প্রশ্ন: মৃত ব্যক্তির মৃত্যুর পূর্ব থেকে শুরু করে কবরস্থ করা পর্যন্ত জন্য যাবতীয় বর্জনীয় কর্মকাণ্ড গুলো কি কি?
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
মুমূর্ষ রোগীর নিকট কালিমা পড়ানোর পরিবর্তে মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ’ (ﷺ)বলে অথবা আহলে বায়ত বা অন্য কোন বুযুর্গ ও অলীর নাম স্মরণ ও স্বীকার করানো বিদআত।(আহকামুল জানাই অবিদাউহা, বিদআত নং ৩)।মুমুর্ষ ব্যক্তির মাধ্যমে কোন মৃতব্যক্তিকে সালাম পৌঁছানো বিদআত এ ব্যাপারে যে সলফের আমল বর্ণিত করা হয় তা সহীহ নয়।(যয়ীফ ইবনে মাজাহ ৩১০ মিশকাত ১৬৩৩)।তদনুরূপ মরণাপন্ন ব্যক্তিকে কেবলামুখ করা প্রসঙ্গে কোন সহীহ হাদীস বর্ণিত হয়নি।
মৃত্যুর পরে যাবতীয় বর্জনীয় কর্মকাণ্ড :
__________________________________
(১) উচ্চৈঃস্বরে চীৎকার দিয়ে কান্নাকাটি করা।(তালখীছ, পৃঃ ১৮)(২) বাজারে, মিনারে (মাইকে) ‘শোক সংবাদ’ প্রচার করা।(তালখীছ, পৃঃ ১৯, ৯৮)
(৩) অতিরঞ্জিত শোক প্রকাশ ও বিলাপধ্বনি করা। মুখ ও বুক চাপড়ানো। মেয়েদের মাথার কাপড় ফেলা ও বুকের কাপড় ছেঁড়া ইত্যাদি।(মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৭২৫-২৬)।সাহাবী হোযায়ফা (রাঃ) অসিয়ত করে বলেন,আমি মারা যাওয়ার পরে কাউকে সংবাদ দিয়ো না। আমার ভয় হয় এটা না‘ঈ বা শোক সংবাদ হবে কি-না। কেননা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)এ থেকে নিষেধ করেছেন’। অন্যান্য সাহাবী থেকেও এধরনের অছিয়ত বহু রয়েছে।(তিরমিযী হা/৯৮৬; ইবনু মাজাহ হা/১৪৭৬; তালখীছ, পৃঃ ১৯, ১০)। সেকারণ ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, প্রত্যেকের উচিৎ এভাবে অসিয়ত করে যাওয়া,যেন তার মৃত্যুর পরে কোন প্রকার বিদ‘আত না করা হয়।(তালখীছ, পৃঃ ১০)
(৪) মৃতের জন্য তিনদিন পর্যন্ত শোক প্রকাশের অনুমতি রয়েছে, তার বেশী নয়।(আবুদাঊদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/৪৪৬৩ ‘পোষাক’ অধ্যায়-২২, অনুচ্ছেদ-৩। (৫) দাফনে দেরী করা এবং জানাযা করে বা না করে নিকটাত্মীয় আসার অপেক্ষায় লাশ বরফ দিয়ে রেখে দেওয়া সম্পূর্ণরূপে সুন্নাত বিরোধী কাজ।
(৬) মৃত্যুর পরপরই বাড়ীতে এবং জানাযাকালে ও কবরস্থানে ছাদাক্বা বিতরণ করা নাজায়েয।(ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৩০৮)
কবরে নিষিদ্ধ কর্মকান্ড :
_________________________
১) কবর এক বিঘতের বেশী উঁচু করা, পাকা ও চুনকাম করা, সমাধি সৌধ নির্মাণ করা, গায়ে নাম লেখা, কবরের উপরে বসা, কবরের দিকে ফিরে সালাত আদায় করা।(মুসলিম, মিশকাত হা/১৬৯৬-৯৯; তিরমিযী, মিশকাত হা/১৭০৯।)(২) ধুয়ে-মুছে সুন্দর করা,কবরে মসজিদ নির্মাণ করা, সেখানে মেলা বসানো,ওরস করা ও কবরকে তীর্থস্থানে পরিণত করা।