ভূমিকা:
রাতের নিস্তব্ধতা বিদীর্ণ করে পূর্ব দিগন্তে যখন আলো ঝলমলে নতুন সূর্যের আগমন ঘটে তখন সকল অন্ধকার বিদূরিত হয়ে প্রভাতের দীপ্ত আলোয় ভরে যায় পৃথিবী। নতুন জীবনের প্রত্যাশা নিয়ে নতুন উদ্যমে কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠে চারিদিক। প্রাণে প্রাণে জাগে জীবনের স্পন্দন। ইসলাম এমনই একটি দীপ্তিময় সূর্যের নাম যার আগমনের ফলে আঁধার ঘেরা পৃথিবীতে জেগেছিল নতুন প্রবাহ। সকল অন্যায়, অবিচার, মূর্খতা, বিশৃঙ্খলা, অরাজকতা তথা সব অসুন্দরের অন্ধকার ভেদ করে প্রজ্বলিত হয়েছিল আলোর মশাল। এই আলোতে অবগাহন করে একদল মানুষ নিজেদের নাম লিপিবদ্ধ করেছে বিজয়ীদের মিছিলে। পক্ষান্তরে আর এক দল মানুষ চিরকালই অন্ধকারের পথেই পরিচালিত হয়েছে। আলোর পরশ তাদেরকে স্পর্শ করতে পারেনি।-অনুবাদক
❑ ইসলামের হাকিকত বা তাৎপর্য:
আকাশের সর্ববৃহৎ গ্রহ থেকে শুরু করে মরুভূমির ক্ষুদ্র বালুকণা পর্যন্ত আল্লাহর আইন মেনে চলে:
এ কথা স্বতঃসিদ্ধ যে, এ বিশ্বচরাচর একটি সুনির্দিষ্ট আইন ও শৃঙ্খলা অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে। চন্দ্র-সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্র তথা ভূমণ্ডল-নভোমণ্ডলের প্রতিটি বস্তু একটি সাধারণ নিয়মকে অনুসরণ করে। যে নিয়মের বিন্দুমাত্র খেলাপ করার কারো সাধ্য নেই। এমন কি মানুষ নিজেও পরিপূর্ণভাবে মহান আল্লাহর সুনির্দিষ্ট আইনের অধীন। মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাস, আলো-বাতাস ও খাদ্য গ্রহণ সব কিছুই হয় মহান আল্লাহর সুশৃঙ্খল নিয়ম মাফিক। শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সেই নিয়মের প্রতি আনুগত্যশীল। দেহের কোন অঙ্গই আল্লাহ সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে পারে না। এভাবে ভূ-মণ্ডলের প্রতিটি বস্তুই আল্লাহ তাআলার নির্ধারিত শৃঙ্খলার প্রতি আত্মসমর্পণ করে পরিচালিত হচ্ছে। অন্তরীক্ষের সর্ববৃহৎ গ্রহ থেকে শুরু করে মরুভূমির ক্ষুদ্র বালুকণা পর্যন্ত আল্লাহর আইন মেনে চলেছে।
তাহলে এ দৃষ্টি কোণ থেকে প্রমাণিত হচ্ছে, ইসলাম মূলত: সমগ্র সৃষ্টি জগতের ধর্ম। কারণ, ইসলাম মানে প্রশ্ন হীনভাবে আত্মসমর্পণ করা বা আনুগত্য করা। চন্দ্র-সূর্য আল্লাহর নির্দেশের নিকট আত্মসমর্পণ করেছে। পানি, বাতাস, আলো, অন্ধকার, ঠাণ্ডা ও উত্তাপ আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলছে। গাছ, পাথর ও চতুষ্পদ প্রাণী আল্লাহর বিধানের প্রতি অনুগত। এমন কি যে মানুষ তার স্রষ্টার পরিচয় নিতে আগ্রহী নয়, যে তার স্রষ্টার অস্তিত্বকে স্বীকার করতে নারাজ, তাঁর দাসত্বকে পরিত্যাগ করে সৃষ্টির দাসত্বকে স্বীকার করে নিয়েছে সে মানুষও মূলত: সমষ্টিগতভাবে তাঁর নির্দেশের কাছে আনুগত্য স্বীকার করতে বাধ্য।
