেমনিভাবে রূহ শরীরের মধ্যে অতি সূক্ষ্মভাবে বিদ্যমান থাকে। যতক্ষণ শরীর প্রচুর পরিমাণে কাজ করার সামর্থ্য রাখে ততক্ষণ উক্ত সূক্ষ্ম শরীর (রূহ) এ শরীরের সাথে আঁকড়ে থাকে এবং রূহের এ প্রভাব তার অনুভূতি, ইচ্ছাকৃত চলাফেরায় পরিলক্ষিত হয়। আর এ শরীর যখন কঠোর মিশ্রন করার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে এবং শরীরের মধ্যে কাজ করার যোগ্যতা বিলুপ্ত হয়, তখন রূহ শরীর থেকে বেরিয়ে যায় এবং রূহ জগতের সাথে মিলে আলাদা হয়ে যায়।মহান আল্লাহ বলেন, প্রত্যেক প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে।(সূরা আলে ইমরান ১৮৫)। এতে বুঝা যায় যে,দেহ ও আত্মার মিলিত সত্ত্বাকে ‘নফস’ বলা হয়। আর শুধুমাত্র আত্মাকে ‘রূহ’ বলা হয়।
একদা ইহূদীগণ রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে রূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘হে নবী! তুমি বল, রূহ হ’ল আল্লাহর একটি আদেশ’(সূরা ইসরা ১৭/৮৫)। যার প্রকৃতি মানুষের জ্ঞানের বাইরে। এমনকি আম্বিয়ায়ে কেরামও এর প্রকৃতি জানতেন না। (শাওকানী, যুবদাতুত তাফসীর, ইসরা ৮৫ আয়াতের ব্যাখ্যা)
মৃত্যুপরবর্তী সময়ে সৎ বান্দাদের রূহ ইল্লিয়ীনে এবং পাপীদের রূহ সিজ্জীনে অবস্থান করে’।(মুসনাদে আহমাদ হা/১৮৫৫৭; মিশকাত হা/১৬৩০)অতঃপর তাদের আমল অনুযায়ী তাদের রূহের উপর শান্তি অথবা শাস্তি প্রদান করা হয়’।[গাফের ৪০/৪৫-৪৬; আবুদাঊদ হা/৪৭৫৫; মিশকাত হা/১৩১)
রাসূল (সাঃ) বলেন, ‘নিশ্চয়ই যখন রূহ কবয করা হয়, তখন তার চোখ তা দেখতে থাকে।’ (সহীহ মুসলিম হা/৯২০ মিশকাত হা/১৬১৯ ‘জানায়েয’ অধ্যায়)
অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূল (সাঃ) বলেন, তোমরা কি দেখনি যে, মৃত্যুর সময় মানুষের চোখ তাকিয়ে থাকে? সাহাবায়ে কেরাম বললেন, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল! তখন তিনি বললেন, ‘তা তো ঐ সময় যখন তার চোখ তার নফসকে দেখতে থাকে’ (সহীহ মুসলিম হা/৯২১)।
মুমিনের আত্মা সম্পর্কে অপর এক হাদীসে রাসূল (সাঃ) বলেছেন, ‘মুমিনের রূহ জান্নাতী গাছের পাখির রূপ ধারণ করে থাকবে, ক্বিয়ামতের দিন তাদের স্বীয় শরীরে পুনঃস্থাপন করা পর্যন্ত’।(নাসাঈ হা/২০৭৩;ইবনু মাজাহ হা/৪২৭১)
_____________________
উপস্থাপনায়,
জুয়েল মাহমুদ সালাফি