(মুসলিম, মিশকাত হা/৭১৩)(৩) কবরের নিকটে গরু-ছাগল-মোরগ ইত্যাদি যবেহ করা। জাহেলী যুগে দানশীল ও নেককার ব্যক্তিদের কবরের পাশে এগুলি করা হ’ত।(আবুদাঊদ হা/৩২২২)(৪) কবরে ফুল দেওয়া, গেলাফ চড়ানো, শামিয়ানা টাঙ্গানো ইত্যাদি।(ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২৯৫)রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,আল্লাহ আমাদেরকে ইট, পাথর ও মাটি ইত্যাদিকে কাপড় পরিধান করাতে নির্দেশ দেননি’।(ফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৪৪৯৪)।এগুলি স্পষ্টভাবে কবরপূজার শামিল।রাসূলুল্লাহ(ﷺ) আলী (রাঃ)-কে নির্দেশ দিয়ে বলেছিলেন,তুমি কোন মূর্তিকে ছেড় না নিশ্চিহ্ন না করা পর্যন্ত এবং কোন উঁচু কবরকে ছেড় না মাটি সমান না করা পর্যন্ত।’(মুসলিম হা/৯৬৯; ঐ, মিশকাত হা/১৬৯৬)।(ক) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) প্রার্থনা করেছেন, اَللَّهُمَّ لاَ تَجْعَلْ قَبْرِي وَثَناً يُّعْبَدُ اشْتَدَّ غَضَبُ اللهِ عَلَى قَوْمٍ اتَّخَذُوا قُبُورَ أَنْبِيَائِهِمْ مَسَاجِدَ ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার কবরকে ইবাদতের স্থানে পরিণত করো না। আল্লাহর গযব কঠোরতর হয় ঐ জাতির উপরে, যারা তাদের নবীর কবরকে সিজদার স্থানে পরিণত করে।(মুওয়াত্ত্বা, মিশকাত হা/৭৫০)।(খ) আজকাল কবরকে ‘মাযার’ বলা হচ্ছে। যার অর্থ:পবিত্র সফরের স্থান। অথচ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলে গেছেন, ‘(নেকী হাছিলের উদ্দেশ্যে) তিনটি স্থান ব্যতীত সফর করা যাবে না, মাসজিদুল হারাম, মাসজিদুল আক্বসা ও আমার এই মসজিদ’।(মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৬৯৩) তিনি তাঁর উম্মতের উদ্দেশ্যে বলেন,لاَ تَجْعَلُوْا قَبْرِىْ عِيْدًا ‘তোমরা আমার কবরকে তীর্থস্থানে পরিণত করো না’।(নাসাঈ, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৯২৬)।(গ) মৃত্যুর পাঁচদিন পূর্বে তিনি উম্মতকে সাবধান করে বলেন,لاَ تَتَّخِذُوا الْقُبُوْرَ مَسَاجِدَ، إِنِّيْ أَنْهَاكُمْ عَنْ ذَلِكَ- ‘সাবধান! তোমরা কবর সমূহকে সিজদার স্থানে পরিণত করো না। আমি তোমাদেরকে এ ব্যাপারে নিষেধ করে যাচ্ছি।’( মুসলিম হা/১২১৬, মিশকাত হা/৭১৩;)।(ঘ) কবরে মসজিদ নির্মাণকারী ও সেখানে মৃতব্যক্তির ছবি, মূর্তি ও প্রতিকৃতি স্থাপনকারীদের সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, أُولَئِكَ شِرَارُ الْخَلْقِ عِنْدَ اللهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ‘এরা ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকটে নিকৃষ্টতম সৃষ্টি হিসাবে গণ্য হবে।’(বুখারী হা/১৩৪১; মুসলিম হা/১২০৯)।(ঙ) কবরের বদলে কোন গৃহে বা রাস্তার ধারে বা কোন বিশেষ স্থানে মৃতের পূর্ণদেহী বা আবক্ষ প্রতিকৃতি নির্মাণ করে বা স্মৃতিচিহ্ন স্থাপন করে সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন করা ও নীরবে দাঁড়িয়ে থাকা পরিষ্কারভাবে মূর্তিপূজার শামিল। যা স্পষ্ট শিরক এবং যা থেকে বিরত থাকা অপরিহার্য। উল্লেখ্য যে,মাথাসহ আবক্ষ ছবি ও মূর্তি পুরা মূর্তির শামিল,যা সর্বদা নিষিদ্ধ।(আবুদাঊদ হা/৪১৫৮)