উক্ত দৃষ্টিকোণ থেকে মানুষ দুটি অবস্থার বাইরে নয়। যথা:
১. কিছু ক্ষেত্রে মানুষ স্বভাবগত ভাবেই আল্লাহর হুকুম মেনে চলে।
২. আর কখনো মানুষ নিজস্ব ইচ্ছা ও বিবেককে কাজে লাগিয়ে আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করে।
◈ এক: স্বভাবগত ভাবে আল্লাহর হুকুম মেনে চলা:
মানুষ সমষ্টিগতভাবে তার স্রষ্টার নির্দেশ মানতে বাধ্য। যার কারণে স্বভাবগতভাবে সে আল্লাহর ইবাদত করতে চায় এবং তার নৈকট্য লাভে প্রত্যাশী। ভালো ও কল্যাণকর কাজ, সততা, সত্যবাদিতা ইত্যাদিকে সে মনে-প্রাণে ভালবাসে। সঠিক পথ পাওয়ার আগ্রহ তার চিরকালের। পক্ষান্তরে অসত্য, অকল্যাণ, অনৈতিকতা, জুলুম-অত্যাচার ইত্যাদিকে সে সবসময় ঘৃণা করে।
অনুরূপভাবে, অর্থ-সংগ্রহের বাসনা, সন্তান ও পরিবারের প্রতি ভালবাসা, পানাহার, বিবাহের আগ্রহ ইত্যাদি মানব স্বভাবের চিরন্তন চাহিদা। প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেন সক্রিয় থাকে এবং সেগুলো যথাযথ দায়িত্ব পালন করে তার জন্য প্রয়োজনীয় সব কিছুই সে করে। এগুলো আল্লাহ তাআলার শাশ্বত: বিধান।
◈ দ্বিতীয়ত: নিজের ইচ্ছা ও বিবেককে কাজে লাগিয়ে আল্লাহর হুকুম মানা:
মহান আল্লাহ যুগে যুগে অসংখ্য নবী ও রাসূল প্রেরণ করেছেন। নাজিল করেছেন অগণিত আসমানি গ্রন্থ। উদ্দেশ্য হল, যেন মানুষের নিকট সত্য-মিথ্যা, হেদায়েত-গোমরাহি এবং ভালো-মন্দের মাঝে সুস্পষ্টভাবে পার্থক্য সূচিত হয়। সেই সাথে আল্লাহ মানুষকে দান করেছেন বিবেক, বুদ্ধি ও বোধশক্তি যেন সে জেনে-বুঝে সঠিক পথ অবলম্বন করতে সক্ষম হয়। সে যদি কল্যাণের পথ অবলম্বন করে তবে সত্য ও হেদায়েত প্রাপ্ত হবে। পক্ষান্তরে যদি ভুল পথ অবলম্বন করে তবে সে নিজের অকল্যাণ ও ধ্বংস নিজেই ডেকে আনবে।
উল্লেখিত দুটি বিষয়ের মধ্যে প্রথম বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি ফেরালে দেখা যাবে, সমষ্টিগতভাবে মানুষ আল্লাহর নিয়ম ও শৃঙ্খলার প্রতি আত্মসমর্পণ করেছে। এ ছাড়া তার কোন বিকল্প নেই এবং এ ক্ষেত্রে তার মাঝে এবং অপারপর সৃষ্টি জীবের মাঝে কোন পার্থক্য নেই।
পক্ষান্তরে দ্বিতীয় বিষয়টির দিকে তাকালে দেখা যাবে, সে সম্পূর্ণ স্বাধীন। ইচ্ছা করলে সে মহান আল্লাহর আনুগত্য স্বীকার করে মুসলিমও হতে পারে আবার তাঁর নির্দেশকে উপেক্ষা করে কাফেরও হতে পারে। আল্লাহ বলেন,
إِمَّا شَاكِراً وَإِمَّا كَفُوراً
“হয় সে কৃতজ্ঞতা হবে নতুবা অকৃতজ্ঞ হবে।” [সূরা দাহর: ৩]
❑ এ জন্য মানুষ দু ভাবে বিভক্ত:
◈ এক: এক প্রকার মানুষ স্রষ্টায় বিশ্বাসী:
যারা আল্লাহকে একমাত্র প্রতিপালক হিসেবে বিশ্বাস করে। বিশ্বাস করে একমাত্র মালিক এবং উপাস্য হিসেবে। যে সব ক্ষেত্রে তার ব্যক্তিগত স্বাধীনতা আছে সে সব ক্ষেত্রে তার নিজস্ব স্বাধীনতাকে আল্লাহর শরিয়তের নিকট সঁপে দেয়। যেমন ভাবে সৃষ্টিগত ভাবে তার প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আল্লাহর নির্দেশের কাছে বাধ্যগত। আর সেই হল প্রকৃত মুসলিম (আত্মসমর্পণকারী)। তার জ্ঞান ও প্রজ্ঞা সঠিক পথেই ব্যয় হয়েছে কারণ, সে জ্ঞানের সাহায্যে তার প্রভু ও স্রষ্টার সন্ধান লাভ করতে সক্ষম হয়েছে। তার বিবেক ও সিদ্ধান্ত যথার্থ বলেই প্রমাণিত হয়েছে। কারণ সব কিছু জেনে-বুঝে সে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো দাসত্ব মেনে নেয়া যাবে না। তার কথাও সঠিক কারণ, সে এখন এক ও অদ্বিতীয় আল্লাহর প্রভুত্বের কথা অকপটে স্বীকার করে।
মোট কথা, তার জীবনে সত্য ব্যতীত অন্য কিছু নেই। যেহেতু সে তার ব্যক্তিগত স্বাধীনতাকে আল্লাহর শরিয়তের নিকট সমর্পণ করেছে। যার কারণে শরিয়তের নির্দেশের বাইরে সে এক পাও অগ্রসর হয় না এবং অন্যান্য সৃষ্টি জীবের সাথে তার গভীর পরিচয় ও বন্ধুত্ব স্থাপিত হয়েছে। করণ, অন্য সকল সৃষ্টি জীব যে মহাপ্রভুর নির্দেশ মেনে চলে সেও সেই মহানসত্ত্বা নির্দেশের ব্যতিক্রম করে না।
◈ দুই: আল্লাহর বিধানের বিরুদ্ধাচরণ কারী বা অবিশ্বাসী:
১ম পক্ষের বিপরীতে আরেক প্রকারের মানুষ আছে, যার সারাটা জীবন কেটে যায় তবুও তার অনুভূতিতে একথা জাগ্রত হয় না যে, সে যখন জন্মগ্রহণ করে তখন তো মহান স্রষ্টার চিরাচরিত নিয়ম অনুযায়ী জন্ম গ্রহণ করেছে। তারপর জীবন চলার প্রতিটি ক্ষেত্রে তাকে সেই স্রষ্টার অলঙ্ঘনীয় নির্দেশই মেনেই চলতে হয়েছে। অথচ এ ব্যাপারে আদৌ চিন্তা-ভাবনা করার সুযোগ হয়নি। তার যে সৃষ্টিকর্তা তাকেই সে চিনতে ব্যর্থ হয়েছে। তাঁর শরিয়তকে সে চিরদিন অগ্রাহ্য করে চলেছে। তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেনি। নবী-রাসূলদের অনুসরণ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেনি। আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞান ও বিবেককে সে স্রষ্টাকে চেনার জন্য ব্যয় করেনি। বরং তাঁর অস্তিত্বকে বরাবর অস্বীকার করেছে। অহংকার বশত: তাঁর দাসত্বকে মনে প্রাণে গ্রহণ করতে পারেনি। জীবন চলার পথে যেসব ক্ষেত্রে তার ইচ্ছা ও স্বাধীনতা ছিল সেসব ক্ষেত্রে সে শরিয়তের নিকট আত্মসমর্পণ তো করেইনি বরং শিরকের মত ভয়াবহ পাপে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছে। যে সমস্ত নিদর্শন আল্লাহর একত্ববাদের প্রমাণ বহন করে সেগুলোকে সে সবসময় পাশ কাটিয়ে গেছে বা সেগুলোর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে অস্বীকার করে চলেছে। এ ব্যক্তিই হল কাফের বা আল্লাহ দ্রোহী।