মৃত্যুর পরে প্রচলিত বিদ‘আত সমূহ:
_________________________________
(১) মৃত্যুর আগে বা পরে মাইয়েতকে ক্বিবলার দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া।(২) মাইয়্যেতের শিয়রে বসে সূরা ইয়াসীন বা কুরআন তেলাওয়াত করা (তালখীছ পৃ, ৯৬, ৯৭)।(৩) মাইয়্যেতের নখ কাটা ও গুপ্তাঙ্গের লোম ছাফ করা।(৯৭)(৪) কাঠি দিয়ে (বা নির্দিষ্ট সংখ্যক নিম কাঠি দিয়ে) দাঁত খিলাল করানো।
(৫) নাক-কান-গুপ্তাঙ্গ প্রভৃতি স্থানে তুলা ভরা।(৯৭)
(৬) দাফন না করা পর্যন্ত পরিবারের লোকদের না খেয়ে থাকা।(৯৭)(৭) বাড়ীতে বা কবরস্থানে এই সময় সাদাক্বা বিলি করা। (৯৯, ১০৩)(৮) চিৎকার দিয়ে কান্নাকাটি করা, বুক চাপড়ানো, কাপড় ছেঁড়া, মাথা ন্যাড়া করা, দাড়ি-গোঁফ না মুন্ডানো ইত্যাদি।(১৮, ৯৭)
(৯) তিন দিনের অধিক (সপ্তাহ, মাস, ছয় মাস ব্যাপী) শোক পালন করা (১৫, ৭৩) কেবল স্ত্রী ব্যতীত। কেননা তিনি ৪ মাস ১০ দিন ইদ্দত পালন করবেন।
(১০) কাফির, মুশরিক, মুনাফিকদের জন্য দো‘আ করা। (৪৮)(১১) শোক দিবস (শোকের মাস ইত্যাদি) পালন করা, শোকসভা করা ও এজন্য খানাপিনার বা (কাঙ্গালী ভোজের) আয়োজন করা ইত্যাদি।(৭৩-৭৪)(১২) মসজিদের মিনারে বা বাজারে মাইকে অলি-গলিতে ‘শোক সংবাদ’ প্রচার করা।(১৯, ৯৮)(১৩) কবরের উপরে খাদ্য ও পানীয় রেখে দেওয়া,যাতে লোকেরা তা নিয়ে যায়।(১০৩)
(১৪) মৃতের কক্ষে তিন রাত, সাত রাত (বা ৪০ রাত) ব্যাপী আলো জ্বেলে রাখা।(৯৮)(১৫) কাফনের কাপড়ের উপরে কুরআনের আয়াত ও দো‘আ-কালেমা ইত্যাদি লেখা।(৯৯)(১৬) এই ধারণা করা যে,মাইয়্যেত জান্নাতী হ’লে ওযনে হালকা হয় ও দ্রুত কবরের দিকে যেতে চায়। (৯৯)(১৭) মাইয়্যেতকে দূরবর্তী নেককার লোকদের গোরস্থানে নিয়ে দাফন করা। (৯৯)
(১৮) জানাযার পিছে পিছে উচ্চৈঃস্বরে যিকর ও তেলাওয়াত করতে থাকা। (১০০)(১৯) জানাযা শুরুর প্রাক্কালে মাইয়েত কেমন ছিলেন বলে লোকদের কাছ থেকে সমস্বরে সাক্ষ্য নেওয়া(১০১)(২০) জানাযার সালাতের আগে বা দাফনের পরে তার শোকগাথা বর্ণনা করা।(১০০)(২১) জুতা পাক থাকা সত্ত্বেও জানাযার ছালাতে জুতা খুলে দাঁড়ানো।(১০১)
(২২) কবরে মাইয়্যেতের উপরে গোলাপ পানি ছিটানো(১০২)(২৩) কবরের উপরে মাথার দিক থেকে পায়ের দিকে ও পায়ের দিক থেকে মাথার দিকে পানি ছিটানো। অতঃপর অবশিষ্ট পানিটুকু কবরের মাঝখানে ঢালা।(১০৩)(২৪) তিন মুঠি মাটি দেওয়ার সময় প্রথম মুঠিতে ‘মিনহা খালাক্বনা-কুম’ দ্বিতীয় মুঠিতে ‘ওয়া ফীহা নু‘ঈদুকুম’ এবং তৃতীয় মুঠিতে ‘ওয়া মিনহা নুখরিজুকুম তা-রাতান উখরা’ বলা।(ত্বোয়াহা ৫৫;১০২) (২৫) অথবা ‘আল্লা-হুম্মা আজিরহা মিনাশ শায়ত্বান’…. পাঠ করা।(ইবনু মাজাহ হা/১৫৫৩, ‘যঈফ’)। (২৬) কবরে মাথার দিকে দাঁড়িয়ে সূরায়ে ফাতিহা ও পায়ের দিকে দাঁড়িয়ে সূরায়ে বাক্বারাহর শুরুর অংশ পড়া।(১০২)(২৭) সূরায়ে ফাতিহা, ক্বদর, কাফিরূন,নাসর,ইখলাছ, ফালাক্ব ও নাস এই সাতটি সূরা পাঠ করে দাফনের সময় বিশেষ দো‘আ পড়া। (১০২)(২৮) কবরের কাছে বসে কুরআন তেলাওয়াত ও খতম করা।(১০৪)(২৯) কবরের উপরে শামিয়ানা টাঙ্গানো।(১০৪)(৩০) নির্দিষ্ট ভাবে প্রতি জুম‘আয় কিংবা সোম ও বৃহস্পতিবারে পিতা-মাতার কবর যেয়ারত করা।(১০৫)(৩১) এতদ্ব্যতীত আশূরা, শবে মে‘রাজ, শবেবরাত, রামাযান ও দুই ঈদে বিশেষভাবে কবর যেয়ারত করা।(৩২) কবরের সামনে হাত জোড় করে দাঁড়ানো ও সূরায়ে ফাতিহা ১ বার, ইখলাছ ১১ বার কিংবা সূরা ইয়াসীন ১ বার পড়া (১০৫)।
(৩৩) কুরআন পাঠকারীকে উত্তম খানা-পিনা ও টাকা-পয়সা দেওয়া বা এ বিষয়ে অসিয়ত করে
যাওয়া।(১০৪, ১০৬)(৩৪) কবরকে সুন্দর করা।(১০৭)
(৩৫) কবরে রুমাল, কাপড় ইত্যাদি বরকত মনে করে নিক্ষেপ করা।(১০৮) (৩৬) কবরে চুম্বন করা।(১০৮)
(৩৭) কবরের গায়ে মৃতের নাম ও মৃত্যুর তারিখ লেখা।(১০৯)(৩৮) কবরের গায়ে বরকত মনে করে হাত লাগানো এবং পেট ও পিঠ ঠেকানো।(১০৮)(৩৯) ত্রিশ পারা কুরআন (বা সূরা ইয়াসীন) পড়ে এর সওয়াব সমূহ মৃতের নামে বখশে দেয়া (১০৬)। যাকে এদেশে ‘কুরআনখানী’ বলে।(৪০) কাফিরুন, ইখলাছ, ফালাক্ব ও নাস এই চারটি ‘কুল’ সূরার প্রতিটি ১ লক্ষ বার পড়ে মৃতের নামে বখশে দেওয়া, যাকে এদেশে ‘কুলখানী’ বলে।(৪১) কালেমা ত্বাইয়িবা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ ১ লক্ষ বার পড়ে মৃতের নামে বখশে দেওয়া, যাকে এদেশে ‘কালেমাখানী’ বলে।(৪২) ১ম, ৩য়, ৭ম (বা ১০ম দিনে) বা ৪০ দিনে চেহলাম বা চল্লিশার অনুষ্ঠান করান।(৪৩) ‘খানা’র অনুষ্ঠান করা।(১০৩)
(৪৪) যারা কবর খনন করে ও দাফনের কাজে সাহায্য করে,তাদেরকে মৃতের বাড়ী দাওয়াত দিয়ে বিশেষ খানার ব্যবস্থা করা। যাকে এদেশে ‘হাত ধোয়া খানা’ বলা হয়।(৪৫) আযান শুনে নেকী পাবে বা গোর আযাব মাফ হবে ভেবে মসজিদের পাশে কবর দেওয়া।
(৪৬) কবরের পাশে দাঁড়িয়ে ‘ফাতিহা’ পাঠ করা। (২০)
(৪৭) কাফন-দাফনের কাজকে নেকীর কাজ না ভেবে পয়সার বিনিময়ে কাজ করা।(৪৮) মৃত ব্যক্তির কবরের পাশে আলো জ্বেলে ও মাইক লাগিয়ে রাত্রি ব্যাপী উচ্চৈঃস্বরে কুরআন খতম করা।(৪৯) মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা।(১০৪, ১০৬)(৫০)সালাত, ক্বিরাআত ও অন্যান্য দৈহিক ইবাদত সমূহের নেকী মৃতদের জন্য হাদিয়া দেওয়া। (১০৬) যাকে এদেশে ‘ছওয়াব রেসানী’ বলা হয়।(৫১) আমল সমূহের সওয়াব রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নামে (বা অন্যান্য নেককার মৃত ব্যক্তিদের নামে) বখশে দেওয়া।(১০৬)। যাকে এদেশে ‘ঈসালে সওয়াব’ বলা হয়।