ইতোপূর্বে আলোচনা করা হয়েছে যে, মানুষ যখন জন্মগ্রহণ করে তখন ইসলামের স্বভাব ও রীতির উপরই জন্ম গ্রহণ করে। তার দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ইসলামি রীতি-নীতির ব্যতিক্রম করতে পারে না। তার চারপাশের প্রতিটি বস্তু আল্লাহর রীতি ও নিয়ম-কানুনের কাছে আত্মসমর্পণ করেই পরিচালিত হচ্ছে । কিন্তু তার বিবেক অজ্ঞতা ও নির্বুদ্ধিতার আবরণে ঢাকা পড়ে গেছে। পৃথিবী কী নিয়মে পরিচালিত হচ্ছে, এমনকি তার নিজস্ব দেহটি কী আইন মেনে সুচারুরূপে পরিচালিত হচ্ছে তাও তার জ্ঞান ও দৃষ্টির অগোচরে। তাই তো দেখা যায়, সে তার জ্ঞানও চিন্তাশক্তিকে ব্যবহার করছে এমন সব বিষয়ে যা সাধারণ স্বভাব বিরুদ্ধ। তার দৃষ্টি শুধু সে দিকেই ধাবিত হচ্ছে যা অবাস্তব। এমনকি তার সকল প্রচেষ্টাকে ব্যয় করছে সেই অস্বাভাবিক ও রীতি বিরুদ্ধ বিষয়গুলোকে প্রতিষ্ঠা ও প্রমাণিত করার পেছনে।
এখন আপনার বিবেকে দ্বারা আপনি নিজেই বিচার করুন, একজন কাফের তথা পৌত্তলিক, আল্লাহ দ্রোহী এবং নাস্তিক্যবাদের অন্ধকারে নিমজ্জিত ব্যক্তি অজ্ঞতা-মূর্খতা এবং ভ্রষ্টতার কত দূরে অবস্থান করছে?!
ইসলাম আপনার নিকট যে জিনিসটি কামনা করছে, তা কঠিন কোন বিষয় নয় বরং তা খুবই সহজ। কারণ, ইসলাম তো তাই যার উপর ভিত্তি করে বিশ্বজগত পরিচালিত হচ্ছে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَلَهُ أَسْلَمَ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ طَوْعاً وَكَرْها
“আসমানও জমিনের সব কিছু তাঁর নিকট আত্মসমর্পণ করেছে স্বেচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক।” [সূরা আলে ইমরান: ৮৩]
ইসলাম হল আল্লাহর একমাত্র মনোনীত জীবন ব্যবস্থার নাম। তিনি বলেন,
إِنَّ الدِّينَ عِنْدَ اللَّهِ الْأِسْلامُ
“ইসলাম হল, আল্লাহর নিকট একমাত্র মনোনীত জীবন ব্যবস্থা।” [সূরা আল্ ইমরান: ১৯]
❑ প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ভাষায় ইসলামের পরিচয়:
♦ প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইসলামের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছেন,
أن تسلم قلبك لله ، وأن تولي وجهك لله ، وتؤتي الزكاة المفروضة
“তোমার হৃদয়টাকে আল্লাহর নিকট সমর্পণ করবে, নিজেকে পরিপূর্ণ ভাবে আল্লাহ অভিমুখী করবে আর নির্ধারিত যাকাত আদায় করবে।” [আহমদ ৩/৫, ইবনে হিব্বান ৩৭৮/১-হাদিসটি হাসান]
♦ এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট এসে প্রশ্ন করল, ইসলাম কী?
তিনি বললেন, “তোমার অন্তর আল্লাহর নিকট সমর্পণ করবে আর তোমার মুখ ও হাত থেকে মুসলমানগণ নিরাপদে থাকবে এটাই হল ইসলাম।”
লোকটি জিজ্ঞেস করল, ইসলামের সবচেয়ে উত্তম কাজ কোনটি?
তিনি বললেন, “ঈমান আনা।”
অতঃপর লোকটি আবার প্রশ্ন করল, ঈমান কী?