(৫২) নেককার লোকদের কবরে গিয়ে দো‘আ করলে তা কবুল হয়, এই ধারণা করা। (১০৮)(৫৩) মৃত্যুর সাথে সাথে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায় বলে ধারণা করা।(৫৪) জানাযার সময় স্ত্রীর নিকট থেকে মোহরানা মাফ করিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা।(৫৫) ঐ সময় মৃতের ক্বাযা সালাত সমূহের বা উমরী ক্বাযার কাফফারা স্বরূপ টাকা আদায় করা।
(৫৬) মৃত্যুর পরপরই ফকীর-মিসকীনদের মধ্যে চাউল ও টাকা-পয়সা বিতরণ করা।(৫৭) দাফনের পরে কবরস্থানে মহিষ বা গবাদি-পশু যবহ করে গরীবদের মধ্যে গোশত বিতরণ করা।(৫৮) লাশ কবরে নিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তায় তিনবার নামানো।(৫৯) কবরে মাথার কাছে ‘মক্কার মাটি’ নামক আরবীতে ‘আল্লাহ’ লেখা মাটির ঢেলা রাখা।(৬০) মাইয়েতের মুখে ও কপালে আতর দিয়ে ‘আল্লাহ’ লেখা।(৬১) কবরে মোমবাতি, আগরবাতি ইত্যাদি দেওয়া।(৬২) পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের সময় বদনায় পানি দিয়ে যাওয়া এই নিয়তে যে, মৃতের রূহ এসে ওযু করে সালাত আদায় করে যাবে।(৬৩) মৃতের ঘরে ৪০ দিন যাবৎ বিশেষ লৌহজাত দ্রব্য রাখা।(৬৪) মৃত্যুর ২০দিন পর রুটি বিলি করা ও ৪০ দিন পর বড় ধরনের ‘খানা’র অনুষ্ঠান করা।(৬৫) মৃতের বিছানা ও খাট ইত্যাদি ৭দিন পর্যন্ত একইভাবে রাখা।(৬৬) মৃতের পরকালীন মুক্তির জন্য তার বাড়ীতে মীলাদ বা ওয়ায মাহফিল করা।
(৬৭) নববর্ষ, শবেবরাত ইত্যাদিতে কোন বুযর্গ ব্যক্তিকে ডেকে মৃতের কবর যিয়ারত করিয়ে নেওয়া ও তাকে বিশেষ সম্মানী প্রদান করা।(৬৮) শবেবরাতে ঘরবাড়ী পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে মৃত স্বামীর রূহের আগমন অপেক্ষায় তার পরিত্যক্ত কক্ষে বা অন্যত্রে সারা রাত জেগে বসে থাকা ও ইবাদত-বন্দেগী করা।(৬৯) ঈছালে ছওয়াবের অনুষ্ঠান করা।(৭০) নিজের কোন একটি বা একাধিক সমস্যা সমাধানের নিয়তে কবরের গায়ে বা পাশের কোন গাছের ডালে বিশেষ ধরনের সুতা বা ইটখন্ড ঝুলিয়ে রাখা।(৭১) মাযার থেকে ফিরে আসার সময় কবরের দিকে মুখ করে বেরিয়ে আসা।(৭২) মৃত্যুর আগেই কবর তৈরী করা। (১০৪)(৭৩) কবরে মৃত ব্যক্তির ব্যবহৃত বস্ত্ত সমূহ রাখা এই ধারণায় যে, সেগুলি তার কাজে আসবে।(৭৪) কবরে কা‘বা গৃহের কিংবা কোন পীরের কবরের গেলাফের অংশ কিংবা তাবীয লিখে দাফন করা এই ধারণায় যে, এগুলি তাকে কবর আযাব থেকে বাঁচিয়ে দেবে।(৭৫) কবরে ‘ওরস’ উপলক্ষে বা অন্য সময়ে রান্না করা খিচুড়ী বা তৈরী করা রুটি বা মিষ্টি ‘তাবাররুক’ নাম দিয়ে বরকতের খাদ্য মনে করে ভক্ষণ করা।(৭৬) আজমীরে খাজাবাবার কবরে টাকা পাঠানো বা অন্য কোন পীর বাবার কবরে গরু-ছাগল, টাকা-পয়সা ও অন্যান্য হাদিয়া পাঠানো।(৭৭) কবরের মধ্যবর্তী স্থানে আঙ্গুল প্রবেশ করিয়ে মৃতের জন্য দো‘আ পড়া।(৭৮) কবরের উপরে একটি বা চার কোণে চারটি কাঁচা খেজুরের ডাল পোতা বা কোন গাছ লাগানো এই ধারণা করে যে,এর প্রভাবে কবর আযাব হালকা হবে।(৭৯) খাটিয়া ও মাইয়্যেত ঢাকার কাপড় খুব সুন্দর করা।(৯৯)(৮০) কালেমা ও পবিত্র কুরআনের আয়াত লিখিত কালো কাপড় দিয়ে খাটিয়া ঢাকা।