তিনি বললেন, “আল্লাহ, ফেরেশতামণ্ডলী, আসমানি গ্রন্থ সমূহ, নবী-রাসূলগণ এবং মৃত্যুর পর পুনরুত্থানের প্রতি বিশ্বাস পোষণ করবে। এটার নামই ঈমান।” [মুসনাদে আহমদ]
♦ আর ইসলামের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “ইসলাম হচ্ছে, তুমি একথার সাক্ষ্য প্রদান করবে যে, আল্লাহ ছাড়া দাসত্ব পাওয়ার উপযুক্ত আর কেউ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর প্রেরিত দূত। সালাত আদায় করবে, যাকাত প্রদান করবে, রমাযান মাসে রোযা পালন করবে, বাইতুল্লায় গিয়ে হজ্জ সম্পাদন করবে যদি সেখান পর্যন্ত যাওয়ার ক্ষমতা রাখ।” [সহিহ মুসলিম]
♦ তিনি আরও বলেন,
الْمُسْلِمُ مَنْ سَلَمَ الْمُسْلِمُونَ مِنْ لِسَانِهِ وَيَدِهِ
“মুসলিম তো সে ব্যক্তি যার মুখ ও হাতের অনিষ্ট থেকে অন্য মুসলিমগণ নিরাপদে থাকে।” [সহিহ বুখারি ও মুসলিম]
এই হল ইসলাম, যে ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম, মতবাদ বা মতাদর্শ আল্লাহর নিকট গ্রহণীয় নয়। অতীতেও ছিল না; ভবিষ্যতেও গ্রহণীয় হবে না।
❑ যুগ পরিক্রমায় ইসলাম:
যুগ পরিক্রমায় সকল নবীর জীবনাদর্শ ছিল ইসলাম।
♦ নূহ আলাইহিস সালাম সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَأُمِرْتُ أَنْ أَكُونَ مِنَ الْمُسْلِمِينَ
“আমি মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার নির্দেশপ্রাপ্ত হয়েছি।” [সূরা ইউনুস: ৭২]
♦ ইবরাহিম আলাইহিস সালাম সম্পর্কে তিনি বলেন,
قَالَ أَسْلَمْتُ لِرَبِّ الْعَالَمِينَ
“তিনি বললেন, আমি সমগ্র জাহানের প্রতিপালক আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করলাম।” [সূরা বাকারা: ১৩১]
♦ মুসা আলাইহিস সালাম সম্পর্কে তিনি বলেন,
وَقَالَ مُوسَى يَا قَوْمِ إِنْ كُنْتُمْ آمَنْتُمْ بِاللَّهِ فَعَلَيْهِ تَوَكَّلُوا إِنْ كُنْتُمْ مُسْلِمِينَ
“মুসা আলাইহিস সালাম বলেন, হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা যদি আল্লাহর প্রতি ঈমান এনে থাক তবে তাঁর উপরই নির্ভর কর যদি মুসলমান হয়ে থাক।” [সূরা ইউনুস: ৮৪]
♦ ঈসা আলাইহিস সালাম সম্পর্কে বলেন,
وَإِذْ أَوْحَيْتُ إِلَى الْحَوَارِيِّينَ أَن آمِنُوا بِي وَبِرَسُولِي قَالُوا آمَنَّا وَاشْهَدْ بِأَنَّنَا مُسْلِمُون
“আর যখন আমি হাওয়ারীদের নিকট প্রত্যাদেশ করলাম যে, তোমরা আমার প্রতি ও আমার রাসূলের প্রতি ঈমান আন তখন তারা বলল, আমরা ঈমান আনলাম এবং আপনি সাক্ষী থাকুন যে আমরা মুসলিম।” [সূরা মায়িদাহ: ১১১]
মোটকথা, পৃথিবীর আদি লগ্ন থেকে ইসলাম ছিল সমগ্র মানবতার একমাত্র জীবন ব্যবস্থা। তবে কালে কালে যুগের চাহিদা মোতাবেক বিধানগতভাবে কিছু পার্থক্য ছিল। কিন্তু যে বিষয়টি সকল যুগেই অপরিবর্তনীয় ছিল তা হল: উপাসনা করতে হবে একমাত্র আল্লাহর এবং কোন সৃষ্টিকে তাঁর সাথে শরিক করা যাবে না। এ মূলনীতির কখনো পরিবর্তন হয়নি।
তাই পরিশেষে আহবান জানাবো, আসুন, আমরা ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করে এবং মহান আল্লাহর নিকট পরিপূর্ণভাবে আত্মসমর্পণ করে নিজেদের ইহ-লৌকিক শান্তি এবং পারলৌকিক মুক্তি নিশ্চিত করি। আল্লাহ আমাদের সহায় হওন। আমীন॥
মূল লেখক: মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ বিন সালেহ সুহাইম
অনুবাদক: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
লিসান্স, মদিনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, সৌদি আরব।।
حقيقة الإسلام والكفر
تأليف:محمد بن عبد الله بن صالح السحيم
(مأخوذ من كتاب الإسلام أصوله ومبادئه)
قام بترجمته : عبد الله الهادي بن عبد الجليل
الداعية/ بجعية الدعوة وتوعية الجاليات بالجبيل