(৮১) মৃতের প্রত্যেক অঙ্গ ধোয়ার সময় পৃথক পৃথক দো‘আ পড়া।(৯৮)(৮২) জানাযা বহনের সাথে সাথে সাদাক্বা বিতরণ করা এবং লোকদের কোল্ড ড্রিংকস পান করানো।(৯৯)(৮৩) লাশের নিকট ভিড় করা।(৯৯)
(৮৪) মৃতের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী বা অন্য কোন উপলক্ষে দিনভর উচ্চৈঃস্বরে তার বক্তৃতা বা কুরআনের ক্যাসেট বাজানো।(৮৫) বিশেষ কোন নেককার ব্যক্তির কবর থাকার কারণে জনপদের লোকেরা রূযিপ্রাপ্ত হয় ও আল্লাহর সাহায্যপ্রাপ্ত হয় বলে ধারণা পোষণ করা।(১০৬)(৮৬) জানাযা শুরুর পূর্বে ইমামের পক্ষ থেকে মুপল্লীদের উদ্দেশ্যে উচ্চৈঃস্বরে ‘নিয়ত’ বলে দেওয়া(৮৭) ইমাম ও মুক্তাদীর ‘ছানা’ পড়া। (১০১)(৮৮) সূরা ফাতিহা ও একটি সূরা ছাড়াই জানাযার সালাত আদায় করা।(১০১)(৮৯) জানাযা শেষ হবার পরেই সেখানে দাঁড়িয়ে অথবা দাফন শেষে একজনের নেতৃত্বে সকলে দু’হাত তুলে দলবদ্ধভাবে মুনাজাত করা।(৯০) জানাযার সময়ে সকলকে মৃতের বাড়ীতে কুলখানির অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেওয়া।উপরে বর্ণিত বিষয়গুলি ছাড়াও মৃত ব্যক্তি ও কবরকে কেন্দ্র করে হাযারো রকমের শিরকী আক্বীদা ও বিদ‘আতী রসম-রেওয়াজ উপমহাদেশে মুসলিম সমাজে চালু আছে।
.
জানা আবশ্যক যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) দু’টি কবরের উপরে যে খেজুরের দু’টি কাঁচা চেরা ডাল পুঁতেছিলেন, সেটা ছিল তাঁর জন্য ‘খাছ’। তাঁর বা কোন সাহাবীর পক্ষ থেকে পরবর্তীতে এমন কোন আমল করার নযীর নেই বুরাইদা আসলামী (রাঃ) ব্যতীত।কেননা তিনি এটার জন্য অছিয়ত করেছিলেন।(সহীহ বুখারী)
অতএব এটা স্পষ্ট যে, কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে নেক আমলের কারণেই কবর আযাব মাফ হ’তে পারে। ফুল দেওয়া বা কাঁচা ডাল পোতার কারণে নয়। কেননা এসবের কোন প্রভাব মাইয়্যেতের উপর পড়ে না। যেমন আব্দুর রহমান (রাঃ)-এর কবরের উপর তাঁবু খাটানো দেখে ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, ওটাকে হটিয়ে ফেল,হে বৎস! কেননা ওটা তার আমলের উপরে ছায়া করছে বা বাধা সৃষ্টি করছে।[মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৩৩৮; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২৯৯, নোট সালাতুর রাসূল (ﷺ)
অতএব প্রত্যেক মুমিনের কর্তব্য হবে এসকল শিরক ও বিদ‘আতী কর্মকান্ড হ’তে দূরে থাকা। আল্লাহ আমাদের হেফাযত করুন। আমীন!! (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
______________________
উপস্থাপনায়,
জুয়েল মাহমুদ সালাফি